ধাত্রীগ্রাম | |
---|---|
শহর | |
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৩′ উত্তর ৮৮°১৬′ পূর্ব / ২৩.২১° উত্তর ৮৮.২৬° পূর্ব | |
দেশ | ![]() |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | পূর্ব বর্ধমান |
আয়তন | |
• মোট | ২.৬ বর্গকিমি (১.০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৯,৯৫১ |
• জনঘনত্ব | ৩,৮০০/বর্গকিমি (৯,৯০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• অফিসিয়াল | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭১৩৪০৫ |
যানবাহন নিবন্ধন | WB |
ধাত্রীগ্রাম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি শহর।
পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম নামের তাৎপর্য
সবসময় জেনে এসেছি যে, সাধারণত দেবদেবীর বা রাজাদের কোনো না কাহিনী এর মধ্যে যুক্ত থাকে। যাই হোক, বর্তমানে এটি একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম। অতীতে ভাগীরথী তীর ওয়াডেল রোড দিয়ে কালনার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ধাত্রীগ্রামের সন্নিহিত ভবানীপুর গ্রামে (গোস্বামী বাড়ি) রাজা তেজ চন্দ্রের গুরু বাড়ি ছিল এবং এই গুরু বংশ আজও ওখানকার বাসিন্দা। তাঁদের বংশে সেই আমলের বহু প্রাচীন রাধাবল্লভ ঠাকুরের পূজা হয়।[১]
শ্রী সুকুমার সেন বলেছেন যে ধাইগা্ঁয়ে ( ধার্য গ্রাম ) লক্ষণসেনের উপ রাজধানী( 'উপকারিকা' – এখনকার জমিদারির ভাষায় কাছারি বাড়ি) ছিল। অন্যদিকে, আবার যাকারিয়া সাহেবের মতানুসারে ধার্য গ্রাম ছিল একটি জয়স্কন্ধাবার। আর এই জয়স্কন্ধাবার এর অর্থ সেনা নিবাস। এখন যদি উপকারিকা উপ রাজধানী হয় তবে উপকারিকা এবং জয়স্কন্ধাবার এর অর্থ মোটামুটি এক।
কিন্তু প্রশ্ন এখানেই উঠছে যে, তবে ধার্যগ্রাম কি ধাত্রীগ্রাম ( ধাইগাঁ) ?
মাধাই নগর তাম্রশাসন পাঠে জানা যায় যে, শ্রাবণ মাসের সপ্ত বিংশতিদিবসে ( ১২০৩ খ্রীঃ ১১ আগষ্ট) ধার্যগ্রাম নামক স্থানের কাছেই অবস্থানকালীন ‘ পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির ‘, ‘ বরেন্দ্র ভূমির অন্তর্গত ‘ কান্তাপুরের ‘দিকে ‘ রাবণ হ্রদের ‘ ‘ দামুনিয়াপাটক ‘ নামক স্থানে মহারাজা লক্ষন সেন ‘ ঐন্দ্রীমহাশান্তি' অনুষ্ঠান পালন উপলক্ষে, গোবিন্দ দেববর্মা নামক একজন ব্রাহ্মণ কে ভূমিদান করেছিলেন। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তিনি ‘ ধার্যগ্রাম’ নামক স্থানের কাছেই অবস্থান করেছেন, কিন্তু ধার্যগ্রামে নয়।
এবার বলা যায়, ধার্যগ্রাম যেখানে ধাত্রীগ্রাম (ধাইগাঁ) নয়, সেখানে “ ধার্যগ্রাম’ থেকে ধাইগাঁ বা অপভ্রংশে ধাত্রীগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে “– ডঃ সুকুমার সেনের এই অভিমত নিরথক হয়ে পড়ে।
এখন প্রশ্ন, এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন দেবী জগদ্ধাত্রী, তবে কি তাঁরই নামানুসারে গ্রাম টির নাম হয়েছে ধাত্রীগ্রাম ?
