দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
খেমার সাম্রাজ্যের রাজা | |||||||||
রাজত্ব | ১১১৩-১১৪৫/১১৫০ | ||||||||
পূর্বসূরি | প্রথম ধরণীন্দ্রবর্মণ | ||||||||
উত্তরসূরি | দ্বিতীয় ধরণীন্দ্রবর্মণ | ||||||||
জন্ম | ১১তম শতাব্দী আংকর | ||||||||
মৃত্যু | ১১৪৫/১১৫০ আংকর | ||||||||
| |||||||||
রাজবংশ | আংকর সম্রাট | ||||||||
পিতা | ক্ষিতীন্দ্রাদিত্য | ||||||||
মাতা | নরেন্দ্রলক্ষ্মী | ||||||||
ধর্ম | বৈষ্ণব ধর্ম (হিন্দু) |
দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ (খ্মের: សូរ្យវរ្ម័នទី២) যিনি, মরণোত্তর নামে পরমবিষ্ণুলোক নামে পরিচিত ছিলেন, খেমার সাম্রাজ্যের একজন সম্রাট, যিনি ১১১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৪৫-৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় স্মৃতিস্তম্ভ আঙ্কোর ভাটের নির্মাণ করেন এবং হিন্দু দেবতা বিষ্ণূর উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন। তার রাজত্বকালীন নির্মিত বিবিধ স্মারক, স্থাপত্য, অসংখ্য সামরিক অভিযান এবং শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠা তাকে খমের সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাটের মর্যাদা দিয়েছে।
সূর্যবর্মন সাম্রাজ্যের দুর্বল কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের সময়ে একটি প্রাদেশিক রাজ্যে বড় হয়ে উঠেছিলেন। একটি শিলালিপিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার পিতার নাম ক্ষিতিন্দ্রাদিত্য এবং মা নরেন্দ্রলক্ষ্মী। যুবাবস্থায় সিংহাসন আরোহণের জন্যে তিনি যথেষ্ট সুকৌশলে এগোন যদিও তার বৈধ দাবি ছিল।[১][২]:১৫৯
কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকাকালীন, সম্রাট সূর্যবর্মণ, রাজত্বের বিভিন্ন অংশকে পুনরায় একত্রিত করেন। বিভিন্ন সামন্তরাজারা তাকে রাজস্ব প্রদান করতেন। তিনি পূর্বদিকে চ্যামদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামুরিক অভিযান সম্পন্ন করেন, কিন্তু এগুলি মুলত সবই অসফল ছিল।[৩]:১১৩–১১৪
প্রতিবেশী রাজ্য চম্পায় প্রাপ্ত শিলালিপি এবং ভিয়েতনামের পূর্বসূরী রাষ্ট্র, দাই-ভিয়েতের লেখকদের তথ্যানুযায়ী, সূর্যবর্মণ তিনটি বৃহত সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন দাই-ভিয়েত এর বিরুদ্ধে, কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়। ১১২৮ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে দাই-ভিয়েতের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং এই সৈন্যবাহিনী পরাজিত হয়। পরের বছর তিনি ৭০০ দ্রুতগামী জাহাজ পাঠান আক্রমণ করার জন্য উপকূলভাগ জুড়ে। ১১৩২ খ্রিষ্টাব্দে, মিলিত খ্মের এবং চ্যাম বাহিনী আবার আক্রমণ করে এবং ১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে একটি চূড়ান্ত প্রচেষ্টা করেন দাই-ভিয়েত আক্রমণের, কিন্তু কোন আক্রমণ-ই সফল হয়নি। পরে চ্যাম রাজা তৃতীয় জয় ইন্দ্রবর্মণ দাই-ভিয়েতের সাথে শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেন এবং সূর্যবর্মণের সাথে সন্মিলিত আক্রমণ করতে অস্বীকার করেন। ১১৪৫ খ্রিষ্টাব্দে, সূর্যবর্মণ চম্পা রাজ্য আক্রমণ করেন এবং চম্পার রাজা জয় ইন্দ্রবর্মণকে পরাজিত করেন এবং রাজধানী বিজয়কে তছনচ করেন।[৪]:৭৫–৭৬ চ্যাম সিংহাসনে একজন নতুন রাজা, হরিদেভকে বসান, যিনি ছিলেন, খ্মের শাসকের স্ত্রীর ছোট ভাই। পরবর্তী যুদ্ধে, চ্যাম বাহিনী রাজধানী পুনরুদ্ধার করে এবং হরিদেবকে হত্যা করে।[৫] ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দে একটি চূড়ান্ত অভিযান, একটি বিপর্যয়মূলক প্রত্যাহারের মধ্যে শেষ হয়।[২]:১৫৯,১৬২[৬]
যুদ্ধের সাথে সাথে, সূর্যবর্মন কূটনীতিও অনুশীলন করেছিলেন, ১১১৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চীনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করেছিলেন। ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি চীনা হিসাব বলে যে খমের দূতাবাসের ১৪ জন সদস্য ছিল, যারা চীনের মাটিতে পৌঁছানোর পর, বিশেষ রাজকীয় পোশাক দিয়ে অভ্যর্থনা করা হয়। ১১২০ খ্রিষ্টাব্দে আরো একদল রাষ্ট্রদূত দূতাবাস পরিদর্শন করেন; ১১২৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট খেমার শাসককে উচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করেছিলেন, তাকে "সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ সামন্তরাজা" বলে মনে করেছিলেন। দুই রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যা পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রিত হয়।[২]:১৫৯,১৬২[৬]
তার আমলেই শিল্প ও স্থাপত্যের সর্বাধিক উন্নতি ঘটে। তিনি রাজধানীতে নির্মিত সর্বকালীন বৃহত্তম মন্দির ও সৌধাবলী আংকর ওয়ত।[৭]
নির্মাণের সভাপতিত্ব করেন। অনেক আধুনিক ঐতিহাসিক আঙ্কোর ভাটকে খমের আমলে নির্মিত সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্য বলে মনে করেন। এর পাঁচটি কেন্দ্রীয় রত্ন (টাওয়ার) হিন্দু দেবদেবীর বাসস্থান সুমেরু পর্বতের শিখরকে নির্দেশ করে। এটির মন্দিরগাত্রে ১৮৬০টি অপ্সরা, বা স্বর্গীয় নর্তকীদের চিত্র অঙ্কিত রয়েছে এবং হাজার হাজার মিটার প্রশস্ত চিত্রাবলী রয়েছে, হিন্দু পৌরাণিক কিংবদন্তি এবং সমসাময়িক জীবনের দৃশ্য নিয়ে। তার রাজত্বের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য মন্দিরগুলোর মধ্যে রয়েছে বান্তে সামের, থমম্যানন, চাউ সাও তেভোদা এবং রাজধানীর পূর্বপ্রান্তে, বিশাল বেং মেওলা কমপ্লেক্স।
সূর্যবর্মণ বিবাহিত ছিলেন, কিন্তু তার স্ত্রীর নামের কোনো নথি পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ, অন্যান্য খেমার রাজাদের থেকে ধর্মপালনের ক্ষেত্রে আলাদা ছিলেন কারণ, শিবের পরিবর্তে বিষ্ণু ছিলেন তার রাজত্বের ধর্ম পালনের মূল ভরকেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের কারণ জানা যায় না। পন্ডিতরা দীর্ঘকাল বিতর্ক করেছেন, যে হয়ত, শিবের পরিবর্তে, বিষ্ণু তার প্রধান আরাধ্য দেবতা হওয়ার কারণেই, আঙ্কোর ভাটের অভিমুখ পশ্চিমদিকে, যা কিনা বিষ্ণুর সাথে সম্পর্কিত, যেখানে অন্যান্য খমের স্থাপত্য পূর্বমুখী।
শিলালিপিতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সূর্যবর্মন ১১৪৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন, সম্ভবত চম্পার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময়ই তিনি মারা যান। তার পরে সিংহাসনে আরোহণ করেন দ্বিতীয় ধরনীন্দ্রবর্মণ, যিনি সম্পর্কে সম্রাটের মামাতো ভাই ছিলেন। এরপর শুরু হয় দুর্বল এবং খারাপ শাসনব্যাবস্থা।[৩]:১২০
সূর্যবর্মনকে মরণোত্তর নাম দেওয়া হয় পরমবিষ্ণুলোক, যিনি বিষ্ণুর স্বর্গীয় জগতে প্রবেশ করেছেন। তার ম্রিত্যুর পরেই আঙ্কোরভাটের কাজ সম্পূর্ণ হয় বলে মনে করা হয়।[৩]:১১৮
রাজত্বকাল শিরোনাম | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী প্রথম ধরণীন্দ্রবর্মণ |
আংকর সম্রাট ১১১৩–১১৪৫ বা ১১৫০ |
উত্তরসূরী দ্বিতীয় ধরণীন্দ্রবর্মণ |