নৌবিমান হচ্ছে জলে নামা এবং জল থেকে বায়ুতে আরোহণ করে উড়তে সক্ষম এমন বিমান বা উড়োজাহাজ। এ বিমান গুলো স্হলবিমান গুলোর প্রযুক্তি থেকে তৈরী। জলে উঠা-নামা করতে এবং ভেসে থাকতে বিমানের সাথে চাকার বদলে প্লব (ভেলার মত) ব্যবহার করা হয়। প্লবগুলো বায়ু ও ওজনের (জল) ভারসাম্য রাখে ভেসে থাকার মূল ভূমিকা রাখে। এগুলো জলের পৃষ্ঠটান, ঢেউ ও বায়ু প্রবাহের সাথে ভারসাম্য রেখে জলে নামা এবং হাইড্রো-ডায়নামিক উত্তোলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুতে আরোহণের মূল ভূমিকায় থাকে।[১][২][৩][৪]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে হেলিকপ্টার আবিষ্কার ও উন্নত করণ এবং স্হল বিমান খাত আধুনিকায়নের কারণে নৌবিমান গুলোর চাহিদা কমতে থাকে। বর্তমান বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে, দ্বীপে ত্রাণ ও যাত্রী বহন, সমুদ্রে অভিযান ও আমোদ-প্রমোদে নৌবিমান ব্যবহার করা হয়।[৩][৪]
এগুলো দু’ধরনের হয়। প্লববিমান ও উড়ন্ততরী।
এছাড়াও প্লবের ধরন বা সংখ্যার ভিত্তিতেও এগুলো ধরন নির্ধারিত করা হয়।কোন কোন নৌবিমানে দুটি প্লব, কোন কোন বিমানে একটি প্লব থাকে। উড়ন্ততরীগুলোতে দু'পাশে দু'টি প্লব থাকে কিন্তু বিমানের ভারসাম্য রক্ষা, ওজনের চাপ ও জলের উপর ভেসে থাকতে বিমানের দেহ পানির সাথে সংযোগ হয় এবং এটি প্লবের মত ভূমিকায় থাকে। কিছু কিছু নৌবিমান উভচর তথা স্থল ও জল উভয়ে উঠা-নামার প্রযুক্তি সংযুক্ত থাকে, এগুলোকে উভচরবিমান বলা হয়।
ফরাসি বিমান নকশার আলফোনস ফেনাউড সর্বপ্রথম নৌবিমানের নকশা প্রণয়ন করেন।নকশাটি নৌকার প্লব সক্ষম অংশের সাথে বিমানের দেহ ও পাখির ডানার মত ডানা সংযুক্ত করে এবং প্লব অংশটি চাকার মত বিমানের অভ্যন্তরে রাখার প্রযুক্তি। এটির বাস্তব রূপদান করা হয়নি।
অস্ট্রিয়ান বিমান নকশাকার উইলেম ক্রেস ৩০ অশ্বক্ষমতাযুক্ত ডেমলার ইন্জিন দিয়ে ,দু'টি প্লব যুক্ত একটি নৌবিমান তৈরী করেছিলেন। এটি জল হতে আরোহণ করে বায়ুতে উড়েছিল কিন্তু একটি প্লব ভেঙে পড়ায় এটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এটির নাম ছিল ড্রাছেনফ্লিজার।[৫] ১৯০৫ সালের ৬ই জুন গ্যাব্রিয়েল ভইসিন একটি গ্লাইডার ঘুড়ির সাথে প্লব যুক্ত করে ফ্রান্সের সিন নদীতে জল থেকে উঠে ১৪০ মিটার দূরত্ব উড়েছিলেন । পরবর্তীতে লুইস ব্লেরুইটের সাথে একজোট হয়ে এটিতে ইন্জিন সংযুক্ত করে উড়াতে ব্যার্থ হোন। ১৯১০ সালে ২৮ শে মার্চ, ফরাসী প্রকৌশলী হেনরী ফেবরী সর্বপ্রথম সার্থক উঠা-নামা এবং ভেসে থাকতে সক্ষম নৌবিমান তৈরী করেছিলেন। ফরাসী নৌবাহিনী তাকে নৌবাহিনীর জন্য এমন কয়টি বিমান তৈরী করতে নির্দেশ দিয়েছিল।[৫] ১৯১১ মতান্তরে ১২ সালে ফ্রান্সিস ডেনহত হাইড্রো-ডায়নামিক পদ্ধতি এবং প্লব গুলোকে যথাযথ ব্যবহারের প্রযুক্তি সংযুক্ত বিমান তৈরী করেছিলেন। ১৯০৪-১২ সময়কালে যুক্তরাজ্যে এডওয়াড ওয়েকফিল্ড এবং অস্কার গ্লোস ফিরিয়াস নৌবিমান তৈরী এবং আধুনিকায়নের প্রকল্প হাতে নেন। তারা উইলিয়াম ক্রেস ও হেনরি ফেবরীয় নকশা যোগে, প্লব উন্নত করণ এবং হাইড্রো-ডায়নামিক পদ্ধতি প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি নৌবিমান তৈরী করেন। এটি ছিল তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ। ১৯১২ সালে সুইজারল্যান্ডে এমিল টাডেওলি ‘ডুফক্স-৪’ নামের একটি নৌবিমান তৈরী করেন।১৯১৩ সালে এ ধরনের একটি বিমান দিয়ে গ্রীকরা তুরস্কের উপর বোমা বর্ষণ করেছিল। তখন এটি সবার নজরে আসে এবং যুদ্ধে এটি ব্যবহার শুরু হয়।[৬] এটি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। উড়ন্ততরী এই সময়ে তৈরী হয়েছিল। এছাড়াও উভচর নৌবিমান গুলোও এই যুদ্ধকালীন সময়ে তৈরি হয়েছিল।[৭]