আসলে ধাত্রী– দাঁই দের গ্রাম ছিল। এই অর্থেই জায়গাটির নাম ধাত্রীগ্রাম ( ধাইগাঁ) হয়েছিল। একথা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। আবার সাম্প্রতিককালের কোন গবেষক ‘ ধাত্রী' শব্দের অর্থ ‘ বহেড়া= বয়রা ‘ বার করে স্থানটিকে ‘ বহেড়া ‘ গাছের বন ছিল, এই অর্থে এখানকার নাম ধাত্রীগ্রাম হয়েছে। এই অভিমত স্থাপন স্থাপন করার প্রয়াসী করেছেন।
নদিয়ার ব্রাহ্ম শাসন গ্রামের সাথে সংযোগের সূত্রেই হয়তো এখানে জগদ্ধাত্রী এবং অন্নপূর্ণা পূজার প্রচলন হয়েছিল। কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী কৃষ্ণ চন্দ্রের পৌত্র অর্থাৎ ঈশ্বরচন্দ্রের পুত্র গিরিশ চন্দ্রকে ( ১৮০২-১৮৪১) জগদ্ধাত্রী পূজার প্রর্বতক বলতে চেয়েছেন। কিন্তু একথা ঠিক নয়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের উদ্যোগেই বাংলাদেশে জগদ্ধাত্রী পূজার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।
অন্যদিকে ডঃ অলোক কুমার চক্রবর্তী বলেছেন যে, ভারতচন্দ্রের কথা ধরে নিলে ১৭৪০ খ্রীঃ জুন মাসের পর থেকে ১৭৪২ খ্রীঃ মে মাসের মধ্যে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র অন্নপূর্ণা পূজা প্রবর্তন করেন বলে অনুমান করা যায়। আর তা যদি হয় তবে ধাত্রীগ্রামে জগদ্ধাত্রী ও অন্নপূর্ণা পূজার ইতিহাস প্রাচীনত্বের দিক থেকে ২৩০ বছরের উদ্ধে নয়।
শ্রী হরিদাস দাস বলেন যে, শ্রী শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু ধাত্রীগ্রাম রুদ্র নামক ব্রাক্ষ্মণ জমিদারকে দীক্ষিত করেন। ইনি ঘোর শাক্ত ও বৈষ্ণব বিদ্বেষী ছিলেন, পরে বৈষ্ণব হন এবং সেখানে একটি বিষ্ণু বিগ্ৰহ প্রতিষ্ঠা করেন। আনুমানিক চারশো বছর পূর্বে নদীয়া জেলার ব্রহ্ম শাসন গ্রাম থেকে তর্ক সিদ্ধান্ত নামক এক পন্ডিত ব্যক্তি ধাত্রীগ্রামে এসে বসবাস করেন। রামচন্দ্রের পুত্রের নাম ছিল চন্দ্রপ্রভা; তাই এই বংশটি চন্দ্রপ্রভা বংশ নামে পরিচিত। চন্দ্রপ্রভা ধাত্রীগ্রামে দুর্গা পূজা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বংশধরগণ পূজা চালাতে অক্ষম হওয়ায় উইল সম্পাদনের দ্বারা সার্বজনীন পূজায় পরিনত করেন। সে কারণে দেবী দুর্গাএই গ্রামে ‘ সাজার মা ‘ নামে পরিচিত। ১৯৮৪ সালে সাজার মায়ের বিরাট পূজামণ্ডপ নির্মিত হয়েছে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল , রামচন্দ্র যদি ৪০০ বছর পূর্বে ব্রহ্ম শাসন গ্রাম থেকে ধাত্রীগ্রামে এসে থাকেন, এবং তাঁর পুত্র চন্দ্রপতি যদি ধাত্রীগ্রামে দুর্গা পূজার প্রর্বতক করেন , তবে সেই দুর্গা পূজায় প্রাচীন তত্ব প্রায় ৩৫০ বছরের। কিন্তু সত্যিই কি তা এতো প্রাচীন ?
গ্রাম নাম প্রসঙ্গে সুকুমার সেন মন্তব্য করেছেন যে, বল্লাল সেনের তাম্রশাসনে উল্লিখিত ‘ 'ধার্যগ্রাম' থেকে সম্ভবত ধাইগাঁ বা অপভ্রংশে ধাত্রীগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে। গ্রামের পাশে একটি জঙ্গলের মধ্যে টেরাকোটা অলংকরণে শোভিত তিনটি মন্দির আছে। একটি পোড়ামাটির টালির উপর ক্ষোদিত লিপিতে মন্দির প্রতিষ্ঠার কথা জানা যায়। লিপিটি হল –
“১৬৭৩ শকাব্দে ভদ্রেশ্বর পদাশ্বুজ ইদম্
শ্রীমৎ সুভদ্রমাদস্য শিলামীজে। “
এই গ্রাম টি রামসুন্দর তর্কচূড়ামণি, সত্যব্রত সামশ্রয়ী, সত্য নারায়নের পাঁচালি লেখক কৃষ্ণকান্ত ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্মস্থান রূপে বিখ্যাত।
অতীতে বিদ্যাচর্চার যথেষ্ট প্রসার ছিল। এখানে স্মৃতি, ন্যায় ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য বহু ছাত্র আসতেন এবং তাঁরা গুরুগৃহে বসবাস করতেন। বস্ত্রশিল্পের ক্ষেত্রে ধাত্রীগ্রামে র তাঁতিদের দক্ষতা ও খ্যাতি আছে। উন্নত মানের কাপড়ের নকসা ও বোনার কৌশল সত্যিই অসাধারণ।।
ভারতের ২০০১ সালের আদম শুমারি অনুসারে ধাত্রীগ্রাম শহরের জনসংখ্যা হল ৯৬০৯ জন।[২] এর মধ্যে পুরুষ ৫২% এবং নারী ৪৮%।
এখানে সাক্ষরতার হার ৬৮%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৬% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৬০%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে ধাত্রীগ্রাম এর সাক্ষরতার হার বেশি।
এই শহরের জনসংখ্যার ১১% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য); |ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
![]() |
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |