পবিত্র আত্মা, ইংরেজি ভাষায় Holy Spirit অথবা Holy Ghost। ইংরেজিতে অনুদিত পবিত্র বাইবেলের একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দযুগল। ইব্রাহিমীয় ধর্মসমূহে পবিত্র আত্মার ধারনাটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করা হয়।[১][২]
হীব্রু ভাষার ruach ha-kodesh (Hebrew: רוח הקודש, যার অর্থ ‘পবিত্র আত্মা’ (অনেক জায়গায় ruaḥ ha-qodesh হিসাবে বর্ণান্তরিত হয়েছে) বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেল ও অন্যান্য পুস্তকে YHWH (רוח יהוה) এর আত্মা হিসাবে বর্নিত হয়েছে যার আভিধানিত অর্থ “পবিত্র স্থানে আত্মা” বা “পবিত্রতার আত্মা”। ইহুদীমতে পবিত্র আত্মা বলতে স্বর্গীয় ভাববাণী এবং জ্ঞানকে বুঝায়। জগতের সকল সৃষ্টির উপর সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্বকে বোঝাতে পবিত্র আত্মা শব্দটি ব্যবহৃত হয়।[৩]
অধিকাংশ খ্রীস্টধর্মালম্বীদের মতে, পবিত্র আত্মা ট্রিনিটির তৃতীয় স্বর্গীয় স্বত্তা। স্বত্তা তিনটি হল, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মা। পবিত্র স্বত্তার তিনটি দৃষ্টিভঙ্গিই ঈশ্বর হিসাবে উদ্ভাসিত। [৪][৫][৬] বাইবেলের নতুন টেস্টামেন্টে বর্ণিত দুইটি প্রতীক পবিত্র আত্মার সাথে সম্পর্কিত: একটি ডানাসহ পায়রা এবং আগুনের লেলিহান শিখা।
পবিত্র রূহ (আরবী ভাষায়:روح القدس উচ্চারণ “রুহুল কুদুস”) শব্দটি বেশ কয়েকবার পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে।[৭] যেখানে তাকে আল্লাহর বার্তাবাহক হিসাবে বলা হয়েছে। কিছু হাদিসের বর্ণনা অনুসারে মুসলিমরা গ্যাব্রিয়েলকে (আরবী উচ্চারণে জিবরাঈল) রুহুল কুদুস বা পবিত্র আত্মা বলে। তবে কুরআনে ট্রিনিটিকে অস্বীকার করা হয়েছে।[৮] অর্থাৎ ইসলামে রুহুল কুদুসকে আল্লাহ্-র সমতুল্য মনে করা বিশেষভাবে নিষিদ্ধ। নূর বা আলোর তৈরি জিবরাঈল একজন ফেরেশতা যিনি আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর বাণী নবি রাসূলদের উপর অবতীর্ণ করেন এবং তিনি ফেরেশতাদের সর্দার।[৯][১০] এছাড়া শুধুমাত্র আত্মা (الروح আল-রূহ, ‘পবিত্র’ বা ‘গৌরবান্বিত’ বিশেষণটি ছাড়া) শব্দটি ইসলামে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, প্রথম মানব আদম (আ:) কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তার মধ্যে আত্মা প্রবেশ করিয়ে জীবন দান করেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন।[১১] এছাড়া ঈসাকে রূহুল্লাহ বা আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘আত্মা’ বলা হয়েছে। কারণ ইসলাম অনুসারে তার জন্ম অলৌকিক পন্থায় হয়েছিল। আত্মা সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে : "...বলো, ‘রূহ আমার রবের আদেশ থেকে, আর তোমাদেরকে জ্ঞান থেকে অতি সামান্যই দেয়া হয়েছে’।"[১২]
বাহাই ধর্মে “মহাপবিত্র আত্মা” এর ধারনাটি বিদ্যমান। যাকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ হিসেবে দেখা হয়। [১৩] এ ধর্মে পবিত্র আত্মা হিসাবে ঈশ্বরের আত্মাকে বুঝায় যা বিভিন্ন নবী ও রাসুলদের নিকট উপস্থিত হয়েছিল। যাদের মধ্যে ছিলেন, মুসা, ঈসা, মুহাম্মদ ও বাহাউল্লাহ।[১৪] বাহাই ধর্মমতে, পবিত্র আত্মা হল একটি ধারা বা মাধ্যম যার মধ্যদিয়ে সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান তার রাসুলদের কাছে সরাসরি এসেছে। পবিত্র আত্মা বিভিন্ন ধর্মের রাসুলদের কাছে বিভিন্ন আকৃতিতে উপস্থাপিত হয়েছে, যেমন মুসার কাছে আগুনে ভস্মিভুত ঝোপের আকারে, জরথুষ্ট্রের কাছে পবিত্র আগুনের আকারে, যীশুর কাছে পায়রার আকারে, মুহাম্মাদের কাছে জিবরাঈলের আকারে এবং বাহাউল্লাহর কাছে বেহেশতের হুর এর আকারে।[১৫]