নাসের হ্রদ | |
---|---|
![]() আবু সিম্বাল হতে দৃশ্যমান নাসের হ্রদ | |
![]() মানচিত্রে প্রদর্শিত হ্রদের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক | ২২°২৫′ উত্তর ৩১°৪৫′ পূর্ব / ২২.৪১৭° উত্তর ৩১.৭৫০° পূর্ব |
হ্রদের ধরন | জলাধার |
প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ | |
প্রাথমিক বহিঃপ্রবাহ | |
অববাহিকার দেশসমূহ | মিশর, সুদান |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ৫৫০ কিমি (৩৪০ মা) |
সর্বাধিক প্রস্থ | ৩৫ কিমি (২২ মা) |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৫,২৫০ কিমি২ (২,০৩০ মা২) |
গড় গভীরতা | ২৫.২ মি (৮৩ ফু) |
সর্বাধিক গভীরতা | ১৩০ মি (৪৩০ ফু) |
পানির আয়তন | ১৩২ কিমি৩ (৩২ মা৩)[১] |
উপকূলের দৈর্ঘ্য১ | ৭,৮৪৪ কিমি (২,৫৭,৩৫,০০০ ফু) |
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা | ১৮৩ মি (৬০০ ফু) |
১ উপকূলের দৈর্ঘ্য ভাল সংজ্ঞায়িত পরিমাপ হয়নি। |
নাসের হ্রদ (আরবি: بحيرة ناصر Boħēret Nāṣer বুহায়রাতুন্ নাসির; মিশরীয় আরবি: boˈħeːɾet ˈnɑːsˤeɾ) দক্ষিণ মিশর ও উত্তর সুদানের একটি বিশাল জলাধার। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানবসৃষ্ট হ্রদ।[২] নির্মাণের পূর্বে, সুদান এই হ্রদ তৈরির বিরোধিতা করেছিল, কারণ সুদানের উত্তরাংশে যেখানে নুবিয়ান জনগোষ্ঠীর বাস, ঐ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাবে, এবং তাদের অন্যত্র পুনর্বাসিত করতে হবে।[৩][৪] শেষ পর্যন্ত নাসের হ্রদের নিকটবর্তী সুদানীয় এলাকা, হ্রদের পানি দ্বারাই মূলত প্লাবিত হয়ে যায়।[৫]
সুনির্দিষ্টভাবে, “নাসের হ্রদ” বলতে মিশরের সীমানাভুক্ত হ্রদের বৃহত্তর অংশকে (সমগ্র আয়তনের ৮৩%) বোঝায়, আর সুদানের অন্তর্গত ক্ষুদ্রতর অংশকে সুদানীয়রা নুবিয়া হ্রদ (মিশরীয় আরবি: بحيرة النوبة, বুহায়রাতুন্ নুবিয়্যা, মিশরীয় আরবি: boˈħeːɾet nʊˈbejjæ) বলে থাকে।[৬]
হ্রদটি প্রায় ৪৭৯ কিমি (২৯৮ মা) দীর্ঘ এবং কর্কটক্রান্তি রেখার কাছে, সর্বোচ্চ ১৬ কিমি (৯.৯ মা) চওড়া। এর পৃষ্ঠতলের সর্বমোট ক্ষেত্রফল ৫,২৫০ কিমি২ (২,০৩০ মা২) এবং পানি ধারণক্ষমতা মোটামুটি ১৩২ কিমি৩ (৩২ মা৩)।[৭]
১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নীলনদে আসওয়ান উচ্চ বাঁধ (Aswan High Dam) নির্মাণের ফলে এই হ্রদ তৈরি হয়।[৮] হ্রদটির নামকরণ করা হয় জামাল আবদুল নাসের (Gamal Abdel Nasser) এর নামানুসারে, যিনি ১৯৫২ সালের মিশরীয় বিপ্লবের নেতা ও দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনিই এই বাঁধ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদাত হ্রদ ও বাঁধের উদ্বোধন করেন।[৯]
মিশরে কৃষিকাজ ও বিদ্যুৎ এর জন্য প্রয়োজনীয় পানির অভাব রয়েছে।[১০] ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে পানিবণ্টনের ওপর তারা একচেটিয়া অধিকার পাওয়ায়, ইথিওপিয়াসহ উজানে থাকা দেশগুলো পানিবঞ্চিত ছিল। কিন্তু ইথিওপিয়ায় নির্মীয়মাণ মহা ইথিওপীয় রেনেসাঁ বাঁধ (Grand Ethiopian Renaissance Dam) এর কারণে এর ওপর বৈরী প্রভাব পড়তে পারে। এই রেনেসাঁ বাঁধ ইথিওপিয়া এবং সুদানের জন্য উপকারী হলেও তা মিশরের সাথে ইথিওপিয়া ও সুদানের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। মিশরের শঙ্কা যে, নতুন বাঁধের কারণে নীলনদের পানিপ্রবাহ দ্বারা নাসের হ্রদ পর্যাপ্তভাবে পূর্ণ হওয়া বিঘ্নিত হবে।[১১] নাসের হ্রদের পানি দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, এবং আশঙ্কা রয়েছে যে, নাসের হ্রদে পানির হ্রাসপ্রাপ্ত প্রবাহ আসওয়ান বাঁধ কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। নাসের হ্রদে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্প বার্ষিক ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট–ঘণ্টা হারে মিশরীয়দের নিকট জলবৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করে থাকে।[১২]
নীলনদের দুই তীরে বসে এবং নৌকায় করে নীলনদের পার্চ (Nile perch) মাছ ধরাটা বেশ জনপ্রিয়।[১৩][১৪]
নাসের হ্রদ পূর্ণ করার আগে, মিশরের অনেক প্রাচীন স্থাপনা বাহ্যিকভাবে অন্যত্র, হ্রদের পানির স্তরের চেয়ে উঁচুতে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে কিছু কিছু স্থাপনা যেমন – বিশাল বুহেন (Buhen) দূর্গ, স্থানান্তরিত হয়নি। এটি বর্তমানে পানির নিচে আছে।[১৫] আবু সিম্বাল (Abu Simbel) এর মন্দিরসমূহ, যেগুলো মিশরের সবচেয়ে সুপরিচিত স্থাপনাগুলোর অন্যতম, তার স্থানান্তর নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচারণা হয়েছিল।[১৬][১৭]
নাসের হ্রদে নৌকাভ্রমণ বেশ জনপ্রিয়, যার মধ্যে হ্রদের ধারে অবস্থিত স্মৃতিসৌধ ও মন্দির পরিদর্শনও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আবু সিম্বালের মন্দিরগুলো পরিদর্শন এর একটি প্রধান আকর্ষণ।[১৮]
president nasser, high dam project.