পরেশলাল রায় | |
---|---|
জন্ম | ২০ ডিসেম্বর ১৮৯৩ |
মৃত্যু | ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৯ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | মুষ্টিযোদ্ধা |
পরেশলাল রায় (১৮৯৮ - ১৯৭৯) একজন ভারতীয় খ্যাতানামা মুষ্টিযোদ্ধা, তিনি ভারতীয় বক্সিংয়ের জনক হিসাবে পরিচিত। [১]
পরেশলাল রায় বাখরগঞ্জ জেলায় লাখুটিয়া গ্রামে ২০ ডিসেম্বর ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিখ্যাত আইনবিদ পিয়ারীলাল রায় এবং মাতা নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনকারী ললিতা রায়। তার এক ভাই ইন্দ্রলাল রায় খ্যাতনামা বৈমানিক। [২] ডাঃ সূযকুমার গুডিব চক্রবতী তার পিতামহ। [৩]
শৈশব থেকেই শিক্ষাদীক্ষা সবই ইংল্যান্ডে। ১০ বছর বয়সে বক্সিংয়ের তালিম নেন কেমব্রিজের বিখ্যাত কোচ বিলি চাইল্ডেসের কাছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি .এ পাশ করেন। ফেদারওয়েটর বিশ্বচ্যাম্পিয়ান জিম ড্রিসকল পরে স্বেছায় তার শিক্ষাভার গ্রহণ করেন। বিলাতে পাঠ্যাবস্থায় তিনি বক্সিং শিক্ষা চালিয়ে যান। ১৯৯২ সালে সেন্ট পলস স্কুলে পড়ার সময় বক্সিংয়ে ফেদারওয়েট বিভাগে পাবলিক স্কুল চ্যাম্পিয়ান হন। বক্সিংয়ে তিনিই এশিয়ার প্রথম কেমব্রিজ ব্লু। পরে রাখবী খেলাতেও ব্লু পান। ১৯১৪ সালে ইংল্যান্ডের ব্যান্টমওয়েট তিনিই চ্যাম্পিয়ান হন। বন্দুক ছোড়া ও অশ্বারোহনে দক্ষ ছিলেন। সম্ভবত তিনিই ভারতের প্রথম অপেসাদারি জকি যিনি রেসের মাঠে ঘোড়া চালিয়েছেন। জওহরলাল নেহেরু তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কেমব্রিজে পড়ার সময়। কেমব্রিজ ও অক্সফোড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “ইঊনিভাসিটি চ্যাম্পিয়ানশিপ” ও “অক্সফোড ব্লু” লাভ করেন।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিস সেনাবাহিনীতে যোগ দান করেন। আল্পকিছুদিনের মধে্ই তিনি ‘লেফটেনান্ট’ পদ লাভ করেন। তার ছোট ভাই ইন্দ্রলাল রায় প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রয়েল ফ্লাইং কোর-এ কিংস কমিশন ছিলেন। ভারতীয়দের মধ্যে এর আগে এই সম্মান কেউ পাননি। আকাশ-যুদ্ধে তার প্রাণ বিসর্জন হয়।
অথনীতিতে এম. এ পাশ করে ১৯১৯ সালে দেশে ফিরে ইস্ট বেঙ্গল স্টেট রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে কাজ সুরু করেন। পরে রেলওয়ে বোডের ডাইরেক্টর এবং তার পরে রেলওয়ের ম্যানেজার পদে উন্নীত হন।
বিশ দশকে বক্সিং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। তিনিই ভারতীয়দের বক্সিংয়ের রিং-এ টেনে আনেন। তিনি কলিকাতার বালিগঞ্জে মুষ্টিযুদ্ধ সংগঠনের জন্য ১৯২৮ সালে “ দি বেঙ্গল এমেচার বক্সিং ফেডারেশন ” নামে এক বক্সিং শিক্ষা প্রতিষ্টান স্থাপন করেন। এই ফেডারেশন গঠন করে প্রথমে তার সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্বভার পালন করেন। বাংলাদেশে সমস্ত বক্সিং প্রতিযোগিতা ইহারই নিয়মে পরিচালিত হয়।
পরেশলাল রায়ের বহু বাঙালী যুবক বক্সিংএ কৃতি হয়েছেন। ১৯৩৩ সালে সিভিল মিলিট্যারি লড়াইয়ে বেঙ্গল চাম্পিয়ান সন্তোষ দে এবং প্রসিদ্ধ বক্সার ফণীন্দ্রকৃষ্ণ মিত্র তারই শিষ্য। অন্যান্যদের মধ্যে প্রমথ চৌধুরী, নগেন চ্যাটাজী, জোয়াকিম সি. এ মাইনাস, আবুলাল, জনি নাটাল, আর অস্টিন, ডি.গ্যাসপার, কাতিক দত্ত প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। একবার ফিলিপাইনের খ্যাতানাম বক্সার ইয়ং টারলেকে পরাজিত করেন।[৪] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৯ সালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।