দ্যনিস মুকওয়েগে (জন্ম ১লা মার্চ ১৯৫৫) কঙ্গোর একজন স্ত্রীরোগবিশারদ এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজেতা। তিনি বুকাবু'তে পেনজি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই কর্মরত আছেন, যেখানে তিনি বিদ্রোহী বাহিনী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিত্সা দিয়ে থাকেন।[১]
দ্বিতীয় কঙ্গো যুদ্ধ থেকেই তিনি ধর্ষণের শিকার হাজারো নারীকে চিকিত্সা সেবা প্রদান করে আসছেন। তার আঠারো ঘণ্টার কর্মদিবসে তিনি দৈনিক দশটি অস্ত্রোপচার করে থাকেন।[১][২] ২০১৮ সালে তিনি এবং নাদিয়া মুরাদ "যৌন নিপীড়নকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার এবং সশস্ত্র সংঘাত বন্ধে তাদের প্রচেষ্টার কারণে" যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[৩]
দ্যনিস মুকওয়েগে পরিবারের নয় ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয়। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। কারণ উন্নত চিকিত্সা সেবা থেকে বঞ্চিত কঙ্গোর নারীদের গর্ভধারণে জটিলতা দেখার পর তিনি চাইতেন তাদের সেবা করতে।[২]
১৯৮৩ সালে মেডিক্যাল ডিগ্রী নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব বুরুন্ডি থেকে স্নাতক হওয়ার পর দ্যনিস মুকওয়েগে বুকাবুর নিকটে লিমরা হাসপাতালে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন।[৪][৫] যদিও পরে যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাবে সন্তান জন্মদানের পর প্রায়ই ব্যাথাসহ নানা জটিলতায় ভোগা নারীদের সেবার জন্য তিনি স্ত্রীরোগ বিষয়ে ফ্রান্সের অঁজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে স্নাতক হন।[৪][৫][৬]
ফ্রান্সে পড়াশোনা শেষে দ্যনিস মুকওয়েগে পুনরায় লেমেরা হাসপাতালে যোগদান করেন, কিন্তু প্রথম কঙ্গো যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অনেকগুলো হিংসাত্মক ঘটনার কারণে তিনি বুকাবুতে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৯ সালে সেখানে পেনজি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।[৬]
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পেনজি হাসপাতালে জটিল স্ত্রীরোগ এবং ট্রমায় আক্রান্ত ৮৫ হাজারের অধিক (এক হিসাব অনুযায়ী এদের ৬০ শতাংশ যৌন নিপিড়নের স্বীকার) নারী রোগীকে সেবা দিয়ে আসছে, আর এসব রোগীর অধিংকাশই আসতেন সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে।[২] জার্মান ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল মিশন (ডিআইএইএম) মুকওয়েগেকে তার কাজে অর্থ ও ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে।[৭]
২০১২ সালের সেপ্টম্বরে দ্যনিস মুকওয়েগে জাতিসংঘে এক ভাষণ প্রদান করেন, যেখানে তিনি গনতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের বিপুল হারে গনধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান,[৮] এবং যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য কঙ্গো সরকার এবং অন্যান্য দেশের সমালোচনা করেন। তার মতে,"এটি একটি অন্যায্য যুদ্ধ এবং কেবল নারীদের প্রতি নির্যাতন এবং ধর্ষনকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।"[৯]
২৫ অক্টোবর ২০১২ সালে, চার অস্ত্রধারী ব্যক্তি তাঁর বাসভবনে হামলা চালায়, কিন্তু তখন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। হামলাকরীরা দ্যনিস মুকওয়েগের কন্যাকে জিম্মি করে এবং তাঁর ফেরার অপেক্ষা করতে থাকে। মুকওয়েগে ফেরার পর অস্ত্রধারীরা তাঁর দেহরক্ষীকে হত্যা করে এবং গোলাগুলির সময় মাটিতে পড়ে যাওয়ার ফলে মুকওয়েগে বেঁচে যান।[১০] হত্যাচেষ্টার পর মুকওয়েগে ইউরোপে চলে যান এবং পেনজি হাসপাতাল জানায় যে, তাঁর অনুপস্থিতে এর নিয়মিত কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।[১১]
১৪ জানুয়ারী ২০১৩ সালে তিনি পুনরায় বুকাবুতে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি ২০ মাইলব্যাপী দীর্ঘ ভীড়ে জনগনের উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন, বিশেষ করে তাঁর রোগীদের থেকে, যারা আনারস ও পেঁয়াজ বিক্রি করে তাঁর ফেরার টিকিটের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিল।[১২]
"প্রাইজ ফর কনফ্লিক্ট প্রেভেনশন" ফন্ডেশন চিরাক কর্তৃক (প্যারিস, অক্টোবর ২০১৩)[২৫] ২ ফরাসি রাষ্ট্রপতি জ্যাকুয়েস চিরাক ও ফ্র্যানকোইস হল্যান্ডের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদান
দ্য হিলারি ক্লিনটন এ্যাওয়ার্ড (ওয়াশিংটব, ডিসি, ফেব্রুয়ারি ২০১৪) জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদানের জন্য[২৬] ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হিউর সাথে
↑Mukwege, Denis (৪ মে ২০১৪)। "A glimpse of hope in the heart of Africa: towards the full implementation of the Addis Ababa Framework Agreement"। Peacebuilding। 2 (2): 221–223। ডিওআই:10.1080/21647259.2014.910385।