নারী জাগরণ ক্লাব

নারী জাগরণ ক্লাব (Nadi al-Nahda al-. Nisa'iyya), এছাড়াও বলা হয় নারী পুনর্জাগরণ ক্লাব[] ১৯২৩ সালে ইরাকে প্রতিষ্ঠিত একটি নারী সংগঠন।[] এটি ছিল ইরাকের প্রথম নারী সংগঠন এবং ইরাকি নারী আন্দোলনের সূচনা অংশ।

ফাউন্ডেশন

[সম্পাদনা]

এটি বাহগদ বুর্জোয়া রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যকার ধর্মনিরপেক্ষ সুশিক্ষিত মুসলিম নারীদের একটি দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাঁদের বেশিরভাগই পুরুষ রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট পুরুষদের স্ত্রী এবং আত্মীয় ছিলেন। এর সভাপতি ছিলেন কবি জামিল সিদ্কি আল-জাহাভির বোন আসমা আল-জাহাভি এবং এর সহ সভাপতি ছিলেন নাইমা আল-সাইদ, যিনি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-সাইদকে বিয়ে করেছিলেন। কিছু পশ্চিমা নারীও সম্মানসূচক সদস্য হিসেবে এর সাথে কিছুটা জড়িত ছিলেন: গেরট্রুড বেলকে তাঁর সম্মানিত সচিব নিযুক্ত করা হয়েছিল।

এই সময়ে, তুরস্ক, মিশর এবং সিরিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ এবং সেখানে জাগ্রত নারী আন্দোলন ইরাকে প্রভাব ফেলেছিল, সেইসাথে ১৯২০ সালের ইরাকি বিদ্রোহে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো। একই বছর, নারীদের জন্য বাহগদাদ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ইরাকি নারীদের একটি নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষা এবং পেশাগত সুযোগ উভয়ই প্রদান করে।

কার্যক্রম

[সম্পাদনা]

এর উদ্দেশ্য ছিল "নারী জাগরণের" জন্য অবদান রাখা এবং কাজ করা এবং তাঁদের যোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন করা যাতে তাঁরা শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে তাঁদের পরিবার এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত স্বদেশে কার্যকর ও নিজস্ব অবদান রাখতে পারেন এবং আধুনিকীকরণের প্রভাবগুলোর মধ্যস্থতা করতে পারেন। সেলাই, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যবিধি, শিশু যত্ন, গৃহকর্মের পাশাপাশি সাহিত্য ক্লাসের মতো ক্লাস ছিলো।[] ক্লাবটি দাতব্য কাজেও জড়িত ছিলো, এবং দরিদ্রদের জন্য জামাকাপড় এবং এতিম মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিল।

১৯২৪ সালে, ক্লাবটিকে ইরাকের প্রথম ফয়সাল এবং রাণী হুজাইমা বিনতে নাসেরের সাথে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যিনি তাঁদের একটি স্থায়ী ক্লাব লোকেলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

বিরোধী পক্ষ

[সম্পাদনা]

ক্লাবের কার্যক্রমগুলো রক্ষণশীলদের কাছে অত্যন্ত বিতর্কিত ছিলো, তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল এবং দাবি করেছিল যে এর উদ্দেশ্য ছিলো হিজাব উন্মোচন করে পরিবারের সম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করা (অর্থাৎ, মহিলাদের হিজাব পরতে চান কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া না)।[] বাস্তবে অবশ্য, ক্লাব পর্দার বিতর্কিত বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং এর পরিবর্তে শিক্ষা এবং মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের দিকে মনোনিবেশ করে। ১৯২০ এর দশকের শেষের দিকে, ক্লাবটি নতুন একটি দিক, শিক্ষা খাতে উদার নারীবাদীদের কাছ থেকে, নারীর অধিকার পরিত্যাগ করার জন্য এবং মূলত অভিজাত মহিলাদের জন্য একটি দাতব্য ক্লাব হওয়ার জন্য আক্রমণ করা হয়েছিল।

ক্লাবের অস্তিত্ব এবং সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান ইরাকি নারী আন্দোলন রক্ষণশীলদের কাছে এত বিতর্কিত ছিল যে এটি ক্লাবের কাজকে কঠিন করে তুলেছিল। ১৯২৯ সালে জেরুজালেমে যখন প্রথম আরব নারী কংগ্রেসের আয়োজন করা হয় এবং নারী জাগরণ ক্লাবকে তাঁর প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন আসমা আল-জাহাওয়িকে প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য করা হয় কারণ বিরোধী আলেমদের হুমকি পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে তুলেছিল।[] তবুও ১৯৩২ সালে, তৃতীয় ইস্টার্ন উইমেন্স কংগ্রেস যা ১৯৩২ সালের অক্টোবরে বাগদাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, রানীর উদ্বোধনের সাথে।[]

বিরোধী আলেমরা ক্লাবটিকে এমন অপরাধ হিসেবে নিয়েছিলেন যে তাঁরা ক্লাবের নামে "জাগরণ" শব্দটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং এটি অপসারণের দাবি করেছিলেন। সরকার ক্লাবটির তাদের সুরক্ষা প্রত্যাহার করে এবং এটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।[]

১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত উইমেনস লিগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম বা আল-রাবিতা (পরবর্তীতে লিগ ফর দ্য ডিফেন্স অব উইমেন রাইটস বা রাবিতা আল-ডিফা আন হক্ক আল-মারা) দ্বারা ক্লাবটি প্রধান মহিলা সংগঠন হিসেবে প্রতিস্থাপিত হয়,[] এবং ১৯৪৪ সালে মিশরের কায়রোতে আরব মহিলা কংগ্রেসের পর ১৯৪৫ সালে ইরাকি নারী ইউনিয়ন (আল-ইত্তেহাদ আল-নিসাই আল-ইরাকি) প্রতিষ্ঠিত হয়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]