শিখধর্ম |
---|
তখত, বা, তখ্ত (গুরুমুখী: ਤਖ਼ਤ), আক্ষরিক অর্থে বুঝায় কর্তৃপক্ষের সিংহাসন বা মর্যাদার আসন[১] এবং শিখধর্মের ধর্মীয় এবং অস্থায়ী কেন্দ্র।[২] শিখদের মোট পাঁচটি তখত (গুরুমুখী: ਪੰਜ ਤਖਤ, প্রতিবর্ণী. পাঞ্জ তখত, অনুবাদ ''পাঁচ সিংহাসন'') রয়েছে যেগুলো পাঁচটি গুরুদ্বার এবং শিখ জাতিগোষ্ঠীর নিকট যাদের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। এর তিনটি পাঞ্জাব অঞ্চলে অবস্থিত এবং দুটি এর বাহিরে।[৩]
প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তখত "অকাল তখত" ('নিরবধি ঈশ্বরের সিংহাসন')-টি অমৃতসরে হরমন্দির সাহিব ("স্বর্ণ মন্দির") গেটের ঠিক বিপরীতে ১৬০৯ সালে গুরু হরগোবিন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও হরমন্দির সাহিব, বা স্বর্ণ মন্দির, শিখ আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু অকাল তখত ন্যায়বিচার এবং অস্থায়ী ক্রিয়াকলাপের প্রতীক। এটি খালসার অস্থায়ী কর্তৃত্বের সর্বোচ্চ আসন এবং শিখ ধর্মের পার্থিব কর্তৃত্বের আসন। সেখানে, গুরুগণ তাদের দরবারে বসতেন এবং সামরিক কৌশল ও রাজনৈতিক নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন। পরবর্তী কালে, শিখ জাতি (সারবাত খালসা) এখানে শান্তি ও যুদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিভিন্ন শিখ গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে। সারঙ্গী গায়করা এই স্থানে শিখ গুরু ও যোদ্ধাদের গীতিনাট্য পরিবেশন করতো এবং সাধারণভাবে পুরুষ সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের সম্মানের পোশাক (সরোপা) প্রদান করা হতো।
২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে মহারাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে ডেকান ওডিসি ট্রেনটি ধর্মপ্রাণ ও দর্শনার্থীদের জন্য পঞ্চম তখতে (তখত শ্রী পাটনা সাহিব)-এ বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ চারটি শিখ তখত জুড়ে যাত্রা শুরু করে।[৪] পাঞ্জ তখত বিশেষ ট্রেন নামে পাঁচটি তখতে তীর্থযাত্রার জন্য একটি বিশেষ ট্রেন ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে পরিষেবা শুরু করেছে।[৫][৬][৭][৮][৯]
অকাল তখত সাহেব মানে অনন্ত সিংহাসন। এটি অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির কমপ্লেক্সেরও অংশ। ষষ্ঠ শিখ গুরু গুরু হরগোবিন্দ এর ভিত্তি স্থাপন করেন।[২] অকাল তখত হরমন্দির সাহেবের বিপরীতে অবস্থিত এবং একটি পথ দ্বারা সংযুক্ত। স্বর্ণ মন্দিরের বিপরীতে অকাল তখত ভবনটির একটি বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। স্বর্ণ মন্দির যেখানে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে, বিপরীতে আকাল তখত ন্যায়বিচার এবং অস্থায়ী কার্যকলাপের প্রতীক। আগের দিনগুলিতে সমস্ত শিখ যোদ্ধা যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার আগে এখান থেকে আশীর্বাদ নিয়ে যেতো। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিখরা যখন বনে-বাদারে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত ছিল তখন তারা ভৈশাখীর মতো বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে অকাল তখতে এসে জড়ো হতেন। এখানে সম্প্রদায় সাধারণ সভা করত এবং সিদ্ধান্তসমূহ অনুমোদন করত। পাঁচটি তখতের মধ্যে অকাল তখত প্রাচীনতম।
তখত শ্রী কেশগড় সাহিব আনন্দপুর সাহিবে অবস্থিত। এটি খালসার জন্মস্থান, যেটি ১৬৯৯ সালে গুরু গোবিন্দ সিং এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের কিছু অস্ত্র এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।