খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্বে, দ্বিপ্রকৃতিবাদ বা ডায়োফিজিটিজম ( গ্রীক: δυοφυσιτισμός থেকে এর উৎপত্তি। δυο (dyo) অর্থ "দুই" এবং φύσις (physis) "প্রকৃতি") বলতে এমন একটি খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝানো হয়, যার ভাষ্য হল, দুটি প্রকৃতি, ঐশ্বরিক এবং মানবীয়, যীশু খ্রীষ্টের সত্ত্বার মধ্যে বিদ্যমান। এটি মনোফিজিটিজম এবং মায়াফিসিটিজমের সাথে বৈপরীত্য প্রদর্শন করে।[২]
দ্বিপ্রকৃতিবাদী খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে, একটি হাইপোস্টেসিস ও একটি খ্রিস্টসত্ত্বার মধ্যে দুইটি প্রকৃতির সম্পূর্ণ এবং নিখুঁত ঐক্য রয়েছে। চ্যালসেডোনিয়ানদের কাছে, হাইপোস্ট্যাটিক ঐক্য ছিল যীশুর ঐক্যের কেন্দ্র (তাঁর দেবত্ব এবং মানবতাকে প্রকৃতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে)। অন্যদিকে যারা চ্যালসেডোনিয়ান সংজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করেন তারা মানতেন যে, তার প্রকৃতিই ঐক্যের বিন্দু। মায়াফিজিটিজমবাদীগণ, আলেকজান্দ্রিয়ার বারো অ্যানাথেমাসের সিরিলের ব্যাপারে তাদের অন্তর্দর্শনের উপর ভিত্তি করে খ্রিস্টের খ্রিস্টের মধ্যে এক প্রকৃতির ধারণাকে সমর্থন করে, অর্থাৎ ৪র্থ নম্বর অ্যানাথেমাসে বলা হয় যে "যদি কেউ বিভাজিত হয় দুই সত্ত্বা বা দুটি অস্তিত্বে, তাহলে সেই অভিব্যক্তিগুলিকে বাঁচিয়ে রাখে যা ইভানজেলিকাল এবং অ্যাপোস্টোলিক লেখাগুলিতে রয়েছে, বা যা খ্রীষ্ট সম্বন্ধে সাধুদের দ্বারা বা নিজের দ্বারা বলা হয়েছে, এবং কিছু ঈশ্বরের বাক্য থেকে পৃথক একজন ব্যক্তির জন্য তাঁর প্রতি প্রয়োগ করবে, এবং অন্যকে ঈশ্বর পিতার একমাত্র বাক্যে প্রয়োগ করবে, এই ভিত্তিতে যে তারা উপযুক্ত ঈশ্বরের প্রতি প্রয়োগ করা হবে: তাকে অ্যানাথেমা হতে দিন।" যেহেতু ডায়োফিজিটিজম ব্যবহৃত হয়েছে চ্যালসেডোনিয়ান মতকে বর্ণনা করার জন্য, তাই মনোফিজিটিজমবাদী (যাদের ধারণা, খ্রিস্টের শুধুমাত্র, ঐশ্বরিক প্রকৃতি রয়েছে) এবং মায়াফিজিটিজমবাদীদের (যাদের ধারণা খ্রিস্ট ঐশ্বরিক এবং মানব উভয়ই, তবে এক প্রকৃতির ভেতরে) কাছে এর পার্থক্যসূচক স্বতন্ত্র বিপরীত অর্থ রয়েছে। [৩]
নেস্টোরিয়ানিজমের কিছু দিক বর্ণনা করার জন্যও ডাইওফিসিটিজম ব্যবহার করা হয়। এ মতবাদগুলির জন্য কনস্টান্টিনোপলের নেস্তোরিউস দায়ী। এখন ইহা সবাই সাধারণভাবে মান্য যে, তার কিছু ধারণা সেসব ধারণা থেকে বেশি ভিন্ন নয় যেগুলো শেষপর্যন্ত সনাতনীরূপে উত্থিত হয়েছে, কিন্তু খ্রিস্টের ধারণার উপর তার ফর্মুলার সনাতন্যতা এখনও চার্চের বিতর্কিত বিষয়।[৪]
যীশু খ্রীষ্টের সত্য মানব হওয়া এবং সত্য ঈশ্বর হওয়ার আকিদাটি চ্যালসডোনিয়ান মতবাদের মধ্যে নিহিত ছিল।[৫] পরে, এটি একীভূত হয়ে যায় সর্বপবিত্র ত্রিত্বের রহস্যে, যা সমস্ত চ্যালসডোনিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের মৌলিক পাথেয়।
দ্বিপ্রকৃতিবাদ আচারে দ্বিপ্রকৃতিবাদী খ্রিস্টতত্বের বিকাশ ধীরে ধীরে হয়েছিল, এবং এর জটিল পরিভাষাটি অবশেষে প্রণয়ন করা হয় দীর্ঘ খ্রিস্টতাত্ত্বিক বিতর্কের ফলস্বরূপ যা ৪র্থ এবং ৫ম শতাব্দীতে স্থির ছিল। অ্যান্টিওকিয়ান দর্শনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা প্রায়শই দ্বিপ্রকৃতিবাদীতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন।[৬] বুহু বিতর্ক এবং বেশ কয়েকটি অধিবেশনের পর, ৪৫১ সালে চ্যালসেডনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সার্বজনীন পরিষদে, দ্বিপ্রকৃতিবাদ তার আনুষ্ঠানিক ইক্লেসিয়াস্টিকাল রূপ লাভ করে।[৭] চ্যালসডোনিয়ান সংজ্ঞাটি এখন পর্যন্ত খ্রিস্টান চার্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই আকিদা ধারণ করে, যাদের মধ্যে রয়েছে: পূর্ব অর্থোডক্স চার্চ, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, পূর্ব ক্যাথলিক চার্চ, অ্যাংলিকান চার্চ, ওল্ড ক্যাথলিক চার্চ, সেইসাথে রিফর্মড, লুথারান এবং অন্যান্য বিভিন্ন খ্রিস্টান মাসলাক। এই সংজ্ঞাটি বলে যে, খ্রিস্ট হলেন দুই প্রকৃতির মধ্যে এক সত্ত্বা ও এক হাইপোস্টেসিস। ইহা মায়াফিজিটিজমের বিপরীত, যেখানে বলা হয় যে, খ্রিস্ট হলেন একটি একীভূত প্রকৃতিতে একটি হাইপোস্টেসিস যা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর আবার সম্পূর্ণরূপে মানুষ - এই মতবাদটি আলেকজান্দ্রিয়ান দর্শনের বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের কাছে সমর্থিত ছিল। তা ছাড়া, প্রাচ্যের প্রাচীন চার্চ দ্বিপ্রকৃতিবাদী খ্রিস্টতত্ত্ব এবং অ্যান্টিওকীয় দর্শনের অন্যান্য আচারপ্রথা মান্য করে। [৬]