ধূমাবতী | |
---|---|
মৃত্যুর দেবী | |
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের রাজপুত চিত্রকলায় ধূমাবতী। দেবী কৃষ্ণাম্বরা এবং হস্তে কুলো ধারণ করে আছেন। এই চিত্রে তিনি কাকবাহনা হলেও, সালংকারা, যা ধূমাবতীর প্রচলিত মূর্তিকল্পের এক ব্যতিক্রম। | |
দেবনাগরী | धूमावती |
অন্তর্ভুক্তি | মহাশক্তি, মহাবিদ্যা,পার্বতী |
আবাস | শ্মশান |
মন্ত্র | ধূঁ ধূঁ ধূমাবতী স্বাহা |
বাহন | কাক |
ধূমাবতী (সংস্কৃত: धूमावती, Dhūmāvatī) দশমহাবিদ্যার অন্যতমা এক তান্ত্রিক হিন্দু দেবী। তিনি মহাশক্তির তথা মহামায়া দুর্গার একটি ভীষণা রূপ। ধূমাবতী বৃদ্ধা, কুৎসিত বিধবার বেশে সজ্জিতা, এবং কাক ও চতুর্মাস ইত্যাদি হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী অমঙ্গলজনক বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিতা। ধূমাবতীর প্রচলিত মূর্তিকল্পে তাঁকে অশ্ববিহীন রথ বা কাকপৃষ্ঠে আরূঢ়া অবস্থায় এবং সাধারণত শ্মশানচারিণীরূপে কল্পনা করা হয়।
ধূমাবতী প্রলয়ের প্রতীক। তিনিই সৃষ্টির পূর্বে ও প্রলয়ের পরে বিদ্যমান "মহাশূন্যের" মূর্তিস্বরূপ। ধূমাবতী সাধারণত অমঙ্গলকর বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদিও তার সহস্রনাম স্তোত্রে তার কয়েকটি সদগুণেরও বর্ণনা করেছে। তিনি কোমলস্বভাবা ও বরদাত্রী। ধূমাবতী মহাগুরু; তিনি কল্যাণ ও অকল্যাণের বহু ঊর্ধ্বে স্থিত জগৎ চরাচর সম্পর্কে সর্বোচ্চ জ্ঞান প্রদান করেন। তার কুৎসিত রূপটি প্রকৃতপক্ষে একটি রূপক; এই রূপ সাধককে বাইরের নকল সৌন্দর্যের পরিবর্তে জীবনের অন্তর্নিহিত সত্যটি অনুসন্ধান করতে ও জানতে শেখায়।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, ধূমাবতী সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেন; তিনি সকল বিপদ থেকে ভক্তকে উদ্ধার করেন এবং জ্ঞান ও মোক্ষফল সহ সকল অভীষ্ট বস্তু প্রদান করেন। শত্রুনাশের উদ্দেশ্যে তার পূজা করা হয়। ধূমাবতীর পূজা আইবড়, বিধবা বা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের পক্ষেই প্রশস্ত বলে মনে করা হয়। বারাণসীতে অবস্থিত ধূমাবতী মন্দিরে দেবী অমঙ্গলসূচক বিষয়গুলির ঊর্ধ্বে স্থানীয় রক্ষাকর্ত্রীর মর্যাদা লাভ করেছেন। এখানে বিবাহিত যুগলেও তার পূজা দিয়ে থাকেন। যদিও ধূমাবতীর মন্দিরের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, তা সত্ত্বেও শ্মশান বা বনাঞ্চলে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে তার নিয়মিত পূজা হয়ে থাকে।
দশমহাবিদ্যার বাইরে ধূমাবতীর বিশেষ কোনো অস্তিত্ব নেই। মহাবিদ্যায় অন্তর্ভুক্তির পূর্বে তার কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখও পাওয়া যায় না।[১] দারিদ্র্য, বিষন্নতা ও দুঃখকষ্টের দেবী রূপে ধূমাবতীর সঙ্গে মারী ও দুঃখের দেবী নির্ঋতি এবং মন্দভাগ্য ও দারিদ্র্যের দেবী অলক্ষ্মীর মিল পাওয়া যায়।[২] ভারততত্ত্ববিদ কিনসলে দেবী জ্যেষ্ঠার সঙ্গেও ধূমাবতীর মিল রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন।[৩]
বৈদিক দেবী নির্ঋতি মৃত্যু, জরা বা ক্ষয়, মন্দভাগ্য, ক্রোধ ও চাহিদার দেবী। তাঁকে দূরে রাখার জন্য তার স্তুতি করা হত। নির্ঋতির মতো ধূমাবতীও অমঙ্গলসূচক বিষয় ও কঠোরতার দেবী। প্রাচীন হিন্দু দেবী জ্যেষ্ঠার মূর্তিকল্পটিও ধূমাবতীর অনুরূপ। ধূমাবতীর মতো তিনিও কৃষ্ণবর্ণা, কুৎসিত ও কাকবাহিনী। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠা মঙ্গলসূচক কিছুই সহ্য করতে পারেন না। ধূমাবতীর মতো তিনিও ঝগড়া, কুস্থানে বাস করেন এবং কোপনস্বভাবা দেবী।[৩]সারদাতিলক তন্ত্র গ্রন্থের টীকাকার লক্ষ্মণ দেসিকা ধূমাবতীকে জ্যেষ্ঠার অপর রূপ বলে উল্লেখ করেছেন।[৪] দেবী অলক্ষ্মী ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী লক্ষ্মী বা শ্রীর ভগিনী ও বিপরীত শক্তি। অলক্ষ্মী ও ধূমাবতী দুজনেই সম্মার্জনী বা ঝাঁটা ধরে থাকেন এবং তাঁদের পতাকায় কাকের ছবি থাকে। দুজনেই ক্ষুধা, তৃষ্ণা, চাহিদা ও দারিদ্র্যের দেবী।[৩]
ধূমাবতীর সঙ্গে অপর তিন দেবীর কিছু মিল থাকলেও, কিছু অমিলও আছে। যেমন, তারা কেউই ধূমাবতীর মতো বিধবার বেশে কল্পিত হন না বা তাঁদের কুৎসিত রূপকল্পের কোনো শাস্ত্রব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। আবার উক্ত তিন দেবীর নামও ধূমাবতীর নামস্তোত্রে অমিল। এছাড়া তাঁদের মধ্যে ধূমাবতীর যোদ্ধৃবেশ বা মহাবিদ্যারূপে তার সদগুণগুলিও দেখা যায় না। ডেভিড কিনসলে মনে করেন, উক্ত তিন দেবী ধূমাবতীর পূর্বসূরি হলেও, তারা ধূমাবতীর ঠিক "সমরূপীয়" নন।[৩] উল্লেখ্য, কিনসলের মতে, মহাবিদ্যার ধারণাটি দ্বাদশ শতাব্দীর আগে প্রচলিত ছিল না। দেবী পার্বতীর জীবনেও এই দেবীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেমন: একদিন কৈলাসে দেবী পার্বতী অত্যন্ত ক্ষুধার্থ কিন্তু ঘরে অন্ন নেই। তিনি এই কথা শিবকে বললে শিব তাকে অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু দেবী পার্বতী অপেক্ষা না করতে পেরে শিবকে ভক্ষণ করেন। তখন তিনি বিধবায় পরিণত হন। তার দেহ থেকে ক্রমশ ধূম বা ধোঁয়া নির্গত হয়। পরবর্তীতে, দেবী থেকে শিব বেরিয়ে আসেন এবং দেবী পার্বতী ধূমাবতী নামে অভিহিত হন।[৫]
ধূমাবতী হলেন সপ্তম মহাবিদ্যা। গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্র গ্রন্থে দশ মহাবিদ্যাকে বিষ্ণুর দশ অবতারের উৎস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গ্রন্থ মতে মৎস্য অবতারের উৎস হলেন ধূমাবতী। মুণ্ডমালা গ্রন্থেও একটি অনুরূপ তালিকা রয়েছে; তবে উক্ত গ্রন্থ মতে বামন অবতারের উৎস হলেন ধূমাবতী।[৬]
শাক্ত মহাভাগবত পুরাণে দশমহাবিদ্যার উৎপত্তির কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। এই কাহিনি অনুযায়ী, দক্ষের যজ্ঞে নিমন্ত্রিত না হয়ে দক্ষকন্যা তথা শিবের প্রথমা স্ত্রী সতী অপমানিতা হন। তিনি বিনা আমন্ত্রণেই যজ্ঞে উপস্থিত থাকতে চাইলে, শিব বারণ করেন। সতী অনুনয়বিনয় করে শিবকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হন না। তখন ক্রুদ্ধ হয়ে সতী দশমহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ধরেন। এই সময় ধূমাবতী দক্ষিণপূর্ব দিকে দণ্ডায়মান ছিলেন।[৭][৮][৯] অপর একটি কিংবদন্তিতেও অনুরূপ কাহিনি পাওয়া যায়; তবে এই মতে সতীর স্থলে প্রধান মহাবিদ্যা ও অপরাপর মহাবিদ্যাগণের উৎস কালীকে স্থাপন করা হয়েছে।[১০]দেবীভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, দশমহাবিদ্যা হলেন শাকম্ভরীর রূপভেদ ও সহযোদ্ধা।[১১]
শক্তিসংগম তন্ত্র গ্রন্থে উল্লিখিত কাহিনি অনুযায়ী, সতী দক্ষের যজ্ঞকুণ্ডে আত্মবলিদানের উদ্দেশ্যে ঝাঁপ দিলে সতীর দগ্ধ দেহের কালো ধোঁয়া থেকে ধূমাবতী উত্থিতা হন। তিনি হলেন "সতীর দেহাবশেষ" এবং তার অপমানিতা অবতার।[১২]প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে ধূমাবতীর বিধবা বেশের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। একদা সতী শিবের কাছে অন্ন প্রার্থনা করেন। শিব তাঁকে অন্ন দিতে অস্বীকার করলে, সতী তার প্রচণ্ড ক্ষুধার নিবৃত্তির জন্য শিবকেই ভক্ষণ করেন। শিব যখন তাঁকে নিষ্কৃতি দিতে অনুরোধ করেন, তখন সতী শিবকে পুনরায় উগরে দেন। এরপর শিব তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিধবার বেশ ধারণ করার অভিশাপ দেন।[১২] আর একটি লোকপ্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী, দুর্গা শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ধূমাবতীকে সৃষ্টি করেন। ধূমাবতী প্রাণঘাতী ধূমের সাহায্যে দৈত্যনাশ করেন।[১৩]
প্রাণতোষিণী তন্ত্র ধূমাবতীর ধ্বংসাত্মিকা শক্তি ও প্রচণ্ড ক্ষুধার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। উল্লেখ্য,শিবই তার ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করতে সক্ষম। এটি ধূমাবতীর বিধবাবেশী অমঙ্গলসূচক রূপ এবং তার স্বামীভক্ষণকারী সত্ত্বার প্রতীক।[১২]
ধূমাবতী তন্ত্র গ্রন্থে তাঁকে বৃদ্ধা ও কুৎসিত বিধবার রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি শীর্ণকায়া, দীর্ঘাকার, রোগগ্রস্থা ও পাণ্ডুরবর্ণা। তিনি অশান্ত ও কুটিল হৃদয়। তার দেহে অলংকারাদি নেই। তিনি পুরনো মলিন বস্ত্র পরিধান করে থাকেন। তিনি মুক্তকেশী। তার চক্ষুদুটি ভয়ংকর, নাসিকা দীর্ঘ ও বক্র, তার তীক্ষ্ণ দাঁতের কয়েকটি পড়ে গেছে, হাসলে তাঁকে ফোকলা মনে হয়। তার কর্ণদ্বয় কুৎসিত ও অসম আকারবিশিষ্ট। তার স্তন লম্বমান এবং তিনি এক হাতে একটি কুলো ধরে থাকেন এবং অপর হাতে বরমুদ্রা বা চিন্মুদ্রা দেখান। তিনি অশ্ববিহীন রথে আরূঢ়া এবং তার পতাকায় কাকের ছবি থাকে। ধূমাবতী চতুরা। তিনি সর্বদা ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকেন। তিনি কলহের কারণ ও ভয় প্রদানকারিনী।[১][২][১৪][১৫][১৬]
