নিকোলাই চশেস্কু

নিকোলাই চশেস্কু
রোমানিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো
রোমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রথম সেক্রেটারি (২৪ জুলাই ১৯৬৫ পর্যন্ত)
কাজের মেয়াদ
২২ মার্চ ১৯৬৫ – ২২ ডিসেম্বর ১৯৮৯
পূর্বসূরীগেওর্গে গেওর্গিউ-দেজ
উত্তরসূরীঅবস্থান বাতিল করা হয়েছে
রোমানিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২৮ মার্চ ১৯৭৪ – ২২ ডিসেম্বর ১৯৮৯
প্রধানমন্ত্রী
পূর্বসূরীঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীজাতীয় উদ্ধার ফ্রন্ট কাউন্সিল (অন্তর্বর্তী)
রাজ্য কাউন্সিলের সভাপতি
কাজের মেয়াদ
৯ ডিসেম্বর ১৯৬৭ – ২২ ডিসেম্বর ১৯৮৯
প্রধানমন্ত্রী
পূর্বসূরীচিভু স্টোইকা
উত্তরসূরীঅবস্থান বাতিল করা হয়েছে
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯১৮-০১-২৬)২৬ জানুয়ারি ১৯১৮
স্করনিচেশত্য, রোমানিয়া রাজ্য
মৃত্যু ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯(1989-12-25) (বয়স ৭১)
ত্যুর্গোভিশতে, রোমানিয়া সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
মৃত্যুর কারণফায়ারিং স্কোয়াড দ্বারা ফাঁসি কার্যকর করা
সমাধিস্থলগেঞ্চা কবরস্থান, বুখারেস্ট, রোমানিয়া
জাতীয়তারোমানীয়
রাজনৈতিক দলরোমানিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীএলেনা পেট্রেস্কু (বি. ১৯৪৭; মারা যান ১৯৮৯)
সন্তান
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যসমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী রোমানিয়া
শাখারোমানীয় সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৪৮-১৯৮৯
পদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল
যুদ্ধরোমানীয় বিপ্লব মৃত্যুদণ্ড

নিকোলাই চশেস্কু (রোমানীয়: Nicolae Ceaușescu[], ২৬ জানুয়ারি [পুরোনো শৈলীতে ১৩ জানুয়ারি] ১৯১৮  – ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৯) একজন রোমানীয় কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রোমানীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং রোমানিয়ার দ্বিতীয় ও সর্বশেষ কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন। একজন একনায়ক হিসেবে ব্যাপকভাবে শ্রেণিভুক্ত, তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্টেট কাউন্সিলের সভাপতি ও একইসঙ্গে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে রোমানীয় বিপ্লবে তাঁর উৎখাত ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত, যেটি ছিল সেই বছর পূর্ব ইউরোপের একটি ধারাবাহিক কমিউনিস্ট বিরোধী ও সোভিয়েত বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের অংশ।[] তাঁর শাসনামলে রোমানিয়ায় শ্রমশিবির, গুপ্তহত্যা ও প্রহসনমূলক বিচারে কয়েক লক্ষ মানুষেকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য তাঁকে কার্পেথিয়ানের কসাই বলেও অভিহিত করা হয়।[]

চশেস্কু ১৯১৮ সালে স্কোর্নিচেশতিতে একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি রোমানীয় কমিউনিস্ট যুব আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩৯ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং "সামাজিক শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের" জন্য দণ্ডিত হন, ফলস্বরূপ যুদ্ধকালীন সময় কারাগার এবং জিলাভা (১৯৪০), কারানসেবেশি (১৯৪২), ভাকারেশতি (১৯৪৩) ও তার্গু জিউ (১৯৪৩) বন্দীশিবিরে কাটান। এই সময় তাঁর সঙ্গে কমিউনিস্ট নেতা গেওর্গে গেওর্গিউ-দেজের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর সংস্পর্শে এসে সমাজতান্ত্রিক সরকারের পদমর্যাদার মাধ্যমে চশেস্কু উন্নতি পান এবং ১৯৬৫ সালে গেওর্গিউ-দেজের মৃত্যুর পর তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রোমানীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে স্থলাভিষিক্ত হন।[]

ক্ষমতায় উত্থানের পর তিনি গণমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ সরিয়ে দেন এবং ২১ আগস্ট ১৯৬৮-এ তাঁর ভাষণে চেকোস্লোভাকিয়ায় ওয়ারশ চুক্তির আগ্রাসনের প্রকাশ্যে নিন্দা করেন, যার ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যাইহোক, এর ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট স্থিতিশীলতার সময়কাল ছিল ক্ষীণ, কারণ তাঁর সরকার শীঘ্রই একচ্ছত্রবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং সেই সময়ে পূর্ব ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে নিপীড়নকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর গোপন পুলিশ বাহিনী, সিকিউরিটেট, গণনজরদারির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে গুরুতর দমনপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ করতো। জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য চশেস্কু যেসব নীতিসমূহ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করেন তার ফলে দেশটিতে অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনাথ-এতিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০-এর দশকে তেল উত্তোলনের ব্যর্থ প্রচেষ্টার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় রোমানিয়া আকাশচুম্বী বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ১৯৮২ সালে চশেস্কু এই ঋণ পরিশোধের চেষ্টায় সরকারকে দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের বেশির ভাগ রপ্তানি করার নির্দেশ দেন। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাব দেখা দেয় এবং প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যুবরণ করে। গণচীনউত্তর কোরিয়া ভ্রমণের পর তিনি তাঁর একক ব্যক্তিত্বের সংস্কৃতি গড়ে তোলেন যা অভূতপূর্ব শীর্ষে আরোহন করে, পরবর্তীতে বৈদেশিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে, এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গেও।

১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা তিমিশোয়ারাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে, তিনি এই বিক্ষোভকে একটি রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখেন এবং ১৭ ডিসেম্বর সামরিক বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন, যার ফলে অনেকে নিহত ও আহত হয়। এর ফলে সারাদেশে ব্যাপক দাঙ্গা ও নাগরিক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। বুখারেস্ট পৌঁছানোর পর বিক্ষোভটি রোমানীয় বিপ্লব নামে পরিচিত হয় – এটি ছিল ১৯৮৯-এর বিপ্লবগুলোর মধ্যে কোনো কমিউনিস্ট সরকারের একমাত্র হিংসাত্মক উৎখাত। চশেস্কু ও তাঁর স্ত্রী এলেনা একটি হেলিকপ্টারে রাজধানী থেকে পালিয়ে যান, কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর অসমর্থনের পর তাঁরা সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন। বিচার এবং অর্থনৈতিক নাশকতা ও গণহত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, উভয়কেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রদান হয় এবং ২৫ ডিসেম্বর ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে অবিলম্বে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[][][][]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Ceauşescu, între legendă şi adevăr: data naşterii şi alegerea numelui de botez"Jurnalul Național। ১২ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. হারুন-অর-রশিদ, মো. (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। "একজন স্বৈরশাসকের উত্থান-পতন"নয়া দিগন্ত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  3. Behr, E. (1991). Kiss the hand you cannot bite: the rise and fall of the Ceaușescus. London: Hamish Hamilton.
  4. "Nicolae Ceaușescu"Biography.com। ডিসেম্বর ২০২১। 
  5. "Nicolae Ceaușescu – president of Romania"Encyclopædia Britannica। ১০ মে ২০২৩। 
  6. Boyes, Roger (২৪ ডিসেম্বর ২০০৯)। "Ceaușescu looked in my eyes and he knew that he was going to die"The Times। London। 
  7. Ratesh, N. (1991). Romania: The Entangled Revolution. Praeger Publishers.