নিম

নিম
Azadirachta indica
Azadirachta indica, flowers & leaves
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Magnoliophyta
বর্গ: Sapindales
পরিবার: Meliaceae
গণ: Azadirachta
প্রজাতি: A. indica
দ্বিপদী নাম
Azadirachta indica
প্রতিশব্দ

Antelaea azadirachta (L.) Adelb.

নিম (বৈজ্ঞানিক নাম: Azadirachta indica) একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিম গাছ পরিণত হলে তার গুঁড়ি দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। জানালা দরজার কাঠামো তৈরিতেও নিম কাঠ ব্যবহার করা হয়। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কাণ্ডের ব্যাস ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। ডালের চারদিকে ১০-১২ ইঞ্চি যৌগিক পত্র জন্মে। পাতা কাস্তের মত বাকানো থাকে এবং পাতার কিনারায় ১০-১৭ টি করে খাঁজযুক্ত অংশ থাকে। পাতা ২.৫-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। নিম কাঁচা গাছে এক ধরনের ফল হয়। আঙুরের মতো দেখতে এই ফলের একটিই বীজ থাকে। জুন-জুলাইতে ফল পাকে এবং কাঁচাফল তেতো স্বাদের হয়। তবে পেকে হলুদ হওয়ার পর মিষ্টি হয়। ভারত এবং বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই নিম গাছ জন্মে। প্রাপ্ত বয়স্ক হতে সময় লাগে ১০ বছর। নিম গাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে ভালো হয়। যেমন ওমানের বিভিন্ন এলাকায় এই বৃক্ষ দেখা যায়। মাটির পিএইচ ৬.২-৮.৫ এবং বৃষ্টিপাত ১৮-৪৬ ইঞ্চি ও ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রা নিম গাছের জন্য উপযোগী। নিমের পাতা থেকে বর্তমানে প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী। নিমের কাঠ খুবই শক্ত হয়। এই কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। পোকা বাসা বাঁধে না। উইপোকা খেতে পারে না। এই কারণে নিম কাঠের আসবাবপত্রও বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই বাদ্যযন্ত্র বানানোর জন্য এর কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর উৎপাদন ও প্রসারকে উৎসাহ এবং অন্যায়ভাবে নিম গাছ ধ্বংস করাকে নিরুৎসাহিত করছে। নিমের এই গুণাগুণের কথা বিবেচনা করেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‌একে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা করেছে।[][] দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে।

উৎপত্তি

[সম্পাদনা]

নিমের উৎপত্তি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাতে। এর আদিবাস মিয়ানমার[]

ব্যবহার্য অংশ

[সম্পাদনা]
নিম গাছ

পাতা, ফল, ছাল বা বাকল, নিমের তেল, বীজ। এছাড়া গাছের গুঁড়ি আসবাবপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। জানালা দরজার কাঠামোতে নিম কাঠ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কাঠে ঘুণ ধরে না। অর্থাৎ এক কথায় নিমের সমস্ত অংশই ব্যবহার করা যায়।

রোপনের সময়

[সম্পাদনা]

জুনের ৩০ তারিখ থেকে বীজ বপন শুরু হয়। বর্ষাকালের শেষ পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বীজ নার্সারী বেডে, পলিব্যাগে অথবা সরাসরি জমিতে লাগানো যেতে পারে।

উত্তোলনের সময়

[সম্পাদনা]

নার্সারীতে চারা জন্মানোর পর ৭-১০ সেমি উঁচু হলে তা লাগানো উপযুক্ত। সাধারণত বৃষ্টির সময়ে অথবা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে উত্তোলন করা ভালো।

আবাদী/অনাবাদী/বনজ

[সম্পাদনা]
নিম গাছে ফুল

নিম সাধারণত সকল জমিতে হয়। বসতবাড়ি, মাঠের জমি, জঙ্গলে জন্মায়।

চাষাবাদের ধরন

[সম্পাদনা]

নিম সব ধরনের মাটিতে জন্মে থাকে। ঘন কাদা মাটি এবং শুষ্ক ভুষা মাটিতেও জন্মায়। তবে কালো দোআঁশ মাটি নিম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম বাই কার্বনেট, ক্ষার ও লবণাক্ত মাটিতেও নিম ভাল জন্মায়। নিম নার্সারী বেড, কন্টেইনার নার্সারী মাধ্যমে চারা উৎপন্ন করা যায়।

উদ্ভিদের ধরন

[সম্পাদনা]
নিম গাছে ফল
নিম
শুকনো নিম ফল

নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ।

ঔষধি গুণাগুন

[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাপী নিম গাছ, গাছের পাতা, শিকড়, নিম ফল ও বাকল ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বিশ্বে নিমের কদর তা কিন্তু এর অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। নিম ছত্রাকনাশক হিসেবে, ব্যাকটেরিয়া রোধক হিসেবে, ভাইরাসরোধক হিসেবে, কীট-পতঙ্গ বিনাশে, ছত্রাক রোধ ও নিয়ন্ত্রণে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে, দন্ত চিকিৎসায় ব্যথামুক্তি ও জ্বর কমাতে, জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়।

ব্যবহার

[সম্পাদনা]
নিম গাছ
  • কফজনিত বুকের ব্যথা: অনেক সময় বুকে কফ জমে বুক ব্যথা করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে। গর্ভবতী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ঔষধটি নিষেধ।
  • কৃমি: পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এই জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খেতে হবে।
  • উকুন নাশ: নিমের পাতা বেটে হালকা করে মাথায় লাগিয়ে ঘণ্টা খানেক পরে মাথা ধুয়ে ফেললে ২/৩ দিনের মধ্যে উকুন মরে যায়।
  • অজীর্ণ: অনেকদিন ধরে পেটের অসুখ, পাতলা পায়খানা হলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস অর্ধেক কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে সকাল-বিকাল খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়।
  • খোস পাচড়া: নিম পাতা সিদ্ধ করে পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। পাতা বা ফুল বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি ভালো হয়।
  • পোকা-মাকড়ের কামড়: পোকা মাকড় কামড়ালে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।
  • দাঁতের রোগ: নিমের পাতা ও ছালের গুঁড়ো কিংম্বা নিমের ছাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হয়।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম: নিম তেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিম তেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরনের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই শুক্রানু মেরে ফেলতে সক্ষম।
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: রোজ সকালে খালি পেটে ১৫ থেকে ২০ টি নিম পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার হয়। চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হলে একই নিয়মে ৫ থেকে ৬ চামচ নিমপাতার রস খেলে একই উপকার হয়।

নিম চাষে আয়

[সম্পাদনা]

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে ৫০-৬০ কেজি ফল পাওয়া যায় যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। এছাড়াও একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ এককালীন ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রয় করা যায়। মাত্র দুটি প্রাপ্তবয়স্ক নিম গাছ থেকে বছরে গড়ে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এছাড়াও এক একরে বাণিজ্যিক নিম চাষে ১৫-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।[]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. একুশ শতকের উপকারী গাছ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, নারগিস আক্তার। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৫ নভেম্বর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ।
  2. দ্বিজেন শর্মা লেখক; বাংলা একাডেমী ; ফুলগুলি যেন কথা; মে, ১৯৮৮; পৃষ্ঠা-২৭, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৪১২-৭
  3. গ্রামের ডাক্তার নিম[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], BD Students Talk। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ৫ মে ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
  4. নিম।, ফয়েজ, শাহজাহান আলী বিপাশ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৭জানুয়ারী ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

১. নিমের উপকারিতা ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে, ২৬ জুলাই, ২০২০, বিসর্জন পত্রিকায় প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন।