Orange oakleaf নারাংপাত্তি | |
---|---|
ডানা বন্ধ অবস্থায় | |
ডানা খোলা অবস্থায় | |
Not rare
| |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Arthropoda |
শ্রেণী: | Insecta |
বর্গ: | Lepidoptera |
পরিবার: | Nymphalidae |
গণ: | Kallima |
প্রজাতি: | K. inachus |
দ্বিপদী নাম | |
Kallima inachus (Doyère, 1840)[১] |
নারাংপাত্তি[২](বৈজ্ঞানিক নাম: Kallima inachus(Doyère)) এক প্রজাতির মাঝারি থেকে বড় আকারের প্রজাপতি। এই প্রজাতির প্রজাপতিকে ডানা বন্ধ অবস্থায় একটি শুকনো পাতার অনুরূপ দেখায়। এরা নিমফ্যালিডি গোত্রের পরিবারের সদস্য।।
নারাংপাত্তি এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৮৫-১১০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]
কলকাতা এবং পার্শব্ব্ররতী অঞ্চল | উত্তরবঙ্গ এবং পার্শব্ব্ররতী অঞ্চল |
---|---|
দেখা মেলে না | সাধারণত দেখা মেলে |
ডানা বন্ধ অবস্থায়, শুধুমাত্র আঁকাবাঁকা পাতার শিরার মত ডানার নিম্নপৃষ্ঠের দাগগুলি দেখা যায়। দাগগুলি অসম ভাবে বিস্তৃত এবং হলদেটে, কালচে, বাদামী এবং বিস্কুট রঙা বর্ণচ্ছায় যুক্ত। ডানার নিম্নভাগের শিরাগুলি কালচে হয়ে, শুকনো পাতার শিরাবিন্যাসের মত দেখায়। এই কারণেই এই বর্গের সাধারণ নাম ওকলিফ অথবা শুকনো পাতা।
ডানা খোলা অবস্থায়, সামনের ডানার উপরিভাগে কালচে অ্যাপেক্স অংশ দেখা যায়। অ্যাপেক্স অথবা শীর্ষভাগের সর্বোচ্চ কৌনিক অবস্থানে প্রি-এপিকাল স্পটটির উপরে ইষদ নীল বর্ণের বিন্যাস দেখা যায়। এছাড়া কমলা অথবা উজ্জ্বল হলদে কমলা বর্নের ডিসকাল ব্যান্ড এবং বেস অঞ্চলে ঘন নীল রঙ পরিলক্ষিত হয়। কমলা ডিসকাল বন্ধনী এবং ঘননীল বেস অঞ্চলের মিলনস্থলে একটি সাদা ছোট স্পট চোখে পড়ে।
পিছনের ডানা অধিক সামঞ্জস্যপূর্ন এবং ঘন নীল বর্ণের। টার্মেন বরাবর এই নীল রঙ অস্পষ্ট এবং ধূসর বাদামী লম্বা ছোপযুক্ত।
নারাংপাত্তি প্রজাতির পুরুষ এবং স্ত্রী দেখতে প্রায় অনুরূপ যদিও কিছু পার্থক্য এদের মধ্যে বিদ্যমান। স্ত্রী নমুনাগুলি সাধারণতঃ আকারে অপেক্ষাকৃত বড় এবং এদের সামনের ডানার শীর্ষভাগ অথবা অ্যাপেক্স পুরুষ অপেক্ষা বাইরের দিকে অধিক প্রসারিত হয়ে অপেক্ষাকৃত দীর্ধ কৌনিক বিন্দু সৃষ্টি করে। স্ত্রী নারাংপাত্তি নমুনার ডানার নিম্নতল পুরুষ অপেক্ষা অধিক লালচে এবং হলুদ চিত্রবিচিত্র দাগগুলি অপেক্ষাকৃত ফ্যাকাশে অথবা বিবর্ণ মনে হয়।[৩]
নারাংপাত্তি প্রজাপতিদের পলিফেনিজিম দেখা যায় যার অর্থ হল এদের প্রজাতিগত বিশেষ শুষ্ক এবং আর্দ্র ঋতুরূপ রয়েছে এদের বর্ণ এবং আকৃতিগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আর্দ্র ঋতুরূপের নমুনা শুষ্ক ঋতুরূপের নমুনা অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।[৪]
এই ঋতুরূপে সামনের ডানার উপরিতল এর ডিসকোইডাল সেল, অ্যাপেক্স অথবা শীর্ষের নিকটবর্তী ইন্টারস্পেস ১ক এবং ১; ইন্টারস্পেস ২ এর বেসাল অর্ধ এবং ইন্টারস্পেস ৩ এবং ৪ এর বেস উজ্জ্বল ভেলভেট নীল বর্নের। ডিসকোসেলুলারস এবং ২, ৩ এবং ৪ নং শিরার ইন্টারস্পেসগুলির সীমানাগুলি কালো যা ইন্টারস্পেস ১ এবং ২ এ ইষদ ফ্যাকাশে ভাবে বাইরের দিক বিস্তৃত। ইন্টারস্পেস ১ এবং 2 এর কোস্টা থেকে এপিকাস পর্যন্ত একটি খুব চওড়া তীর্যক কমলা ডিসকাল বন্ধনী রয়েছে এবং এই কমলা বন্ধনীটির মধ্যে নীলচে কালো আঁশ ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে। উপরের ডানার এপিকাল অংশ ভেলভেটের ন্যায় ঘন কালো।
