নারীবাদী নীতিশাস্ত্র হল নীতিশাস্ত্রের একটি পন্থা যা মূলত বিশ্বাস করে যে ঐতিহ্যগত নীতিশাস্ত্র, যা মূলত পুরুষপ্রধান, নারীর নৈতিক অভিজ্ঞতাকে অবমূল্যায়িত করেছে। তাই এটি সমগ্র নীতিশাস্ত্রকে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে দেখার ও পরিবর্তনের চেষ্টা করে।[১]
নারীবাদী দার্শনিকদের মতে প্রথাগত নৈতিকতা মূলত পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এতে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গির খুবই কম গুরুত্ব ছিল। ব্যক্তিগত জীবনের নৈতিক দায়িত্ব, পারিবারিক কর্তব্য পালন এবং যত্ন নেওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলি তুচ্ছ বলেই বিবেচিত হত। সাধারণত, পুরুষদের তুলনায় নারীদের নীতিগত দিক থেকে অপরিণত এবং অসাড় হিসাবে চিত্রিত করা হত। ঐতিহ্যগত নীতিশাস্ত্র পুরুষদের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য যেমন "স্বাধীনতা, স্বায়ত্তশাসন, বুদ্ধি, ইচ্ছা, সতর্কতা, শ্রেণিবিন্যাস, আধিপত্য, সংস্কৃতি, শ্রেষ্ঠতা, পণ্য, তপস্বী, যুদ্ধ এবং মৃত্যু"[২] ইত্যাদিকে অধিক গুরুত্ব দেয় এবং "নির্ভরতা, সম্প্রদায়, সংযোগ, আবেগ, শরীর, বিশ্বাস, অনুক্রমের অনুপস্থিতি, প্রকৃতি, অস্থিরতা, প্রক্রিয়া, আনন্দ, শান্তি এবং জীবন"[২] ইত্যাদির মতো সাংস্কৃতিকভাবে নারী সুলভ বৈশিষ্ট্যকে কম গুরুত্ব দেয়। যদি মহিলারা পুরুষ সুলভ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেন তবে তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয় অথবা সেটি পুরুষদের মত হতে চাওয়ার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে গণ্য হয়।[৩] ঐতিহ্যগত নীতিশাস্ত্রের "পুরুষ" ভিত্তিক পন্থায় নৈতিক যুক্তিকে নিয়ম, অধিকার, সর্বজনীনতা এবং নিরপেক্ষতার কাঠামোতে দেখা হয় এবং এটি সমাজের মানদণ্ড হয়ে ওঠে। অপরদিকে নৈতিক যুক্তির ক্ষেত্রে "নারী" পন্থাগুলি সম্পর্ক, দায়িত্ব, বিশেষত্ব এবং পক্ষপাতের উপর জোর দেয়।"[২]
১৭৯২ সালে প্রকাশিত মেরি ওলস্টোনক্রাফ্টের 'ভিণ্ডিকেশন অফ দ্য রাইটস অফ উইমেন' থেকে নারীবাদী নীতিশাস্ত্রের বিকাশ শুরু হয়। জ্ঞানপ্রাপ্তির নতুন ধারণার সাথে সাথেই, স্বতন্ত্র নারীবাদীরা আগের চেয়ে বেশি ভ্রমণে সক্ষম হন, যার ফলে নারীর অধিকারের অগ্রগতির জন্য নতুন ধারণা বিনিময় হয় এবং আরও নতুন সুযোগ তৈরি হয়। রোমান্টিসিজমের মতো নতুন সামাজিক আন্দোলনের সাথে মানুষের ক্ষমতা এবং নিয়তি সম্পর্কে অভূতপূর্ব আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। জন স্টুয়ার্ট মিলের দ্য সাবজেকশন অফ উইমেন (১৮৬৯) প্রবন্ধে এই আশাবাদী ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। এই সময়ের আশেপাশে নৈতিকতার প্রতি নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষত 'নারী নৈতিকতা' সম্পর্কিত মতবাদ ক্যাথরিন বীচের, শার্লট পারকিনস গিলম্যান, লুক্রেটিয়া মট এবং এলিজাবেথ ক্যাডি স্ট্যানটনের মতো অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় আরও বিকশিত হয়েছিল।
আমেরিকান লেখক এবং সমাজবিজ্ঞানী শার্লট পারকিন্স গিলম্যান একটি মনগড়া "হারল্যাণ্ড" (স্বপ্নলোক) কল্পনা করেছিলেন। এখানে পুরুষমুক্ত সমাজে নারীরা পার্থেনোজেনেসিসের মাধ্যমে তাদের কন্যাসন্তান উৎপাদন করেন এবং উন্নত নৈতিকতা বিশিষ্ট জীবনযাপন করেন। এই নারী-কেন্দ্রিক সমাজ অধ্যবসায় এবং মাতৃত্ব উভয়কেই মূল্য দেয় কিন্তু জীবনের প্রতি ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহারকে প্রশ্রয় দেয় না। গিলম্যান ভেবেছিলেন যে এই ধরনের পরিস্থিতিতে নারীরা সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গঠন করতে পারে কারণ এখানে একের অপরের উপর আধিপত্য বিস্তারের কোনো প্রয়োজন নেই। হারল্যাণ্ড সর্বোত্তম "স্ত্রীলিঙ্গ" গুণাবলী এবং সর্বোত্তম "পুংলিঙ্গ" গুণাবলীকে মানব গুণ হিসাবে একত্রিত করে। গিলম্যানের মতে, যদি একটি সমাজ ন্যায়পরায়ণ হতে চায়, তবে হারল্যাণ্ডের কাল্পনিক কল্পরাজ্যকে (ইউটোপিয়া) দৃষ্টান্ত হিসেবে নিতে হবে। তবে যতদিন নারীরা অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকবে, ততদিন নারীরা তাদের দাসত্বের জন্য এবং পুরুষরা তাদের ঔদ্ধত্যের জন্য পরিচিত হবে। সত্যিকারের মানবিক নৈতিক গুণ বিকাশের আগে নারীদের পুরুষের সাথে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমকক্ষ হতে হবে, এটি গর্ব এবং নম্রতার একটি নিখুঁত মিশ্রণ যাকে আত্মসম্মান বলা হয়।
ক্যারল গিলিগান এবং নেল নোডিংস হলেন নারীবাদী যত্ন নৈতিকতার উদ্যোক্তা। তাঁরা ঐতিহ্যগত নৈতিকতার সমালোচনা করেন তার বিভিন্ন ঘাটতি যথা নারীর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও গুণাবলীকে অবজ্ঞা, তুচ্ছ এবং আক্রমণ করার জন্য। বিংশ শতাব্দীতে নারীবাদী নীতিবিশেষজ্ঞরা নৈতিকতার প্রতি অ-নারীবাদী যত্ন-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায় যত্ন কেন্দ্রিক নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিলেন, নারীবাদীরা লিঙ্গ সমস্যাগুলির প্রভাবকে আরও গম্ভীরভাবে উপলব্ধি করেন। নারীবাদী যত্ন-কেন্দ্রিক নীতিবিদরা উল্লেখ করেন যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রবণতা হল নারীদের ভালবাসা, চিন্তাভাবনা, কাজ এবং লেখনীর মূল্য না দেওয়া, সুবিধার উপলব্ধি না করা এবং নারীদের অধস্তন হিসাবে দেখা। এই কারণেই কিছু সামাজিক অধ্যয়নে ঐতিহ্যগত নীতিশাস্ত্রের পরিবর্তে নারীবাদী নীতিশাস্ত্র গ্রহণ করার একটি সচেতন প্রচেষ্টা দেখা যায়। এর একটি উদাহরণ হল এলজিবিটিআইকিউ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র আগ্রাসন নিয়ে রফি এবং ওয়ালিংয়ের ২০১৬ সালের গবেষণা। যদিও এটি এলজিবিটিআইকিউ সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত, তবে নারীবাদী নীতিশাস্ত্র এর ক্ষেত্রে উপযুক্ত, কারণ সেটি অংশগ্রহণকারীদের দুর্বলতা এবং প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রাখে। চিকিৎসা ক্ষেত্রগুলিও এটি স্বীকার করতে ব্যর্থ হয় যে এলজিবিটিআইকিউ সম্প্রদায়ের মধ্যে, তাদের সাথে কিরূপ আচরণ হয় এবং বিকল্পে তাদের কিরূপ ব্যবহার প্রাপ্য, সেই ব্যাপারে নীতিশাস্ত্র প্রায়শই নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
