নাদিয়া আঞ্জুমান (ফার্সি: نادیا انجمن; ডিসেম্বর ২৭, ১৯৮০ – নভেম্বর ৪, ২০০৫) একজন কবি। তিনি আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৮০ সালে, আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হেরাত শহরে নাদিয়া আঞ্জুমান জন্মগ্রহণ করেন। তার আরো ৫ ভাইবোন ছিল। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে, তালিবানরা হেরাত দখল করে নেয়। উক্ত শহরের প্রদেশও তাদের দখলে চলে যায় এবং সেই প্রদেশের গভর্নর ইসমাঈল খানকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পরে নারীরা তাদের সব ধরনের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হয়। এবং সেই সময়ে নাদিয়া বুঝতে পারেন, তার এবং তার সমবয়সী সকল নারীদের আর পড়াশুনার সুযোগ নেই।
এতো প্রতিকূলতার পরেও, নাদিয়া অন্যান্য স্থানীয় নারীদের সাথে গোপনীয়ভাবে চালানো "গোল্ডেন নিডল সিওয়িং স্কুল (সোনালি সুতো সেলাই বিদ্যালয়)" নামে একটি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। ১৯৯৬ সালে, এটি স্থানীয় প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা প্রতিষ্ঠিত করেছিল এবং হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলি রাহইয়াব পরিচালনা করত। এই বিদ্যালয়ের সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে তিন দিন করে সেলাই (তালিবান সরকার মহিলাদের শুধুমাত্র সেলাই শেখার জন্য অনুমতি দিয়েছিল) শেখার নাম করে জড়ো হত। কিন্তু তার সেলাই শেখার বদলে হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পাঠ শুনত এবং সাহিত্য নিয়েও আলোচনা করত।[১] এই ব্যাপারটি ধরা পড়লে অবশ্যই প্রত্যেকের শাস্তি, নির্যাতন এমনকি ফাঁসিও হতে পারত। এই জন্যে যেসকল মহিলা বিদ্যালয়টিতে জড়ো হত তারা তাদের সন্তানদের বাইরে খেলাধুলার জন্য পাঠিয়ে দিত। মূলত তাদের সন্তানেরা প্রহরীদের মতো তাদের মায়েদের পাহাড়া দিত। যখনই কোন তালিবান ধর্মীয় পুলিশরা কাছাকাছি চলে আসত তৎক্ষণাৎ তারা মায়েদের সংকেত দিত। ফলে প্রতিটি মহিলা বই লুকিয়ে ফেলত এবং সেলাই এর কাজ শেখার ভান করত। যতদিন তালিবান দের শাসন ঐ অঞ্চলে কার্যকর ছিল ততদিন মহিলারা এভাবেই পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছিল।[২]
গোল্ডেন নিডল সিওয়িং স্কুলে গিয়েই নাদিয়া ক্ষান্ত ছিলেন না। তিনি অধ্যাপক রায়হাবের কাছে শিক্ষা নেওয়ার জন্য তার বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যাতে করে নাদিয়া তার লেখা আরো উন্নত করতে পারেন। কিন্তু একটি পর্যায়ে তালিবান সরকার মহিলাদের একা ঘর থেকে বের হতে দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে অধ্যাপক রাহইয়াব ১৬ বছর বয়সী নাদিয়াকে বাসায় যেয়ে পড়ানো শুরু করেছিলেন। এমনকি তিনি নাদিয়াকে অনেক বিখ্যাত লেখকদের লেখনীর সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। এদের মাঝে হাজিফ শিরাজি, বিদেল ডেহলাভি, ফারাহ ফাররুখযাদ এবং আরো অনেকেই রয়েছেন যাদের প্রভাব নাদিয়ার লেখনীতে পাওয়া যায়।
৪ নভেম্বর, ২০০৫ সালে নাদিয়া এবং তার স্বামী বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। তার স্বামীর ভাষ্য অনুযায়ী, ঈদ-উল-ফিতর এর দিন নাদিয়া তার পরিবারের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী তা দেয়নি। ফলে তারা একে অপরের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে এবং তার স্বামীর ভাষ্য অনুযায়ী নাদিয়াকে সে অজ্ঞান হবার আগে পর্যন্ত মারধর করে।[৩] ফলে নাদিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থান থেঁতলে যায় এবং মাথায় একটু কাটা দাগও দেখা যায়। অনেক ক্ষণ নাদিয়া অজ্ঞান হয়ে থাকলে তার স্বামী, নেইয়া, রিকশা করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রিকশা চালক পরে পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে রিকশায় ওঠানোর সময়েই নাদিয়া মৃত ছিল। এবং একজন পুলিশ অফিসার, নিসার আহমেদ পাইকার, তদন্ত করে বলেন নাদিয়ার স্বামী তাকে মারতে চেয়েছিল কিন্তু তাকে হত্যার কোন ইচ্ছা তার ছিল না।[৪] নাদিয়ার স্বামী দাবী করেছিল, নাদিয়া বিষ খেয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছিল।[৫]
প্রমাণ পাওয়া গেছে নাদিয়া অজ্ঞান হবার পর রক্ত বমি করেছিল। ডাক্তাররা এটিকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দাবী করেছিল।[৬]