নীলা দেবী | |
---|---|
![]() বিষ্ণুর অনন্তশয্যা এবং তার তিন স্ত্রী শ্রী দেবী, ভূদেবী এবং নীলা দেবী বাফুউন শিল্পে প্রসাত ওয়াট সা কামফেং ইয়াই উথুমফন ফিসাই জেলা, সিসাকেট প্রদেশ ,থাইল্যান্ড। | |
অন্যান্য নাম | দেবী রাধিকা, নাপ্পিনাই |
অন্তর্ভুক্তি | দেবী,শক্তি, বৈষ্ণবধর্ম |
আবাস | বৈকুণ্ঠ বা বিষ্ণুলোক |
সঙ্গী | বিষ্ণু |
নীলা দেবী ভগবান বিষ্ণুর তৃতীয় স্ত্রী।[২] বিষ্ণুর অন্যান্য সঙ্গীরা ছিলেন লক্ষ্মী, ভূদেবী। পরমপদম পুরাণে বর্ণিত আছে যে নীলা দেবী বিষ্ণুর ডান পার্শ্বে অবস্থান করেন। হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী যেহেতু ভূদেবী বিষ্ণুর প্রথম স্ত্রী তাই তিনি সবসময় বিষ্ণুর ডান দিকে বসবেন। লক্ষ্মী যিনি বিষ্ণুর সামনে এবং তৃতীয় স্ত্রী নীলা বিষ্ণুর বাম পার্শ্বে অবস্থান করবেন। কিন্তু হিন্দু ধর্মে বর্ণিত তাদের অবস্থান নিয়ে কিছু ভিন্নতা ও বিতর্ক লক্ষ্য করা যায়।[৩] এর মূল কারণ বেশিরভাগ মানুষ লক্ষ্মীকে মহালক্ষ্মী মনে করে৷ কিন্তু দেবী লক্ষ্মী মানেই মহালক্ষ্মী নয়। বিষ্ণুর এই তিন স্ত্রীর সম্মিলিত একক সত্তা হল মহালক্ষ্মী৷ এই একক সত্তা অর্থ্যাৎ মহালক্ষ্মী অবশ্যই বিষ্ণুর ডান পাশে অবস্থান করবেন। তখন অন্যান্য স্ত্রীগণ (ভূদেবী ও লক্ষ্মী) যদি আলাদা সত্তায় থাকে তবে তারা বাম দিকে অবস্থান করবে। মহালক্ষ্মী অবস্থান করার সময় দেবী নীলাকে উপস্থিত হতে দেখা যায় না। মনে করা হয় এ সময় দেবী নীলা ভূদেবীর সাথে একাত্ম অবস্থায় থাকেন। নীলা দেবী শ্রী বিষ্ণুর চেয়ে বয়সে বড়৷ এ কারণে তাকে তাকে জ্যেষ্ঠদেবীও বলা হয়ে থাকে। এ সময় বিষ্ণুকে ভগবান শনির সাথেও তুলনা করা হয়। নীলা দেবী বয়সে বড় হওয়ার জন্য তৃতীয় স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও প্রথম স্ত্রী ভূদেবীর সাথে একাত্ব হয়ে তিনি ডান পাশে অবস্থান করেন এবং লক্ষ্মী বাম পাশে অবস্থান করেন। নীলা ও ভূদেবী হিন্দু ধর্মে সহনশীলতা ও বাধার প্রতীক। নীলা দেবী ভগবান বিষ্ণুর সাধারণ ও সহজতার প্রতীক। অন্যদিকে ভূদেবী ভগবান বিষ্ণুর পালনকর্তা গুণটির প্রতীক৷ শেষত শ্রী লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুর মহানুভবতার রূপায়ক। বেদের নীলা শুকতাম অংশে নীলা দেবীর গুণগান করা হয়েছে।
ভূদেবী ভদ্র অবতারের সময় সীতা রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন৷ আর নীলা দেবী নাপ্পিনাই বা নগ্নজিতি রূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন। নাপ্পিনাই এর বাবার নাম ছিল কুম্বন (যশোদার ভাই)। কৃষ্ণ কুম্বনের সাতটি ষাঁড়ের সাথে লড়াই করে নাপ্পিনাইকে লাভ করে।[৪] নাপ্পিনই - কৃষ্ণ সংস্কৃতি দক্ষিণ ভারতে মূলত তামিল ভাষীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ।[৪][৫] নাপ্পিনাইকে প্রায়শই উত্তর ভারতে রাধা বা রাধুরী বা "রাধিকা" নামে অভিহিত করা হয়।
নন্দ গোপাল ও যশোদার জেগে ওঠার পরে গোপীরা দেবী নাপ্পিনাইকে জাগিয়ে তুললেন। গোপীরা ছিল শ্রীকৃষ্ণের সহকর্মী এবং নীলা দেবী নছিয়ারের অবতার। তারা বলল, "আমরা জানি যে বৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র শিশু। যশোদা এবং নন্দ গোপাল তাঁর জন্য উপনয়নাম অনুষ্ঠানও করেন নি। তাহলে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কীভাবে বৃন্দাবনে থাকাকালীন নপ্পিনাইয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন?" শ্রীকৃষ্ণের অবতারের পরে নীলা দেবী নাচিয়ার নেপালের কাছাকাছি অঞ্চলে যশোদার ভাই কুম্বনের কন্যা হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। প্রভু কৃষ্ণের পরে তিনি যেহেতু অবতার নিয়েছিলেন তাই তাঁকে "পিনই" নামে ডাকা হয় এবং তিনি যেহেতু সর্বদা ভাল কাজ করতেন তাই তার নামের সাথে "নাপ" উপসর্গটি যুক্ত করা হয়েছিল। ফলে তার নাম হয়ে দাড়ায় নাপ্পিনাই। নাপ্পিনাই অবতারিত হওয়ার সাথে সাথে খুশি কুম্বন বাজার থেকে সাতটি অভিন্ন পুরুষ বাছুর কিনে এনেছিলেন। এ সমন্ধে তার অভিমত ছিল যে আমি আমার মেয়ের সাথে সেই যুবককেই বিবাহ দেব যে এই সাতটি ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। পরের দিন কুম্বন শস্যাগার পরিদর্শন করার সময় দেখেন যে বাছুরগুলি রাতারাতি প্রাপ্তবয়স্ক ষাঁড়ে পরিণত হয়েছিল। যেহেতু ষাঁড়গুলি ছদ্মবেশে অসুর ছিল। ষাঁড়গুলি লোকদের উপর অত্যাচার করতে শুরু করে এবং কুম্বন এমন কোনও ব্যক্তিকে খুঁজে পেল না যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পাঁচ বছর বয়সী কৃষ্ণের সাথে যশোদা তাঁর ভাইয়ের সাথে দেখা করার সময় নাপ্পিনাই তিন বছর বয়সে পরিণত হয়েছিল। কুম্বন বলেন, "তোমার ছেলে তো খুব সুন্দর! আমি দেখতে পাচ্ছি যে তিনি এক সুদর্শন যুবকে পরিণত হবে। আমি আশা করি আমি তাকে নাপ্পিনাইয়ের সাথে বিয়ে দেব। কিন্তু আমি বোকার মতো একটি মানত করেছিলাম যে আমি কেবল সেই যুবকের সাথেই নাপ্পিনাইয়ের বিয়ে দেব যে আমার শস্যাগার মধ্যে আবদ্ধ সাতটি ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। "উদ্বিগ্ন হবেন না আর কোন চিন্তা করবেন না", কৃষ্ণ বলেছিলেন, "আমি এই ষাঁড়গুলিকে পরাজিত করবো!" কুম্বন কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল কিন্তু কৃষ্ণ যখন ষাঁড়ের সন্ধান করতে যায় তখন তিনি আতঙ্কিত হয়েছিলেন। কুম্বন বলেন, "যশোদা তোমার ছেলেকে থামাও! আমি আশঙ্কা করি যে সে আঘাত পেতে পারে!" যশোদা এবং কুম্বন শস্যাগার দিকে ছুটে যেতেই তারা দেখতে পেল যে কৃষ্ণ সমস্ত ষাঁড়কে এক আঘাতেই হত্যা করেছিলেন! "কী আশ্চর্য!" বলে কুম্বন চিৎকার করে উঠলেন। প্রতিশ্রুতি অনুসারে তিনি কৃষ্ণের সাথে নাপ্পিনাইয়ের বিয়ে দেন। তবে তারা খুব ছোট হওয়ায় কুম্বন যশোদাকে নাপ্পিনাইকে তার সাথে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন যাতে সে দুজনকে একসাথে বড় তুলতে পারে।[৬] এই গল্পটি ইয়াদবধুয়ামে স্বামী দেশিকান উল্লেখ করেছেন।