![]() | |
প্রতিষ্ঠিত | ১৮ এপ্রিল ২০২১ |
---|---|
অঞ্চল | ইউরোপ |
দলের সংখ্যা | ৬৪ (পুরুষ) ৩২ (মহিলা) |
ওয়েবসাইট | thesuperleague |
দ্য সুপার লিগ (এছাড়াও ইউরোপীয় সুপার লিগ কোম্পানি এবং এসএল নামে পরিচিত) হচ্ছে একটি পরিকল্পিত বার্ষিক ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতা, যেখানে ইউরোপীয় শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলো একে অপর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই প্রতিযোগিতাটি উয়েফা কর্তৃক আয়োজিত উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগকে প্রতিদ্বন্দ্বী অথবা সম্ভবত প্রতিস্থাপন করার উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছে। "ইউরোপীয় সুপার লিগ" গঠন নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পর, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে এই প্রতিযোগিতাটি ১২টি ক্লাব নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে আরো তিনটি ক্লাব যোগদানের প্রত্যাশা রয়েছে। এই ১৫টি "প্রতিষ্ঠাতাকালীন ক্লাব" প্রতিযোগিতায় স্থায়ীভাবে অংশগ্রহণ করবে। অতিরিক্ত ৫টি ক্লাব পূর্ববর্তী আসরের ফলাফলের ভিত্তিতে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উত্তীর্ণ হবে। আয়োজক সংস্থার মতে, এই প্রতিযোগিতাটি "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব" শুরু করা হবে এবং ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হবে।
ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ হলেন এই সংস্থার প্রথম সভাপতি।[১]
ইউরোপীয় সুপার লিগ গঠনের প্রস্তাব ১৯৯৮ সালের দিকে করা হয়েছিল, সে সময় ইতালীয় প্রতিষ্ঠান মিডিয়া পার্টনার্স এই ধারণাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করেছিল, যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের বিন্যাসের সম্প্রসারণের ফলে ব্যর্থ হয়েছিল।[২] পরবর্তী দুই দশকে বিভিন্ন প্রস্তাব আনা হয়েছিল, যা সাফল্যের দেখা পায়নি।
২০২১ সালের ১৮ই এপ্রিল তারিখে প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলো কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লিগটির আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করা হয়েছিল।[১] উয়েফা নির্বাহী কমিটির এক সভার পর এই ঘোষণা দেয়া হয়; যার উদ্দেশ্য ছিল ২০২৪–২৫ মৌসুম থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগকে নতুন করে গড়ে তোলা এবং সম্প্রসারণ করা, যেখানে ইউরোপের অভিজাত ক্লাবগুলোর চাপের মুখে ম্যাচ ও রাজস্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।[৩] এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে "সামগ্রিক ফুটবল পিরামিডের জন্য উচ্চমানের ম্যাচ এবং অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থান প্রদান" করার অভিপ্রায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং একই সাথে "আনক্যাপড সংহতি প্রদানের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ইউরোপীয় ফুটবলের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সমর্থন প্রদান করা হয়েছে, যা লিগ রাজস্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাবে"।[১] পুরুষদের প্রতিযোগিতা ছাড়াও, সংস্থাটি "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব" একটি সংশ্লিষ্ট নারী সুপার লিগ চালু করার পরিকল্পনা করেছে।[১]
এই প্রতিযোগিতার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে ১২টি ক্লাব ঘোষণা করা হয়, উদ্বোধনী মৌসুমের পূর্বে আরো তিনটি ক্লাব যোগদানের কথা রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের "বিগ সিক্স", পাশাপাশি তিনটি স্পেনীয় ক্লাব এবং তিনটি ইতালীয় ক্লাব। ১৫টি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ক্লাব এই প্রতিযোগিতায় স্থায়ীভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং এই সংস্থাটি পরিচালনা করবে।[১] পারি সাঁ-জেরমাঁ এবং বায়ার্ন মিউনিখসহ ফরাসি ও জার্মান ক্লাবগুলো এই প্রতিযোগিতায় যোগডান করতে অস্বীকার করে বলে জানা গেছে।[৪]
এই প্রতিযোগিতায় ১৫টি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ক্লাবসহ ২০টি ক্লাব অংশগ্রহণ করবে। বাকি ৫টি ক্লাব পূর্ববর্তী মৌসুমে দলের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে উত্তীর্ণ হবে। আগস্ট থেকে শুরু করে, দলগুলো ১০ দলের দুটি গ্রুপে বিভক্ত হবে, ক্লাবগুলো সধ্য-সপ্তাহের সময় হোম-অ্যান্ড-অ্যাওয়ে সময়সূচী অনুযায়ী খেলবে, যেন ক্লাবগুলো ঘরোয়া লিগে অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ তিনটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার উত্তীর্ণ হবে, অন্যদিকে প্রতিটি গ্রুপ থেকে চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থান অর্জনকারী দলগুলো কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ দুটি দল নির্ধারণের জন্য দুই লেগের প্লে-অফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে দুই লেগের ম্যাচ আয়োজন করা হবে, মে মাসে এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল একটি নিরপেক্ষ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।[১]
এই প্রতিযোগিতাটি তার ক্লাবগুলোকে আনক্যাপড সংহতি প্রদানের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করতে প্রস্তুত, যা লিগের রাজস্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছিল যে সংহতি প্রদান বিদ্যমান ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার তুলনায় বেশি হবে, যা "ক্লাবগুলোর প্রাথমিক প্রতিশ্রুতির সময়কালে ১০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি" হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ক্লাবগুলো অবকাঠামো বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে সমর্থন করতে এবং করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব পূরণের জন্য ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো পাবে।[১] মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গান চেস পরিকল্পিত সুপার লিগের প্রধান আর্থিক পৃষ্ঠপোষক বলে জানা গিয়েছে, যা প্রতিযোগিতার জন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।[৫]
নিম্নলিখিত ফুটবল নির্বাহী এই সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে।[১][৬]
অবস্থান | নাম | অন্যান্য অবস্থান |
---|---|---|
সভাপতি | ![]() |
রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি |
সহ-সভাপতি | ![]() |
ইয়ুভেন্তুসের সভাপতি |
সহ-সভাপতি | ![]() |
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সহ-সভাপতি |
সহ-সভাপতি | ![]() |
লিভারপুলের পরিচালক |
সহ-সভাপতি | ![]() |
আর্সেনালের পরিচালক |
এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের ঘোষণা উয়েফা এবং ইংল্যান্ড, ইতালি এবং স্পেনের প্রথম স্তরের ফুটবল লিগের ফুটবল সংস্থা থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করে, যারা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল যে তারা সুপার লিগের আয়োজনকে সমর্থন করে না। সংস্থাগুলো একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছে যে তারা সুপার লিগকে এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার জন্য "বিচারিক এবং ক্রীড়া উভয় স্তরে আমাদের জন্য উপলব্ধ সমস্ত ব্যবস্থা বিবেচনা করবে"। উয়েফা পুনরায় জানিয়েছিল যে সুপার লিগের সাথে জড়িত যেকোন ক্লাবকে অন্য সব ঘরোয়া, ইউরোপীয় এবং বিশ্ব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে এবং তাদের খেলোয়াড়দের তাদের জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হতে পারে।[৭] ফরাসি ফুটবল ফেডারেশন ও জার্মান ফুটবল লিগ এবং শীর্ষ লিগ (যেখান থেকে এখনো কোন ক্লাব যোগ দেননি) প্রস্তাবিত সুপার লিগের বিরোধিতা করে বিবৃতি প্রকাশ করে।[৮][৯][১০]
ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন (ইসিএ), যার তৎকালীন সভাপতি আন্দ্রেয়া আগনেল্লি সুপার লিগের ভাইস-চেয়ারম্যান, একটি জরুরী সভা করে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তাদের বিরোধিতার কথা জানিয়েছে।[১১] সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ক্লাবগুলোর সাথে উয়েফা নির্বাহী কমিটির সদস্য আগনেল্লি ভার্চুয়াল সভায় যোগডান করেননি। পরবর্তীতে আগনেল্লি ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং উয়েফা নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যার ফলে ১২টি সুপার লিগ ক্লাবও ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশন ত্যাগ করেছে।[১২][১৩][১৪] ফিফাও এক ঘোষণায় এই প্রতিযোগিতায় অসম্মতি প্রকাশ করেছে।[১৫]
নীতিগতভাবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের চুক্তির প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় এবং স্যালফোর্ড সিটির সহ-মালিক গ্যারি নেভিল সুপার লিগের প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তিনি এই প্রস্তাবে বীতশ্রদ্ধ বোধ করছেন এবং দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।[১৬] তিনি আরো বলেন, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা থেকে নিষেধাজ্ঞা এবং পয়েন্ট কর্তনসহ প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।[১৭] টটেনহ্যাম হটস্পার সাপোর্টার্স ট্রাস্ট, আর্সেনালের সাপোর্টার্স ট্রাস্ট, চেলসি সাপোর্টার্স ট্রাস্ট এবং লিভারপুলের স্পিরিট অব শ্যাঙ্কলি গ্রুপসহ অসংখ্য ভক্ত দলও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।[১৮] ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন যে ইউরোপীয় সুপার লিগের পরিকল্পনা ফুটবল খেলার জন্য 'অত্যন্ত ক্ষতিকর' হবে এবং সাম্প্রতিক ক্লাবগুলোকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের ভক্তদের কাছে উত্তর দেওয়ার আহবান জানান।[১৯][২০] ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ এই প্রতিযোগিতার সমালোচনা করেন এবং প্রস্তাবিত ইউরোপীয় সুপার লিগে অংশ নিতে অস্বীকার করার জন্য ফরাসি ক্লাবগুলোর অবস্থানকে স্বাগত জানান।[২১]