শায়খুত তাফসির দ্বীন মুহাম্মদ খান | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯০০ ঢাকা |
মৃত্যু | ২ ডিসেম্বর ১৯৭৪ | (বয়স ৭৩–৭৪)
জাতীয়তা |
|
রাজনৈতিক দল | জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | দারুল উলুম দেওবন্দ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পিতামাতা |
|
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | |
উল্লেখযোগ্য কাজ |
|
শিক্ষক |
দেওবন্দি আন্দোলন |
---|
সিরিজের অংশ |
দ্বীন মুহাম্মদ খান (১৯০০ – ১৯৭৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও মুফাসসির। তিনি উর্দু ভাষায় কুরআনের ব্যাখ্যার জন্য পরিচিত ছিলেন। দারুল উলুম দেওবন্দে লেখাপড়া শেষ করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। তিনি কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে এবং পরে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন।[১] তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[২]
দ্বীন মুহাম্মদ ১৯০০ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুল্লাহ খান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। ঢাকার চকবাজার মসজিদে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। তখন ইব্রাহীম পেশওয়ারী চকবাজার মসজিদে দ্বীনি তালীমের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। তার নিকট তিনি কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচির প্রাথমিক কিতাব থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সিহাহ সিত্তাহসহ হাদিসের অন্যান্য কিতাবসমূহ নিরবচ্ছিন্নভাবে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর তিনি হাদিস, তাফসীর ও ফিকহশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দ গমন করেন। সেখানে তিনি তৎকালীন হাদিস, তাফসীর ও ফিকহশাস্ত্রের উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে আনোয়ার শাহ কাশ্মীরিও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। দিল্লির আমিনিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস কেফায়াতুল্লাহ দেহলভির নিকট থেকেও তিনি হাদিসের সনদ লাভ করেন।[৩]
১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দশ বছর তিনি ঢাকায় হাম্মাদিয়া মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। এ সময় আব্দুল কারীম মাদানি এদেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য আগমন করলে মাদানির সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি মাদানির বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলের আরবি বক্তৃতার অনুবাদ করতেন। তার যথাযথ অনুবাদ ও বর্ণনাভঙ্গি মাদানিকে মুগ্ধ করে। তাই তিনি ১৯৩০ সালে ধর্ম প্রচারে বার্মা গমনকালে তাকে সঙ্গে নিয়ে যান। সেখানে তিনি বাঙ্গালো মুন্নী জামে মসজিদে ইমাম ও মুফতী পদে নিযুক্ত হন। মসজিদে তিনি তাফসীরুল কুরআনের দরস দেয়া শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি পুরো ত্রিশ পারা কুরআনের তাফসীর সমাপ্ত করেন। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগে এবং পরে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যাপনা করেন। শামসুল হক ফরিদপুরী যে সকল আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদদের নিয়ে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। প্রতিষ্ঠার পরই তিনি এর নাজেমে আলা হন। তিনি আমৃত্যু জামিয়া লালবাগেই হাদিসের দরস দিয়ে গেছেন। ইসলামি রাজনীতিতেও তার অবদান ছিল। তিনি খেলাফত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করায় কিছুদিন আসামের কারাগারে বন্দি জীবন ছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলনেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ঢাকায় সীরাতুন্নবী কমিটি গঠনের পুরোধা হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি রেসকোর্স ময়দানে বিশাল সমাবেশ করেছিলেন। তিনি সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে রেডিওতে "কুরআনে কারিম ও আমাদের জিন্দেগী" শীর্ষক অনুষ্ঠানের নিয়মিত আলোচক ছিলেন। তার দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একটি সূরা ইউসুফের তাফসীর, অন্যটি দোয়া দরূদ ও তাসাওফ সম্পৰ্কীয়।[৪]
ব্যক্তিজীবনে তার সন্তান ছিল না। তার স্ত্রী ইসরার আহমাদ নামক তার বোনের এক ছেলেকে লালন পালন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন লালবাগ কেল্লা ময়দানে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তার জানাযায় লক্ষাধিক লোক হয়েছিল। তাকে লালবাগ শাহী মসজিদ প্রাঙ্গনে দাফন করা হয়।[৫][৬]