নিম্ন রক্তচাপ | |
---|---|
বিশেষত্ব | হৃদবিজ্ঞান, intensive care medicine, family medicine, অন্তররোগ চিকিৎসাবিজ্ঞান ![]() |
নিম্ন রক্তচাপ (ইংরেজি: Hypotension) হল মানব দেহের রক্ত সংবাহন তন্ত্রের এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি.পারদ এর নিচে এবং ডায়াস্টলিক চাপ ৬০ মি.মি. এর নিচে থাকে (বিস্তার:১২০/৮০)।[১][২] যাই হোক, ক্লিনিক্যালি তখনই নিম্ন রক্তচাপ (Low Blood pressure) বলে যদি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এটি সচরাচর রোগের থেকে স্বাভাবিক শারীরতান্ত্রিক অবস্থা। যারা নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করে থাকে, তাদের জন্য এটি সুস্থতার নিয়ামক। যাদের রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে কম,তাদের হৃদক্রিয়া, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কিংবা মস্তিষ্কজাত সমস্যা থাকতে পারে। এই রক্তচাপ বজায় থাকলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অত্যাবশকীয় (vital) অঙ্গে রক্ত সরবারাহ কম থাকার কারণে সেখানে অক্সিজেন এবং পুষ্টির অভাব হতে পারে যা জীবনের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে। এরূপ অবস্থাকে শক (Shock) বলে।
অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই নিম্ন রক্তচাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।[৩] কিছু ক্ষেত্রে নিম্ন রক্তচাপ অন্তর্নিহিত অন্য কোনো স্বাস্থ্যের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায় ।[৪] হাইপোটেনশন এর অন্যতম লক্ষণ হল মাথা ঘোরা। রক্তচাপ পর্যাপ্ত কম হলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং প্রায়ই হৃদরোগ ঘটবে। এছাড়াও যা যা হতে পারে
দেহে রক্তের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া কমে যাওয়া, হরমোনের পরিবর্তন, রক্তগাত্রের প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়া (Vasodilation), ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, রক্তস্বল্পতা, হৃৎপিন্ডে কিংবা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি এর সমস্যার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।
রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া (Hypovolemia) হাইপোটেনশনের প্রধান কারণ। রক্তপাত, অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণ (Fluid intake) যেমন অনশন, কিংবা অতিরিক্ত ফ্লুইড বের হয়ে যাওয়া যেমন বমি কিংবা ডায়রিয়া এর কারণে এটি উদ্ভূত হয়।
আলফা ব্লকার কিংবা বিটা ব্লকার ক্রমাগত ব্যবহার করতে থাকলেও নিম্ন রক্তচাপ হয়। বিটা ব্লকার হার্ট রেট এবং হৃতপেশীর কার্যকারিতা উভয়ই কমিয়ে হাইপোটেনশন করে।
স্বাভাবিক রক্তের পরিমাণ থাকার পরও হার্ট ফেইলর, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভে সমস্যা কিংবা অতিরিক্ত কম হার্ট রেট (ব্রাডিকার্ডিয়া) এর কারণে কার্ডিয়াক আউটপুট কমে গেলে প্রায়শ: হাইপোটেনশন হয় এবং এর ফলে কার্ডিওজেনিক শক ত্বরান্বিত হয়। এই ভাবেই arrythmia হয়।
অতিরিক্ত রক্তগাত্রের প্রসারণ কিংবা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধমনীর (arteriole) অপর্যাপ্ত সংকোচনের ফলে হাইপোটেনশন হয়। এর কারণ হল মস্তিষ্কে কিংবা সুষুম্নাকাণ্ডে আঘাত অথবা ডিসঅটোনোমিয়া, স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপে অসামঞ্জস্যতার ফলে সমবাদী (Sympathetic) স্নায়ুতন্ত্রের আউটপুট কমে যাওয়ার বা parasympathetic স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ বেশি হওয়া। ডাইইউরেটিক্স অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেও হতে পারে। হার্ট স্ট্রোক এর অন্যতম কারণও এটি হতে পারে। শরীরে ফ্লুইড বেশি, কিন্তু ইলেক্ট্রোলাইট ধরে রাখতে পারে না। ঘামের অনুপস্থিতি, সামান্য মাথা ধরা এবং গাঢ় বর্ণের মূত্র হাইপোটেনশনের নির্দেশক।
মানব দেহে রক্তচাপ স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা sympathetic nervous system; রিসেপ্টর, স্নায়ু এবং হরমোন নিয়ে গঠিত যারা এর উপর কাজ করে যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং parasympathetic nervous system; যা রক্তচাপ কমায়। এদের মাঝে সমতা বজায় রাখা এর কাজ।
নিম্ন রক্তচাপের সাধারণ রূপ হচ্ছে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন, যাকে অবস্থানগত হাইপোটেনশনও বলে।দেহের অবস্থান পরিবর্তন করলে এটি সংঘটিত হয়,সচরাচর একজন ব্যক্তি যদি শোয়া অবস্থা থেকে বসে কিংবা দাড়িয়ে যায়।এটি অস্থায়ী এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের (Autonomic Nervous System) কার্যকরিতা নির্দেশ করে।এটি হাইপোভলেমিয়াতে দেখা যায়।
শোয়া,বসা এবং দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রক্তচাপ এবং হার্ট রেট মেপে (প্রতি অবস্থানের মাঝে ২ মিনিট বিরতি দিয়ে) অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়া যায়।যদি ২০ মি.মি পারদ চাপ সিস্টোলিক চাপে (ক্ষেত্রবিশেষে ১০ মি.মি পারদ চাপ ডায়াস্টলিক চাপ) কম হয় এবং হার্ট রেট ২০ বার /মিনিট বাড়ে, তবে এটি অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনকে নির্দেশ করে।
আরেকটি,কিন্তু দুর্লভ ফর্ম postprandial হাইপোটেনশন, খাওয়ার পর 30 থেকে 75 মিনিটের যেটা রক্তচাপের প্রচণ্ড হ্রাস করে।অনেক পরিমাণ রক্ত যখন খাদ্য হজম এবং শোষণের জন্য অন্ত্রে পাঠাতে হয়, তখন শরীরকে কার্ডিয়াক আউটপুট এবং রক্তবাহী নালিকার সংকোচন(vesoconstriction) বাড়াতে হয় যাতে শরীরের অপরিহার্য অঙ্গে যেমন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত হয়। খাবার পরে (postprandial) হাইপোটেনশন, স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকরিতার অভাব কিংবা বয়সের কারণে হতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত রক্তচাপ হল ১২০/৮০ মি.মি পারদ চাপ। ২০ মি.মি পারদের মত অল্প পার্থক্যে অস্থায়ী হাইপোটেনশন হতে পারে।
হাইপোটেনশনের চিকিৎসা এর কারণের উপর নির্ভর করে।খাদ্যে কিছু ইলেক্ট্রোলাইট যোগ করা গেলে তা মৃদু হাইপোটেনশন রোধ করে।সকালে ক্যাফেইন আরও কার্যকর হতে পারে।মৃদু হাইপোটেনশনে রোগীকে পিঠের উপর শুইয়ে পা উপরে উঠিয়ে রাখার পজিশনে রাখলে ভেনাস রিটার্ন বাড়ে, এভাবে বুক এবং মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
মধ্যবর্তী টার্মের চিকিৎসা
|প্রথমাংশ1=
এর |শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য)