নিকোলাস কেমার | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ২১ অক্টোবর ১৯৯৮ | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | যুক্তরাজ্য |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ-জার্মান-রুশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন |
পরিচিতির কারণ | ব্রিটিশ নিউক্লীয় প্রকল্প নিউট্রন বিক্ষেপণ |
পুরস্কার | হিউজ পদক (১৯৬৬), FRS[১] |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | টিউব অ্যালয় ম্যানহাটন প্রকল্প |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ভোল্ফগাং পাউলি গ্রেগর ভেন্টজেল |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | আবদুস সালাম পল টন্টন ম্যাথিউস রিচার্ড ডালিৎজ জন স্টিফেন রয় চিজম ললিত মোহন নাথ |
নিকোলাস কেমার (ইংরেজি: Nicholas Kemmer; জীবনকাল: ৭ ডিসেম্বর ১৯১১ - ২১ অক্টোবর ১৯৯৮) ছিলেন রাশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী একজন নিউক্লীয় পদার্থবিদ, যার কর্মস্থল ছিল ব্রিটেনে। যুক্তরাজ্যের পরমাণু প্রকল্পের বিকাশে তিনি অবিচ্ছেদ্য ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালামের একজন গুরু ছিলেন তিনি।
নিকোলাসের জন্ম হয় রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে, নিকোলাস পি. কেমার এবং তার স্ত্রী বারবারা স্তাৎযের (Barbara Statzer) এর ঘরে।[২] তার পরিবার ১৯২২ সালে জার্মানিতে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে হ্যানোফা'র (Hanover) বিসমার্কশুলা এবং তারপর গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে তিনি ডক্টরেট উপাধি লাভ করেন, এবং সেখানে পদার্থবিদ ভোল্ফগাং পাউলি'র সহকারী হিসেবে কাজ করেন। কেমার সুইস নাগরিক ছিলেন না বলে, তাকে নিজের সহকারী নিযুক্ত করার স্বপক্ষে পাউলিকে ১৯৩৬ সালে বেশ জোরালো কারণ দর্শাতে হয়।[৩] পরে ইম্পেরিয়াল কলেজের বেইট ফেলোশিপ নিয়ে কেমার লন্ডনে চলে যান।
টিউব অ্যালয়জ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন যুক্তরাজ্য-কানাডা'র যৌথ পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের সাংকেতিক নাম) এ কাজ করার জন্য কেমার ১৯৪০ সালে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে স্থানান্তরিত হন। ১৯৪০ সালে যখন এগন ব্রেটশার এবং নর্মান ফেদার দেখান যে, ইউরেনিয়াম দ্বারা পূর্ণ ধীরগতির নিউট্রন চুল্লিতে, তাত্ত্বিকভাবে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ উপজাত হিসেবে উৎপন্ন হয়, তখন কেমার (যিনি ব্রেটশার পরিবারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন) নব্য আবিষ্কৃত ৯৩ ও ৯৪-তম মৌলের জন্য যথাক্রমে নেপচুনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম নাম দুটো প্রস্তাব করেন। যেহেতু নেপচুন ও প্লুটো গ্রহদ্বয় ইউরেনাসের পরে অবস্থিত, আর নতুন মৌল দুটি পর্যায় সারণীতে ৯২-তম মৌল ইউরেনিয়াম (ইউরেনাসের নামানুসারে) এর পরে অবস্থিত, সেই যুক্তিতে তিনি এই প্রস্তাব করেন। বার্কলি বিকিরণ গবেষণাগারের দুই আমেরিকান বিজ্ঞানী এডউইন এম. ম্যাকমিলান এবং ফিলিপ আবেলসন, যারা এই একই জিনিস আবিষ্কার করেন, তারাও কাকতালীয়ভাবে একই নামদ্বয় প্রস্তাব করেছিলেন।
১৯৪৪-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কেমার কানাডায় কাটান। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের টেইট অধ্যাপক (পদার্থবিজ্ঞানী পিটার টেইটের সম্মানার্থে সৃষ্ট বিশিষ্ট অধ্যাপদের পদ) ছিলেন, এবং টেইট গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবরা এর ফেলো নির্বাচিত হন। নর্মান ফেদার, ম্যাক্স বর্ন, স্যার এডমান্ড হুইটেকার এবং আলেকজান্ডার এইট্কেন তার নাম সুপারিশ করেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪]
১৯৫৬ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটি'র ফেলো নির্বাচিত হন,[১] এবং ১৯৬৬ সালে তিনি এর হিউজ পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি জে. রবার্ট অপেনহাইমার স্মৃতি পুরস্কার- এ ভূষিত হন।[৫][৬] কেমার ছিলেন একমাত্র পাকিস্তানি নোবেল পুরস্কার বিজেতা ডক্টর আবদুস সালামের গুরু এবং শিক্ষক। আপেক্ষিকতার সমীকরণ প্রয়োগ করে নিউট্রন বিক্ষেপণ নিয়ে তিনি সালামকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং একসাথে কাজও করেছেন বলেও স্বীকৃত আছে।
ডাফিন-কেমার-পেটিয়া সমীকরণ (Duffin–Kemmer–Petiau equation; ডিকেপি সমীকরণ, ডাফিন-কেমার সমীকরণ অথবা কেমার সমীকরণ নামেও পরিচিত) এবং ইয়াং-মিল্স ক্ষেত্র একত্রে, কণার প্রমিত মডেল এর বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাফিন-কেমার-পেটিয়া সমীকরণ প্রোকা সমীকরণ[৭] এবং ক্লাইন-গর্ডন সমীকরণ[৮] এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ডিকেপি সমীকরণ আর ক্লাইন-গর্ডন সমীকরণ, উভয়েরই একই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, উভয় ক্ষেত্রেই ঋণাত্মক সম্ভাব্যতা দেখা যায়।[৮] এই সমীকরণে ম্যাট্রিক্স সংশ্লিষ্ট রয়েছে, যা ডাফিন-কেমার-পেটিয়া বীজগণিত অনুসরণ করে। যে কাজ করতে গিয়ে ডিকেপি সমীকরণের জন্ম, তাকে কেমারের লেখা নিবন্ধে[৯] "ইলেকট্রনের বাইরে মৌলিক কণাগুলোর জন্য সন্তোষজনক আপেক্ষিকতার তত্ত্বের প্রথম লিখিত প্রচেষ্টা"- বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে এই সমীকরণগুলোকে ডিরাক সমীকরণের সাথে একীভূত করেন ভারতীয় নিউক্লীয় পদার্থবিদ হোমি জাহাঙ্গীর ভাভা।[১০]
কেমারের সম্মানে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিং'স বিল্ডিংস কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণের রাস্তা, নিকোলাস কেমার সড়ক নামে নামকরণ করা হয়েছে।