নেপচুন গ্রহের মোট চোদ্দোটি প্রাকৃতিক উপগ্রহের কথা জানা যায়। এগুলি গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত বিভিন্ন অপ্রধান জলদেবতার নামাঙ্কিত। অদ্যাবধি আবিষ্কৃত নেপচুনীয় উপগ্রহগুলির মধ্যে বৃহত্তমটির নাম ট্রাইটন। ১৮৪৬ সালে নেপচুন আবিষ্কারের ঠিক সতেরো দিন পরে অর্থাৎ ১০ অক্টোবর তারিখে উইলিয়াম লেসেল ট্রাইটন আবিষ্কার করেছিলেন। এই উপগ্রহটির কক্ষীয় গতি নেপচুনের আবর্তনের বিপরীতমুখী এবং নতি নেপচুনের নিরক্ষরেখার সঙ্গে আপেক্ষিক হওয়ায় গ্রহীয় ভর-বিশিষ্ট প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলির মধ্যে ট্রাইটনের স্থান স্বতন্ত্র। এই বৈশিষ্ট্যগুলি দৃষ্টে অনুমিত হয় যে, ট্রাইটনের কক্ষপথটি স্বাভাবিকভাবে সৃষ্টি হয়নি; এটি আসলে নেপচুনের অভিকর্ষীয় টানে আবদ্ধ হয়ে গ্রহটির উপগ্রহে পরিণত হয়েছে। সৌরজগতে অনুরূপভাবে উপগ্রহে পরিণত হওয়া পরবর্তী বৃহত্তম বস্তুটি হল শনির উপগ্রহ ফিবি, যার ভর ট্রাইটনের ভরের মাত্র ০.০৩ শতাংশ। ট্রাইটনের এই ভর উদ্স্থিতি সাম্যাবস্থা অর্জন এবং মেঘ ও পাতলা কুয়াশা ঘটনে সক্ষম তথা ঘনত্বহীন একটি বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার পক্ষে যথেষ্ট। সম্ভবত নেপচুনের আদি উপগ্রহমণ্ডলীটি গঠিতি হওয়ার কিছুকাল পরে এক ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে ট্রাইটন নেপচুনের উপগ্রহে পরিণত হয়েছিল। এই সংঘর্ষের ফলেই সম্ভবত নেপচুনের সেই আদি উপগ্রহগুলির গতিপথ বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল এবং পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সেগুলি নুড়িপাথরের একটি চাকতি সৃষ্টি করেছিল।
সাতটি ছোটো নিয়মিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেপচুন ও ট্রাইটনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে নেপচুনের নিরক্ষীয় তলের নিকটবর্তী তলে অগ্রমুখী কক্ষপথে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এগুলির কয়েকটির অবস্থান নেপচুনের বলয়ের মধ্যেই। নেপচুনের উপগ্রহে পরিণত হওয়ার পর ট্রাইটনের কক্ষপথটি বৃত্তাকার রূপ ধারণ করে। এরপরেই নুড়িপাথরের পূর্বোক্ত চাকতিটি থেকে এই উপগ্রহগুলি পুনঃসৃজিত হয়। এই সাতটি উপগ্রহের মধ্যে বৃহত্তমটির নাম প্রোটিয়াস।
ট্রাইটন আবিষ্কারের একশো বছরেরও বেশি সময় পরে আবিষ্কৃত হয় নেপচুনের পরবর্তী উপগ্রহ নিয়ারিড। ট্রাইটন ছাড়া নেপচুনের আরও ছয়টি যে বহিঃস্থ অনিয়মিত উপগ্রহ রয়েছে, তার অন্যতম এই নিয়ারিড। নেপচুন থেকে এই ছয়টি উপগ্রহের কক্ষপথের দূরত্ব অধিকতর, নতিও উচ্চ। এগুলির মধ্যে তিনটির কক্ষপথ পশ্চাদমুখী এবং অপর তিনটির অগ্রমুখী। সুনির্দিষ্টভাবে বললে, অনিয়মিত উপগ্রহ হিসেবে নেপচুন ও নিয়ারিডের কক্ষপথের নৈকট্য ও উৎকেন্দ্রিকতা অস্বাভাবিক রকমের। এই অস্বাভাবিকতা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, অতীতে সম্ভবত নিয়ারিড একটি নিয়মিত উপগ্রহ ছিল; ট্রাইটন নেপচুনের উপগ্রহে পরিণত হওয়ার সময় নিয়ারিডের কক্ষপথিটি বিশেষভাবে বিঘ্নিত হয় এবং তারপরই সেটি বর্তমান আকার ও বৈশিষ্ট্যগুলি অর্জন করে।
নেপচুনের সর্ব-বহিঃস্থ উপগ্রহ দু’টি হল স্যামাথি ও নিসো। আজ পর্যন্ত সৌরজগতের যতগুলি প্রাকৃতিক উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে স্যামাথি ও নিসোর কক্ষপথই বৃহত্তম। শুধু তাই নয়, প্রায় ২৬ জুলিয়ান বছরে নেপচুনকে একবার প্রদক্ষিণকারী নিসোর কক্ষপথই সৌরজগতের সকল প্রাকৃতিক উপগ্রহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রহ থেকে সর্বাধিক দূরত্বে অবস্থিত।[১]
