![]() ইসলামি চারুলিপিতে লেখা নূহ | |
অন্যান্য নাম | নোহ (হিব্রু ভাষায়: נוֹחַ) |
পরিচিতির কারণ | নূহের নৌকা |
উপাধি | নবী |
পূর্বসূরী | ইদ্রিস |
উত্তরসূরী | হুদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | নয়মা |
সন্তান | শেম, হাম, ইয়াম ও যেফৎ |
নূহ[১] (আরবি: نوح; হিব্রু ভাষায়: נוֹחַ or נֹחַ, আধুনিক হিব্রু: Nóaḥ, তিবেরিয়ান: Nōªḥ; Nūḥ; আর্মেনীয়: "Noe" অথবা նօի) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, একজন নবি ছিলেন।[২] কুরআনে নূহ শিরোনামে একটি পূর্নাঙ্গ সূরা নাযিল হয়েছে যেখানে তার এবং সমকালীন বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মের মূল ধর্মীয় গ্রন্থ বাইবেলও তার সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
ইসলামের বর্ণনায়, আদম এর বংশধর নারী পুরুষরা তার শিক্ষা অনুসারে এক আল্লাহর উপাসনা করত।[৩] তাদের মধ্যে অনেক ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন যাদেরকে তার সম্প্রদায়ের মানুষ সম্মান ও মান্য করত।[৩] বলা হয় যে, যখন এই ধার্মিক লোকেরা মারা যায় তখন তাঁদের ভক্তরা তাঁদের বসার জায়গাগুলোকে উপাসনালয় বানিয়ে নেয় এবং তাঁদের চিত্রও সেখানে ঝুলিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এভাবে তারা তাঁদেরকে স্মরণ করে তারাও তাঁদের মত আল্লাহর উপাসনা করবে। তারপর যখন কিছু কাল অতিবাহিত হল, তখন তারা এই চিত্রগুলোর মূর্তি নির্মাণ করল। আরও কিছু কাল পর পরবর্তী বংশধররা শয়তানের প্ররোচনায় এসব মূর্তির উপাসনা করতে শুরু করে। এসব পথভ্রষ্ট মানুষদের সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ হযরত নূহকে তাদের মাঝে নবি হিসাবে প্রেরণ করেন।[৩]
কুরআনে ৪৩ বার নূহ নবীর উল্লেখ পাওয়া গেছে। কুরআন অনুসারে, নূহ সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ বয়স লাভ করেছিলেন এবং সারা জীবন মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য কাজ করেন। কিন্তু তার জাতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে তার জাতি ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হয়ে যায়।
কুরআনে বলা হয়েছে,
"নিশ্চয় আমরা নূহ্কে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের প্রতি এ নির্দেশসহ যে, আপনি আপনার সম্প্রদায়কে সতর্ক করুন তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী - এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্-র উপাসনা করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ্ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত করা হয় না; যদি তোমরা এটা জানতে’।"[কুরআন ৭১:১–৪]
তার সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না। বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া', ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে’।"[কুরআন ৭১:২৩]
নূহের বিরুদ্ধে তাদের যুক্তি সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে,
"অতঃপর তার সম্প্রদায়ের নেতারা যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, ‘আমরা তো তোমাকে আমাদের মত একজন মানুষ ছাড়া কিছু দেখছি না এবং আমরা দেখছি যে, কেবল আমাদের নিচু শ্রেণীর লোকেরাই বিবেচনাহীনভাবে তোমার অনুসরণ করেছে। আর আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব আমরা দেখছি না; বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি’।"[কুরআন ১১:২৭]
আরও বলা হয়েছে,
"অতঃপর তার সম্প্রদায়ের নেতারা, যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, ‘এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে। আর আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন। আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এরূপ ঘটেছে বলে শুনিনি। সে কেবল এমন এক লোক, যার মধ্যে পাগলামী রয়েছে। অতএব তোমরা তার সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা করো’।"[কুরআন ২৩:২৪–২৫]
তাদের যুক্তির জবাবে কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর যদি রাসূলকে ফেরেশতা বানাতাম তবে তাকে পুরুষ মানুষই বানাতাম। ফলে তারা যে সন্দেহ করে, সে সন্দেহেই তাদেরকে রেখে দিতাম।"[কুরআন ৬:৯]
"তিনি (নূহ) বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার রব প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তার নিজের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ দান করে থাকেন, অতঃপর সেটা তোমাদের কাছে গোপন রাখা হয়, আমরা কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমার এটা অপছন্দ কর? আর হে আমার সম্প্রদায়, এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো সম্পদ চাই না। আমার প্রতিদান শুধু আল্লাহর কাছে। যারা ঈমান এনেছে, আমি তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। নিশ্চয় তারা তাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে। কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা এক অজ্ঞ জাতি’।"[কুরআন ১১:২৮–২৯]
তারপরও তার সম্প্রদায় বিশ্বাস না করে আল্লাহ্-র শাস্তি নিয়ে আসতে বলেছে এবং তাঁকে মৃত্যুর হুমকিও দিয়েছে বলে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
"তারা বলল, ‘হে নূহ, তুমি আমাদের সাথে বাদানুবাদ করছ এবং আমাদের সাথে অতিমাত্রায় বিবাদ করেছ। অতএব যার প্রতিশ্রুতি তুমি আমাদেরকে দিচ্ছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে আস, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও’।"[কুরআন ১১:৩২]
"তারা বলল, ‘হে নূহ, তুমি যদি বিরত না হও তবে অবশ্যই তুমি প্রস্তরাঘাতে নিহতদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।"[কুরআন ২৬:১১৬]
দীর্ঘকাল তাওহীদের প্রতি আহ্বানের পর যখন আর কেউ ঈমান আনার সম্ভাবনা থাকল না, তখন কাফিরদের মহাপ্লাবনের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হয় এবং নৌকায় আরোহণ করে নূহ ও অন্য মুমিনরা বেঁচে যায় বলে কুরআনের বিভিন্নস্থানে বলা হয়েছে।
"অতঃপর সে তার প্রতিপালককে আহবান করল যে, ‘নিশ্চয় আমি পরাজিত, অতএব তুমিই প্রতিশোধ গ্রহণ কর’। ফলে আমি বর্ষণশীল বারিধারার মাধ্যমে আকাশে দ্বারসমূহ খুলে দিলাম। আর ভূমিতে আমি ঝর্ণা উৎসারিত করলাম। ফলে সকল পানি মিলিত হল নির্ধারিত নির্দেশনা অনুসারে। আর আমি তাকে (নূহকে) কাঠ ও পেরেক নির্মিত নৌযানে আরোহণ করালাম। যা আমার চাক্ষুস তত্ত্বাবধানে চলত, তার জন্য পুরস্কার স্বরূপ, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।"[কুরআন ৫৪:১০–১৪]
বাইবেলে বর্ণনা অনুসারে, নোয়াহ ছিলেন প্লাবন পূর্ব যুগের দশম শ্রদ্ধেয় নেতা। তার পিতা ছিলেন একজন গোত্রপতি। মাতার পরিচয় জানা যায়নি।[৪] নোয়াহর বয়স যখন পাঁচশত বছর তখন সেম, হামম্ এবং যাপেট নামে তার তিন পুত্রের জন্ম হয়।[৫]
বুক অব জেনেসিসের ৬-৯ পরিচ্ছেদে নূহের প্লাবনের বিশদ বর্ণনা আছে।[৬] বর্ণনায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর মানুষের বিশাল পাপের কারণে ঈশ্বর পৃথিবীতে মহাপ্লাবনের মাধ্যমে পৃথিবী ধ্বংস করেন।[৭] নূহের নৌকায় তুলে নেয়া পৃথিবীর সমস্ত প্রানীর জোড়া থেকে পুনরায় তাদের সৃষ্টি করেন। ঈশ্বর এই মর্মে প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি আর কোন প্লাবন সৃষ্টি করবেন না।[৮]
![]() |
ইসলাম বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |