নৈহাটি | |
---|---|
শহর | |
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৪′ উত্তর ৮৮°২৫′ পূর্ব / ২২.৯° উত্তর ৮৮.৪২° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | উত্তর ২৪ পরগণা |
উচ্চতা | ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০১[১]) | |
• মোট | ২,১৫,৪৩২[১] |
• ক্রম | ৫০তম[১] |
ভাষা | |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
ডাক সূচক সংখা | ৭৪৩১৬৫ |
নৈহাটি হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। নৈহাটি পৌরসভা ভারতের প্রাচীন পৌরসভার একটি, যেটি ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। বন্দে মাতরম গানের রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সাহিত্যিক সমরেশ বসু, বিখ্যাত রসায়ানবিদ দেবাশীষ মুখার্জির মত ব্যক্তিরা এই শহরে জন্ম নেন। শহরটি রেল ও সড়কপথে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে প্রায় দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। এই শহরটি ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। পরিষ্কার এবং সুন্দর মনোরম পথঘাটই এই শহরের গর্বের বিষয়।
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°৫৪′ উত্তর ৮৮°২৫′ পূর্ব / ২২.৯° উত্তর ৮৮.৪২° পূর্ব।[২] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৫ মিটার (৪৯ ফুট)।
ক্রান্তীয় মণ্ডলে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের আবহাওয়া গরমকালে উষ্ম ও আর্দ্র ,শীতকালে শুষ্ক।গরমকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।বরষাকালে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে মেঘ বৃষ্টি ঘটায়।
নৈহাটির অতীত নাম ছিল নবহট্ট। এই শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে হুগলী নদী, যার অপর পাড়ে হুগলি জেলার চুঁচুড়া শহর অবস্থিত। উত্তর দিকে হালিশহর, দক্ষিণ দিকে ভাটপাড়া; নৈহাটির পূর্ব দিকে রয়েছে গ্রামাঞ্চল। ঐতিহ্যশালী এই শহর বন্দে মাতরম গানের রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মস্থল। এছাড়া বিখ্যাত মনীষী হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, সাহিত্যিক সমরেশ বসু এবং গায়ক শ্যামল মিত্র এই শহরে বসবাস করেছেন।
এখানে বেশ কিছু ছেলেদের এবং মেয়েদের স্কুল আছে। তাদের মধ্যে বাংলা মাধ্যম এর স্কুলগুলি হল নৈহাটি নরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন, গরিফা উচ্চ বিদ্যালয়, নৈহাটি মহেন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়, নৈহাটি কাত্যায়নী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নৈহাটি প্রফুল্ল সেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বিজয়নগর উচ্চবিদ্যালয়, নৈহাটি দেশবন্ধু হাই স্কুল।
হিন্দি মাধ্যম এর স্কুলগুলি হল গৌরীপুর হিন্দি হাই স্কুল, বিদ্যাবিকাশ হাই স্কুল। ইংরাজী মাধ্যম স্কুলের মধ্যে সেন্ট লুকস ডে স্কুল যা আই.এস. সি. ঈ, নিউ দিল্লি বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত। এখানে অবস্থিত ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজ (১৯৪৭) আগে যেটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা অনুমোদিত ছিল এখন সেটি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির দ্বারা অনুমোদিত। সকাল, দুপুর এবং বিকালের তিনটি আলাদা আলাদা বিভাগ আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
এই শহরের বহু লোক কর্মসূত্রে রোজ কলকাতায় যাতায়াত করেন। ট্রেনে নৈহাটি থেকে কলকাতার শিয়ালদহ পৌছাতে মোটামুটিভাবে এক ঘণ্টা সময় লাগে। নৈহাটি রেলওয়ে স্টেশন একটি জংশন স্টেশন। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যে রেলপথটি নৈহাটি এসেছে তা নৈহাটির পর দুইভাগে ভাগ হয়েছে। একটি ভাগ গেছে নদীয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর রানাঘাট হয়ে লালগোলা অভিমুখে এবং অপর ভাগটি গেছে হুগলি নদী পেরিয়ে ব্যান্ডেল স্টেশনে। হুগলি নদীর উপর জুবিলি ব্রিজটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং এটি প্রায় একশো বছরেরও বেশি পুরোনো। বর্তমানে এই সেতুর পাশেই একটি নতুন সেতু ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে এবং সেটাই এখন চালু আছে। জলপথ পরিবহনে নৈহাটি চুঁচুড়ার সাথে যুক্ত। ব্যারাকপুর - কাঁচরাপাড়া সড়ক ছাড়াও নিকটবর্তী কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দ্বারা নৈহাটি সরাসরি কলকাতার সাথে সড়কপথে সংযুক্ত।
নৈহাটির জনসংখ্যার উপাত্ত | |||
---|---|---|---|
আদমশুমারি | জনসংখ্যা | %± | |
১৯০১' | ২৩,৭৫৩ | — | |
১৯১১ | ১৮,২১৯ | −২৩.৩% | |
১৯২১ | ২৩,২৮৬ | ২৭.৮% | |
১৯৩১ | ৩০,৯০৮ | ৩২.৭% | |
১৯৪১ | ৪২,২০০ | ৩৬.৫% | |
১৯৫১ | ৫৫,৩১৩ | ৩১.১% | |
১৯৬১ | ৫৮,৪৫৭ | ৫.৭% | |
১৯৭১ | ৮২,০৮০ | ৪০.৪% | |
১৯৮১ | ১,১৪,৬০৭ | ৩৯.৬% | |
১৯৯১ | ১,৩২,৭০১ | ১৫.৮% | |
২০০১ | ২,১৫,৩০৩ | ৬২.২% | |
২০১১ | ২,১৭,৯০০ | ১.২% | |
উৎস:[১] |
ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে নৈহাটি শহরের জনসংখ্যা হল ২১৫,৪৩২ জন;[৩] এর মধ্যে পুরুষ ৫৩% এবং নারী ৪৭%।পুরুষের জনসংখ্যার অনুপাতে বেশি। এখানে সাক্ষরতার হার ৮৯%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৯৩.১৬% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮৬.৩১%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৫.০৬%; তার চাইতে নৈহাটি এর সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী। নৈহাটি শহরের জনঘনত্ব ১৮,৬৪১/ বর্গকিলোমিটার , যা বিশ্বে ৫০তম স্থানে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অনেক বিখ্যাত মানুষের বাসস্থান ও জন্মস্থান নৈহাটি শহর।
বিদ্যাধর ভট্টাচার্য্য একজন বাঙালী ব্রাহ্মণ যিনি রাজস্থানের জয়পুর শহরের নকশা করেছিলেন বলে কথিত আছে।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, একজন প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক, ভারততত্ত্ববিদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা - তারও আদিবাড়ি এখানেই। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজকোষাগার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত। এই আবিস্কারের ওপর রচিত তার গবেষণা গ্রন্থ "হাজার বছরের পুরাতন বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা" নামে ১৯১৬ সালে প্রকাশ পায়, যা বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন ও অমূল্য সম্পদ। এ ছাড়াও উনি অনেক প্রাচীন পুঁথি ও গ্রন্থ আবিষ্কার করেন।
উনিশ শতকের নবজাগরনের অন্যতম রূপকার এবং বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস স্বরূপটি যার হাতে প্রথম জনপ্রিয় রূপ পায়, তিনি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার জন্মও ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন এই নৈহাটি শহরে। উনি ওনার বাবার মত সরকারী চাকরি করতেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। ওনার লেখা বিখ্যাত উপন্যাসগুলি হল- রাজসিংহ, দুর্গেশনন্দিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা। এছাড়াও কমলাকান্তের মতো চরিত্রও তারই সৃষ্টি। "বঙ্গদর্শন" - এর মতো যুগান্তকারী পত্রিকার সম্পাদক তিনি। "আনন্দমঠ" উপন্যাসে ব্যবহৃত "বন্দেমাতরম" গানটি তৎকালীন সময়ের স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবীদের প্রভাবিত করেছিলো।তার নামেই নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক শ্যামল মিত্রেরও জন্মস্থান এখানে। ১৯২৯ সালের নভেম্বর মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়। "অমানুষ" চলচ্চিত্রে তাকে আমরা সুরকার হিসেবেও পাই। "আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে," "ওই আঁকা বাঁকা যে পথ," "জীবন খাতার প্রতি পাতায়" এই গানগুলি এত বছর পরেও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
সমরেশ বসু বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তিনি কালকুট ছদ্মনামেও কিছু গ্রন্থ লিখেছেন। তারই লেখায় শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রণা, যৌনতা, রাজনীতির ছাপ পাই। ১৯৮০ সালে তিনি আকাদেমি পুরস্কার পান ""শাম্ব" নামের উপন্যাস লেখার জন্য। গোগল, বিবর, কোথায় পাব তারে - এগুলি তার বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম। তার কৈশর কাটে নৈহাটিতে।
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা হলেন কেশবচন্দ্র সেন। তার জন্মস্থান নৈহাটির গরিফা এলাকায়। ১৮৩৮ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলায় ব্রাহ্ম আন্দোলনেরও পুরোধা পুরুষ। তার নামে স্কুল ও পাঠাগার এখনও নৈহাটিতে আছে।
রাঘব চট্টোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি জনপ্রিয় গায়ক এবং সুরকার। তিনি বাংলা আধুনিক গান, রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি প্রভৃতি গেয়ে থাকেন। তিনি চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসাবেও কাজ করেছেন।
নৈহাটি বটতলা এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে মাছের চাষ হয়। রুই,কাতলা,মাগুর,কই,পাবদা এরকম নানা স্বাদু জলের মাছ চাষ করা হয়। বটতলা রাজেন্দ্রপুর পাইকারী বাজার আছে যা খুবই জনপ্রিয়।অনেক ধরনের মানুষ এই মাছ চাষ ও ব্যবসা করে থাকে।
নৈহাটির বিখ্যাত হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হল মা কালী পূজা। নৈহাটির অরবিন্দ রোডে "বড় মা " পূজা তাদের মধ্যে সব থেকে প্রাচীন ও বিখ্যাত।নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। বলা হয়, কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে নবদ্বীপের রাস উৎসব দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে রাধাকৃষ্ণের বিশাল মূর্তি দেখে ভবেশ মনস্থির করেন উঁচু প্রতিমা বানিয়ে তাঁরাও কালীপুজো করবেন। সেইমতো নৈহাটি ফিরে ২১ ফুটের কালীপ্রতিমা বানিয়ে পুজো শুরু করেন। যা প্রথমে 'ভবেশ কালী' নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু লোকমুখে তা ধীরে ধীরে 'বড় মা' হয়ে যায়। আশেপাশের শহরগুলোর মধ্যে এই শহরেই ভীষণ জাঁকজমক সহকারে কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়। [৪]
এখানকার দুর্গা পূজা, ছট পূজা এবং নানা সম্প্রদায়ের উৎসব বেশ সমারোহে পালিত হয়।পুজোর পাশাপাশি প্রত্যেক ইংরেজি বছর এর শেষ সপ্তাহ জুড়ে চলে নৈহাটি বইমেলা, শিশুমেলা,শিল্পমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । যাকে বলা হয় "নৈহাটি উৎসব"। এটি নৈহাটির পূর্বাংশে রেলমাঠে "নৈহাটি উৎসব" অনুষ্ঠিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান বিষয়ক এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |