দ্রাব্যতা পদার্থের একটি ভৌত ধর্ম। কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবককে সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত করতে যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত করতে হয় তাকেই ঐ তাপমাত্রায় ঐ দ্রবের দ্রাব্যতা বলে।[১] কোন পদার্থের দ্রাব্যতা প্রকৃতপক্ষে ব্যবহৃত দ্রাবক, তাপমাত্রা ও চাপের উপর নির্ভর করে। তাপমাত্রার মত চাপও দ্রবণকে প্রভাবিত করে, সেটা তরল হোক বা বায়বীয়ই হোক। তাই দ্রাব্যতার সংজ্ঞা দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপ উল্লেখ করা হয়। দ্রাব্যতা প্রকাশ করা হয় ঘনমাত্রা প্রকাশের বিভিন্ন একক (মোলারিটি, মোলালিটি, নরমালিটি ইত্যাদি) দ্বারা। কারণ দ্রাব্যতা মূলত কোন দ্রবণে দ্রবের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রাকেই প্রকাশ করে । দ্রাব্যতা একটি আনুপাতিক রাশি। এর কোন একক নেই। যেমনঃ ৩৫° সে. তাপমাত্রায় KNO3 এর দ্রাব্যতা হল 60 তাহলে বোঝা যাবে যে ঐ তাপমাত্রায় 100g পানিতে সর্বাধিক 60g KNO3 দ্রবীভূত হয়ে দ্রবণ উৎপন্ন করবে ।
দ্রাব্যতা ৪টি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল:
১. দ্রবের প্রকৃতি
২. দ্রাবকের প্রকৃতি
৩. চাপ
৪. তাপমাত্রা ৫. ঘনমাত্রা
তরল দ্রাবকে গ্যাসীয় দ্রাব দ্রবীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে চাপের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । বিজ্ঞানী হেনরীর সূত্রানুসারে স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের কোন তরল পদার্থে কোন গ্যাসের দ্রাব্যতা এর উপর প্রযুক্ত চাপের সমানুপাতিক । অর্থাৎ চাপ যত গুণ বৃদ্ধি/হ্রাস করা হবে ঐ দ্রাবকে ঐ দ্রাবের দ্রাব্যতা ঠিক তত গুণই বৃদ্ধি/হ্রাস পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে গ্যাস ও তরল এর মধ্যে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটেনা। উদাহরণস্বরূপ তরল পানীয় বা সোডা ওয়াটারের বোতলেে উচ্চচাপে CO2 গ্যাস দ্রবীভূত থাকে। বোতলের মুখ খোলার সাথে সাথে বোতলের ভিতরের চাপ কমে যায় এবং অতিরিক্ত CO2 গ্যাস বুদবুদ আাকারে বেরিয়ে আসে। চাপ হ্রাসের সাথে সাথে CO2 এর দ্রাব্যতার হ্রাস ঘটে- তাই এমনটি হয়।
এটিকে নিম্নলিখিত ভাবে প্রকাশ করা হয়:
where হল হেনরির ধ্রুবক, যা তাপমাত্রার ওপর নির্ভরশীল। (যেমন, ৭৬৯.২ L·atm/mol অক্সিজেন (O2) জলে, ২৯৮ K), হল আংশিক চাপ, ও হল দ্রবীভূত গ্যাসের গাঢ়ত্ব (mol/L এককে)।
সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দ্রবের দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়। আবার তাপমাত্রা হ্রাসের সাথে সাথে দ্রাব্যতা হ্রাস পায়। ব্যতিক্রম NaOH; এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে দ্রবের দ্রাব্যতা হ্রাস পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে দ্রাব্যতার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
১। KNO3, NaNO3, KCl, Pb(NO3)2, K2CO3 প্রভৃতি দ্রবের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রাব্যতা বৃদ্ধি পায়। তবে KNO3 এর দ্রাব্যতা বৃদ্ধির হার অন্যসব দ্রব অপেক্ষা বেশি ।
২। NaCl এর ক্ষেত্রে দ্রাব্যতার উপর তাপমাত্রার তেমন কোনো প্রভাব নেই ।
কোনো নির্দিষ্ট দ্রবণে উপস্থিত আয়নসমূহের ঘাতসমূহের ঘনমাত্রার গুণফলকে আয়নিক গুণফল Kip বলে। আয়নিক গুণফল এর একক নেই। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা ভূমিকা রাখতে পারে না। কারণ দ্রবণে উপস্থিত সম্পূর্ণ লবণকে এখানে বিবেচনা করা হয়। লবণটির কতো অংশ দ্রবীভূত আছে আর কতোটুকু অধঃক্ষেপ অবস্থায় তা ভূমিকা রাখে না(অতিপৃক্ত দ্রবণ)। অথবা আরোও কতটুকু লবণ দ্রবীভূত করা যাবে তাও ভূমিকা রাখে না Kip এর মানে। শুধুমাত্র উপস্থিত লবণটুকুই বিবেচ্য।
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্বল্প দ্রবণীয় লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণে তার উপাদান আয়নসমুহের ঘাত সহ ঘনমাত্রার সর্বোচ্চ গুণফলকে লবণটির দ্রাব্যতা গুণফল বলে।এটি একটি ধ্রুবক।এর কোনো নির্দিষ্ট একক নেই। কোনো দ্রাবকে লবণটি কিভাবে বিযোজিত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এর একক।একে Ksp দ্বারা প্রকাশ করা হয়। Ksp হলো কোনাে দ্রবণে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় দ্রবীভূত হতে পারে এমন পরিমাণ স্বল্প দ্রবনীয় লবণের আয়নসমূহের ঘাত সহ ঘনমাত্রার গুণফল।
সম্পৃক্ত দ্রবণের আয়নিক গুণফল হলো দ্রাব্যতা গুণফল । নির্দিষ্ট দ্রবণে Ksp এর মান তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে Ksp বৃদ্ধি পায়, তাপমাত্রা হ্রাস পেলে Ksp হ্রাস পায়। কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে Kip যদি Ksp বেশি হয়, তাহলে দ্রবণটি অতিপৃক্ত, অর্থাৎ লবণের পরিমাণ বেশি। এজন্য দ্রবণে লবণটির অধঃক্ষেপ পড়বে। যদি Kip Ksp এর সমান হয়, তাহলে দ্রবণটি সম্পৃক্ত। যদি Kip, Ksp এর কম হয় তাহলে সেই দ্রবণটিকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলা যায়। অর্থাৎ দ্রবণে আরোও লবণ যোগ করা যাবে সম্পৃক্ত দ্রবণ প্রস্তুত করতে। মূলত দ্রাব্যতা গুনফল কথাটি আলোচিত হয় সম্পৃক্ত দ্রবণের বেলায়।