নারীবাদী ন্যায়নীতি হল নৈতিকতার উপর একটি নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি যা নৈতিকতার প্রতি ঐতিহ্যগত সার্বজনীন পদ্ধতির সাথে জড়িত হয়ে একে রূপান্তরিত করতে চায়। বেশিরভাগ নারীবাদী নীতিশাস্ত্রের মতো, নারীবাদী ন্যায়নীতি দেখায় যে কিভাবে লিঙ্গকে নৈতিক বিবেচনার মূলধারা থেকে বাইরে রাখা হয়। নীতিশাস্ত্রের মূলধারাকে পুরুষতান্ত্রিক বলে যুক্তি দেওয়া হয়। তবে নারীবাদী ন্যায়নীতি অন্যান্য নারীবাদী নীতিশাস্ত্র থেকে যথেষ্ট আলাদা। নৈতিকতার একটি সার্বজনীন সেট নারীবাদী ন্যায়নীতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তবে ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে, যেমন গ্লোবাল নর্থ এবং গ্লোবাল সাউথের মধ্যে পার্থক্য বিচার করে, কীভাবে ন্যায়বিচার প্রয়োগ করা হয় এবং ন্যায়বিচার হিসাবে কী বিবেচিত হয় তা পরিবর্তিত হতে পারে। নারীবাদী ন্যায়নীতি "পুরু" নৈতিকতাকে "পাতলা" নৈতিকতা থেকে বিভক্ত করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট। অন্যান্য নৈতিক পন্থা যা সংস্কৃতি বা অন্যান্য ঘটনার মাধ্যমে গোষ্ঠীগুলিকে একে অপরের থেকে আলাদা করে নিজেদেরকে সংজ্ঞায়িত করে সেগুলিকে নৈতিকতার "মোটা" অ্যাকাউন্ট হিসাবে গণ্য করা হয়। নারীবাদী ন্যায়নীতি দাবি করে যে নৈতিকতার "মোটা" অ্যাকাউন্ট, নৈতিকতার "পাতলা" অ্যাকাউন্টের বিপক্ষে, অভ্যন্তরীণভাবে বৈধ নারীবাদী সমালোচনাকে ক্ষয় করার প্রবণতা রাখে।
প্রজনন শরীরের উপর নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার বিষয়টিকে এটিঙ্গার ভাষা দেন এবং ম্যাট্রিক্সিয়ালিটির মাধ্যমে দর্শন এবং মনোবিশ্লেষণে বিপ্লব ঘটান যেখানে নারীসুলভ যৌনতা এবং প্রতীকী দায়িত্ব সহাবস্থান করে। এটিঙ্গারের মডেলে নিজের এবং অন্যের মধ্যে সম্পর্কগুলি আত্তীকরণ বা প্রত্যাখ্যানের নয় বরং সেগুলি 'কমার্জেন্স'। মাতৃত্বের আবির্ভাব হলে নারীসুলভ যৌনতাকে পূর্বাভাস দেওয়া হয় না, ম্যাট্রিক্সিয়াল ইচ্ছা উভয়ের মিশ্রণ, এইভাবে সিগমুন্ড ফ্রয়েড এবং জ্যাক ল্যাকান দ্বারা উভয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত দ্বন্দ্ব শেষ হয়। নারীত্বের বদল একটি পরম পরিবর্তন নয় (জ্যাক ল্যাকান এবং ইমানুয়েল লেভিনাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পরিবর্তন) এবং এটি আমাদেরকে প্রাচীন মাতৃত্ব এবং মানবিক জীবনের উৎস পুনর্বিবেচনা করার জন্য একটি ভাষা দেয়। 'প্রতিক্রিয়া-ক্ষমতা', 'বর্ডার লিঙ্কিং', 'কমিউনিকারিং', 'কম-প্যাশন', 'প্রলোভন' এটিঙ্গার ম্যাট্রিক্সিয়াল টাইম-স্পেসে, (প্রতিটি রূপান্তরের প্রক্রিয়ার নাম 'মেট্রামরফোজ') নারীলিঙ্গকে সমস্ত লিঙ্গের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার উৎস হিসাবে উপস্থাপিত করায় এবং সমস্ত ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রবেশ করায়। এটিঙ্গার যাকে 'প্রলোভন' নামে অভিহিত করেছেন তা প্রাথমিক প্রলোভনের আগে ঘটে যা জিন ল্যাপ্ল্যাঞ্চের মতে মাতৃ যৌনতা থেকে দুর্বোধ্য সংকেতের সম্মুখীন হয়, যেহেতু এটি জন্মের আগেই শিশু জন্মের জন্য 'সাক্ষ্যদানে' 'কমার্জেন্স'-এ সক্রিয় থাকে। এটিঙ্গার ১৯৯১ সালে তাদের কথোপকথনে ইমানুয়েল লেভিনাসকে পরামর্শ দেন যে ম্যাট্রিক্সিয়াল দৃষ্টিকোণ দ্বারা বোঝা যায় যে নারীত্ব হল হৃদয় এবং নীতিশাস্ত্রের উৎস।
নারীবাদী নীতিবিদরা বিশ্বাস করেন যে মহিলাদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি শোনা এবং তার কাছ থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা উচিত। এই উদ্দেশ্য সফল করা এবং পুরুষদের সাথে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করাই নারীবাদী নীতিশাস্ত্রের লক্ষ্য। এই সমস্যাগুলির সমাধান করা আধুনিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি কীভাবে মহিলাদের সাথে, বিশেষ করে, মহিলাদের দেহের সাথে আচরণ করা উচিত এবং সামাজিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী 'নৈতিক' বলে বিবেচিত হচ্ছে তারও পরিবর্তন ঘটছে৷
"নারীবাদী নীতিশাস্ত্রের লক্ষ্য হল সেই সমাজ এবং পরিস্থিতির রূপান্তর যেখানে নারীরা হিংসাত্মক ঘটনা, অধীনতা এবং সামাজিক বহিষ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যখন এই ধরনের অবিচার বর্তমান এবং ভবিষ্যতে স্পষ্ট হবে, তখন উগ্র নারীবাদী কর্মীরা সতর্ক মূল্যায়নের উপর ভিত্তি তাদের প্রতিবাদ ও কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে। হিংসাত্মক ব্যবহারকে প্রশ্রয় দিলে সেটি আবারও পুরুষালি আচরণ এবং ঐতিহ্যগত নৈতিকতাকেই মান্যতা দেয়। আজকের সমাজে, বিংশ শতাব্দীতে, নারীর প্রতি হিংসাত্মক ব্যবহার সামাজিকভাবে কম গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
নারীবাদ |
---|
ধারাবাহিকের একটি অংশ |
নারীবাদী তত্ত্ব এবং নীতিশাস্ত্র আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধানত পুরুষদের পরিধিকে বিস্তৃত করে। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের বিষয়গুলিকে জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরার জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের অধিকার, লিঙ্গ বৈষম্য, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সমাজে বিভিন্ন লিঙ্গের সম্পর্ক এবং অন্যান্য অনুরূপ বিষয় যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নৈতিকতার মূলধারায় প্রাসঙ্গিকতা পায় না। নীতিশাস্ত্রের নারীবাদী কথোপকথনগুলি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে প্রায় অনিবার্যভাবে উপস্থিত এবং জনসাধারণের ক্ষেত্রে নীতিশাস্ত্রের প্রভাবশালী 'পুরুষ' দৃষ্টান্তের শুধুমাত্র ছায়া হিসাবে পরিচিত। এটি বিশেষত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতিশাস্ত্র আলোচনার একটি বাস্তবিক দিক যেখানে এটি প্রধানত সহিংসতার ভাষা, প্রযুক্তি বা অর্থনীতি এবং যা মূলত পুরুষালি আলোচনার বিষয়ের উপর নির্ভর করে তা নিয়েই গঠিত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বের ভিত্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য "এথিক্স"-এ কিম্বার্লি হাচিংসের আলোচনা দেখুন।
It has been suggested that this article be split into a new article titled Overview of Feminist Ethics Scholars, accessible from a disambiguation page. (November 2018) |
অ্যালিসন ওয়াটসন[৪]
ওয়াটসন যুদ্ধকালীন ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই প্রান্তিক সমস্যাগুলির সমাধানে নারীবাদী নৈতিকতার তত্ত্ব ব্যবহার করেন। একটি 'ব্যক্তিগত কার্যকলাপ' হিসাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐতিহ্যগত নির্মাণে অদৃশ্যতার উপর জোর দিয়ে আন্তর্জাতিক বক্তৃতায় মাতৃত্বের বর্ণনা হয় যেখানে যুদ্ধকালীন ধর্ষণের শিশুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আন্তর্জাতিক সংলাপে হারিয়ে যায় এবং ন্যূনতমভাবে গুরুত্ব পায়। নৈতিকতার নারীবাদী তত্ত্ব আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিক কথোপকথনকে প্রসারিত করার এবং গুরুত্ব না পাওয়া বিভিন্ন সমস্যাগুলির সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
পুয়েচগুইরবল[৫]
এমন প্রমাণ রয়েছে যে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, পুনর্নির্মাণের কৌশলগুলিতে এবং অস্ত্র ও সহিংসতার ব্যাপারে নৈতিকতার বর্তমান পরিধিকে প্রসারিত করার ব্যর্থতা, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম। পুয়েচগুইরবল যুক্তি দেন যে সংঘাত একটি 'লিঙ্গগত অভিজ্ঞতা' এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে যাতে সংঘাত-পরবর্তী সমাজে নারী, পুরুষ, বালক ও মেয়েদের উপর যুদ্ধের প্রভাবগুলি সীমিত করা যায় যাতে জনসংখ্যার সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠীগুলি আরও অকিঞ্চিৎকর না হয়ে পড়ে। বর্তমানে, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত পুরুষকেন্দ্রিক এই অর্থে কারণ শত্রুতার সমাপ্তি ও নিরস্ত্রীকরণের মধ্যে দিয়েই নিরাপত্তা খোঁজা হয়। শান্তি নির্মাণ ক্রিয়াকলাপগুলিকে অবশ্যই নিরস্ত্রীকরণ এবং গ্যাং সদস্যদের মধ্যে শত্রুতা বন্ধ করার পাশাপাশি নারী, পুরুষ এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দিকেও মনোনিবেশ করতে হবে যা সমাজের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে আছে ও সংঘাতের মাধ্যমে সমাজকে বিচ্ছিন্ন করছে। লিঙ্গ বিষয়গুলি শান্তিরক্ষা মিশনের ম্যান্ডেটের অংশ নয় এবং সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠনের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য মহিলাদের আহ্বান জানায়। শান্তিরক্ষা এবং পুনঃনির্মাণের কৌশলগুলিতে নারীবাদী নৈতিকতা প্রয়োগ করে আরও বিস্তৃত সমস্যা গুলিতে পৌঁছানো যেতে পারে এবং সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কথোপকথনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে না। বর্তমান কৌশলগুলি শান্তি সৃষ্টি এবং লিঙ্গ সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন ইত্যাদি ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলি বন্ধ করার সম্পূর্ণ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। এটি দ্বন্দ্ব-পরবর্তী সমাজের অবশিষ্টাংশ রূপে থেকে যায় যা অবশ্যই সমাধান করা উচিত। নারীবাদী নৈতিকতা প্রয়োগ করে লিঙ্গভিত্তিক কৌশলগুলির জন্য বৃহত্তর শান্তিরক্ষা এবং শান্তিনির্মাণের কৌশল তৈরি করা যায় যাতে উভয় লিঙ্গের চাহিদা মেটানো যায় যাতে এগুলি শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান নয়, সমাজে ব্যবহার করা যায়।