দ্রুপদ | |
---|---|
মহাভারত চরিত্র | |
অস্ত্র | গদা, তীর এবং ধনুক |
পরিবার | পৃষৎ (পিতা), সুচিত্র (ভাই) |
সন্তান | শিখণ্ডী, ধৃষ্টদ্যুম্ন, দ্রৌপদী, সত্যজিৎ, বৃক, উত্তামঝা, কুমার, যুধমন্যু, পাঞ্চাল্য, সুরথ, শত্রুঞ্জয় এবং জন্মেজয় |
দ্রুপদ (সংস্কৃত : द्रुपद, মানে, অটল পা বিশিষ্ট বা স্তম্ভ[১]) আবার যজ্ঞসেন নামেও পরিচিত (সংস্কৃত : यज्ञसेन, অর্থ, যার সেনাদল যজ্ঞের জন্য) হলেন মহাভারতের একটি চরিত্র। তিনি দক্ষিণ পাঞ্চাল ভূমির রাজা ছিলেন।[২] তার রাজধানী কাম্পিল্য হিসেবে পরিচিত ছিল।[৩] তার পিতার নাম ছিল পৃষৎ। দ্রুপদের নাম থেকেই তার কন্যার নাম দ্রৌপদী এবং যাজ্ঞসেনী।
পৃষৎ রাজার পুত্রের নাম দ্রুপদ। দ্রোণ আর দ্রুপদ সমবয়সী। দুই বালক ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে লেখা পড়া, অস্ত্রবিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা শিখতে লাগলেন। রাজা পৃষৎ ভরদ্বাজের বন্ধু। দ্রোণ আর দ্রুপদের মধ্যে ও সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। কিন্তু রাজন অসম বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না। আর দুনিয়ায় বন্ধুত্ব একটি শব্দ মাত্র। প্রভুত্বই সার কথা। এই জগতে সম্পর্ক একটাই তুমি প্রভু আমি ভৃত্য, অথবা আমি প্রভু তুমি ভৃত্য। রাজা পৃষতের মৃত্যু হলে দ্রুপদ উত্তর পাঞ্চালের রাজা হলেন। আর ভরদ্বাজ স্বর্গে গলেন। বিদ্বান তাপস দ্রোণ হলেন আশ্রমিক। একজন সিংহাসনে, আর একজন কুশাসনে। দ্রোণের জীবন পথ আর তার বাল্য বন্ধুর জীবন পথ ভিন্ন। সময় চলছে দিন, মাস, বছর, বছরের পর বছর। দ্রোণ শরদ্বানের কন্যা কৃপীকে বিবাহ করলেন। এই বার তিনি সংসারি হলেন। দ্রোণ মহেন্দ্রপর্বতে পরশুরামের কাছে গেলেন। তাকে সন্তুষ্ট করে বললেন, "হে ভার্গব, আপনি সমস্ত অস্ত্র ও শস্ত্র প্রয়োগ এবং সংহার বিদ্যা আমাকে দান করুন।" পরশুরাম বললেন, তথাস্তু। দ্রোণ হলেন অদ্বিতীয় আচার্য। এই আনন্দ সংবাদ কাকে জানাবেন? প্রিয় সখা দ্রুপদকে। দ্রুপদ রাজা হয়েছেন, সখা হিসেবে তাকে তো অভিনন্দন জানানো উচিৎ। দ্রুপদের সভায় গিয়ে দ্রোণ বললেন, বন্ধু চিনতে পারছ? আমি তোমার বাল্যসখা দ্রোণ। এ কি কোন কটু কথা? দ্রুপদের কি হল কে জানে। চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে গেল।
"O Brahmana (Drona), thy intelligence is scarcely of a high order, inasmuch as thou sayest unto me, all on a sudden, that thou art my friend! O thou of dull apprehension, great kings can never be friends with such luckless and indigent wights as thou! It is true there had been friendship between thee and me before, for we were then both equally circumstanced. But Time that impaireth everything in its course, impaireth friendship also. In this world, friendship never endureth for ever in any heart. Time weareth it off and anger destroyeth it too. Do not stick, therefore, to that worn-off friendship. Think not of it any longer. The friendship I had with thee, O first of Brahmanas, was for a particular purpose. Friendship can never subsist between a poor man and a rich man, between a man of letters and an unlettered mind, between a hero and a coward. Why dost thou desire the continuance of our former friendship? There may be friendship or hostility between persons equally situated as to wealth or might. The indigent and the affluent can neither be friends nor quarrel with each other. One of impure birth can never be a friend to one of pure birth; one who is not a car-warrior can never be a friend to one who is so; and one who is not a king never have a king for his friend. Therefore, why dost thou desire the continuance of our former friendship?"
ভুরু কুঁচকে কর্কশ কণ্ঠে বললেন, কে তুমি? তোমার বুদ্ধি-সুদ্ধি, কাণ্ডজ্ঞান আছে বলে মনে হয় না৷ কারণ তুমি প্রথমেই আমাকে সখা বলে পরিচয় দিয়েছ। নির্বোধ। আমি রাজা, তোমার মতো শ্রীহীন দরিদ্রের আমি সখা হতে যাব কোন দুঃখে। তোমার সঙ্গে বাল্যকালে যে সখ্য ছিল, উহা কেবল খেলার ও পড়ার স্বার্থের জন্য। শোন ব্রাহ্মণ, দরিদ্র কখনো ধনীর, মূর্খ কখনো পণ্ডিতের, ক্লীব কখনো বীরের সখা হতে পারে না। মানুষের অহংকারই শত্রুতার বীজ, এই বীজ থেকে মাথা তুলবে একটি ধ্বংস বৃক্ষ, ভূমি হবে কুরুক্ষেত্র। ভেতরে জ্বলছে আগুন। বুকে বাজছে দামামা প্রতিশোধের। কীভাবে তা নেবেন এই ব্রাহ্মণ। কৃপাচার্যের গৃহে আশ্রিত। উপার্জন শূন্য। ব্রাহ্মণের চিরাচরিত বৃত্তি অবলম্বনে দারিদ্র্য ঘুচবে না, সেই কারণেই অস্ত্রবিদ্যা আয়ত্ত করে ক্ষত্রিয় হতে চাইলেন। ভীষ্ম সসম্মানে তাকে রাজপ্রাসাদে বরণ করে নিলেন। রাজ পুত্রদের অস্ত্রবিদ্যা যুদ্ধবিদ্যা দান করবেন। অভাব কিছু রইল না। কিন্তু অন্তরের জ্বালা! স্ত্রীর সামনে বন্ধু দ্রুপদের কাটা কাটা কথা! দুহাত বিস্তারিত করে বাল্য বন্ধুকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে ছিলেন, কিন্তু হয় নি। আচার্য দ্রোণ তার ছাত্র রাজপুত্রদের বললেন, হে নিষ্পাপ শিষ্যবৃন্দ, আমার একটি বিশেষ আকাঙ্ক্ষার কথা আজ তোমাদের জানাই। তোমাদের অস্ত্রশিক্ষা সম্পূর্ণ হলে আমার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। তোমাদের মধ্যে কে কে সমর্থ উঠে দাড়াও। এই ভাবে সমস্ত শিষ্যদের ডেকে বললেন আমার শিক্ষা শেষ। এই বার গুরুদক্ষিণা। কী দেবে আমাকে? আমি বলছি তোমরা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ কে যুদ্ধে পরাজিত করে বন্দি করে আমার কাছে নিয়ে এসো। এই আমাকে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ দক্ষিণা। অনেক দিন ধরে আমার অন্তরে একটা আগুন জ্বলছে। তখন কুমারগণ সকলেই রথে চড়িয়া দ্রোণের সহিত দ্রুত গতিতে রাজ্যের দিকে ধাবিত হইলেন। দ্রোণাচার্য শিষ্যদের নিয়ে যুদ্ধে চলছেন। বাহিনীতে রয়েছেন দূর্যোধন, কর্ণ, যুযুৎসু, দুঃশাসন, বিকর্ণ, জলসন্ধ, পঞ্চপাণ্ডব। দ্রুপদ আর তার মন্ত্রীদের বন্দী করে দ্রোণাচার্যের কাছে আনা হল। অস্ত্রধারী দ্রোণাচার্য এই ক্ষণটির অপেক্ষায় ছিলেন। এসো, এসো রাজা এসো! কোথায় তোমার সিংহাসন! রাজমুকুট, রাজছত্র, অমাত্য বিমাত্য! রাজভূষণের এ কী অবস্থা! নিশ্চয়ই তুমি আমার বন্ধু নও! বন্ধু ভেবে আমাকে আলিঙ্গনের চেষ্টা করো না। তুমি এখন রাজ্যহারা ভিখারী। রাজার বন্ধু কি ভিখারী হতে পারে? পাঞ্চালের রাজা এখন আমি ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ দ্রোণাচার্য। না না আমি তোমাকে প্রানে বধ করবো না কারণ আমি যে ব্রাহ্মণ, ক্ষমাই ব্রাহ্মণের ধর্ম। তাছাড়া, তুমি যে আমার বাল্যবন্ধু! সে কথা আমি ভুলি কেমন করে। তবে আমি তোমাকে একটি কথা বলছি শোনো? এই যে গঙ্গা নদী দেখতে পারছো না ওই নদীর দক্ষিণ দিকে রাজা তুমি। আর উত্তর দিকে রাজা আমি, এই কথা শুনে দ্রুপদ রাজি হয়ে গেলেন। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন আমার একটি মহাশক্তিশালী পুত্র চাই তবেই এই দ্রোণাচার্য কে পরাজিত করতে পারবো।
দ্রুপদ তার কন্যা দ্রৌপদীর জন্য একটি স্বয়ম্বর (সর্বসাধারণে স্বামীর নিজ-পছন্দ) আয়োজন করেন। দ্রৌপদীর হাত জেতার জন্য, আমন্ত্রিত রাজাদের একটি প্রকাণ্ড আকারের ধনুক বাঁকাতে হবে এবং একটি দূরবর্তী লক্ষ্যে একটি ঘূর্ণায়মান বৃত্তে একত্রে পাঁচটি তীর নিক্ষেপ করতে হবে। সকল রাজা ধনুকের ছিলা বাঁধতে অক্ষম এবং কাজটিতে নিষ্ফল হন,[৫] যখন কর্ণ প্রায় সক্ষম হতে চলেছিলেন তিনি দ্রৌপদীর কারণে থেমে যান। তৎপর, অর্জুন অনুষ্ঠানে সফল হয়ে যান এবং দ্রুপদ তাকে জামাতা হিসেবে স্বীকার করে নেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যখন দ্রৌপদীকে কুন্তীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি তার পুত্রদের সাধারণ সম্পত্তি হিসেবে যা জিতা হয়েছে তা ভাগ করে নিতে বলন। তারা তাদের মায়ের কথা অনুযায়ী বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলেন এবং পাঁচ স্বামীর সাথে বিয়ের যথাযথতা দ্রুপদের প্রাসাদে আলোচিত হয়। ঋষি বেদব্যাস কুন্তীর প্রস্তাবকে সমর্থন করেন এবং এই বিবাহের অনুমোদন দেন।[৬]
মহাভারত অনুযায়ী দ্রুপদ প্রিষতের পুত্র যার জন্মগত নাম যাজ্ঞসেন। দ্রুপদের স্ত্রীকে মহাভারতে প্রিষতি বলা হয়, যার অর্থ প্রিষতের পুত্রবধু।[৭]
দ্রুপদ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ লড়েছিল। তিনি একজন মহারথী ছিলেন।[৮] প্রথমদিনে দ্রুপদ জয়দ্রথের সাথে যুদ্ধ করেন। অনেক সময় ধরে যুদ্ধের পর দ্রুপদ শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হন এবং পলায়ন করেন। চতুর্দশ দিনের রাতে বৃষসেনের সাথে যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে জ্ঞান হারান। দ্রুপদকে সরিয়ে নিলে, বৃষসেন তার বেশিরভাগ সেনাদলকেও ধ্বংস করে।[৮] দ্রোণাচার্য বিরাটের সাথে যুদ্ধের ১৫তম দিনে যুদ্ধ করেন এবং তাকে হত্যা করেন। এই সময় বিরাটকে সাহায্য করতে দ্রুপদ দ্রোণকে আক্রমণ করেন (দ্রুপদের ছোটবেলার বন্ধু দ্রোণ পরে দুজন দুজনের শত্রুতে পরিণত হয়)। দ্রোণ দ্রুপদকেও হত্যা করেন।[৯] দ্রোণের সাথে দীর্ঘ অসি যুদ্ধে মারাত্মক জখম হয়ে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর দ্রোণ তার মৃতদেহকে প্রণাম করেন এবং অশ্রুসিক্তভাবে বলেন তাকে তার বন্ধুকে হত্যা করতে হলো।[৯]