দ্রবীভূত ভার হল একটি প্রবাহের মোট পলির বোঝার অংশ যা দ্রবীভূত হয়ে বাহিত হয়, বিশেষত রাসায়নিক আবহবিকার থেকে দ্রবীভূত আয়ন। নদীর নিকাশী অববাহিকা থেকে মোট সরানো সামগ্রীর মধ্যে এটিই প্রধান, এর সাথে আর থাকে জলে ভাসন্ত কণা এবং নদীগর্ভের ভার। দ্রবীভূত ভার হিসাবে বহন করা উপাদানের পরিমাণ সাধারণত ভাসন্ত কণার চেয়ে অনেক কম[১], যদিও এটি সবসময় ঘটেনা, বিশেষত যখন উপলভ্য নদী প্রবাহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখন সেচ বা শিল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়। কোনও ভূভাগ থেকে সংগ্রীহিত মোট প্রবাহ সামগ্রীর উল্লেখযোগ্য অংশ দ্রবীভূত ভারে থাকে, প্রবাহের জলের রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণে এর গঠন জানা গুরুত্বপূর্ণ।
দ্রবীভূত ভার মূলত রাসায়নিক আবহবিকারের হার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি আবার নির্ভর করে জলবায়ু এবং আবহাওয়া, যেমন আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার উপর।[২] ক্ষয়ীভবন, অনাচ্ছাদন এবং অতীতের জলবায়ু পুনর্গঠন করা ইত্যাদি অনেক প্রয়োজনীয় ভূতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে দ্রবীভূত ভারের উপযোগিতা রয়েছে।
সাধারণত কোনও নদী থেকে জলেরর নমুনা গ্রহণ করে এবং তার উপর বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালিয়ে দ্রবীভূত ভারের পরিমাপ করা হয়। প্রথমে নমুনার পি.এইচ, পরিবাহিতা, এবং বাইকার্বনেট ক্ষারত্ব পরিমাপ করা হয়। এরপরে, জলে ভাসন্ত অবক্ষেপণ দূর করার জন্য নমুনাগুলি পরিস্রাবিত করা হয় এবং অণুজীব বৃদ্ধি রোধ করতে ক্লোরোফরম দিয়ে নমুনা সংরক্ষণ করা হয়। অন্য নমুনা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে অম্লযুক্ত করে দ্রবীভূত আয়নের অবক্ষেপন রোধ করা হয়। তারপরে, প্রতিটি দ্রাবকের ঘনত্ব নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম আয়নগুলির ঘনত্ব নির্ধারণ করা যায় শিখা আলোকমিতি দিয়ে, আবার ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আয়নের ঘনত্ব মাপা যায় পারমাণবিক শোষণ বর্ণালী দিয়ে।[৩]
দ্রবীভূত ভার মাটি গঠনের হার এবং রাসায়নিকের ক্ষয়ীভবনের অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করতে পারে। বিশেষত, দ্রবীভূত ভার এবং শক্ত অবস্থায় যে ভার ছিল তাদের অন্তর ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ের গতিশীলতা নির্ধারণে সহায়ক। এছাড়াও, দ্রবীভূত ভার অতীতে পৃথিবীর জলবায়ু পুনর্গঠনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ যে কোনও প্রবাহের দ্রবীভূত ভারের জন্য রাসায়নিক আবহবিকার প্রধান অবদান। সিলিকেট শিলার রাসায়নিক আবহবিকার বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের প্রাথমিক উপাদান, কারণ বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই অক্সাইড কার্বনেট – সিলিকেট চক্রের মাধ্যমে কার্বনেট শিলা তে রূপান্তরিত হয়। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ঘনত্ব গ্রীনহাউজ প্রতিক্রিয়ার প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা নির্ধারণ করে।[৪]
অনাচ্ছাদন প্রক্রিয়া হল পৃথিবীর ভূভাগের শীর্ষ স্তরের অবক্ষয়। অনাচ্ছাদনের হার সরাসরি পরিমাপ করার পক্ষে খুব কম হয় বলে, একে পরোক্ষভাবে মাপা যায়। যে অঞ্চলের অনাচ্ছাদন পরিমাপ করতে হবে সেই অঞ্চলের প্রবাহের পলল ভার পরিমাপের মাধ্যমে এটি নির্ধারণ করা যেতে পারে। এটি সম্ভব কারণ যে কোনও উপাদান যখন কোনও স্রোতের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুর মধ্য দিয়ে যায় তখন ধরতে হবে সেই উপাদানটি নিশ্চিতভাবে সেই প্রবাহের উজানের দিকে নিকাশী অববাহিকার কোনও জায়গা থেকে আগত। ভূসংস্থানীয় উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে মোট প্রবাহ ভারে দ্রবীভূত ভারের অবদান হ্রাস পায়, কারণে খাড়া পৃষ্ঠতলে, বৃষ্টির ধারার শিলায় অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা কম, এর ফলে কম রাসায়নিক আবহবিকার হয়, যা দ্রবীভূত ভার হ্রাস করে।[৫]
জলের মাধ্যমে সমুদ্রে, বা নদী অববাহিকায় স্থলে ঘেরা হ্রদে লবণ বহনের প্রক্রিয়াটিকে লবণের রফতানি বলা হয়। যখন পর্যাপ্ত লবণের রফতানি হয় না, নদীর অববাহিকা অঞ্চল ধীরে ধীরে লবণাক্ত মাটি এবং / অথবা ক্ষারীয় মাটি তে রূপান্তরিত হয়, বিশেষত নিম্ন অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটে।[৬]
নদী | নিকাশী অঞ্চল, ১০৬ কিমি২ | প্রক্ষেপ, ১০৯ মি৩/বছর | মোট দ্রবীভূত কঠিন বস্তু (টিডিএস), ১০৬ টন/বছর |
---|---|---|---|
শীয়াং | ০.৩৫ | ২২২ | ৪২.১ |
ছাং চিয়াং | ১.৯৫ | ৮৯৯ | ১৫৩.৯ |
হুয়াংহো | ০.৭৫ | ৩২.৯ | ১৩.১ |
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র | ১.৪৮ | ১০৭১ | ১২৯.৫ |
লেনা | ২.৪৪ | ৫৩২ | ৫০.৬ |
আমাজন | ৪.৬৯ | ৬৯৩০ | ৩২৪.৬ |
অরিনোকো নদী | ১.০০ | ১১০০ | ৫১.৩ |
বিশ্বে মোট | ৩৭৪০০ | ৩৮৪৩.০ |