২ নং ইন্টারস্পেসের মধ্যবর্তী অংশের কাছাকাছি একটি কাঁচের মত স্বচ্ছ তীর্যক ছোপ এবং প্রায় ত্রিভুজাকৃতি একইরকম স্বচ্ছ এবং ছোট একটি প্রি-ত্রপিকাল ছোপ লক্ষ্য করা যায়।[৫]
পিছনের ডানার উপরিতল অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বেগুনীধর্মী নীল রঙা; কোস্টাল সীমারেখা এবং শীর্ষভাগ অতি বিস্তৃতভাবে বাদামী যাতে কিছুটা ঘনভাবে ধূসর এবং উজ্জ্বল কালচে আঁশে পরিপূর্ণ, ডর্সাল সীমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সামনের ডানার ৩নং ইন্টারস্পেস এর মধ্যভাগ থেকে উৎপন্ন একটি সাবটার্মিনাল ধূসর আঁকাবাঁকা দাগ সামনের এবং পিছনের উভয় ডানাকে অতিক্রম করে যেটি পিছনের ডানায় অতিমাত্রায় দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ডানার নিম্নতল ভীষনরকমভাবে শুকনো পাতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিম্নতলের গ্রাউন্ড কালার অতিমাত্রায় পরিবর্তনশীল, তবে সাধারণত মরচে ধরা বাদামী, ধূসর বাদামী এবং হলদেটে বাদামী রঙ খুব বেশি দেখা যায়। ডানার নিম্নভাগে সর্বদাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালো বিন্দু অথবা ছোট কালো ছোপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যেগুলিকে ছত্রাক অথবা লাইকেন এর মত দেখায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের শুকনো পাতায় প্রায়শই এই জাতীয় বিন্দু অথবা ছোপ পরিলক্ষিত হয়। শুষ্ক ঋতুরূপের নারাংপাত্তি নমুনা পিঠের উপর ডানা বন্ধ করে বসলে তার সাথে শুকনো পাতার সাদৃশ্য এতটাই যে প্রায়শই পড়ে থাকা শুকনো পাতা বলে ভ্রম হয়। সামনের ডানার শীর্ষভাগ থেকে পিছনের ডানার টর্নাস অবধি বিস্তৃত সরলরৈখিক এবং তীর্যক সরু কালো বন্ধনীটি এবং তার থেকে বের হওয়া সরুতর তীর্যক দাগগুলির উপস্থিতি (পাতার মধ্যশিরা থেকে বের হওয়া প্বার্শবর্তী উপশিরাগুলির ন্যায়) এই সাদৃশ্যকে আরো বেশি করে বাড়িয়ে তোলে। শুষ্ককালীন সব নমুনাতেই পিছনের ডানার নিম্নতলে কম বেশি অস্পষ্ট পোস্ট ডিসকাল ওসিলির সারি চোখে পড়ে যেগুলির উপস্থিতি সামনের ডানার নিম্নতলের দৃশ্যমান। এদের শুঙ্গ কালচে বাদামী; মাথা বক্ষদেশ (থোরাক্স) এবং পেট এর উপরিভাগ কালচে বেগুনী ঘেঁসা বাদামী এবং তলদেশ খুব হাল্কা মেটে বাদামী রঙের।[৬][৭]
নারাংপাত্তি প্রজাতির আর্দ্র ঋতুরূপ অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর, তবে ভীষনভাবে অনুরূপ। আর্দ্র ঋতুরূপ এর রঙ উন্নততর ও ঘন, এবং কমলা ডিসকাল বন্ধনী অপেক্ষাকৃত চওড়া কালো সীমারেখা দিয়ে ঘেরা। অত্যধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে প্রাপ্র কিছু নমুনায় ডানার নিম্নতলে ডানার রঙ খুব ঘন কমলা-হলুদ এবং বাদামী মিশ্রণ।[৬][৮][৯]
এই প্রজাতির প্রজাপতিরা দ্রুতবেগে এদিক সেদিক উড়ে বেরায় এবং মাঝেমধ্যে হঠাত গাছের গুঁড়িতে বসে। এরা ঘন ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে দিয়েও উড়তে সক্ষম। সাধারণত এদের ফুলের উপর বসতে দেখা যায় না বরং স্যাঁতসেতে ছোপযুক্ত গাছের গুঁড়ি অথবা দেওয়ালে এদের বেশি বসতে দেখা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত পাকা ফল, হাতির বিষ্ঠা, গাছের রস অথবা রস নিঃসৃত গাছের দেহাংশ এদের খুব প্রিয়।[২][১০]
হিমালয় অঞ্চলে, এই প্রজাতির প্রজাপতি multivoltine এই অঞ্চলে এদের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ওড়াওড়ি করতে দেখা যায়।[৩][১১] আইজ্যাক কেহেমকার, ২০০৯ সালে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে এই প্রজাতি উপস্থিতি নথিভুক্ত করেন।[১২]