প্রপঞ্চসারাসার সমগ্র অনুযায়ী, ধূমাবতী কৃষ্ণবর্ণা ও নাগ অলংকারে ভূষিতা। তার বস্ত্র শ্মশানক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত ছিন্ন বস্ত্রখণ্ডে নির্মিত। তিনি দ্বিভূজা, শূল ও নরকপালধারিনী।[১] কোনো কোনো মূর্তিকল্পে শূলের জায়গায় তরবারি থাকে।[১৫] একই গ্রন্থের অপর একটি বর্ণনা অনুযায়ী, ধূমাবতী বৃদ্ধা, তার চর্ম কুঞ্চিত, তিনি ক্রুদ্ধমুখ এবং মেঘশ্যামবর্ণা। তার নাসিকা, চক্ষু ও কণ্ঠ কাকের ন্যায়। তিনি ঝাঁটা, কুলো, মশাল ও গদা ধারণ করে থাকেন। তিনি নিষ্ঠুরা ও তার ভ্রু কুঞ্চিত। ধূমাবতী এলোকেশী ও তিনি ভিক্ষুকের বস্ত্রপরিহিতা। তার স্তনযুগল শুষ্ক।[১] তার চুল পাকা, দাঁত ভাঙা ভাঙা ও বস্ত্র জীর্ণ ও ছিন্ন।[১৭]
কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধূমাবতী কাকবাহিনী ও ত্রিশূলধারিনী রূপে কল্পিত হন।[১৪] তিনি মুণ্ডমালাধারিণী, তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্তবর্ণা, এবং তার মাথার চুল আলুলায়িত।[১৫] কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি মৃত্যুর দেবতা যমের মহিষশৃঙ্গ ধারণ করেন। এটি মৃত্যুর সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রতীক।[১৭]
ধূমাবতী ভয়ংকরী, তার বেশ যোদ্ধার বেশ। শাক্তপ্রমোদ অনুযায়ী, তিনি ভয়ংকর শব্দ করে হাড় চিবিয়ে খান। তাছাড়াও তিনি রণভেরী বাজিয়ে ভয়ংকর শব্দ করেন। তিনি নরকপালের মালা পরে থাকেন, চণ্ড ও মুণ্ডের হাড় চিবিয়ে ভক্ষণ করেন এবং রক্তের সঙ্গে মদ মিশিয়ে খান।[১৭]
অবশ্য ধূমাবতীর রূপকল্পের কয়েকটি ব্যতিক্রমও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অষ্টাদশ শতাব্দীতে মোলারাম অঙ্কিত একটি চিত্রে দেবীকে দুটি শিকারী পক্ষীর দ্বারা বাহিত রথে আরূঢ়া মূর্তিতে দেখা যায়। এই মূর্তিতে তার এক হাতে কুলো ও অপর হাতে বরদা মুদ্রা থাকলেও, তিনি যৌবনবতী, সুডৌলস্তনযুক্তা এবং স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা। যা তার প্রচলিত মূর্তিকল্পের একেবারের বিপরীতধর্মী। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বারাণসীতে অঙ্কিত একটি চিত্রে দেবী ধূমাবতী কাকবাহনা, চতুর্ভূজা, ত্রিশূল, তরবারি, কুলো ও পাত্রহস্তা, কৃষ্ণবর্ণা, লম্বিতস্তনযুক্তা, শ্বেতবস্ত্রপরিহিতা ও শ্মশানচারিণী। এই ছবিতেও তিনি স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা ও তার নিম্নবস্ত্রে সোনার পাড়; যা বিধবার বেশের সঙ্গে বেমানান। অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি নেপালি পুথিচিত্রে আবার ধূমাবতীর সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি মূর্তি দেখা যায়। দেবী এখানে সম্পূর্ণ নগ্না, উন্নতস্তনযুক্তা, মুক্তাহার ও মুকুট পরিহিতা, পদযুগল দুপাশে দিয়ে ময়ূরের উপর দণ্ডায়মানা, এবং একটি দর্পণে স্বীয় মুখমণ্ডল দর্শনরতা। তার চতুর্পার্শ্বে অগ্নিবলয়, যা সম্ভবত শ্মশানচিতাগ্নির প্রতীক।[১৮]
বেদ বিশারদ গণপতি মুনি নিম্নলিখিত ভাষায় দেবীর বর্ণনা দিয়েছেন:
“ | তিনি শূন্যরূপে প্রকীর্তিতা এবং চৈতন্যের বিলীন রূপ। সকল সত্ত্বা ব্রহ্মে লীন হলে সমগ্র জগৎ চরাচরকে গ্রাস করেন তিনি। তখন দার্শনিক-কবিরা তাঁকে মহাগরিমাসম্পন্না জ্যেষ্ঠা ধূমাবতী নামে অভিহিত করেন। তার নিবাস নিদ্রা, স্মৃতিভ্রষ্টতা, মায়া ও মায়ায় আবদ্ধ জীবের মধ্যে। কিন্তু যোগীগণের মধ্যে তিনি সকল চিন্তা ধ্বংসকারিণী শক্তি এবং স্বয়ং সমাধি স্বরূপিণী। | ” |
— গণপতি মুনি, উমা সহস্রম্ ৩৮ , পৃ. ১৩—১৪, [১৯] |
ধূমাবতী সর্বক্ষেত্রেই বিধবা রূপে কল্পিতা হন। তাই তিনিই একমাত্র মহাবিদ্যা, যাঁর স্বামী নেই। যদিও তিনি শিবেরই স্ত্রী ছিলেন; কিন্তু শিবকে তিনি ভক্ষণ করে ফেলেন এবং পরে শিব কর্তৃক পরিত্যক্তা হন।[৩][২০] এই রূপে তিনি মহাবিশ্বের পুরুষকে ধ্বংস করে শূন্যের সঙ্গে বিরাজমান হন; কিন্তু তা সত্ত্বেও তার মহাশক্তি সত্ত্বাটি ক্ষুণ্ণ হয় না।[২][১৯] অনেক গ্রন্থেই ধূমাবতীর সদাঅতৃপ্ত ক্ষুধা ও তৃষ্ণার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এটি তার অতৃপ্ত কামনাবাসনার প্রতীক।[১৬]
দেবীর অশ্ববিহীন রথারূঢ়া বিধবার বেশটি সমাজ ও জীবন থেকে নির্বাসিতা নারীর প্রতীক। তিনি "সকল দুর্ভাগ্য, অনাকর্ষণীয় ও অমঙ্গলের প্রতীক"।[১৬] তিনি দরিদ্র, ভিখারিণী ও কুষ্ঠরোগাক্রান্তা। তিনি বাস করেন "জগতের ক্ষত", মরুভূমি, ভাঙা বাড়ি, দারিদ্র, ছেঁড়া কাঁথা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কলহ, সন্তানশোক, বন ও অন্যান্য বর্বর অধ্যুষিত অঞ্চলে।[২][১৭][২১] সাধারণত বিধবাদের অমঙ্গলজনক, বিপজ্জনক ও অশুভক্ষমতার অধিকারিণী বলে সন্দেহ করা হয়। তাই দিব্যবিধবা ধূমাবতীকেও সকলে ভয় করেন।[২১] ধূমাবতীকে কুটিল বৃদ্ধা বা ডাইনি বলে বর্ণনা করা হয়। তিনি চতুর ও কলহপ্রিয়া। এটি জীবনের ভয়ংকর দুঃখগুলির প্রতীক।[১৯][২২]
ব্যতিক্রমী চিত্রকলায় ধূমাবতী যৌবনবতী ও সালংকারা, তিনি যৌনেচ্ছা উদ্দীপনকারিণী, আকর্ষণীয়া অথচ অমঙ্গলময়ী বিধবা। তার সহস্রনাম স্তোত্রে বলা হয়েছে যে, তিনি আনন্দপ্রদায়িনী, সর্বসুন্দরী ও মাল্য, অলংকার ও বস্ত্রভূষিতা। এই স্তোত্র অনুযায়ী, তিনি কামের দেবী; রতি তার রূপভেদ। উল্লেখ্য, রতি শব্দের আক্ষরিক অর্থ "যৌনসংগম" এবং এটি হিন্দু প্রেমের দেবীরও নাম। তিনি যৌনসংগম উপভোগ করেন; যেখানে যৌনক্রিয়া চলে, সেখানে উপস্থিত থাকেন এবং স্বয়ং যৌনাচারে অংশ নেন। তিনি মদ্যপান করতে ভালবাসেন এবং উন্মত্তা অবস্থায় থাকেন। এই কারণে মদ্যপেরা তার পূজা করে। পঞ্চমকার সহযোগে তন্ত্রসাধনার সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্তা থাকেন।[২৩]
ধূমাবতী নারীর সমাজবিরোধী ও অমঙ্গলময় সত্ত্বার প্রতীক। তিনি লক্ষ্মীর বিপরীত শক্তি।[৪] অলক্ষ্মীর মতো ধূমাবতীও বর্ষাকালের চার মাসে (চতুর্মাস্য) পূজিতা হন। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় অশুভ জলশক্তি সূর্যালোককে আচ্ছন্ন করে রাখে এবং এই সময় বিষ্ণু নিদ্রা যান। এই সময় অন্ধকার রাজত্ব করে এবং আত্মা তার নিজস্ব ঔজ্জ্বল্য হারায়। এই সময়টিকে অশুভ মনে করা হয় এবং বিবাহাদি কোনো শুভ কাজ এই সময় হয় না।[২][৩]
দেবীর মূর্তিকল্পে মৃত্যুর বাহক কাকের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন গ্রন্থাবলিতে উল্লিখিত তার কাকের ন্যায় বৈশিষ্ট্যগুলো মৃত্যু ও অমঙ্গলের সঙ্গে তার সম্পর্কের প্রতীক। তার মূর্তিকল্পে মৃত্যুর আর একটি প্রতীক হল শ্মশানক্ষেত্র ও চিতাগ্নির উপস্থিতি। সহস্রনাম স্তোত্র অনুযায়ী, ধূমাবতী শ্মশানবাসিনী, শবারূঢ়া, ভষ্মমণ্ডিতা ও শ্মশানচারীদের আশীর্বাদকারিণী। প্রপঞ্চসারাসার সমগ্র অনুযায়ী তিনি মৃতদেহের শরীর থেকে বস্ত্র সংগ্রহ করে তা পরিধান করেন।[১৬] ধূমাবতী তমোগুণের প্রতীক, যা অজ্ঞতা ও অন্ধকারের সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাংস ও মদ্য পছন্দ করেন, তামসিক প্রকৃতির।[১৬][২৪]
নাম ও রূপের বাইরে, মানবীয় বর্গবিভাজনের বাইরে, একাকী ও অদ্বিতীয়া, প্রলয়রূপিণী তিনি (ধূমাবতী) সর্বোচ্চ জ্ঞান প্রকাশ করেন, যা আকারবিহীন, শুভাশুভ, শুদ্ধাশুদ্ধ ও মঙ্গল-অমঙ্গল-বিভেদরহিত।
- David Kinsley.[২৫]
কথিত আছে, ধূমাবতী মহাপ্রলয়ের সময় উপস্থিত হন। প্রলয়কালে উত্থিত প্রকাণ্ড কৃষ্ণমেঘ তার স্বরূপ। এই কারণে সহস্রনাম স্তোত্রে তাঁকে "প্রলয়রূপিণী", "প্রলয়মত্তা", "প্রলয়কারণস্বরূপিণী" ও "প্রলয়চারিণী" বলা হয়। অন্যমতে, তিনি মহাকালরূপী শিবের বিলোপের পরেও বিদ্যমান থাকেন। তাই তিনি "কালশক্তিস্বরূপিণী" এবং কালের বৃত্তের বাইরে অবস্থানকারিণী।[২৬] ধূমাবতী মহাপ্রলয় বা শেষ প্রলয়ের এবং বিশ্ববিনাশের পর উত্থিত ধোঁয়ার প্রতীক।[১৯][২৬]
"ধূমাবতী" নামটির অর্থ "ধূম্রময়ী"।[২][২৭] কথিত আছে, পোড়ালে ধোঁয়া হয় না, এমন কিছু উৎসর্গ না করলে তিনি খুশি হন না। তিনি ধূপ ও চিতার ধোঁয়া পছন্দ করেন, যা ধ্বংসের প্রতীক। তিনি ধোঁয়ার আকারে বিহার করেন এবং যেখানে খুশি সেখানে যান।[২৮]
ধূমাবতী সাধারণত অমঙ্গলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও সহস্রনাম স্তোত্রে তার কয়েকটি সদগুণেরও উল্লেখ রয়েছে।[২৯] তিনি বরদাত্রী ও কোমলহৃদয়া। তার স্তোত্রে বলা হয়েছে, তিনি নারীগণের মধ্যে বাস করেন এবং তাঁদের দ্বারা পূজিতা হন। এই স্তোত্রে তাঁকে সন্তানদাত্রীও বলা হয়েছে।[৩০]
পূর্বপুরুষ বা পিতামহী সত্ত্বায় ধূমাবতী মহাগুরু ও পথনির্দেশকারিণী। তিনি জীবন ও মৃত্যু-সংক্রান্ত চরম সত্য জ্ঞান প্রদান করেন। যা অবশ্যম্ভাবী তা আচ্ছাদিত করে তার ধোঁয়া। কিন্তু এর ফলে প্রকাশিত হয় "অজানা ও অরূপের" গুপ্ত সত্য।[১৯] ফ্রলে বলেছেন, তার বাইরের দরিদ্রবেশটি একটি মায়া-আচ্ছাদনমাত্র, যা তার অন্তর্নিহিত সত্য রূপটিকে ঢেকে রাখে। তিনি প্রতীক সেই "সৌভাগ্যের যা দুর্ভাগ্যে ছদ্মবেশে আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়।"[২২] ধূমাবতী "যন্ত্রণার শক্তির" মূর্তরূপ। ধূমাবতীর দোষগুলি আসলে ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও বৈরাগ্যের মতো গুণগুলির জন্মদাতা। জীবনের দোষগুলি প্রকাশ না পেলে, সেই দোষের উত্তরণ ঘটে না এবং সত্যও মায়ার ধূম্রাচ্ছাদনের আড়ালেই থেকে যায়।[৩১]
