পবিত্র ভাষা বা ধার্মিক ভাষা হল এমন এক ভাষা যা ধর্মীয় কার্য লিপিবদ্ধ করার কারণে ব্যবহৃত হয়।
বহু যুগ আগে, মানুষ যে ভাষায় কথা বলত, সেই ভাষাতেই তারা ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করে। এই ভাষা পরবর্তীকালে ব্যবহার না করা হলেও গ্রন্থগুলি রয়ে যায় ও ভাষাটি পবিত্র ভাষা হিসেবে পরিচিতি পায়। ধর্মীয় গ্রন্থের পবিত্রতা যাতে বজায় থাকে, তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পবিত্র ভাষার ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে। কোনো কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে পবিত্র ভাষাটি একটি মৃত ভাষা হয় গিয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে প্রচলিত ভাষারই পুরাতন রূপ তাদের পবিত্র ভাষা।
দৈব ভাষা হল দেবতাদের ব্যবহার্য ভাষা বা ঐশ্বরিক ভাষা। দৈব ভাষা কোনো প্রাকৃত ভাষা নাও হতে পারে।
থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে পালি ভাষাই হল প্রধান সাধু ভাষা। অবশ্য থাইল্যান্ডে পালি ভাষা লেখা হয় থাই হরফে, তাই উচ্চারণেও থাই উচ্চারণের প্রভাব দেখা যায়। মহাযান বৌদ্ধধর্মে কিছু অল্প সংস্কৃত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তিব্বতি বৌদ্ধধর্মে তিব্বতি ভাষাই ব্যবহার করা হয়, তবে মন্ত্রগুলি সংস্কৃতে।
খ্রিষ্টধর্ম কোনো একটি পবিত্র ভাষা ব্যবহার করে না।
ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স চার্চগুলি স্থানীয় ভাষা বা শাস্ত্রীয় ও স্থানীয় ভাষার সংমিশ্রণ ব্যবহার করে।
বহু অ্যানাব্যাপ্টিস্ট দল, যেমন অ্যামিশ, উচ্চ জার্মান ভাষা ব্যবহার করে। তবে নিজেদের মধ্যে তারা এই ভাষায় কথা বলে না।
হিন্দুধর্মের মূলত দু'টি পবিত্র ভাষা আছে - সংস্কৃত ও তামিল। বেদ, ভগবত গীতা, উপনিষদ, পুরাণ - যেমন ভগবতম্ ও অন্যান্য হিন্দু গ্রন্থ যেমন সহস্রনাম, চমকম্, রুদ্রম্ - সবই সংস্কৃতে রচিত।
১২টি তিরুমুরাই রচিত হয়েছিল তামিল ভাষায়। তেভরম্, তিরুবাচকম্ -এর মত নানা ভক্তিগীতি সংকলিত আছে এতে। তামিলে রচিত নলয়ীরা দিব্য প্রবন্ধম্ (একে বেদের সারাংশও বলা হয়) গ্রন্থটি বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে জ্ঞাপন করা হয়েছে। এই ভক্তিগীতিগুলি দক্ষিণ ভারতের সব শিব ও বিষ্ণু মন্দিরে গাওয়া হত। এমনকী উত্তর ভারতের বদ্রীনাথ মন্দিরেও গানগুলির প্রচলন ছিল। ভক্তি আন্দোলনের ভীত গড়ে তোলে এই গানগুলি।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী শিব, অর্থাৎ নটরাজের প্রলয় নৃত্যের সময়ে তার ঢাকের শব্দে নিঃসৃত হয় সংস্কৃত ও তামিল।
তামিলরা তাদের ভাষাকে দেবীরূপে পূজা করে। মাদুরাইতে দেবী তামিল তাইয়ের মন্দির আছে।
পবিত্র কুরআনের আরবি ভাষাই ইসলাম ধর্মের পবিত্র ভাষা। এটি মুহাম্মদের (স.) এর জন্মস্থানের স্থানীয় ভাষা ছিল। মধ্যযুগীয় ইউরোপে লাতিন যেমন, ঠিক তেমনি আরবি হল আরব দেশের চলিত ও সাধু ভাষা। ইসলাম ধর্মের কিছু গৌণ শাখায়, বিশেষত খোরাসান ও বদখ্শানের নিজারিরা, আলামত পর্বে ও পরবর্তীকালে ফারসি ভাষাকে সাধু ভাষা রূপে গড়ে উঠতে দেখেছিলেন।
ইহুদিদের বাইবেল, তানাখের বেশিরভাগটাই তিবেরীয় হিব্রু ভাষায় লেখা, তাই ইহুদিরা হিব্রুকে পবিত্র ভাষা মনে করে। সনাতন ইহুদিধর্মের ধার্মিক কার্যাবলী পুরোটাই হিব্রু ভাষায় হয়। প্রগতিশীল ইহুদিধর্মে কিছু প্রার্থনা ও স্তুতি হিব্রু ভাষায় ছাড়া রাষ্ট্রীয় ভাষাই বেশি ব্যবহার করা হয় ও সংরক্ষণশীল ইহুদিধর্মে দুটির সংমিশ্রণ প্রচলিত। রাব্বিনীক হিব্রু ও আরামীয় ভাষাও কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
সেফার্দীয় ইহুদিদের মধ্যে যারা ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদের উত্তরপুরুষ, দোনমেগণ, ইহুদীয়-স্প্যানিশ ব্যবহার করতেন।
লিঙ্গায়ত ধর্মের ভাষা হল কন্নড়। এই শৈবধর্মের বেশিরভাগ সাহিত্য কন্নড় ভাষায় রচিত হলেও কিছু তেলুগু ও সংস্কৃত ভাষাতেও পাওয়া যায়।