নেইডুনুও অঙ্গামি | |
---|---|
জন্ম | ১লা অক্টোবর, ১৯৫০ |
পেশা | সমাজকর্মী |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
নেইডুনুও অঙ্গামি একজন ভারতীয় সমাজকর্মী এবং ভারতের নাগাল্যান্ডে সামাজিক সমস্যাগুলির প্রতিকারের জন্য কাজ করা একটি বেসরকারী সংস্থা নাগা মাতৃ সঙ্ঘ বা নাগা মাদার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা[১]।
নেইডুনুও অঙ্গামির জন্ম ১৯৫০ সালের ১লা অক্টোবর উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী কোহিমাতে[২][৩]। তাঁর বাবা ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। নেইডুনুওর যখন ছয় বছর বয়স, তাঁর বাবা নাগা বিদ্রোহীদের দ্বারা নিহত হন। বাবাকে হারানোর পরে, অত্যন্ত আর্থিক অসুবিধার মধ্যে তাঁর মা আরও চার ভাইবোনের সাথে নেইডুনুওকে বড় করেন[৪]। অঙ্গামি আট বছর বয়সে মেজুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (প্রাক্তন ক্যামব্রিজ স্কুল) থেকে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে কোহিমাতে ব্যাপটিস্ট ইংলিশ স্কুল ও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমিক ক্রিয়াকলাপে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং আন্তঃস্কুল প্যারেড এবং ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পোরেশনের ক্রিয়াকলাপের সময় প্রায়শই তাঁর বিদ্যালয়ের দলকে নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, কোহিমা কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন এবং সেখান থেকে প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে কোহিমা পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তবে তিনি বেশি দিন চাকরিতে থাকেননি। এই সময়েই তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিন কন্যা সন্তানের জননী হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ এর বছরগুলি তিনি কোহিমাতে একজন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন।এই সময়ে তিনি নাগাল্যান্ড তাঁতশিল্পী সমিতি বা নাগাল্যান্ড ওয়েভারস অ্যাসোসিয়েশনও প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন তাঁতশিল্পী দলকে অংশগ্রহণ করার ব্যবস্থা করে দেন।
১৯৮৪ সালে, নেইডুনুও অন্যান্য কিছু নাগা মহিলাদের সাথে মাদকের আসক্তি এবং মদ্যপানের সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নাগা মাতৃ সঙ্ঘ বা নাগা মাদার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনএমএ) গঠন করেছিলেন[১][২][৫][৬]। সংগঠনটি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নাগা উপজাতির মহিলাদের একটি আলোচনাক্ষেত্র রূপে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং নেইডুনুও তাঁর প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দু'বারের জন্য সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন[৩][৪][৭]। নেইডুনুও ১৯৮৬ সালে এনএমএর যুব ও মহিলা কল্যাণ সংস্থা, ১৯৮৯ সালে মাউন্ট গিলিয়েড হোম বা মাদকাসক্ত ও মদ্যপায়ীদের আশ্রয়স্থল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং ২০০১ সালে এনএমএ এইচআইভি / এইডস কেয়ার হসপাইস এর মতো একাধিক শাখা সংগঠন গড়ে তোলেন[২][৩][৬]। তিনি শেড নো মোর ব্লাড নামে একটি সামাজিক আন্দোলনও চালিয়েছিলেন বলে জানা যায়, যা নাগা বিদ্রোহীদের মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসতে সহায়তা করে[৭][৮]। নাগা হো, নাগা স্টুডেন্টস ফেডারেশন এবং নাগা পিপলস মুভমেন্ট ফর হিউম্যান রাইটস-এর মতো অন্যান্য সামাজিক ও উপজাতি স্ংগঠনের সহায়তায় নাগা মাতৃ সঙ্ঘ বিদ্রোহীদের সাথে সরকারের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতেও সফল হয়। নাগা মাতৃ সঙ্ঘ যুদ্ধে নিহত হতাহতদের যথাযথ শেষকৃত্য করতেও সহায়তা করেছিল। থাইল্যান্ড, নতুন দিল্লি এবং নাগাল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বহু শান্তি আলোচনায় অঙ্গামি এনএমএর প্রতিনিধিত্বও করেছেন। এর প্রয়াসকে সম্মান জানিয়ে সংস্থাটি ২০১৩ সালে টাইমস অফ ইন্ডিয়া সামাজিক প্রভাব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল[১]। ২০০০ সালে, এনএমএর নেতৃত্বে আঙ্গামি বিবেকের সফর বা জার্নি অফ কন্সেন্স নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেন, যেখানে বিদ্রোহী সংগঠনের নেতারা অন্যান্য নাগরিক ও সামাজিক দল, মিডিয়া, ছাত্র সংগঠন, শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং মতবিনিময়ের সুযোগ পান[২]। আঙ্গামি এবং নাগা মাতৃ সঙ্ঘ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ অধিবেশন, কর্মশালা এবং সেমিনারের মাধ্যমে বিদ্রোহী সদস্যদের দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থাও করেছিল। তিনি ভারত এবং বিদেশে এই জাতীয় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন[৩]
নাগাল্যান্ডে দীর্ঘদিন ব্যাপী মাদকবিরোধী আন্দোলন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর নিরলস ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০০ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী দ্বারা ভূষিত করেছিল[৯]। ২০০৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য বাছাই করা ১০০০ জন মহিলার মধ্যে একজন হিসাবে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে[৩][৭]।