১৮৪৬ সালে নেপচুন আবিষ্কারের ঠিক সতেরো দিন পরেই উইলিয়াম লেসেল ট্রাইটন আবিষ্কার করেন।[২] ১৯৪৯ সালে গেরার্ড পি. কাইপার আবিষ্কার করেন নিয়ারিড উপগ্রহটি।[৩] এরপর ১৯৮১ সালের ২৪ মে লারিসা নামে পরিচিত তৃতীয় উপগ্রহটিকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন হ্যারোল্ড জে. রিটসেমা, উইলিয়াম বি. হাবার্ড, ল্যারি এ. লেবোফস্কি ও ডেভিড জে. থোলেনকে নিয়ে গঠিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল। এই দলটি নেপচুনের অতি সন্নিকটে একটি তারার অগ্রসরণ পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং চার বছর আগে আবিষ্কৃত ইউরেনাসের বলয়ের অনুরূপ একটি বলয় নেপচুনকে ঘিরে রয়েছে কিনা তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলেন।[৪] বলয় থাকলে নেপচুনের সর্বাপেক্ষা নিকটে তারাটির ঔজ্জ্বল্য সামান্য হ্রাস পেত। কিন্তু মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্যই সেই ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়, যার অর্থ দাঁড়ায় বলয় নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহের উপস্থিতিই এর কারণ।
১৯৮৯ সালে ভয়েজার ২ নেপচুনের পাশ দিয়ে উড়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নেপচুনের অন্য কোনও উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়নি। ভয়েজার ২ ল্যারিসা পুনরাবিষ্কার করে এবং সেই সঙ্গে আবিষ্কার করে আরও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ উপগ্রহ: নেয়্যাড, থাল্যাসা, ডেসপাইনা, গ্যালাটিয়া ও প্রোটিয়াস।[৫] ২০০১ সালে বৃহদাকার ভূপৃষ্ঠস্থ দূরবীনের সাহায্যে দু’টি পর্যবেক্ষণের ফলে আরও পাঁচটি বহিঃস্থ উপগ্রহ আবিষ্কার হয়। এর ফলে নেপচুনের মোট উপগ্রহের সংখ্যা দাঁড়ায় তেরোটিতে।[৬] এরপর ২০০২ ও ২০০৩ সালে দু’টি দলের পরবর্তী পর্যবেক্ষণে এই পাঁচটি উপগ্রহ পুনরাবিষ্কৃত হয়। উপগ্রহগুলির নাম রাখা হয় হ্যালিমিডি, সেও, স্যামাথি, লেওমাডিয়া ও নিসো।[৬][৭] ২০০২ সালের পর্যবেক্ষণের ফলে একটি ষষ্ঠ উপগ্রহের হদিসও পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তারপরেই সেটি হারিয়ে যায়।[৬]
২০০৯ সালে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ থেকে তোলা নেপচুনের ধনুকাকৃতি বলয়গুলির ছবি পরীক্ষা করতে গিয়ে ২০১৩ সালে মার্ক আর. শোঅল্টার আবিষ্কার করেন হিপোক্যাম্প নামক উপগ্রহটিকে। এটির কক্ষীয় গতি নির্ধারণ করতে তিনি প্যানিং-এর অনুরূপ একটি কৌশল গ্রহণ করেন এবং অস্পষ্ট আনুপুঙ্খিক তথ্যগুলি জানতে একাধিক ছবির স্টেকিং ব্যবহার করেন।[৮][৯][১০] খেয়ালের বশে বলয়ের বাইরের ব্যাসার্ধ পরিমাপ করার জন্য পর্যবেক্ষণের এলাকা বৃদ্ধি করার পর তিনি অদ্ব্যর্থক বিন্দু খুঁজে পান, যা ছিল নতুন উপগ্রহটির দ্যোতক।[১১] এরপর তিনি ২০০৪ সাল থেকে তুলতে থাকা এবং তথ্যভাণ্ডারে সঞ্চিত এইচএসটি ছবিগুলিতে বারবার বিন্দুটি দেখতে পান। ভয়েজার ২ নেপচুনের অন্যান্য সকল অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলি পর্যবেক্ষণ করলেও সেটির ১৯৮৯ সালের ফ্লাইবাই হিপোক্যাম্পের অস্পষ্টতার কারণে সেটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি।[৮]
বিংশ শতাব্দীর আগে ট্রাইটনের কোনও ঘোষিত নাম ছিল না। ১৮৮০ সালে ক্যামিল ফ্লেমারিয়ঁ তাঁর অ্যাস্ট্রোনমি পপুলারি গ্রন্থে "ট্রাইটন" নামটি প্রস্তাব করেছিলেন বটে,[১২] কিন্তু ১৯৩০-এর দশকের আগে নামটির সাধারণ ব্যবহার শুরু হয়নি।[১৩] ততদিন পর্যন্ত এটি সাদামাটাভাবে "নেপচুনের প্রাকৃতিক উপগ্রহ" (ইংরেজি: the satellite of Neptune) নামে পরিচিত ছিল। নেপচুন সমুদ্রের দেবতার নাম হওয়ায় এই গ্রহের অন্যান্য উপগ্রহগুলির নামকরণ করা হয় গ্রিক ও রোমান জলদেবতাদের নামানুসারে। যেমন, গ্রিক পুরাণে নেপচুনের প্রতিরূপ পসেইডনের সন্তানদের নামানুসারে (ট্রাইটন, প্রোটিয়াস, ডেসপাইনা, থাল্যাসা); পসেইডনের প্রেমিকার নামে (লারিসা); অপ্রধান গ্রিক জলদেবতার শ্রেণির নামানুসারে (নেয়্যাড, নিয়ারিড); অথবা নির্দিষ্ট কোনও নিরিডের নামানুসারে (হ্যালিমিডি, গ্যালাটিয়া, নিসো, সেও, লেওমাডিয়া, স্যামাথি)।[১৪] ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ আবিষ্কৃত উপগ্রহ হিপোক্যাম্প কোনও নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত হয়নি। ২০১৯ সালে হিপোক্যাম্প্যাস নামে অর্ধেক ঘোড়া ও অর্ধেক মাছের দেহবিশিষ্ট এক পৌরাণিক জীবের নামানুসারে এটির নামকরণ করা হয়।[১৫]
"স্বাভাবিক" অনিয়মিত উপগ্রহগুলির নামকরণের সাধারণ প্রথা অনুযায়ী অগ্রমুখী উপগ্রহের ক্ষেত্রে ইংরেজি "এ" ("a") অক্ষর, পশ্চাদমুখী উপগ্রহগুলির ক্ষেত্রে ইংরেজি "ই" ("e") অক্ষর এবং ব্যতিক্রমী নতি-সম্পন্ন উপগ্রহগুলির ক্ষেত্রে ইংরেজি "ও" ("o") অক্ষর দিয়ে শেষ হওয়া নামই রাখা হয়, যেমনটি বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলির ক্ষেত্রে করা হয়েছে।[১৬] দু’টি গ্রহাণুর নাম নেপচুনের দু’টি উপগ্রহের নামের অনুরূপ: ৭৪ গ্যালাটিয়া ও ১১৬২ লারিসা।
নেপচুনের উপগ্রহগুলি দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত: নিয়মিত ও অনিয়মিত। অভ্যন্তরীণ সাতটি উপগ্রহ প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এগুলি নেপচুনের বিষুবীয় তলে অবস্থিত বৃত্তাকার অগ্রমুখী কক্ষপথে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। ট্রাইটন সহ অপর সাতটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর্গত। এগুলি সাধারণত নেপচুন থেকে দূরে নতি-সম্পন্ন উৎকেন্দ্রিক এবং প্রায়শই পশ্চাদমুখী কক্ষপথে নেপচুনকে প্রদক্ষিণ করে। একমাত্র ট্রাইটনই এগুলির মধ্যে ব্যতিক্রম। ট্রাইটনের কক্ষপথ পশ্চাদমুখী ও নতিসম্পন্ন হলেও সেটি বৃত্তাকার এবং নেপচুনের নিকটবর্তী।[১৭]
নেপচুন থেকে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব অনুযায়ী এই গ্রহের নিয়মিত উপগ্রহগুলি হল নেয়্যাড, থাল্যাসা, ডেসপাইনা, গ্যালাটিয়া, লারিসা, হিপোক্যাম্প ও প্রোটিয়াস। এগুলির মধ্যে সর্ব-বহিঃস্থ উপগ্রহ দু’টি (হিপোক্যাম্প ও প্রোটিয়াস) বাদে সবগুলিই নেপচুন-সমলয় কক্ষপথের মধ্যে অবস্থিত (নেপচুনের আবর্তন কাল হল ০.৬৭১৩ দিন বা ১৬ ঘণ্টা[১৮]) এবং সেই কারণে এগুলি জোয়ারের বন্ধনে মন্দীভূত হয়। নিকটতম নিয়মিত উপগ্রহ নেয়্যাড অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলির মধ্যে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতমও বটে (ক্ষুদ্রতম উপগ্রহটি হল হিপোক্যাম্প); অপরপক্ষে প্রোটিয়াস হল নেপচুনের বৃহত্তম নিয়মিত এবং সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ। প্রথম পাঁচটি উপগ্রহ নেপচুনের আবর্তন কালের প্রেক্ষিতে অনেক দ্রুত গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, নেয়্যাড ও থাল্যাসার প্রদক্ষিণ কাল ৭ ঘণ্টা এবং লারিসার ১৩ ঘণ্টা।
অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলির সঙ্গে নেপচুনের বলয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নিকটতম দু’টি উপগ্রহ নেয়্যাড ও থাল্যাসার কক্ষপথ গেল ও লেভ্যারিয়ার বলয়ের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত।[৫] ডেসপাইনার কক্ষপথ লেভ্যারিয়ার বলয়ের ঠিক ভিতরেই অবস্থিত হওয়ায় সম্ভবত এটি উক্ত বলয়ের একটি রাখালিয়া উপগ্রহ।[১৯] পরবর্তী উপগ্রহ গ্যালাটিয়া নেপচুনের সর্বাপেক্ষা সুস্পষ্ট বলয় অ্যাডামস বলয়ের ঠিক ভিতর থেকে গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে।[১৯] এই বলয়টি অত্যন্ত সংকীর্ণ; প্রস্থ ৫০ কিলোমিটারেরও কম[২০] এবং দৃঢ়ভাবে গ্রথিত পাঁচটি উজ্জ্বল বৃত্তচাপ-বিশিষ্ট।[১৯] গ্যালাটিয়ার মাধ্যাকর্ষণ বলয়ের কণাগুলিকে ব্যাসার্ধ-সংক্রান্ত দিকে একটি সীমায়িত অঞ্চলের মধ্যে আটকে রেখে বলয়ের সংকীর্ণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বলয়ের কণা ও গ্যালাটিয়ার মধ্যে বিভিন্ন অনুনাদও সম্ভবত বৃত্তচাপগুলি অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহায্য করে।[১৯]
আকার ও পৃষ্ঠতলের বৈশিষ্ট্যগুলি উপলব্ধি করার পক্ষে সহায়ক রেজোলিউশনে আলোকচিত্র গ্রহণ বৃহত্তম দু’টি উপগ্রহের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়েছে।[৫] লারিসার ব্যাস প্রায় ২০০ কিলোমিটার এবং আকারের দিক থেকে এটি লম্বাটে। প্রোটিয়াস বিশেষ লম্বাটে না হলেও পুরোপুরি গোলকাকারও নয়।[৫] এই উপগ্রহটির আকার কতকটা অনিয়মিত বহুতলকের সদৃশ এবং এটিতে ১৫০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যাসরেখা-বিশিষ্ট বেশ কয়েকটি চ্যাপ্টা বা সামান্য অবতল অংশ লক্ষিত হয়।[২১] ৪০০ কিলোমিটার ব্যাস-বিশিষ্ট এই উপগ্রহটি আকারে শনির পূর্ণ উপবৃত্তাকার উপগ্রহ মাইমাসের থেকেও বড়ো। এই পার্থক্যের কারণ সম্ভবত অতীতে প্রোটিয়াসে কোনও সংঘাত-জাত ব্যাঘাত।[২২] প্রোটিয়াসের পৃষ্ঠভাগ বহু-সংখ্যক সংঘাত গহ্বরে আকীর্ণ এবং সেখানে অনেকগুলি রৈখিক বৈশিষ্ট্যও লক্ষিত হয়। এটির বৃহত্তম সংঘাত গহ্বর ফারোসের ব্যাস ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি।[৫][২১]
নেপচুনের সব ক’টি অভ্যন্তরীণ উপগ্রহই অন্ধকার বস্তু: এগুলির জ্যামিতিক প্রতিফলন অনুপাতের মাত্র ৭ থেকে ১০ শতাংশ।[২৩] এগুলির বর্ণালি ইঙ্গিত করে যে এগুলি কোনও অত্যন্ত অন্ধকার বস্তুর (সম্ভবত জটিল জৈব যৌগ) দ্বারা দূষিত জলীয় বরফে গঠিত। এই দিক থেকে নেপচুনের অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলির সঙ্গে ইউরেনাসের অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলির সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[৫]
নেপচুন থেকে ক্রমবর্ধমান দূরত্বের নিরিখে অনিয়মিত উপগ্রহগুলি হল ট্রাইটন, নিয়ারিড, হ্যালিমিডি, সেও, লেওমাডিয়া, স্যামাথি ও নিসো। এই উপগ্রহগুলির কোনওটি অগ্রমুখী, কোনওটি পশ্চাদমুখী।[১৭] সর্ব-বহিঃস্থ পাঁচটি উপগ্রহ অন্যান্য দানব গ্রহের অনিয়মিত উপগ্রহগুলিরই অনুরূপ। অনুমিত হয় যে এগুলি নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা পড়ে এই গ্রহের উপগ্রহে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে নিয়মিত উপগ্রহগুলি সম্ভবত স্থানীয়ভাবেই উদ্ভূত হয়।[৭]
ট্রাইটান ও নিয়ারিড হল দু’টি ব্যতিক্রমী অনিয়মিত উপগ্রহ। সেই কারণে এগুলিকে নেপচুনের অন্য পাঁচটি অনিয়মিত উপগ্রহের থেকে পৃথক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই পাঁচটি উপগ্রহের সঙ্গেই অন্যান্য বাহ্যিক গ্রহের অনিয়মিত উপগ্রহগুলির অধিক সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[৭] প্রথমত, টাইটান ও নিয়ারিড সৌরজগতের জ্ঞাত অনিয়মিত উপগ্রহগুলির মধ্যে বৃহত্তম এবং সেই তুলনায় অন্যান্য সকল জ্ঞাত অনিয়মিত উপগ্রহগুলির তুলনায় ট্রাইটান প্রায় একটি অধিকতর উজ্জ্বলতার ক্রমে অবস্থিত। দ্বিতীয়ত, উভয় উপগ্রহের প্রায়-প্রধান অক্ষ অপ্রতিরূপকভাবে ছোটো এবং ট্রাইটানের উজ্জ্বলতার ক্রম অন্যান্য সকল জ্ঞাত উপগ্রহের উজ্জ্বলতার ক্রমের তুলনায় হ্রস। তৃতীয়ত, উভয় উপগ্রহেরই কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ব্যতিক্রমী ধরনের: অন্য যে কোনও জ্ঞাত অনিয়মিত উপগ্রহের তুলনায় নিয়ারিডের কক্ষপথ অধিকতম উৎকেন্দ্রিক এবং ট্রাইটনের কক্ষপথ প্রায় নিখুঁত বৃত্তাকার। শেষত, নিয়ারিডের নতিও অন্য যে কোনও অনিয়মিত উপগ্রহের তুলনায় সর্বনিম্ন।[৭]
ট্রাইটনের কক্ষপথটি পশ্চাদমুখী এবং কিছুটা বৃত্তাকার। মনে করা হয়, এটি নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণ বলে আবদ্ধ একটি উপগ্রহ। এটিই সৌরজগতের দ্বিতীয় প্রাকৃতিক উপগ্রহ যেখানে একটি সুদৃঢ় বায়ুমণ্ডল আবিষ্কৃত হয়েছে। এই বায়ুমণ্ডলটি প্রধানত নাইট্রোজেন এবং অল্প পরিমাণে মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইড দ্বারা গঠিত।[২৪] ট্রাইটনের পৃষ্ঠভাগের চাপ প্রায় ১৪ μবার.[২৪] ১৯৮৯ সালে ভয়েজার ২ মহাকাশযান থেকে যা পর্যবেক্ষিত হয় তা এই হালকা বায়ুমণ্ডলে আপাতদৃষ্টিতে মেঘ ও পাতলা কুয়াশার মতো কিছু।[৫] ট্রাইটন হল সৌরজগতের শীতলতম বস্তুগুলির অন্যতম। এই উপগ্রহের পৃষ্ঠভাগের তাপমাত্রা প্রায়৩৮ kelvin (−২৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস).[২৪] এই পৃষ্ঠভাগটি নাইট্রোজেন, মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বরফে পরিপূর্ণ[২৫] এবং এখানে জ্যামিতিক প্রতিফলন অনুপাতের পরিমাণ ৭০ শতাংশেরও বেশি।[৫] এখানে বন্ড প্রতিফলন অনুপাতের পরিমাণ আরও বেশি, ৯০ শতাংশ পর্যন্ত।[৫][note ১] ট্রাইটনের পৃষ্ঠভাগের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে বৃহদাকার দক্ষিণ মেরুস্থ হিমছত্র, গ্রস্থ উপত্যকা ও প্রবণভূমি বরাবর সংঘাত গহ্বর-বহুল প্রাচীনতর সমতলভূমি এবং সম্ভবত হৈম-অগ্ন্যুৎপাতের মতো অভ্যন্তরজাত প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত নতুন বৈশিষ্ট্যসমূহ।[৫] ভয়েজার ২ মহাকাশযানের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূর্যালোকে তপ্ত মেরুস্থ হিমছত্র এলাকার মধ্যে বেশ কয়েকটি সক্রিয় স্বতঃনিঃসারী উষ্ণপ্রস্রবণ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলি থেকে উৎক্ষিপ্ত প্লুমগুলি ৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে।[৫] ট্রাইটনের ঘনত্ব আপেক্ষিকভাবে বেশি: ২ গ্রাম/ঘন সেন্টিমিটার; যা ইঙ্গিত করে যে এই উপগ্রহটির ভরের দুই-তৃতীয়াংশ পাথর এবং অবশিষ্ট এক ভাগ বরফ (প্রধানর জলীয় বরফ) দ্বারা গঠিত। ট্রাইটনের পৃষ্ঠভাগের গভীরে সম্ভবত তরল জলের একটি স্তর রয়েছে, যা একটি ভূগর্ভস্থ মহাসাগরের সৃষ্টি করেছে।[২৬] উপগ্রহটির পশ্চাদমুখী কক্ষপথ এবং নেপচুনের সঙ্গে এটির আপেক্ষিক নৈকট্য (যা চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্বের থেকেও কম) এক জোয়ার-সংক্রান্ত মন্দীভবনের দ্বারা ট্রাইটনকে সর্পিল গতিতে ভিতরের দিকে টানছে। এর ফলে ৩.৬ লক্ষ কোটি বছরের মধ্যে এটিকে ধ্বংস করে দেবে।[২৭]
নিয়ারিড হল নেপচুনের তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ। এটির কক্ষপথ পশ্চাদমুখী হলেও অত্যন্ত উৎকেন্দ্রিক। মনে করা হয় যে, অতীতে এটি একটি নিয়মিত উপগ্রহ ছিল যা নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণে ট্রাইটনের বাঁধা পড়ার সময় বিক্ষিপ্ত হয়ে বর্তমান কক্ষপথটিতে স্থাপিত হয়েছে।[২৮] নিয়ারিডের পৃষ্ঠভাগে বর্ণালিবীক্ষণের মাধ্যমে জলীয় বরফের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নিয়ারিডের প্রথম পরিমাপগুলি থেকে এটির দৃশ্য উজ্জ্বলতায় বৃহৎ অনিয়মিত ভিন্নতা লক্ষিত হয়। মনে করা হত, এগুলির কারণ হল সজোর অয়নচলন অথবা বিশৃঙ্খল আবর্তন এবং সেই সঙ্গে এটির লম্বাটে গড়ন ও পৃষ্ঠভাগে অবস্থিত উজ্জ্বল অথবা অন্ধকার বিন্দুসমূহ।[২৯] ২০১৬ সালে কেপলার মহাকাশ মানমন্দির থেকে শুধুমাত্র অপ্রধান ভিন্নতাগুলিই পর্যবেক্ষিত হওয়ার পর অবশ্য এই ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। স্পিৎজার ও হার্সেল স্পেস টেলিস্কোপ দু’টি অবলোহিত পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে কৃত তাপ-সম্বন্ধীয় মডেলিং ইঙ্গিত করে যে, নেরেইড সীমিত পরিমাণে লম্বাটে আকৃতিবিশিষ্ট; এই ধরনের আকৃতি আবর্তনের সজোর অয়নচলনের অনুকূল নয়।[৩০] তাপ-সম্বন্ধীয় মডেলটি থেকে আরও জানা গিয়েছে যে, নিয়ারিডের পৃষ্ঠভাগের বন্ধুরতা অত্যধিক, যা সম্ভবত শনির উপগ্রহ হাইপেরিয়নের অনুরূপ।[৩০]
অবশিষ্ট অনিয়মিত উপগ্রহগুলির মধ্যে সেও ও লেওমাডিয়ার কক্ষপথ অগ্রমুখী এবং হ্যালিমিডি, স্যামাথি ও নিসোর কক্ষপথ পশ্চাদমুখী। এগুলির কক্ষপথের সাদৃশ্য ইঙ্গিত করে যে নিসো ও স্যামাথি সম্ভবত একটি বৃহত্তর উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ভূত।[৭] এখনও পর্যন্ত সৌরজগতের যতগুলি প্রাকৃতিক উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে স্যামাথি ও নিসোর কক্ষপথ দু’টিই বৃহত্তম। নেপচুনের থেকে এগুলির দূরত্ব পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যবর্তী দূরত্বের গড় ১২৫ গুণ বেশি। নেপচুনকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এই দু’টি উপগ্রহের সময় লাগে ২৫ বছর। সৌরজগতের সকল গ্রহের মধ্যে নেপচুনের হিল গোলকটিই বৃহত্তম। এর কারণ প্রধানত সূর্য থেকে এই গ্রহের বিপুল দূরত্ব। এই বৃহৎ হিল গোলকের জন্য নেপচুন এত দূরবর্তী উপগ্রহগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে।[১৭] তবে বৃহস্পতির কার্মে ও পাসিফে গোষ্ঠীর উপগ্রহগুলি স্যামাথি ও নিসোর তুলনায় বৃহস্পতির হিল ব্যাসার্ধের বৃহত্তর শতাংশে সংশিষ্ট গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করে।[১৭]
সৌরজগতের দানব গ্রহগুলির মধ্যে নেপচুনের উপগ্রহগুলির মধ্যেই ভরের বণ্টনের দিক থেকে সর্বাপেক্ষা অসামঞ্জস্য লক্ষিত হয়। এই উপগ্রহমণ্ডলীর প্রায় সমগ্র ভরই সঞ্চিত হয়েছে এককভাবে ট্রাইটনে; অন্যদিকে অন্যান্য উপগ্রহগুলির ভর একত্রে এক শতাংশের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। এই অসামঞ্জস্য শনির উপগ্রহমণ্ডলীর অনুরূপ: সেখানে এককভাবে টাইটানের ভরই সমগ্র উপগ্রহমণ্ডলীর ভরের ৯৫ শতাংশ। কিন্তু বৃহস্পতি ও ইউরেনাসের অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ উপগ্রহমণ্ডলী নেপচুনীয় উপগ্রহমণ্ডলীর থেকে অনেকটাই আলাদা। নেপচুনের বর্তমান উপগ্রহমণ্ডলীতে ভরের এই অসামঞ্জস্যের কারণ হল গ্রহটির আদি উপগ্রহগুলির উদ্ভবের পর নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণের বলে ট্রাইটনের বাঁধা পড়ার ঘটনাটি। এই ঘটনার ফলে নেপচুনের আদি উপগ্রহগুলির অনেকগুলিই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।[২৮][৩১]
নেপচুনের মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা পড়ার অব্যবহিত পরবর্তী সময়ে ট্রাইটনের কক্ষপথটি ছিল অত্যন্ত উৎকেন্দ্রিক। সম্ভবত সেই কারণেই নেপচুনের আদি অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলির কক্ষপথে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল এবং তার ফলে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সেগুলি নুড়িপাথরের একটি চাকতিতে পর্যবসিত হয়।[২৮] এর অর্থ এই যে, নেপচুনের বর্তমান অভ্যন্তরীণ উপগ্রহগুলি নেপচুনের সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া আদি উপগ্রহ নয়। সম্ভবত ট্রাইটনের কক্ষপথটি বৃত্তের আকার লাভ করার পরে উক্ত চাকতির কিছু নুড়িপাথর পুনঃত্বরান্বিত হয়ে বর্তমান নিয়মিত উপগ্রহগুলি সৃষ্টি করে।[২২]
ট্রাইটনের এই বাঁধা পড়ার কার্যসাধন-পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্বের অবতারণা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি ত্রি-বস্তু সংঘাতের ফলে ট্রাইটন নেপচুনের উপগ্রহে পরিণত হয়। এই তত্ত্বের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ট্রাইটন হল একটি যুগ্ম কাইপার বেষ্টনী বস্তুর[note ২] টিকে যাওয়া সদস্য। নেপচুনের সঙ্গে সংঘাতের ফলে এটির কক্ষপথ বিঘ্নিত হয়েছিল।[৩২]
সংখ্যাসূচক সিমুলেশন থেকে দেখা যায় যে অতীতে কোনও এক সময়ে হ্যালিমিডির সঙ্গে নিয়ারিডের সংঘাতের ঘটনার সম্ভাব্যতা ০.৪১।[৬] কোনও সংঘাত আদৌ ঘটেছিল কিনা তা জানা না গেলেও আপাত দৃষ্টিতে উক্ত দু’টি উপগ্রহই একই ("ধূসর") রঙের, যা ইঙ্গিত করে সম্ভবত হ্যালিমিডি নিয়ারিডেরই একটি ভগ্ন অংশ।[৩৩]
‡ অগ্রমুখী অনিয়মিত উপগ্রহ |
♠ পশ্চাদমুখী অনিয়মিত উপগ্রহ |
নেপচুনের প্রাকৃতিক উপগ্রহগুলি নিচে হ্রসতম থেকে দীর্ঘতম কক্ষীয় পর্যায়কালের ক্রমে তালিকাভুক্ত হল। অনিয়মিত (বাঁধা পড়া) উপগ্রহগুলি রঙের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। অনিয়মিত উপগ্রহগুলির কক্ষপথ ও গড় দূরত্ব গ্রহীয় ও সৌর বিঘ্নের কারণে স্বল্প সময়কালের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। তাই সকল অনিয়মিত উপগ্রহের তালিকাভুক্ত কক্ষীয় উপাদানগুলি হল ব্রোজোভিক ও অন্যান্যদের দ্বারা পরিগণিত (২০১১) ৬,০০০ বছরের সংখ্যাগত সমাকলনের গড়।[৩৪] নিয়ারিডের তালিকাভুক্ত কক্ষীয় উপাদানগুলি জেকবসন কৃত (২০০৯) ৪০০ বছরের সমাকলনের গড়।[৩৫] সব ক’টি কক্ষীয় উপাদানের ভিত্তি ১০ জুন ২০০০ পার্থিব সময়ের ইপক। ট্রাইটনই নেপচুনের একমাত্র উপগ্রহ যেটির ভর সেটির পৃষ্ঠভাগকে মহাকর্ষীয় পতনের মাধ্যমে গোলকের আকার দিতে সক্ষম হয়েছে। এই উপগ্রহটির তথ্য মোটা হরফে দেওয়া হয়েছে।
ক্রম [note ৩] |
লেবেল [note ৪] |
নাম | উচ্চারণ (সাহায্য) |
ছবি | ব্যাস (কিমি)[note ৫] |
ভর (×১০১৬ কিগ্রা) [note ৬] |
প্রায়-পরাক্ষ (কিমি)[১৫] |
কক্ষীয় পর্যায়কাল (দিন)[৩৯] |
কক্ষীয় নতি (°)[৩৯][note ৭] |
উৎকেন্দ্রিকতা [১৫] |
আবিষ্কারের বছর[১৪] |
আবিষ্কারক [১৪] |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | III | নেয়্যাড | /ˈneɪæd, |
![]() |
৬০.৪ (৯৬ × ৬০ × ৫২) |
≈ ১৯ | ৪৮২২৪ | +০.২৯৪৪ | ৪.৬৯১ | ০.০০৪৭ | ১৯৮৯ | ভয়েজার সায়েন্স টিম |
২ | IV | থাল্যাসা | /θəˈlæsə/ | ![]() |
৮১.৪ (১০৮ × ১০০ × ৫২) |
≈ ৩৫ | ৫০০৭৪ | +০.৩১১৫ | ০.১৩৫ | ০.০০১৮ | ১৯৮৯ | ভয়েজার সায়েন্স টিম |
৩ | V | ডেসপাইনা | /dɪˈspiːnə/ | ![]() |
১৫৬ (১৮০ × ১৪৮ × ১২৮) |
≈ ২১০ | ৫২৫২৬ | +০.৩৩৪৬ | ০.০৬৮ | ০.০০০৪ | ১৯৮৯ | ভয়েজার সায়েন্স টিম |
৪ | VI | গ্যালাটিয়া | /ˌɡæləˈtiːə/ | ![]() |
১৭৪.৮ (২০৪ × ১৮৪ × ১৪৪) |
≈ ৩৭৫ | ৬১৯৫৩ | +০.৪২৮৭ | ০.০৩৪ | ০.০০০১ | ১৯৮৯ | ভয়েজার সায়েন্স টিম |
5 | VII | লারিসা | /ləˈrɪsə/ | ![]() |
১৯৪ (২১৬ × ২০৪ × ১৬৮) |
≈ ৪৯৫ | ৭৩৫৪৮ | +০.৫৫৫৫ | ০.২০৫ | ০.০০১২ | ১৯৮১ | রিটসেমা ও অন্যান্য |
৬ | XIV | হিপোক্যাম্প | /ˈhɪpəkæmp/ | ![]() |
৩৪.৮±৪.০ | ≈ ৩ | ১০৫২৮৩ | +০.৯৫০০ | ০.০৬৪ | ০.০০০৫ | ২০১৩ | শোঅল্টার ও অন্যান্য[৮] |
৭ | VIII | প্রোটিয়াস | /ˈproʊtiəs/ | ![]() |
৪২০ (৪৩৬ × ৪১৬ × ৪০২) |
≈ ৫০৩৫ | ১১৭৬৪৬ | +১.১২২৩ | ০.০৭৫ | ০.০০০৫ | ১৯৮৯ | ভয়েজার সায়েন্স টিম |
৮ | I | ট্রাইটন♠ | /ˈtraɪtən/ | ![]() |
২৭০৫.২±৪.৮ (২৭০৯ × ২৭০৬ × ২৭০৫) |
২১৪০৮০০±৫২০০ | ৩৫৪৭৫৯ | −৫.৮৭৬৯ | ১৫৬.৮৬৫ | ০.০০০০ | ১৮৪৬ | লেসেল |
৯ | II | নিয়ারিড‡ | /ˈnɪəriːɪd/ | ![]() |
৩৫৭ ± ১৩ | ≈ ২৭০০ | ৫৫১৪১০০ | +৩৬০.১৩ | ৭.০৯০ | ০.৭৪১৭ | ১৯৪৯ | কাইপার |
১০ | IX | হ্যালিমিডি♠ | /ˌhælɪˈmiːdiː/ | ![]() |
≈ ৬২ | ≈ ১৬ | ১৬৫৯৯৭০০ | −১৮৮১.০৫ | ১৩৪.১০০ | ০.২৫৮৫ | ২০০২ | হোলম্যান ও অন্যান্য |
১১ | XI | সেও‡ | /ˈseɪoʊ/ | ≈ ৪৪ | ≈ 6 | ২২২৭৪৬০০ | +২৯২৩.৯০ | 49.907 | 0.1364 | 2002 | হোলম্যান ও অন্যান্য | |
১২ | XII | লেওমাডিয়া‡ | /ˌleɪəmɪˈdiːə/ | ≈ ৪২ | ≈ ৫ | ২৩৫৬৫৪০০ | +৩১৮১.৭১ | ৩৪.০৪৯ | ০.৩৯৬৪ | 2002 | হোলম্যান ও অন্যান্য | |
13 | X | স্যামাথি♠ | /ˈsæməθiː/ | ![]() |
≈ 40 | ≈ 4 | ৪৬৪১৭৭০০ | −৮৭৯৫.৭৮ | 137.679 | 0.2234 | 2003 | Sheppard et al. |
১৪ | XIII | নিসো♠ | /ˈniːsoʊ/ | ≈ 60 | ≈ 15 | ৪৮৮৮৮০০০ | −৯৫০৭.১৮ | ১৩১.২৬৫ | ০.৬৩৩৬ | ২০০২ | হোলম্যান ও অন্যান্য |
নেপচুনের ষষ্ঠ অনিয়মিত প্রাকৃতিক উপগ্রহের দাবিদারটিকে "সি০২এন৪" নামে অভিহিত করা হয়। ২০০২ সালের ১৪ অগস্ট ম্যাথিউ জে. হোলম্যানের নেতৃত্বাধীন একটি সমীক্ষায় এটি আবিষ্কৃত হয়। সেই বছরই ৩ সেপ্টেম্বর ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের মাধ্যমে এটি পুনরায় দৃষ্ট হয়। কিন্তু তারপর এটি হারিয়ে যায়। বস্তুটিকে পুনরুদ্ধারের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ফলে এটির কক্ষপথও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এটি প্রাকৃতিক উপগ্রহের পরিবর্তে একটি সেন্ট্যুরও হতে পারে। যদিও নেপচুনের তুলনায় এটির গতির এক মাসেরও বেশি কম হওয়া ইঙ্গিত করে যে এটি নিশ্চিতভাবেই একটি উপগ্রহ। এটির ঔজ্জ্বল্যের ভিত্তিতে বস্তুটির ব্যাস গণনা করা হয়েছে ৩৩ কিলোমিটার এবং এটি আবিষ্কারের সময় এটি নেপচুন থেকে ২ কোটি ৫১ লক্ষ কিলোমিটার (০.১৬৮ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক) দূরে অবস্থান করছিল।[৬]
নাম | আপাত ঔজ্জ্বল্য (আর) |
ব্যাস (কিলোমিটার) | পর্যবেক্ষিত দূরত্ব (কিলোমিটার) | গোষ্ঠী | আবিষ্কারের বছর | মর্যাদা |
---|---|---|---|---|---|---|
সি০২এন৪ | ২৫.৩ | ≈ ৩৩ | ≈ ২৫১০০০০০ | অজ্ঞাত | ২০০২ | সম্ভবত একটি সেন্ট্যুর বা অনিয়মিত উপগ্রহের দাবিদার; ২০০২ সালের অগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত করা হয়, কিন্তু পরে বস্তুটি পুনরায় পর্যবেক্ষণের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।[৬] |
|আর্কাইভের-তারিখ=
(সাহায্য)
|display-authors=ও অন্যান্য
অবৈধ (সাহায্য)