নাইট্রোজেন চক্র হলো ভূজৈবরাসায়নিক চক্র, যার মাধ্যমে নাইট্রোজেন গ্যাস বায়ুমণ্ডল, স্থলজগৎ এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রএর মধ্যে আবর্তিত হয়ে একাধিক রাসায়নিকে রূপান্তরিত হয়। নাইট্রোজেনের রূপান্তর জৈবিক এবং ভৌত উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হতে পারে। নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলি হল- স্থিতিকরণ বা সংবদ্ধকরণ, অ্যামোনিফিকেশন, নাইট্রিফিকেশন এবং ডিনাইট্রিফিকেশন। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৮% বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন নাইট্রোজেনের বৃহত্তম উৎস। তবে বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেনকে সরাসরি জীবেরা ব্যবহার করতে না পারায় অনেক বাস্তুতন্ত্রে জীবের ব্যবহারযোগ্য নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
নাইট্রোজেন চক্র পরিবেশবিদদের কাছে বিশেষ আগ্রহের বিষয়, কারণ নাইট্রোজেনের প্রাপ্যতা প্রাথমিক উৎপাদন এবং বিয়োজন সহ বাস্তুতন্ত্রের মূল প্রক্রিয়াগুলির হারকে প্রভাবিত করতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, কৃত্রিম নাইট্রোজেন সার ব্যবহার এবং বর্জ্য জলে নাইট্রোজেনের মুক্তির মতো মানবিক ক্রিয়াকলাপ বিশ্বব্যাপী নাইট্রোজেন চক্রকে ভীষণভাবে পরিবর্তন করেছে। বিশ্বব্যাপী নাইট্রোজেন চক্রের পরিবর্তন প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যবস্থা এবং মানব স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
জৈব নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়াম (NH+
4) সহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক আকারে নাইট্রোজেন পরিবেশে উপস্থিত রয়েছে। নাইট্রাইট (), নাইট্রেট (NO−
2), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), নাইট্রিক অক্সাইড (NO) বা অজৈব নাইট্রোজেন গ্যাস (N2)। জৈব নাইট্রোজেন জীবের রূপে, হিউমাস রূপে বা জৈব পদার্থের পচনের মধ্যবর্তী ধাপ রূপে থাকতে পারে। নাইট্রোজেনকে এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হওয়াই হল নাইট্রোজেন চক্রের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াগুলির বেশিরভাগই জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়। এগুলি হয় তারা শক্তি সংগ্রহের জন্য করে, কিংবা তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় রূপে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে এই প্রক্রিয়াগুলি ঘটায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণীর মূত্রে থাকা নাইট্রোজেনঘটিত বর্জ্যগুলিকে মাটিতে থাকা নাইট্রাইফাইং ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের ব্যবহারের জন্য ভেঙে দেয়। পাশের চিত্রটি দেখায় যে কীভাবে এই প্রক্রিয়াগুলি একসাথে নাইট্রোজেন চক্র গঠন করে।
বায়ুমণ্ডলীয়, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং জৈবিক উপায়ে নাইট্রোজেন গ্যাসকে নাইট্রেট ও নাইট্রাইটে রূপান্তরিত করাকে নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ বা নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বলে। বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেনকে উদ্ভিদের কাজে লাগাতে অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত অথবা সংবদ্ধ করতে হয়। প্রতি বছর প্রায় ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন কিলোগ্রাম বজ্রবিদ্যুৎ দ্বারা সংবদ্ধকৃত হয়, তবে অধিকাংশ প্রক্রিয়াটি কিছু স্বাধীনজীবী এবং মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটে, যারা ডাইঅ্যাজোট্রোপ নামে পরিচিত। এই ব্যাকটেরিয়াদের nitrogenase উৎসেচক থাকে, যেগুলি গ্যাসীয় নাইট্রোজেনের সঙ্গে হাইড্রোজেনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে অ্যামোনিয়া তৈরি করে, যা কিনা আবার অন্যান্য জৈব যৌগে রূপান্তরিত হয়। এক ধরনের স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়ার উদাহরণ হল অ্যাজোটোব্যাকটার।
রাইজোবিয়াম এর মতো মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া সাধারণত শিম্বীগোত্রীয় উদ্ভিদের (যেমন- মটরশুঁটি, আলফালফা ঘাস ইত্যাদি) মূলের অর্বুদে (root nodules) বাস করে। এতে তারা উদ্ভিদের সঙ্গে পরস্পরের উপকারী ভূমিকা নেয়। তারা কার্বোহাইড্রেট এর বিনিময়ে অ্যামোনিয়া তৈরি করে। এই সম্পর্কের ফলে, এইসব উদ্ভিদ কৃষিজমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কিছু সংখ্যক অর্বুদবিহীন উদ্ভিদও এরূপ মিথোজীবিতা তৈরি করতে পারে। বর্তমানে, মোট সংবদ্ধিকৃত নাইট্রোজেনের প্রায় ৩০% হেবার-বশ পদ্ধতিতে শিল্পক্ষেত্রে করা হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপ প্রয়োগ করে নাইট্রোজেন গ্যাস ও হাইড্রোজেন উৎস (প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা পেট্রোলিয়াম) ব্যবহার করে অ্যামোনিয়াতে পরিণত করা হয়।
উদ্ভিদ তাদের মূলরোম দ্বারা মাটি থেকে নাইট্রেট বা অ্যামোনিয়াম শুষে নিতে পারে। যদি নাইট্রেট শোষণ করা হয়, তবে এটিকে প্রথমে নাইট্রাইট আয়নে বিজারিত এবং পরে অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিক অ্যাসিড এবং ক্লোরোফিলের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য অ্যামোনিয়াম আয়নে বিজারিত করা হয়। যে উদ্ভিদগুলিতে রাইজোবিয়ামের সাথে মিথোজীবী সম্পর্ক রয়েছে, তাদের মধ্যে নাইট্রোজেন সরাসরি মূলের অর্বুদ থেকে অ্যামোনিয়াম আয়ন আকারে গৃহীত হয়। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরয়েড এবং উদ্ভিদের মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি জটিল চক্র রয়েছে। উদ্ভিদ ব্যাকটেরয়ডকে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। তাই অ্যামোনিয়া সংমিশ্রণের প্রয়োজন হয় না এবং ব্যাকটেরয়েডগুলি অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি (নাইট্রোজেন সংবলিত) উদ্ভিদকে পুনরায় ফিরিয়ে দেয় এবং এইভাবে একটি আন্তঃনির্ভর সম্পর্ক তৈরি করে। অনেক প্রাণী, ছত্রাক এবং অন্যান্য পরভোজী প্রাণী অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড, এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র জৈব অণু আহার করে নাইট্রোজেন পায়। অন্যান্য পরভোজী (অনেক ব্যাকটেরিয়াসহ) একমাত্র N উৎস হিসেবে অজৈব যৌগের ব্যবহার করতে পারে। বিভিন্ন N উৎসের ব্যবহার সমস্ত জীবের মধ্যে সাবধানে নিয়ন্ত্রিত হয়।
যখন কোনো প্রাণী মারা যায় বা বর্জ্য নিঃসরণ করে, প্রাথমিকভাবে নাইট্রোজেন জৈবরূপে থাকে। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জৈব নাইট্রোজেনকে অ্যামোনিয়ামে পরিণর করে, এই পদ্ধতির নাম অ্যামোনিফিকেশন। একটি অ্যামোনিফাইয়িং ব্যাকটেরিয়া হল ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস। এতে যে সমস্ত উৎসেচক জড়িত, তারা হল:
এই পদ্ধতি দুটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
অ্যামোনিয়া গ্যাস () উদ্ভিদের পক্ষে বিষাক্ত। তাই এই গ্যাসের নাইট্রেট বা নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হওয়া অতি প্রয়োজনীয়।
নাইট্রেটের উচ্চ দ্রাব্যতার এবং মৃত্তিকার অ্যানায়ন ধরে রাখার অক্ষমতার কারণে তা ভূগর্ভস্থ জলে প্রবেশ করতে পারে। নাইট্রেট মিশ্রিত ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের ব্যবহার উদ্বেগজনক, কারণ নাইট্রেট শিশুদের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা কমাতে পারে এবং মেথেমোগ্লোবাইনেমিয়া বা ব্লু-বেবি সিনড্রোম এর কারণ হতে পারে। যেখানে ভূগর্ভস্থ জল নদীর প্রবাহ বজায় রাখে, সেখানে নাইট্রেট মিশ্রিত ভূগর্ভস্থ জল ইউট্রোফিকেশনে ঘটাতে পারে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে জলাশয়ে শৈবাল, বিশেষত নীলাভ-সবুজ শৈবাল (Blue-green algae) সংখ্যায় ভীষণভাবে বেড়ে যায়। নাইট্রেট পরোক্ষভাবে মাছেদের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু জলাশয়ে নাইট্রোজেন মারাত্মক ইট্রোফিকেশন সমস্যায় ফেলেছিল। ২০০৬ সাল থেকে, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ ক্রমশ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
নাইট্রেটকে বিজারিত করে নাইট্রোজেন গ্যাসে () রূপান্তরিত করাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে। এই প্রক্রিয়াটি বায়ুর অনুপস্থিতিতে সিউডোমোনাস এবং প্যারাকক্কাস এর মতো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়। এইসব ঐচ্ছিক অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া (অর্থাৎ ইচ্ছা অনুযায়ী) বায়বীয় পরিবেশেও বাস করতে পারে। বায়ুর অনুপস্থিতিতে (যেমন, জলাবদ্ধ মৃত্তিকাতে) ডিনাইট্রিফিকেশন হয়। ডিনাইট্রিফাইয়িং ব্যাকটেরিয়া শ্বাসকার্যের জন্য মাটির নাইট্রেট ব্যবহার করে এবং ফলস্বরূপ নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপাদন করে, যা উদ্ভিদের কাছে ব্যবহারোপযোগী নয়।
এই জৈবিক প্রক্রিয়াতে নাইট্রাইট এবং অ্যামোনিয়া সরাসরি আণবিক নাইট্রোজেন (N2) গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। এই প্রক্রিয়াতে প্রধানত মহাসাগরে নাইট্রোজেন রূপান্তরিত হয়। এই " অ্যানামক্স " বিক্রিয়ার সমিত সমীকরণটি হল: (ΔG° = −৩৫৭ kJ⋅mol−1 )।
যদিও নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বেশিরভাগ বাস্তুতন্ত্রে উদ্ভিদের ব্যবহারযোগ্য নাইট্রোজেনের প্রাথমিক উৎস হলেও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ bedrock অঞ্চলগুলিতে এই শিলার ভাঙ্গনও নাইট্রোজেন উৎস হিসাবে কাজ করে। নাইট্রেট বিজারণ আয়রন চক্রেরও একটি অংশ। অক্সিজেনহীন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত শর্ত অনুসারে এবং অণুজীবের প্রজাতির উপর নির্ভর করে Fe(II) বা একটি ইলেকট্রন কে প্রদান করে এবং Fe(III) বা আয়নে জারিত হয়, অপরদিকে বিজারিত হয়ে , N2 , আয়নে পরিণত হয় ।
(জারণ)
(বিজারণ)
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |