নুক্লাভি (/[অসমর্থিত ইনপুট: 'উচ্চারণ']nʌklɑːˈviː/) অথবা নুকাল্ভি হচ্ছে অরকেডিও পুরাণের একটি ঘোড়ার মত দানব যা ঘোড়া এবং মানুষের উপাদান সংযোগে তৈরি। এর উৎপত্তি হয়েছে নর্স পুরাণ থেকে এবং এটি স্কটল্যান্ডের উত্তর দ্বীপপুঞ্জ এর সকল দানব থেকে সবচেয়ে ভয়ংকর। নামের নুক অংশটি ওল্ড নিকের নিক এর সাথে সম্পর্কিত, যা খ্রিস্টীয় শয়তানের একটি নাম। নুক্লাভির শ্বাসকে মনে করা হত শস্যের তাজা ভাব হারানো এবং গৃহপালিত পশুর রোগের কারণ হিসেবে এবং ভুমিতে একে দায়ী করা হত খরা ও মহামারীর জন্য যদিও এটি আগের থেকেই সমুদ্র-অধিষ্ঠাতা।
একজন দ্বীপবাসী যিনি এর সাথে দেখা হওয়ার দাবি করেন তিনি একটি নুক্লাভির চেহারার বর্ণনা করেন। তবে একেকজন একেকভাবে এর চেহারার বর্ণনা করেন। অন্যান্য সমুদ্রের দ্বৈত্বের অনুরূপ এটিও মিঠাপানি সহ্য করতে পারে না, তাই যারা এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এর থেকে বাঁচার জন্য শুধুমাত্র নদী অথবা ঝর্না পার হতে হবে। গ্রীষ্মকালে নুক্লাভিকে একজন অতি পুরনো অরকেডিও আত্মা সমুদ্রের মিথার দ্বারা আবদ্ধ করে রাখা হয় এবং তিনিই একমাত্র এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
অরকেডিও লোককাহিনীতে খুব মজবুত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রভাব ছিল এবং নুক্লাভি হয়তোবা হতে পারে শেল্টিক পুরাণের পানি ঘোড়া এবং নর্স মানুষের সংযুক্ত রূপ। অন্যান্য অমঙ্গলকারী সত্ত্বা যেমন কেলপি এর অনুরূপ এটি সম্ভবত পুরনো সময়ে দ্বীপবাসীদের এমন ব্যাখ্যা দিয়েছিল যা ভিন্ন ভাবে বোঝা যায় নি।
১৯ শতকের শেষের দিকে লোককাহিনী লিপিবদ্ধ করার উত্থান দেখা যায় তবে লিপিবদ্ধকারিরা অধারাবাহিক বানান এবং প্রায়ই ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যার কারণে একই সত্ত্বাকে বিভিন্ন নাম দেয়া হতে পারে।[১]নুক্লাভি শব্দটি এসেছে অরকেডিও knoggelvi থেকে,[২] এবং অর্কনিতে বসবাসকারী ও ১৯ শতকের লোককাহিনীবিদ ওয়াল্টার ট্রেইল ডেনিসনের মতে যার অর্থ "সমুদ্রের শয়তান "।[৩] একই দানবকে শেটল্যান্ডে মুকেলেভি বলা হয় যেখানে একে ধরা হত সমুদ্রের খারাপ বিশ্বাস অথবা সমুদ্রের শয়তান হিসেবে।[৪] ১৯ শতকের প্রথমদিকের সেমুএল হিবারট নামক একজন প্রত্নতাত্ত্বিক মনে করতেন নুক্লাভির নুক সম্পর্কিত ওল্ড নিকের নিকের সাথে, একটি নাম যা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে শয়তানের নাম হিসেবে দেয়া হয় এবং ল্যাটিন নেকারে (necare) যার অর্থ হত্যা করা।[৫]
১৬ শতকে জো বেনের ল্যাটিন লেখাতে অরকেডিও পুরানের দানবের গল্প লিপিবদ্ধ হয়,[ক] যিনি হয়তোবা স্ট্রন্সের অর্কনি দ্বীপপুঞ্জের বর্ণনা দিতে গিয়ে নুক্লাভিকেই নির্দেশ করেছেন।[৯] ডেনিসন অর্কনির ঐতিহ্যবাহী গল্পের বেশীরভাগ তথ্য লিপিবদ্ধ করেন তবে একটি মাত্রা পর্যন্ত যেখানে আবেগপূর্ণ এবং সূক্ষ্মভাবে গল্পের উপাদান পরিবর্তন করেন একে গদ্যে রূপান্তর করার সময়।[১০][খ]
নুক্লাভি একটি পৌরাণিক সমুদ্রের জীব যাকে ভুমিতে দেখা যায় ঘোড়ার মত দানব হিসেবে।[১২] লেখক ও লোককাহিনীবিদ আরনেস্ট মারভিক একে নরওয়েজিয়ান নক্ক, শেটল্যান্ডএর নাগল এবং কেলপি এর অনুরূপ মনে করেন। একটি অনন্য এবং একাকি জীব যার মধ্যে প্রচণ্ড খারাপ শক্তি বিরাজ করে, এর খারাপ আচরণ পুরো দ্বীপের ঘটনাকে প্রভাবিত করে।[৪] দ্বীপবাসীরা এই জীবের কারণে ভয়ংকর ভীত ছিল এবং তারা সাথে সাথে প্রার্থনা ব্যতীত এর নাম নিত না।[১৩] একে প্রায়ই তীরের কাছাকাছি পাওয়া যেত তবে বৃষ্টি হলে কখনো তীরে উঠতোনা।[১৪]
নুক্লাভি সমুদ্রে অবস্থানকালে কিরূপ আকৃতি ধারণ করতো তা কোন গল্পই বর্ণনা করতে পারে না,[৩] তবে ভূমিতে এর আকৃতি চিত্রের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে।[১৫] একজন দ্বীপবাসী, তাম্মাস দাবি করেন তিনি এই পশুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার পরও বেচে আছেন এবং অনেক প্রলুব্ধ করার পর অনিচ্ছাকৃত ভাবে ডেনিসন যিনিই প্রথম এই দ্বৈত্বের সম্মুখে দেখার বর্ণনা করেন।[গ] তাম্মাস এর মতে নুক্লাভির একটি মানুষের ধড় যা ঘোড়ার পিছনের অংশের সাথে যুক্ত থাকে এমনভাবে যেন একে অশ্বারোহী মনে হয়।[৩]পুরুষ ধড়ের কোন পা নেই তবে এর হাত ঘোড়ার উপরের অংশ থেকে ভূমি পর্যন্ত পৌছাতে পারে এবং এর পা গুলো পাখনার মত অঙ্গ।[১৩]ধড়ের একটি বড় মাথা আছে সম্ভবত ৩ ফুট (৯০ সেন্টিমিটার) প্রস্থ – যা সামনে পিছনে নড়তে সক্ষম।[১৪]তাম্মাস যে দ্বৈতের কথা বর্ণনা করেন তার দুটি মাথা আছে;[১৭] ঘোড়ার মত মাথার একটি বিশাল আকৃতির খোলা মুখ আছে যেখান থকে গন্ধ যুক্ত বিষাক্ত বাষ্প বের হয় এবং একটি আগুনের মত জ্বলজ্বল কৃত বিশাল চোখ। একটি বিশেষ ভয়াবহ বর্ণনা হচ্ছে নুক্লাভির কোন চামরা নেই;[১৮]হলুদ শিরার মাঝে কালো রক্তের পথ এবং বর্ণহীন ও শক্তিশালী পেশিকে দেখা যায় স্পন্দিত মাংস পিণ্ডের মত।[১৩]অন্যান্য বর্ণনা দাবি করে এটি নরাশ্বের অনুরূপ;[১৯] যাইহোক সুক্ষভাবে দানবের বর্ণনা গুলো বিভিন্ন ধরনের।[২] ট্রেইল ডেনিসন শুধুমাত্র একটি মাথার কথা বর্ণনা করেন যার মুখটি শুকরের মত।[১৩] মারভিকও শুধুমাত্র একটি মাথা ও একটি লাল চোখের কথা উল্লেখ করেন এবং তিনি তাম্মাসের বর্ণনা থেকে যেমন "তিমির মত" মুখের বৈশিষ্ট্য ধার করেন।[১৪]
নুক্লাভির শ্বাস কে মনে করা হত শস্যের তাজা ভাব হারানো এবং গৃহপালিত পশুর রোগের কারণ হিসেবে এবং ভুমিতে একে দায়ী করা হত খরা ও মহামারীর জন্য।[১৩] সমুদ্রের আগাছা পুরিয়ে যা কেলপ নামে পরিচিত তা ১৭৭২ সালে স্ট্রনসে থেকে শুরু হয়। – সোডা অ্যাশ – একটি ক্ষারীয় পদার্থ যা অম্লীয় মাটি সংশোধন করার জন্য ব্যবহার করা হয়,[৪][১৩] যদিও যতই সময় যেতে থাকে ততই সাবান ও কাচ শিল্পে এর ব্যাবসায়িক গুরুত্ব বাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়ায়ে নির্গত ঝাঁঝালো ধোয়া নুক্লাভির রোষের উদ্রেক ঘটায় বলে বিশ্বাস করা হয়,[৪] যার ফলাফল হচ্ছে প্লেগ এর বীভৎস তাণ্ডব, গৃহ পালিত পশুর মৃত্যু এবং ফসলের ব্যাপক ধ্বংস সাধন।[২০][২১] বলা হয়ে থাকে যে নুক্লাভি মরতাশিন নামক মরনব্যাধির মাধ্যমে স্ট্রনসের ঘোড়াকে সংক্রমিত করে,[ঘ] সমুদ্র আগাছা পুড়ানোর কারণে দ্বীপবাসীদের উপর ক্রোধ এবং প্রতিশোধের পরিমাণ দেখানর জন্য সঙ্ক্রমণটি শিল্পের সাথে জড়িত অন্যান্য দ্বীপেও ছড়িয়ে পরে। [৪][২৩] এই জীবটিকে বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিকভাবে কম বৃষ্টিপাতের জন্য দোষারোপ করা হয় যার ফলে পানি স্বল্পতা এবং খারাপ ফলন দেখা যায়।[৪]
কোন ক্ষতিপূরণমূলক বৈশিষ্ট্য ছাড়া নুক্লাভি হচ্ছে স্কটিশ দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে এবং আশেপাশে মধ্যে সবচাইতে অমঙ্গল্কারি সত্ত্বা। [২৪] একমাত্র আত্মা যা এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা হচ্ছে সমুদ্রের মিথার, অরকেডিও পুরাণের একটি আত্মা যা নুক্লাভিকে গ্রীষ্মকালে বন্দী করে রাখে। [২৫] সাধারণত অন্যান্য পৌরাণিক সমুদ্র দৈত্যের অনুরূপ কেলপি এবং শেটল্যান্ডের নাগল ছাড়া এটি মিঠা পানি মাড়িয়ে যেতে পারে না,[১৮] তাই যাদেরকে এটি তারা করছে তারা শুধু মাত্র একটি ঝর্না পার করলেই তা থেকে বাঁচতে পারবে। [২৬] তাম্মাস নুক্লাভি থেকে পালাতে সক্ষম হয় যখন সে অসাবধানতা বসত পাশের হ্রদ থেকে পানি ছুরে মারে; এটি অল্প সময়ের জন্য দানবটিকে বিভ্রান্ত করে ফেলে যা তাম্মাসকে কাছের একটি মিঠা পানির খালের মাঝে ঝাপ দিয়ে অন্য পাশে যেতে সহায়তা করে।[১৭]
বহু বছর আগে থেকে যখন দ্বীপবাসীরা কোন একটি ঘটনার ব্যাখ্যা অন্য কিছুর মাধ্যমে করতে পারতেন না তখন অমঙ্গলকারী জীবের সাহায্যে তা ব্যাখ্যা করতেন; অনেক পুরনো কাল্পনিক কথা ও প্রাকৃতিক উপাদান পরিবর্তনশীল অর্কনি সমুদ্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।[২৭][২৮][২৯][৩০] প্রতিষ্ঠিত অরকেডিও গল্প গুলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান পুরাণের ঐতিহ্যবাহী শেলটিক গল্পের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে,[৩১] তাই মনে করা হয় নুক্লাভির শিকর আছে পৌরাণিক নর্সমানব এবং ঐতিহ্যবাহী শেলটিক পানির ঘোড়ার সংযুক্তকারী জীবের মাঝে।[২]
টীকা
উদ্ধৃতি
গ্রন্থবিবরণী