ক্রিকেট হলো নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। সারাদেশে অসংখ্য মানুষ বিশেষত ভারতের নিকটবর্তী তরাই সম্প্রদায়ের লোকেরা এই খেলা বেশি খেলে। নেপাল ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০-তে অংশগ্রহণ করা। নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দলের একাডেমি (এনসিএ) আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে চালু হয়, যা চালু করে নেপাল ক্রিকেট সংস্থা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উঠতি খেলোয়াড়দের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল ও মহিলা ক্রিকেট অংশগ্রহণ করানো। ডিসেম্বর, ২০১২ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী নেপালে ৪২৯টি সিনিয়র ক্লাব ও ২২৭টি জুনিয়র ক্লাব আছে।[১]
১৯২০ সালে নেপালে প্রথম ক্রিকেটের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী মহারাজ চন্দ্র শমসের জং বাহাদুর রানার কনিষ্ঠ পুত্র লে. জেনারেল মদন শমসের জেবিআর। কিন্তু, 'ভদ্রলোকের খেলা' বিধায় তা শুধু রানা পরিবারেই সীমিত ছিল। পরবর্তীতে,এই জনপ্রিয়তার ধারায়, কিছুু প্রভাবশালী ব্যক্তি ১৯৪৬ সালে নেপালে ক্রিকেট জনপ্রিয় করার জন্য নেপাল ক্রিকেট সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।[২]
১৯৫১ সালে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর, ক্রিকেট খেলা নেপালের অন্যান্য জনগণের মাঝে জনপ্রিয় হতে থাকে। ১৯৬১ সালে, ক্রিকেট জনপ্রিয়করণের জন্য নেপাল ক্রিকেট সংস্থা "জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিল" এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জাতীয় খেলাটি শুধুমাত্র কাঠমান্ডু-তেই সীমিত ছিল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও পরিবর্তনের পর, ১৯৮০ সালে নেপালে খেলাটি কাঠমান্ডুর বাইরেও ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে, নেপাল ১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের শাখা সদস্য হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯০ এর শুরুর দিকে বড় ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এসময়, অঞ্চলভিত্তিক ও জেলাভিত্তিক এবং স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়। নেপাল ১৯৯০ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী সদস্য ও ১৯৯৪ সালে পূর্ণ সদস্যপদের মর্যাদা পায়।
১৯৯০-এর দশকে নেপালে ক্রিকেটের চাহিদা এতই বেশি ছিল যে, সুযোগ-সুবিধা না আসা পর্যন্ত প্রতিযোগিতাগুলোতে দলের সংখ্যা কমাতে হয়েছিল। নেপাল ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে, যে বছর জাতীয় দলটি কুয়ালালামপুরে প্রথমবার এসিসি ট্রফি খেলেছিল। নেপাল ব্রুনাই জাতীয় ক্রিকেট দল ও জাপান জাতীয় ক্রিকেট দলকে হারিয়ে ছয়টি দলের মধ্যে তাদের গ্রুপে চতুর্থ হয়েছিল।[৩]
নেপাল ক্রিকেট সংস্থা ১৯৪৬ সাল থেকে ক্রিকেটের গভর্নিং বডির সদস্যপদের দায়িত্ব পালন করছে।
১৭টি সবুজ উইকেটের মাঠসহ নেপালে সর্বমোট ৬৫টি মাঠ আছে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ শুধুমাত্র ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠেই খেলা হয়।[৪] কাঠমান্ডুর মুলপানিতে আরো একটি আন্তর্জাতিক মাঠ তৈরির কাজ চলছে। এছাড়াও, পোখরায় আরও একটি আন্তর্জাতিক মাঠ তৈরির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে সাহায্য করছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল।[৫]
নেপালে নিম্নলিখিত মাঠগুলোয় মূলত বেশি ক্রিকেট খেলা হয়:
নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দল, নেপালের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে।
তারা ২০১৩ সাল থেকে এসিসি ট্রফি ও ২টি আইসিসি আন্তর্মহাদেশীয় কাপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করছে। ২০১৮ আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জনের পর নেপাল জাতীয় ক্রিকেট দল, ২০১৮ আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জায়গা অর্জন করে। ২০১৮ সালের ১৫ই মার্চ, নেপাল ২০১৮ আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পাপুয়া নিউগিনি জাতীয় ক্রিকেট দলকে হারিয়ে তারা প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্ট্যাটাস অর্জন করে। পাশাপাশি, তারা টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক স্ট্যাটাসও অর্জন করে। নেপাল ২০১৮ সালের ৩রা আগস্ট নেদারল্যান্ডস-এর বিপক্ষে ১ রানে তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ জয়লাভ করে।[৬]
নেপালের একটি নেপাল জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলও আছে।
নেপাল জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল, আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটে নেপালকে প্রতিনিধিত্ব করে। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মালয়েশিয়ায় এসিসি মহিলা টুুুর্নামেন্টে তাদের অভিষেক ঘটে।
নেপালে ঘরোয়া ক্রিকেট ৯টি এলাকায় বিভক্ত। যথা: কাঠমান্ডু, জনকপুর, বীরগঞ্জ, বৈতডী জেলা, বিরাটনগর (নেপাল), বইরাহাওয়া, নেপালগঞ্জ, পোখরা ও মহেন্দ্রনগর। পাশাপাশি, এপিএফ ও নেপালি সেনাবাহিনীর দুটি ক্রিকেট দল আছে। বিভিন্ন বয়স শ্রেণিতে এইসব এলাকার পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দল ওয়ানডে ও টি২০ ফরম্যাটে প্রতিযোগিতা করে।[৭][৮]
২০১৪ সাল থেকে, এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি২০, ওয়ানডে ও দুই দিনের ম্যাচ শুরু হয়।