চোংগিং(Chongging) এ এই প্রজাতির ডিম থেকে পূর্নাঙ্গ অবস্থায় পরিনত হওয়ার সময় ৫০দিন নথিভুক্ত হয়েছে; যার মধ্যে ডিম অবস্থায় প্রায় ৬ দিন, লার্ভা দাশায় ৩৬দিন (৫-৬টি ইনস্টার সহ) এবং পিউপা দশায় প্রায় ১০ দিন।[৭]
শূককীট সার্থকভাবে বেড়ে ওঠে ২২-৩১.৫ সেলসিয়াস (৭১.৬-৮৮.৭°F) তাপমাত্রায় এবং ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায়। মুক্ত এবং স্বাভাবিক অবস্থায় শূককীট বেড়ে উঠতে ৩৬দিন সময় লাগে এবং বন্দী অবস্থায় (ক্যাপটিভ ব্রিডিং) এই সময় কমে গিয়ে ১৬৮ থেকে ২৩ দিন পর্যন্ত হয়।[৭]
আর একটি পর্যবেক্ষণে Emei পার্ব্যত অঞ্চলে (৪৫০মি-১২০০মি উচ্চতায়) [১২] দেখা গেছে এক বছরে এই নারাংপাত্তি প্রজাতির ৩টি প্রজন্ম সম্পন্ন হয় যার মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রজন্ম মুখ্য হয়। Emei পর্বত এর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম প্রজন্মের নমুনাগুলি বন্দী অবস্থায় কৃত্তিম প্রতিপালন এর ক্ষেত্রে জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে ৪৫ থেকে ৫৪ দিন সময় নেয়,ডিম দশা ৪-৬ দিন, শূককীট দশা ২১-৩৬দিন, মূককীট দশা ১০-১৫দিন। কৃত্তিম প্রতিপালনে প্রজনন সম্পন্ন হয় ২৬.৯-২৮.২ সেলসিয়াস (৭৯.৫-৮২.৮°F) তাপমাত্রায় এবং ৬৩.২-৮৪.৭ % আপেক্ষিক আর্দ্রতায়।[১৩]
কৃত্তিম আবহাওয়া এবং পরিবেশে পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে আলোকপাতের সময়সীমা এবং তাপমাত্রা Kallima inachus শূককীটের বৃদ্ধি এবং বাঁচার হারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আলোকপাতের ক্ষণ ২০°C(৬৮°F) তাপমাত্রায় শূককীটের বৃধিকে প্রভাবিত করে।[১৪] তবে ২৫°C(৭৭°F) এবং ৩০°C(৮৬°F) তাপমাত্রায় এই ধরনের প্রভাব দেখা যায় না।[১৪]
ত্তাপমাত্রা যখন ২০°C থেকে বেড়ে ২৫°C এবং ৩০°C হয়, শূককীট এরবৃদ্ধিকাল এর হার হ্রাস পায় (একই ফটোপিরিওড এ ৩১.৭ দিন থেকে ৩৬দিন, ২৬.৩৭ থেকে ২৭.৪ দিন এবং ২১ থেকে ২৫ দিন) তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন আলোকপাত কাল এ শূককীটের বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ২০°C, ২৫°C এবং ৩০°C তাপমাত্রায় লার্ভার বেঁচে থাকার হার যথাক্রমে ৮০%-৯২%, ৭৫%-৯৫% এবং ৫৫%-৮৫%।[১৪]
বন্দী দশায় অথবা কৃত্তিম পরিবেশে জাল দিয়ে ঘেরা বাগানে প্রজননের ক্ষেত্রে স্ত্রী নারাংপাত্তিকে গড়ে ২৪৫.৭টি ডিম পাড়তে দেখা গেছে। সম্পূরক পুষ্টি এর প্রয়োগে স্ত্রী প্রজাপতির গড় ডিম পাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭৯.৮ টি হয়।[৫]
পরবর্তী পর্যায়ের শূককীট ভেলভেট কালো রঙের, কিছুটা লম্বা হলদেটে লোমে ঢাকা। এই পর্যায়ে শূককীটের গায়ে প্রচুর সংখ্যক লালচে কাঁটার মতন অংশ দেখা যায়। প্রতিটি দেহখন্ডে ১১টি করে এই কাঁটা থাকে (১টি ডরসাল, ২টি সাব-ডরসাল এবং ৩টি পবার্শিক কাঁটা প্রতি পবার্শে)।[১৫]
এই শূককীট Strobilanthes capitatus গাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।[১২][১৬]
মূককীটের বক্ষদেশ (থোরাক্স) নৌকার তলদেশের মত। এদের উদরদেশে একসারি ক্ষুদ্র শঙ্কু আকৃতি বিন্দু দেখা যায়। এদের রঙ হালকা বাদামী এবং স্লেট পাথরের ক্ষয়ের মত সজ্জা পরিলক্ষিত হয়।[১৫]
|ওয়েবসাইট=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)