নৃত্য পরিচালনা (ইংরেজি: Choreography) হলো শারীরিক দেহের গতিবিধির (বা তাদের প্রতিকৃতি) ক্রমগুলি নকশা করার শিল্প বা অনুশীলন, যেখানে গতি, রূপ বা উভয়ই নির্দিষ্ট করা থাকে। কোরিওগ্রাফিকে পরিচালনা ছাড়াও নকশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। নৃত্য পরিচালক হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নৃত্য শিল্পকে অনুশীলন করে নৃত্য পরিচালনা করে থাকেন। নৃত্য পরিচালনা ব্যালে, অপেরা, গীতি নাট্য, চিয়ারলিডিং, সিনেমাটোগ্রাফি, জিমন্যাস্টিকস, পোশাক প্রদর্শনী, বরফ স্কেটিং, মার্চিং ব্যান্ড, শো কোয়ার, মঞ্চনাট্য, সিঙ্ক্রোনাইজড সাঁতার, কার্ডিস্ট্রি, ভিডিও গেম প্রোডাকশন এবং অ্যানিমেটেড আর্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। পরিবেশন শিল্পকলায় নৃত্য পরিচালনা মানব আন্দোলন এবং রূপের জন্য প্রযোজ্য। নৃত্যে, নৃত্য পরিচালনা নৃত্য রচনা হিসেবেও পরিচিত।
নৃত্য পরিচালনা শব্দের আক্ষরিক অর্থ নৃত্য-রচনা, যা গ্রীক শব্দ "χορεία" (বৃত্তাকার নৃত্য) এবং "γραφή" (লেখা বা রচনা) থেকে এসেছে। নৃত্য পরিচালনার ইংরেজি প্রতিশব্দ কোরিওগ্রাফি, এটি ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন ইংরেজি অভিধানে শব্দটি প্রথম লক্ষ্য করা গিয়েছে,[১] এবং "কোরিওগ্রাফার" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জর্জ বালানচাইন, যা তিনি ১৯৩৬ সালে তার অন ইয়ুর টোজ চলচ্চিত্রে উল্লেখ করেছিলেন।
১৯শ শতকের সময় শব্দটি নৃত্যের সৃষ্টিকে বোঝাতে থাকে এবং লিখিত রূপটিকে "Dance notation" নাম দেওয়া হয়। কোরিয়োগ্রাফিতে দেহের ভঙ্গীমা, লয়, পরিবেশ এবং ভিন্নতা ব্যবহার করা হয়। কোরিয়োগ্রাফির প্রক্রিয়ায় নতুন-নতুন ভঙ্গীমার জন্য তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনারও (improvisation) প্রয়োগ করা হয়।
১৬শ শতকে ফরাসি রাজসভার নৃত্যবিদরা তাদের সামাজিক নৃত্যকে একটি নির্দিষ্ট শৈলী প্রদান করেছিল। ১৭শ শতকে এমন নৃত্যগুলি অধিক জটিল হয়ে পড়ে এবং প্রশিক্ষিত পেশাদারী ব্যক্তিরা থিয়েট্রিকাল ব্যালেরূপে পরিবেশন করত। ১৮শ শতকের শেষদিকে জিন-জর্জ নভের এবং গেস্পারো এঞ্জিয়োলিনি নাটকীয় ব্যালের জন্য অভিব্যক্তি প্রকাশ করা মুকাভিনয় এবং নাচের মুদ্রা সংযোগ করে কোরিয়োগ্রাফিকে নতুন রূপ দেন। ১৯শ শতকে রোমান্টিক ব্যালের জন্য মেরিয়াস পেটিপা, জুল্স পেরট এবং আগস্ট ব'র্ননভিলে এই শৈলীসমূহের এবং পরিবর্তন সাধন করেন। বিংশ শতকে মাইকেল ফকিন, নিয়োনাইড মেচিন, মার্থা গ্রাহাম ইত্যাদি নৃত্যবিশারদ কোরিয়োগ্রাফিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেওয়াত সহায়তা করেন।[২]