নীরজা | |
---|---|
পরিচালক | রাম মাধবানি |
প্রযোজক | অতুল কাসবেকর শান্তি শিবরাম মাইনি ব্লিং আনপ্লাগড ফক্স স্টার স্টুডিও |
রচয়িতা | সাইওয়াইন কাদ্রাস সংযুক্তা চাওলা শেখ (সংলাপ) |
শ্রেষ্ঠাংশে | সোনাম কাপুর শাবানা আজমি যোগেন্দ্র টিকু শেখর রাভজিয়ানী কাভি শাস্ত্রী সাধ ওরহান |
সুরকার | বিশাল খুরানা |
চিত্রগ্রাহক | মিতেশ মীরচন্দানি |
সম্পাদক | মনীষ আর বালদওয়া |
প্রযোজনা কোম্পানি | ফক্স স্টার স্টুডিও |
পরিবেশক | ফক্স স্টার স্টুডিও |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২১ মিনিট[১] |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹২০ কোটি[২] |
আয় | প্রা. ₹১৩৫.৫২ কোটি[৩] |
নীরজা ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি-ভাষায় নির্মিত একটি ভারতীয় জীবনী থ্রিলার চলচ্চিত্র। রাম মাধবানি পরিচালিত এই ছবির কাহিনীকার সাইওয়াইন কাদ্রাস এবং সংযুক্তা চাওলা। অতুল কাসবেকর এর সংস্থা ব্লিং আনপ্লাগড এবং ফক্স স্টার স্টুডিও প্রযোজিত ছবিতে সোনম কাপুর শিরোনাম তথা মুখ্য চরিত্রে আছেন এবং সহঅভিনেতার ভূমিকায় রয়েছেন শাবানা আজমি, যোগেন্দ্র টিকু এবং শেখর রাভজিয়ানী।
এই চিত্রের পটভূমিটি বাস্তব জীবনের ঘটনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে: ১৯৮৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর লিবিয়ান-সমর্থিত আবু নাইদাল অরগানাইজেশন প্যান এএম ফ্লাইট ৭৩ হাইজ্যাক করে পাকিস্তান এর করাচি তে। ছবিটি ফ্লাইটের হেড পার্সার নীরজা ভানোট এর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে। তিনি পাইলটদের সতর্ক করে হাইজ্যাকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছিলেন। এভাবে বিমানটি গ্রাউন্ডিং করে ভনোট ৩৭৯ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৫৯ জনকে এবং জাহাজে ক্রুদের সাহায্য করার চেষ্টা করতে গিয়ে মারা যান।
ব্লিং আনপ্লাগড এবং ফক্স স্টার স্টুডিও নির্মিত এই চলচ্চিত্রের জন্য কাসবেকর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাধবানি ও কাপুরকে চুক্তিবদ্ধ করেন। সাইওয়াইন কাদ্রাস এবং সংযুক্তা চাওলা চিত্রনাট্য রচনার কাজ করেছিলেন। মূল ফটোগ্রাফি মুম্বাই তে করা হয়েছিল। ছবিতে প্রসূন জোশী রচিত গানের সাথে বিশাল খুরানার সংগীত রয়েছে। নীরজা ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাওয়ার পর সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছিল এবং নায়িকা প্রধান চরিত্রে সর্বাধিক উপার্জনকারী বলিউড চলচ্চিত্রের একটি হয়ে ওঠে। ছবিটি বক্স অফিসে ₹ ১৩৫.৫২ কোটি (ইউএস$ ১৬.৫৭ মিলিয়ন) উপার্জন করেছে।
কাপুরের অভিনয় ও মাধবানি পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত এই ছবিটি বলিউডের নানা সংস্থা থেকে বেশ কিছু প্রশংসা ও সম্মান কুড়িয়েছে। ৬৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এ হিন্দিতে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এর সম্মান এবং কাপুর পেয়েছেন বিশেষ উল্লেখ্য পুরস্কার। ৬২ তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এ নীরজা ছয়টি পুরস্কার জিতেছে যার মধ্যে আছে সেরা চলচ্চিত্র (সমালোচক), সেরা অভিনেত্রী (সমালোচক) (কাপুর), এবং সেরা সহঅভিনেত্রী (আজমি) পুরস্কার।
২২ বছর বয়সী নীরজা ভানোট (সোনম কাপুর) এক সন্ধ্যায় একটি ঘরের পার্টিতে দেরি করে আসেন। তাঁর মা রমা (শাবানা আজমি) ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসাবে নীরজার চাকরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং নীরজাকে পরামর্শ দেন যে তাঁর উচিত পুরানো মডেলিং কেরিয়ারেই ফিরে আসা। নীরজা নিজের (বর্তমান) কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জোর দেন। তাঁর বয়ফ্রেন্ড জয়দীপ (শেখর রাভজিয়ানী) ড্রাইভ করে তাঁকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন।
বিমান চলাকালীন নীরজা কাতার এর দোহায় এক পেশাদার নরেশের (কবি শাস্ত্রী) সাথে তাঁর অসুখী ব্যবস্থা বিয়ে (অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ) নিয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিফলন তুলে ধরেন। অল্প যৌতুক এবং গৃহকর্মে অক্ষমতার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি শেষ পর্যন্ত একটি মডেলিং চুক্তির জন্য দেশে ফিরে আসেন। নরেশ তাঁর বাবা-মাকে যৌতুক এবং তাঁদের মেয়ের গৃহকর্মে দক্ষতার অভাবের অভিযোগ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। তাতে সে আরও দাবি করে ছিল নীরজা হয় টাকা নিয়ে আসুন নতুবা যেন আদৌ আর ফিরে না আসেন। নীরজা নরেশকে ত্যাগ করে প্যান অ্যাম এয়ারওয়েজ এর চাকরি গ্রহণ করেন।
ইতিমধ্যে প্রকাশ পায় নীরজার বোর্ড প্যান অ্যাম ৭৩ কে লিবিয়া প্রোষিত প্যালেস্তিনি সন্ত্রাসী দল আবু নিদাল সংগঠন করাচিতে হাইজ্যাক করার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিমানটি মুম্বাইয়ের সাহার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে করাচিতে অবতরণ করে। যেখানেই চার আবু নিদাল সন্ত্রাসী একজন লিবিয়ার কূটনীতিকের সিকিউরিটি অফিসারের ছদ্মবেশে বিমানটিকে হাইজ্যাক করে। সন্ত্রাসীদের না জানতে দিয়ে নীরজা দ্রুত ককপিটকে সতর্ক করে দেন এবং তিনজন আমেরিকান পাইলট ওভারহেড হ্যাচ দিয়ে পালানোর পক্ষে যথেষ্ট সময় পেয়ে যান। কারণ ছিনতাইকারীরা বুঝতে পারেনি যে বোয়িং ৭৪৭ এর ককপিটটি উপরে অবস্থিত।
যখন এক ভারতীয় আমেরিকান যাত্রী নিজেকে আমেরিকান হিসাবে প্রকাশ করেন তখন একজন সন্ত্রাসী তাঁকে হত্যা করে তাঁর লাশ বিমান থেকে পাকিস্তানি মধ্যস্থতাকারীদের সামনে ফেলে দেয়। সন্ত্রাসীরা নীরজাকে আন্তঃযোগে (ইন্টারকম) একটি ঘোষণার আদেশ দিয়ে যাত্রীদের মধ্যে থেকে এক জন রেডিও ইঞ্জিনিয়ার সন্ধানের চেষ্টা করে। পাকিস্তানি বেতার প্রকৌশলী ইমরান আলী (শশী ভূষণ) যখন উঠে দাঁড়াতে শুরু করেন তখন নীরজা তাঁকে বসার ইঙ্গিত করেন। সন্ত্রাসীরা বিমানে আমেরিকান যাত্রীদের শনাক্ত করতে এবং তাদের জামিন করে রাখার জন্য সমস্ত পাসপোর্ট সংগ্রহ করে; নীরজা এবং তাঁর সহকর্মীরা পাসপোর্টগুলি সংগ্রহ করেন। কোনও আমেরিকান পাসপোর্ট পেলে ট্র্যাশ চিটে ফেলে দিয়ে বা সিটের নিচে লুকিয়ে দিয়ে তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন। কোনও আমেরিকান পাসপোর্ট না পেয়ে হতাশ ছিনতাইকারীরা এক ব্রিটিশ যাত্রীকে শনাক্ত করে তাঁকেই জামিন করে।
পাকিস্তানি আলোচকরা অজান্তেই রেডিও ইঞ্জিনিয়ার আলীর নাম প্রকাশ করে ফেলেন। রেডিওকে আলোচনার জন্য ব্যবহার করতে তাঁকে ছিনতাইকারীরা ককপিটে নিয়ে আসে। এদিকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সময় ব্যয় করার জন্য স্টল দেওয়ার চেষ্টা করে। যখন এক ছোট সন্ত্রাসী যাত্রীদের উপর হামলা করে এবং পরিচারকদেরকে বিদ্রূপ করে তখন সন্ত্রাসী নেতা তাকে শাস্তি দেয়। লাঞ্ছিত কনিষ্ঠ সন্ত্রাসী ককপিটে ঝড় তুলে আলীকে গুলি করে রেডিওতে তুমুল হুমকি দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। পাকিস্তানি বিমান নিয়ন্ত্রণকারীদের সাথে আলোচনার টানাপড়েনের সময় আলোচকরা আস্তে আস্তে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে আর ছিনতাইকারীরা মিনিটের মধ্যে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
প্রায় ১৭ ঘণ্টা পরে বিমানের অতিরিক্ত শক্তিও শেষ হয়ে যায় এবং বিমানের বাতিগুলিও ভিতরে চলে যায়। নীরজা এবং অন্যান্য পরিচারকরা বার বার বোঝানোর চেষ্টা করা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা ভাবে পাকিস্তানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে পাওয়ার কাট করেছে এবং বিমানে পাকিস্তানি অভিযান আসন্ন ভেবে আতঙ্কিত হাইজ্যাকাররা নির্বিচারে যাত্রীদের দিকে গুলি চালাতে শুরু করে। নিজের জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে নীরজা জরুরী প্রস্থানের দরজা খুলে দেন এবং যাত্রীদের বিমান থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সরু ঢালু পথে যাত্রীদের বাইরে পালিয়ে যেতে ব্যবস্থা করেন। তিনটি অসহায় বাচ্চাকে বন্দুকের গুলি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করার সময় একজন সন্ত্রাসী তাঁকে তিনবার গুলি করে। বাচ্চারা বিমান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয় এবং নীরজা মারা যাওয়ার আগে নিজেকে দরজার বাইরে এনে জরুরি স্লাইডের নিচে টান দিয়ে যান। সেখানেই নীরজার মৃত্যু হয়।
চলচ্চিত্রটি নীরজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় যাঁকে শেষ অবধি অশোক চক্র দ্বারা মরণোত্তর সম্মানিত করা হয়েছিলেন। শান্তির সময়ে বীরত্ব, সাহসী কর্ম বা আত্মত্যাগের জন্য ভারতের এই সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান জ্ঞাপন করা হয়।