নালিনী জামেলা | |
---|---|
জন্ম | ত্রিশূর, ভারত | ১৮ আগস্ট ১৯৫৪
পেশা | পতিতাবৃত্তি যৌন কর্মীদের মানবধিকারকর্মী লেখক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | যৌন কর্মীদের জীবন (২০০৫) একজন যৌন কর্মীর রোমান্টিক সংগ্রাম (২০১৮) |
নালিনী জামিলা (জন্মঃ ১৮ আগস্ট, ১৯৫৪) একজন ভারতীয় বেস্ট সেলার লেখক[১] যৌন কর্মীদের অধিকার আদায়ের কর্মী এবং কেরালার ত্রিশূরের সাবেক পতিতা। তিনি দ্যা অটোবায়োগ্রাফি অফ আ সেক্স ওয়ার্কার (২০০৫) এবং রোমান্টিক এনকাউন্টারঅফ আ সেক্স ওয়ার্কার (২০১৮) বইয়ের লেখক। নালিনী সেক্স ওয়ার্কারস ফোরাম অফ কেরালার সমন্বয়কারী।[২] এছাড়া তিনি পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এর সদস্য।[৩]
নালিনী জামিলা ১৯৫৪ সালের ১৮ আগস্ট ভারতের থ্রিশূরের কাল্লুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফসল রোপণ ও ফসল কাটার ক্ষেত্রে কাজ করতেন।[৪] তার স্বামী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই কাজ করতেন। তার স্বামী ক্যান্সারে মারা যান। তখন নালিনীর বয়স ছিলো মাত্র ২৪।[৫] ফলে তিনি অর্থ কষ্টে পড়েন। তার ছোট ছোট দুই বাচ্চাদের ভরণপোষণ করার কোন উপায় তার ছিলো না।[৬] রোশেচি নামে একজন পতিতা[৫] তাকে পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের উপায় বলে। রোশেচি তাকে প্রথম যৌন খদ্দের যোগাড় করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার। নালিনী তার সাথে ত্রিশূরের একটি গেস্টহাউজে যান। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যাতায়াত করতেন। সকালে গেস্টহাউস ছেড়ে বাড়ি ফেরার সময় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং মারধর করে।[৬]
নালিনী প্রায় সাত বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার পর বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।[১] ১৯৯০ এর দশকে তিনি কাল্লুর সরকারী বিদ্যালয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেন এবং দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।[৭]
২০০১ সালে তিনি সেক্স ওয়ার্কারস ফোরাম অফ কেরালার সমন্বয়কারী হন। [৭] তার নেতৃত্বে সংগঠনটি ছিন্নমূল যৌন কর্মীদের জন্য আন্দোলন শুরু করে। তাদের দুর্দশার দিকে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন।[৮]
জামিলা পাঁচটি বেসরকারি সংস্থার সদস্য (এনজিও)।[৩] ব্যাঙ্গালোরের এইডস কাউন্সেলিংয়ের চতুর্থ বৈঠকে তিনি সরকারের প্রতি আহবান করেন যেন, সরকার কনডম বিতরণের পাশাপাশি যৌন কর্মী এবং তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।[৯]
২০০৫ সালে জামিলা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Oru Lymgikathozhilaliyude Atmakatha [১০] লিখেন, যার অর্থ একজন যৌনকর্মীর আত্মজীবনী।[১] বইটি ১৩ হাজার কপি বিক্রি হয় এবং প্রকাশনার ১০০ দিনের মধ্যে ছয়বার সংস্করণ বের হয়।[১১] মালয়ালম ভাষায় লিখিত বইটি ২০০৭ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন জে.দেবিকা[১২] এবং পরবর্তী বছর সোফি বস্তাদ-ফোল্টজ বইটির ফরাসি অনুবাদ করেন।[১৩] সমাজে বইটি ব্যাপক আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলো।[৯] এর ফলে কেরালায় অনেক বিতর্ক ও সমাবেশ হয়।[৩] নারীবাদীরা বইটির বিরুদ্ধে কথা বলে। তাদের দাবী হলো এটি যৌনকাজকে গৌরবান্বিত করেছে। রক্ষণশীলরাও এর বিরোধীতা করে। তারা বলে বইটির বিষয় প্রকাশযোগ্য নয়।[১]
২০১৮ সালে জামিলার দ্বিতীয় বই রোমান্টিক এনকাউন্টারঅফ আ সেক্স ওয়ার্কার [১৪] প্রকাশিত হয়। বইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন রেশমা ভারতদজ[৪] এবং গুজরাটি, বাংলা ও তামিল ভাষাতেও এর অনুবাদ করা হয়।[৩] ১৯৭০ এর দশক থেকে ২০০০ এর দশকের মোট আটটি গল্প ছিলো বইটিতে।[৮] এখানে তিনি ও তার যৌন খদ্দেরদের সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন তা বলেন।[১১]
সুপরিচিত চলচ্চিত্র পরিচালক সন্তোষ সিভানের ছোট ভাই সঞ্জীব সিভান ২০১৩ সালে জামিলার জীবন সম্পর্কে ২৮ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র সেক্স, লাইজ অ্যান্ড এ বুক তৈরি করেছিলেন। এটি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে তৈরী হয়েছিল। জামিলাকে এই ছবিতে দেখা যায়।[৩]