লেখক | জঁ-জাক রুসো |
---|---|
মূল শিরোনাম | Du Contrat Social |
অনুবাদক | সরদার ফজলুল করিম |
প্রচ্ছদ শিল্পী | ধ্রুব এষ (বাংলা অনুবাদ) |
দেশ | ফ্রান্স |
ভাষা | ফরাসি ভাষা |
বিষয় | দর্শন, সমাজবিজ্ঞান |
প্রকাশক | মাওলা ব্রাদার্স (বাংলা অনুবাদ) |
প্রকাশনার তারিখ | ফেব্রুয়ারি ২০০৬ (বাংলা অনুবাদ) |
আইএসবিএন | [[বিশেষ:বইয়ের_উৎস/আইএসবিএন 984 410 160 3|আইএসবিএন ৯৮৪ ৪১০ ১৬০ ৩]] {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ অক্ষর |
দ্যু কোঁত্রা সোসিয়াল (ফরাসি: Du Contrat social) (বাংলা: সামাজিক চুক্তি) অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক জঁ-জাক রুসোর রাজনৈতিক দর্শন ও রাষ্ট্রতন্ত্র বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ। ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত এই গ্রন্থে রুসো এমন কতগুলি সামাজিক সত্যকে উদ্ঘাটিত করার চেষ্টা করেছেন যে সত্যগুলি বর্তমানে সাধারণ স্বীকৃত সত্য বলে মনে হলেও সেকালে এই সত্যগুলির উদ্ঘাটন ছিল যথার্থই বিপ্লবী। এই বইটিকে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শসমূহের অন্যতম উজ্জীবক গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি প্রকাশের পর ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদগণ রুসোর প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।[১]
রুশোর জন্ম ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে; তার প্রয়াণ ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। জীবনের এক পর্যায়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্যারিস ত্যাগ করতে বাধ্য হন রুসো। এসময় মঁমরাঁসির বনভূমির উপকণ্ঠে লুক্সেমবুর্গের ড্যুকের (ইং:Duke of Luxemburg ) একটি বাসগৃহে অবস্থানকালে তিনি অন্য কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে এ গ্রন্থটিও রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেন ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দ। রাষ্ট্রতন্ত্র সম্পর্কে বইটির বিপ্লবাত্মক ধারণার কারণে ফরাসী রাজ রুষ্ট হতে পারে এই আশঙ্কায় রুসো এটি প্যারিসের পরিবর্তে অ্যামস্টারডাম থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন যদিো তাতে শেষ রক্ষা হয় নি। বস্তুত: রুসোর কঁত্রা সোসিয়াল তৎকালীন ফ্রান্সের মানুষের চিন্তা-চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিল যার ফলে ফরাসী বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।
রুসোর লিখনশৈলী দুরূহ। তার বাক্যগঠন রীতি জটিল ও লেখার ভঙ্গি নিরেট। ঠাসবুনোটে গাঁথা বিভিন্ন অভিনব ধারনাসূত্র অনেকটাই সাংকেতিক। বইটি পৃথিবীর ৩৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
আধুনিক সভ্যতার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রন্থের এর বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাষ্ট্র গঠন, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শন ও নীতি ইত্যাদি এই গ্রন্থের প্রধান প্রধান উপজীব্য। রুশোর নানা যুগান্তকারী গ্রন্থের মধ্যে এটি সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী। আধুনিক গণতন্ত্রের প্রায়োগিক বিষয়গুলির ওপর তিনি মৌলিক আলোকসম্পাত করেছেন।
রুসোর দ্যু কোঁত্রা সোসিয়াল চারটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে ৯ অধ্যায়ে তিনি যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন সেগুলির মধ্যে আছে আদিম সমাজের শাসন ব্যবস্থা, দাসপ্রথা, সার্বভৌম কে, সুশীল রাষ্ট্র, প্রকৃত সম্পত্তি ইত্যাদি। দ্বিতীয় পর্বে ১২টি বিষয়ের আলোচনা করেছেন যেগুলির মধ্যে আছে সার্বভৌমত্বের অবিচ্ছেদ্যতা, সার্বভৌমত্বের অখণ্ডতা, জনসাধারণের অভিপ্রায় কি অপরাজেয়, সার্বভৌম ক্ষমতার সীমানা, জীবন ও মৃত্যুর অধিকার, আইনের উৎস ও চৌহদ্দি, আইনপ্রণেতার দায়-দায়িত্ব, জনসাধারণের অধিকার, আইন প্রণয়নের বিবিধ পদ্ধতি ইত্যাদি।
গ্রন্থের তৃতীয় পর্বে রুসো ১৮টি বিষয় নিয়ে সুচিন্তিত মত তুলে ধরেছেন। এগুলোর মধ্যে আছে সরকারের রূপরেখা, বিভিন্ন রকম সরকার ব্যবস্থার গাঠনিক নীতিমালা, গণতন্ত্র, স্বৈরচারী সরকার ব্যবস্থা, রাজতন্ত্র, মিশ্র সরকার ব্যবস্থা, সব সমাজের (দেশের) জন্য সব রকম সরকার ব্যবস্থার অনুপযোগিতা, সুসরকারের চারিত্র্য লক্ষণ, সরকারের বখে যাওয়া, রাজনীতিবিদদের মহামারী, সার্বভৌম কর্তৃত্বের স্বরূপ, জনসাধারণের প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকার কি একটি চুক্তি, কীভাবে সরকারের উৎখাত ঠেকানো সম্ভব ইত্যাদি।
এই গ্রন্থের চতুর্থ তথা অন্তিম পর্বে রুসো ৮টি বিষয়ের ওপর আলোসম্পাত করেছেন, নবম অধ্যায় উপসংহার। যে সকল বিষয়ের ওপর শেষ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে জনগণের অভিপ্রায়ের অবিনশ্বরতা, নাগরিকের ভোটাধিকার, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন, একনায়কতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, সরকারের সেন্সরশিপের খড়গ,ইত্যাদি।
উপসংহারে রুসো বিশেষ কিছু যোগ করে নি। তার মতে মানুষের রাজনৈতিক অধিকারের যথাযথ নীতিসূত্র বর্ণনার পর এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের ভিত্তি কী হবে তা বলার পর যা প্রয়োজন তা হলো এই দুইয়ের অনুক্রমে আন্তর্জাতিক আইন, বাণিজ্য, যুদ্ধের অধিকার, জাতিসংঘ, আলোচনা চুক্তি ইত্যাদি বিষয়ক নীতিনির্ধারণী কাঠামো প্রণয়ন। এইসব সম্পূর্ণ নতুন একটি জগৎ বিধায় তিনি তিনি এই গ্রন্থে আলোচনার জন্য অন্তর্ভুক্ত করেন নি।
কঁত্রা সোসিয়াল গ্রন্থটিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন রুসো। এছাড়া রাষ্ট্রতন্ত্রের মৌলিক নীতি হিসাবে মানুষের স্বাধীনতা, সমতা ও ভাতৃত্ব এই তিনটি সূত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এই নীতিসূত্রগুলি পরবর্তীকালে সংঘটিত ফরাসী বিপ্লবের বীজমন্ত্র হিসাবে কাজ করেছিল। সামাজিক চুক্তি দ্বারা জনগণের অর্থাৎ নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তির কথা বুঝিয়েছেন রুসো। এমন একটি রাষ্ট্রতন্ত্রের দাবী করেছিলেন যেখানে রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষমতা জনগণের স্বাধীনতা হরণ করবে না। এগুলিই আধুনিক কালের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। রুসো রাষ্ট্রক্ষমতার ভারসাম্য আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন যাতে সমাজ দুর্নীতি ও অবিচার থেকে সুরক্ষিত থাকে এবং মানুষ একই সঙ্গে সুখী ও সৎ হওয়ার সুযোগ লাভ করে। রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কে মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী রুশো বলেন[৩]:
সমাজ গঠনের এমন একটা আদর্শ থাকতে হবে যাতে সমাজভুক্ত সকল ব্যক্তির জীবন ও সম্পদ সমাবেত শক্তির সাহায্যে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে এবং প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় আপন আদেশই পালন করবে ও আগের মতই স্বাধীন থাকবে।
ব্যক্তি অর্থাৎ নাগরিক রাষ্ট্রগঠনের স্বার্থে নিজ স্বাধীনতা কিছুটা বিসর্জন দেয়—কিন্তু তাই বলে সে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিগ্রহের শিকার হতে পারে না। রুসোর সাধারণতন্ত্র রাষ্ট্রপরিচালনা ব্যবস্থা এমন হবে যাতে রাষ্ট্রক্ষমতা মুষ্টিমেয় ব্যক্তির শোষণ, অন্যায়, জবরদস্তি, নির্যাতন ও নির্বিচার দুর্নীতির হাতিয়ারে পরিণত না হয়। কঁত্রা সোসিয়াল গ্রন্থে রুশোর রাষ্ট্রগঠনের ঝুঁকির সূত্রে রাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিপীড়নমূলক ভূমিকার হাত থেকে নাগরিক ও সমাজকে উদ্ধারের পথপ্রদর্শন করেছেন।
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য);