ধূমাবতীর বাইরের অমঙ্গলময় সত্ত্বা ও তার ভয়ংকরী মূর্তিটি কামনাবাসনার নিবৃত্তিকে চরমপ্রাপ্তি মনে করার বিপদটি উদ্ঘাটন করে। কুলো শস্য বাছাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি বাইরের মায়া থেকে অন্তরের বাস্তবকে বেছে নেওয়ার প্রতীক। তার কুৎসিত রূপ ভক্তকে এই শিক্ষাই দেয় যে, বাইরের চাকচিক্যময় রূপের বদলে অন্তর্নিহিত সত্যই মূল বস্তু।[১৫]
ধূমাবতী সেই আদি অন্ধকার ও অজ্ঞানের মূর্তরূপ, যা থেকে মায়ার সংসারের সৃষ্টি। তিনি সৃষ্টির পূর্বে ও ধ্বংসের পরে এই অন্ধকার ও অজ্ঞানতার প্রতীক। এই অজ্ঞানতা, যা সর্বোচ্চ সত্যকে ঢেকে রাখে, তাও প্রয়োজনীয়। কারণ এই অজ্ঞানতার উপলব্ধি না থাকলে, সত্য জ্ঞান লাভ করা সম্ভবপর নয়।[২২] ধূমাবতী চৈতন্যের প্রাক-সৃষ্টি রূপ যোগনিদ্রা এবং যে আদি নিদ্রা বা মহাশূন্যে সকল সৃষ্টি মিলিত হয়ে ব্রহ্মে বিলীন হয়, তারও প্রতীক। এই মহাশূন্য শুদ্ধ চৈতন্য, চিত্তচাঞ্চল্যরোধকারী এবং নৈঃশব্দ।[২২][৩১] এমনকি ধূমাবতীর রোগসৃষ্টিকারী সত্ত্বাটিরও একটি ভাল দিক রয়েছে। রোগের মাধ্যমে তিনি দুষ্টকে শাস্তি দেন এবং জগৎ সংসারের স্থিতি বজায় রাখেন।[৩২] ধূমাবতী হৃৎপিণ্ড বা শরীরের মধ্যভাগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[৩১]
কোনো কোনো মতে, ধূমাবতী কালীর বৃদ্ধা রূপ। এই রূপ কালীর কালোত্তীর্ণা সত্ত্বা ও অরূপ জীবনীশক্তির প্রতীক।[৩১] অন্য এক মতে, ধূমাবতী হলেন শ্মশানকালীর অন্য রূপ।[৩৩]কালীকুল ঐতিহ্যে ধূমাবতী মহাশক্তির এক ভয়ংকরী রূপ হিসেবে কল্পিত হন।[৩৪] ধূমাবতীর নাম স্তোত্রে তাঁকে পার্বতী ও সতীর অংশ বলা হয়েছে এবং তাঁকে দানবদলনী রূপে বন্দনা করা হয়েছে।[৩০]
ধূমাবতীকে অমঙ্গলের দেবী মনে করে সাধারণ ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা হলেও, তাঁকে কোমলহৃদয়া এবং ভক্তের মনোবাঞ্ছাপূর্ণকারী বরদাত্রী রূপে বর্ণনাও করা হয়ে থাকে। অনেক স্থানেই ধূমাবতীকে সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতার প্রদানকারিণী, বিপদ থেকে উদ্ধারকারিণী, সকল কামনা পূর্ণকারিণী এবং মোক্ষদাত্রীরূপে বর্ণনা করা হয়েছে।[২১][২৫] ধূমাবতী যে সকল অমঙ্গলজনক বিষয়গুলির দেবী, সেগুলো ঠেকাতে এবং সত্যের ধূম্রাচ্ছাদন উন্মোচন করতে তার পূজা করা হয়।[৩১] তিনি অপবিত্রতা, অমঙ্গলের প্রতীক ও সমাজবহির্ভূত বলে তার পূজা করলে পূজক সমাজের নিত্যনৈমিত্তিক দ্বন্দ্বের বাইরে দৃষ্টিপাত করার শক্তি অর্জন করেন এবং সত্য জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হন।[২৫][২৬]
যদিও বিবাহিত ব্যক্তিদের ধূমাবতীর পূজা করতে বারণ করা হয়। কথিত আছে, ধূমাবতীর পূজা করলে হৃদয়ে নির্জনতার পিপাসা বৃদ্ধি পায় এবং জাগতিক বিষয়ে বিতৃষ্ণা জাগে, যা আধ্যাত্মিক সাধনার সর্বোচ্চ বৈশিষ্ট্য। এই কারণে ধূমাবতীর পূজা সর্বত্যাগী ও পরিব্রাজক সন্ন্যাসীদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত। ধূমাবতীকে একাকী ব্যক্তিদের, বিশেষত বিধবাদের প্রতি পক্ষপাতী বলে বর্ণনা করা হয়। বিধবারাই একমাত্র তার শক্তি সহ্য করতে পারেন বলে মনে করা হয়।[২১][২৫]
ধূমাবতীর মন্ত্রটি হল "ধূঁ ধূঁ ধূমাবতী স্বাহা"। এই মন্ত্রে তার "ধূঁ" বীজমন্ত্রটিও অন্তর্ভুক্ত। এই মন্ত্রেই তার পূজা হয়। কখনও কখনও যন্ত্রেও তার পূজা করা হয়। ভক্তেরা অমঙ্গল ও মৃত্যুর হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে ধূমাবতীর পূজা করেন।[১৫] ধূমাবতীর পূজায় পূজককে মন থেকে সকল চিন্তা মুছে ফেলে অচিন্ত্য অরূপের ধ্যান করতে হয়, এই মহাশূন্যরূপী অরূপেরই প্রতীক হলেন ধূমাবতী।[৩৫]
শক্তিসংগম তন্ত্র মতে, কোনো ব্যক্তিকে "উচাটন" বা নির্মূল করতে ধূমাবতীর পূজা করা যায়। পূজককে সেক্ষেত্রে জগত ও দেবীর মন্ত্রটিকে ধূসর রূপে কল্পনা করতে হবে। তাঁকে দাঁতে কালো রং করতে হবে, কালো পোশাক পরতে হবে, এবং অল্পাহার, ভূমিশয্যা ও ইন্দ্রিয়দমনের মতো কয়েকটি নিয়ম পালন করতে হবে। এই পদ্ধতিটির "কাককর্ম"; অর্থাৎ, অপরের ক্ষতি করতে হলে তাঁকে "তার মনকে কাকের ন্যায় করে তুলতে হবে"। অন্য একটি তন্ত্রগ্রন্থের মতে, পূজককে ধূমাবতীয় মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে শ্মশানক্ষেত্রে একটি কাক দগ্ধ করে শত্রুর ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে, তবেই সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।[৩৬] এই গ্রন্থে আরও বলা হয়েছে যে, ধূমাবতীকে কেবলমাত্র দক্ষিণমার্গেই পূজা করতে হবে।[২৪]কালরুদ্র তন্ত্র গ্রন্থে, ধূমাবতীকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পূজা করার কথা বলে হলেও শাক্তপ্রমোদ গ্রন্থে সিদ্ধি অর্জন ও শত্রু বিনাশের জন্য তার পূজার উল্লেখ রয়েছে।[৩৭]
রাত্রিকালে শ্মশানক্ষেত্রে ধূমাবতীর পূজা করা হয়। পূজককে নগ্নগাত্রে কেবলমাত্র কৌপিন পরিধান করে তার পূজা করতে হয়। কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথি ধূমাবতীর পূজার পক্ষে প্রশস্ত। পূজককে পূজার দিন সারাদিন-সারারাত উপবাস করে মৌনী থাকতে হয়। এছাড়া তাঁদের শ্মশান, বন বা কোনো নির্জন স্থানে ভিজে কাপড়ে পাগড়ি মাথায় দিয়ে ধূমাবতীর মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে হোম করতে হয়।[৩৮]
ধূমাবতীর মন্দিরের সংখ্যা অত্যন্ত অল্প। বারাণসীর একটি মন্দিরে ধূমাবতী হলেন প্রধান দেবতা। ঝাড়খণ্ডের রাঁচি ও গুয়াহাটির নিকটবর্তী কামাখ্যা মন্দিরের কাছে ধূমাবতীর ছোটো মন্দির রয়েছে।[৩৩] বারাণসীর মন্দিরটিকে শক্তিপীঠ বলে দাবি করা হয়। এই মন্দিরে দেবী রথারূঢ়া ও চতুর্ভূজা, তার চার হাতে কুলো, ঝাঁটা, পাত্র ও অভয়মুদ্রা।[২৬] এখানে ফল ও ফুল দিয়ে দেবীর পূজা করা হলেও[২৬] মদ, ভাঙ, সিগারেট, মাংস, এমনকি রক্ত দিয়েও পূজা করা হয়ে থাকে।[২৮] সন্ন্যাসী ও তান্ত্রিকরা এই মন্দিরে ধূমাবতীর পূজা করেন।[২৮] দেবীর অমঙ্গলজনক সত্ত্বাটির জন্য কেবলমাত্র তান্ত্রিক বীরাচারেই দেবীর পূজা করা হয়।[৩০] তবে এই মন্দিরে দেবী গ্রামদেবতা বা স্থানীয়দের রক্ষাকর্ত্রীরূপেও পূজিতা হন। এখানে বিবাহিত যুগলেও পূজা উৎসর্গ করে থাকেন।[২৮][৩০]
|তারিখ=
(সাহায্য)