ব্যাস | ৮.৮×১০২৬ মিটার (২৮.৫ গিগাপারসেক বা ৯৩×১০৯ আলোকবর্ষ)[১] |
---|---|
আয়তন | ৪×১০৮০ ঘনমিটার[২] |
ভর (সাধারণ পদার্থ) | ১০৫৩ কিলোগ্রাম[৩] |
ঘনত্ব | ৯.৯×১০-৩০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার (প্রতি ঘনমিটারে ৬টি প্রোটন এর সমতুল্য)[৪] |
বয়স | ১৩.৭৯৯±০.০২১×১০৯ বছর[৫] |
গড় তাপমাত্রা | ২.৭২৫৪৮ কেলভিন[৬] |
উপাদান | সাধারণ (ব্যারিয়নিক) পদার্থ (৪.৯%) গুপ্ত পদার্থ (২৬.৮%) কৃষ্ণশক্তি (৬৮.৩%) |
পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে মহাবিশ্বের এমন একটি গোলাকার অঞ্চল যার অন্তর্গত বস্তুসমূহ পৃথিবী থেকে বর্তমান সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। মহাজাগতিক প্রসারণের শুরু থেকে কেবল এই অঞ্চলে অবস্থিত বস্তুসমূহের নির্গত তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ পৃথিবীতে পৌঁছানোর সময় পেয়েছে। সারা পৃথিবীর মোট বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি তারা[৭][৮][৯] সহ অন্তত দুই লক্ষ কোটি ছায়াপথ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে অবস্থিত[১০][১১]। মহাবিশ্ব সর্বত্র প্রতিসম ধরে নিলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সীমানা সবদিকেই প্রায় সমান দূরত্বে বিদ্যমান। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হচ্ছে পর্যবেক্ষক-কেন্দ্রিক একটি গোলাকার ক্ষেত্র। মহাবিশ্বের প্রতিটি স্থানের নিজস্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব রয়েছে, যা পৃথিবী-কেন্দ্রিক এলাকাটির সাথে অধিক্রমণ করতে পারে।
এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণযোগ্য শব্দটি দ্বারা কোন বস্তুর আলোক বা অন্যান্য তথ্য শনাক্ত করার সম্ভাব্যতা বা আদৌ পর্যবেক্ষণের মত কিছু উপস্থিত কিনা তা বোঝায় না, বরং আলোর গতি থেকে উদ্ভূত প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতাকেই নির্দেশ করে। যেহেতু কোন সংকেতই আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করতে পারে না, সেহেতু মহাবিশ্বের বয়সের সময়কালে (২০১৫ সালে আনুমানিক ১৩.৭৯৯×১০৯ বছর[৫]) আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে, তার অধিক দূরত্বে অবস্থিত বস্তুুসমূহ কোন উপায়েই পৃথিবী হতে শনাক্ত করা যাবে না। তাছাড়া সম্ভবত কিছু বহির্জাগতিক বস্তু আলোর অধিক গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, এজাতীয় বস্তুগুলোও পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাবে না।
কার্যত পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সীমা মহাবিশ্বের বয়স অনুসারে ১৩.৭৯৯×১০৯ আলোকবর্ষ নয়, যার কারণ দুইটি[১২]। প্রথমত, স্থানের সম্প্রসারণের কারণে এমন অনেক বস্তুর আলো শনাক্ত করা যায়, যা বর্তমানে প্রায় ৪৫৭ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, কিন্তু অতীতে কোন এক সময় যথেষ্ট নিকটবর্তী ছিল[১২]। আর দ্বিতীয়ত, মহাবিশ্বের সমন্মীকরণকালে (বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পরে) মহাবিশ্ব একরকম অস্বচ্ছ প্লাজমা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, এবং ফোটনগুলো দ্রুত অন্যান্য কণা দ্বারা শোষিত হয়ে যেত, যে কারণে আলো বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের সাহায্যে এই সময়ের পূর্বের কোন বস্তু শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তবে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এবং নিউট্রিনো পটভূমি এভাবে প্রভাবিত হয় না। এ সময়-পরবর্তী সবচাইতে পুরাতন ফোটনগুলোই বর্তমানে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত প্রযুক্তির দ্বারা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (যা আলোর গতিতে প্রবাহিত হয়) এবং নিউট্রিনো পটভূমি বিশ্লেষণ করে আরও অতীতে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হতে পারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা কখনো কখনো সমন্মীকরণকাল পরবর্তী তথ্য নিয়ে দৃশ্যমান মহাবিশ্ব এবং মহাজাগতিক প্রসারণকাল (সনাতন মহাবিশ্বতত্ত্বে বিগ ব্যাং ও আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বে স্ফীতিযুগ) পরবর্তী তথ্য নিয়ে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বকে পৃথকভাবে গণনা করেন। গণনামতে, অনুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের উৎস কণিকাগুলোর বর্তমান সরল দূরত্ব (যা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধের প্রতিনিধিত্ব করে) হল ১.৪×১০১০ পারসেক বা ৪.৫৭×১০১০ আলোকবর্ষ। অপরদিকে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের প্রান্তের বর্তমান সরল দূরত্ব ১.৪৩×১০১০ পারসেক বা ৪.৬৫×১০১০ আলোকবর্ষ[১৩], যা ২% বৃহত্তর। অতএব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আনুমানিক ব্যাসার্ধ ৪.৬৫×১০১০ আলোকবর্ষ[১৪][১৫] এবং ব্যাস বা বিস্তার ৯.৩×১০১০ আলোকবর্ষ (২.৮৫×১০১০ পারসেক বা ৮.৮×১০২৩ কিলোমিটার)[১৬]। সংকট ঘনত্ব ও পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাস ব্যবহার করে মোট সাধারণ পদার্থের ভর হিসাব করা যায় প্রায় ১.৫×১০৫৩ কিলোগ্রাম।[১৭]
ভৌত বিশ্বতত্ত্ব |
---|
ধারাবাহিকের অংশ |
মহাবিশ্বের কিছু এলাকা এত দূরে অবস্থিত যে বিগ ব্যাং হতে বর্তমান সময়ের মধ্যে সেখানকার আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারেনি। এই এলাকাগুলো মহাবিশ্বের পর্যবেক্ষণযোগ্য অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত। ভবিষ্যতে অতি-দূরবর্তী উৎসের আলো পৃথিবীতে আগমনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাবে, ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য এলাকা বর্ধিত হবে। কিন্তু হাবলের সূত্র অনুসারে পৃথিবী হতে যথেষ্ট দূরবর্তী স্থানগুলো আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে (বিশেষ আপেক্ষিকতা নিকটবর্তী দুটি বস্তুর একে-অপরের সাপেক্ষে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে স্থানান্তরে বাধা দেয়, কিন্তু দূরবর্তী দুটি বস্তু যাদের মধ্যবর্তী স্থান স্ফীতিশীল, সেক্ষেত্রে নয়), উপরন্তু কৃষ্ণশক্তির প্রভাবে এই প্রসারণের হার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি কৃষ্ণশক্তির পরিমাণকে ধ্রুবক (একটি অপরিবর্তনশীল মহাজাগতিক ধ্রুবক) ধরে নেয়া হয়, অর্থাৎ মহাবিশ্বের স্ফীতির হার ক্রমবর্ধমান থাকে, তবে একটি "ভবিষ্যৎ দৃষ্টির সীমা" পাওয়া যাবে, যার বাইরে অবস্থিত বস্তুসমূহ অসীম সময় পেলেও কখনোই আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে প্রবেশ করবে না (একটি ব্যতিক্রম হচ্ছে, যেহেতু সময়ের সাথে হাবল মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেজন্য কোন ছায়াপথ পৃথিবী থেকে আলোর চেয়ে সামান্য দ্রুতগতিতে সরে যেতে থাকলেও তার সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে[১৫][১৮])। স্থানের স্ফীতি অগ্রাহ্য করে এই সীমার দূরত্ব পাওয়া যায় ১,৯০০ কোটি পারসেক বা ৬,২০০ কোটি আলোকবর্ষ। এই তথ্য ইঙ্গিত করে যে পৃথিবী থেকে ভবিষ্যতে তাত্ত্বিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষণযোগ্য ছায়াপথের সংখ্যা, বর্তমান সংখ্যার চেয়ে কেবল ২.৩৬ গুণ বেশি হতে পারে[১৯]।
তাত্ত্বিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ছায়াপথের সংখ্যা যদিও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে, তবে চলমান সম্প্রসারণের কারণে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ছায়াপথে অত্যধিক লোহিত সরণ ঘটবে, এবং এরা আপাতঃদৃষ্টিতে অদৃশ্য হয়ে যাবে[২০][২১][২২]। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট কো-মুভিং দূরত্বে অবস্থিত কোন ছায়াপথ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের অন্তর্গত হয় যদি সেখান থেকে অতীতের যেকোন সময়ে নির্গত সংকেত পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসতে পারে যখন ঐ ছায়াপথ থেকে নির্গত সংকেত পৃথিবীতে আর পৌঁছাতে পারবে না[২৩], যদিও তার কো-মুভিং দূরত্ব অপরিবর্তিত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের কো-মুভিং ব্যাসার্ধের চেয়ে কম। এই তথ্য ব্যবহার করে এক ধরনের ঘটনা দিগন্ত সংজ্ঞায়িত করা যায়, পৃথিবী হতে যার দূরত্ব সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল। উদাহরণরূপে, বর্তমানে পৃথিবী হতে এই ঘটনা দিগন্তের দূরত্ব ১,৬০০ কোটি আলোকবর্ষ, অর্থাৎ এই দূরত্বের মধ্যে বর্তমানে ঘটমান কোন ঘটনার তথ্য ভবিষ্যতে কোন সময়ে পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে, কিন্তু ঐ তথ্য কখনোই পৃথিবীতে পৌঁছাবে না যদি ঘটনাটি ১,৬০০ কোটি আলোকবর্ষের অধিক দূরত্বে হয়ে থাকে[১৫]।
প্রচলিত গণমাধ্যমে এবং পেশাদার গবেষণায়ও সাধারণত মহাজাগতিক আলোচনার সময় "মহাবিশ্ব" শব্দটি "পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব" অর্থেই ব্যবহৃত হয়। এর ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, পৃথিবীর সাথে কারণিকভাবে বিচ্ছিন্ন, মহাবিশ্বের এমন এলাকার সম্বন্ধে সরাসরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা কিছুই জানতে পারা সম্ভব নয়, যদিও অনেক গ্রহণযোগ্য মহাজাগতিক তত্ত্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় অনেক বড় পরিধির মহাবিশ্ব দাবি করে। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বই যে পরিপূর্ণ মহাবিশ্ব, এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমনকি সুপ্রচলিত মহাজাগতিক মডেলগুলো মহাবিশ্বের কোন সীমা থাকতে হবে এমন কোন শর্তও আরোপ করে না। অবশ্য কিছু মডেলে একটি সসীম কিন্তু সীমান্তহীন মহাবিশ্বের ধারণা দেয়া হয় (অনেকটা একটি গোলকের দ্বিমাত্রিক পৃষ্ঠতলের মত, যার আয়তন সীমিত তথাপি কোন কিনারা নেই)। এমনটিও সম্ভাব্য হতে পারে যে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বভুক্ত ছায়াপথগুলো সম্পূূর্ণ মহাবিশ্বের অতি নগণ্য অংশ। অ্যালান গুথ (এবং ডি. কাজানাস[২৪]) এর মহাজাগতিক স্ফীতিশীলতা তত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাংয়ের ১০−৩৭ সেকেন্ড পরে স্ফীতি শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। এই সময়ের পূর্বমুহূর্তে মহাবিশ্বের ব্যপ্তি যদি আলোর গতি × মহাবিশ্বের বয়স হয় তবে বর্তমানে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের আয়তন, পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় অন্তত ৩×১০২৩ গুণ হবে[২৫]। এছাড়া বিভিন্ন মডেলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের তুলনায় সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের আয়তন সর্বনিম্ন ২৫০ গুণ[২৬] হতে সর্বোচ্চ ১০১০১০১২২ এরও বেশি[২৭] বলে ধারণা দেয়া হয়।
আবার মহাবিশ্ব যদি সসীম কিন্তু সীমান্তহীন হয়, তবে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব প্রকৃতপক্ষে পর্যবেক্ষণযোগ্য অঞ্চলের চেয়ে ছোটও হতে পারে। এক্ষেত্রে অতি দূরবর্তী মনে হয় এমন ছায়াপথগুলো আসলে নিকটবর্তী ছায়াপথের প্রতিবিম্ব, যে প্রতিবিম্বের সৃষ্টি হয়েছে সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসা আলোর দ্বারা। কিন্তু এ প্রস্তাবনার পরীক্ষণ কষ্টসাধ্য, কারণ একই ছায়াপথের বিভিন্ন প্রতিবিম্ব তার ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের চিত্র দেখাবে, যা অনেকটাই বিসদৃশ হয়ে থাকে।
বিয়েলেউইজ ও প্রমুখ[২৮] সর্বশেষ বিক্ষেপণ পৃষ্ঠের প্রসার সর্বনিম্ন ২৭.৯×১০৯ পারসেক (৯.১×১০৯ আলোকবর্ষ) বলে প্রতিপাদনের দাবি করেন (যেহেতু এটি কেবল সর্বনিম্ন সীমা, তাই গবেষণাপত্রটিতে সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের এর চেয়েও ব্যাপক, এমনকি অসীমও হবার সম্ভাবনা উন্মুক্ত থেকে যায়)। এই মানটি ডব্লিউএমএপি এর ৭ বছরব্যাপী সংগৃহীত তথ্যের ম্যাচিং-সার্কেল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রাপ্ত, তবে এই মানটি বিতর্কিত[২৯]।
পৃথিবী হতে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের শেষপ্রান্তের কো-মুভিং দূরত্ব যেকোন দিকে প্রায় ১৪.২৬×১০৯ পারসেক, বা ৪৬.৫×১০১৮ আলোকবর্ষ, বা ৪.৪০×১০২৬ মিটার। অর্থাৎ পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব হল ২৮.৫×১০৯ পারসেক ব্যাসবিশিষ্ট গোলক[৩০][৩১]। স্থান মোটামুটি মসৃণ ধরে নিলে কো-মুভিং আয়তন পাওয়া যায় ১.২২×১০৪ গিগাপারসেক৩ (৪.২২×১০৫ গিগা-আলোকবর্ষ৩ বা ৩.৫৭×১০৮০ ঘনমিটার)[৩২]।
উল্লিখিত মানগুলো মহাজাগতিক সময়ে বর্তমানকালের দূরত্ব, আলো উৎপন্ন হবার সময়কালীন দূরত্ব নয়। উদাহরণরূপে, বর্তমানকালে যে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ দেখা যায়, তার আলো উৎপন্ন হয়েছিল ফোটন বিযোজনের সময়, বিগ ব্যাংয়ের আনুমানিক ৩৮০,০০০ বছর পর[৩৩][৩৪], অর্থাৎ প্রায় ১,৩৮০ কোটি বছর আগে। যে পদার্থ থেকে ওই আলো বিকিরিত হয়েছিল, তা পরবর্তী সময়ে ছায়াপথে পরিণত হয়েছে, এবং এই ছায়াপথগুলো বর্তমানে প্রায় ৪,৬০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে[১৩][১৫] অবস্থিত। কোন বস্তু থেকে আলো নিক্ষিপ্ত হবার সময়ে তার দুরত্ব অনুমান করার পূর্বে উল্লেখ্য, ফ্রিদম্যান-ল্যমেত্র-রবার্টসন-ওয়াকার সমীকরণ অনুযায়ী বর্তমানে প্রাপ্ত আলোর লোহিত সরণ যদি z হয়, তবে আলো বিকিরিত হবার সময় মহাবিশ্বের আকারের গুণক[৩৫][৩৬]:
ডব্লিউএমএপি এর নয়-বছরব্যাপী তথ্য এবং অন্যান্য নিরীক্ষার সমন্বয়ে ফোটন বিযোজনের লোহিত সরণ পাওয়া যায় z = ১০৯১.৬৪±০.৪৭[৩৭], অর্থাৎ সে সময় আকারের গুণক ১/১০৯২.৬৪। অর্থাৎ মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের সবচেয়ে পুরাতন ফোটন বিকিরণকারী বস্তুর বর্তমান দুরত্ব যদি ৪,৬০০ কোটি আলোকবর্ষ হয়, তবে ফোটন বিকিরণের সময় তার দুরত্ব ছিল মাত্র ৪২০ লক্ষ আলোকবর্ষ।
বিভিন্ন গৌণ উৎসে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আকারের বিষয়ে প্রচুর পার্থক্যময় বর্ণনা দেয়। এধরনের কিছু আকার ও এর সম্ভাব্য কারণ এখানে দেখানো হয়েছে।
আকাশ জরিপ এবং তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণের বিভিন্ন তরঙ্গদদৈর্ঘ্যের (বিশেষত ২১-সেন্টিমিটার) নিঃসরণ মহাবিশ্বের উপাদান এবং গঠন-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রদান করেছে। মহাবিশ্বের গঠনবিন্যাস দৃশ্যত একধরনের অনুক্রমে সজ্জিত, যা বিশাল মহাগুচ্ছ এবং তন্তু পর্যন্ত বিদ্যমান, যার প্রসার প্রায় ৩০ থেকে ২০০ মেগাপারসেক। এই ধারাবাহিকতায় বড় আকারের আর কোন অব্যাহত গঠন দেখা যায় না[৫২], যে বিষয়টি বিশালত্বের সমাপ্তি হিসেবে পরিচিত[৫৩]।
মহাজাগতিক সংগঠন তর্কসাপেক্ষে নক্ষত্রের পর্যায় থেকে শুরু হয়, যদিও খুব অল্পসংখ্যক মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ জ্যোতির্বিজ্ঞানকে এই ধাপ হতে পর্যালোচনা করেন। নক্ষত্র দিয়ে ছায়াপথ গঠিত হয়, যা ছায়াপথমন্ডল গঠন করে, এবং পর্যায়ক্রমে ছায়াপথগুচ্ছ, মহাগুচ্ছ, স্তর, দেয়াল ও তন্তু, যা বিরাট শুন্যস্থান দ্বারা বিচ্ছিন্ন। সব মিলিয়ে ফোমের মত বিশাল গঠন[৫৪] দৃশ্যমান হয় যাকে কখনো "মহাজাগতিক জাল" বলা হয়। ১৯৮৯ এর আগে স্বীকৃত ছিল যে মহাকর্ষীয়ভাবে স্থীতিশীল ছায়াপথগুচ্ছই সর্ববৃহৎ গঠন এবং মহাবিশ্বের সর্বত্রই মোটামুটি সমবন্টিত। তবে ১৯৮০ দশকের শুরু থেকেই এর চেয়েও বড় বেশ কিছু গঠন আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে আদ্রিয়ান ওয়েবস্টার, ৫টি কোয়েজারের সমন্বয়ে ওয়েবস্টার বৃহৎ কোয়েজার দল আবিষ্কার করেন। এটি ছিল প্রথম চিহ্নিত বিশাল-পরিসরের গঠন, এবং মহাবিশ্বের পদার্থের পুঞ্জীভবনের তথ্যে সম্প্রসারণ আনে। ১৯৮৭ সালে রবার্ট ব্রেন্ট টুলি প্রায় ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দীর্ঘ পিসেস-সিটাস মহাগুচ্ছমিশ্রণ আবিষ্কার করেন, যে ছায়াপথতন্তুতে আকাশগঙ্গার অবস্থান। ওই বছরেই প্রায় ১৩ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত ছায়াপথবিহীন শুন্যস্থান, "বিশাল শুন্যতা", আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৯ সালে লোহিতসরণ জরিপের উপাত্তের ভিত্তিতে মার্গারেট জেল্যার ও জন হুখরা আবিষ্কার করেন "বিশাল দেয়াল"[৫৫], ছায়াপথের একটি স্তর যা প্রায় ৫০ কোটি আলোকবর্ষ দীর্ঘ ও ২০০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত, কিন্তু মাত্র ১৫০ লক্ষ আলোকবর্ষ পুরু। দুই বছর পরে রজার জি. ক্লাউজ ও লুই ই. কাম্পুসানো প্রায় ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দৈর্ঘ্যের ক্লাউজ-কাম্পুসানো বৃহৎ কোয়েজার গ্রুপ আবিষ্কার করেন, যা ছিল ওই সময়ে জানা সর্ববৃহৎ মহাজাগতিক গঠন। পরবর্তীতে ২০০৩ এর এপ্রিলে আবিষ্কৃত হয় স্লোন বিশাল দেয়াল। এরপর ২০০৭ এর এপ্রিলে ইরিদানাস নক্ষত্রপুঞ্জের কাছাকাছি আবিষ্কৃত হয় আরেকটি সম্ভাব্য বিশাল শুন্যতা[৫৬]। উল্লেখ্য, এই শুন্যতাটি অনুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের 'শীতল বিন্দু' এর সাথে কাকতালীয়ভাবে সঙ্গতিপূর্ণ, কিন্তু এই শীতল বিন্দু বর্তমানে গৃহীত মহাজাগতিক মডেলে অত্যন্ত অসম্ভাব্য।
আরেকটি বৃহৎ-পরিসরের গঠন হল প্রায় ২০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত নিউফাউন্ডল্যান্ড পিন্ড, ছায়াপথ ও প্রচুর ফেনায়িত গ্যাসের সমাবেশ। ২০১১ সালে U1.11 নামক একটি কোয়েজার দল আবিষ্কৃত হয়, যা প্রায় ২৫০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত। ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি ৪০০ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত হিউজ-এলকিউজি নামের আরো একটি কোয়েজারদল শনাক্ত করা হয়[৫৭]। ২০১৩ সালের নভেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ হারকিউলিস—করোনা বোরেয়ালিস বিশাল দেয়াল[৫৮][৫৯] আবিষ্কার করেন, যা পূর্বোল্লেখিত গঠনের চাইতেও আকারে দ্বিগুণ। এটি গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ হতে নির্ণীত[৫৮][৬০]।
বিশালত্বের সমাপ্তি হল এমন একটি পর্যবেক্ষণীয় পরিসর (প্রায় ১০০ মেগাপারসেক বা ৩০ কোটি আলোকবর্ষ পর্যায়ে) যখন মহাবিশ্বের উচ্চমাপের গঠনসমূহ মহাজাগতিক নীতি মেনে সমসত্ত্ব ও সমতাপীয় হয়ে ওঠে[৫৩]। এই মাপনীতে কোন আধি-অনিয়মিত ফ্র্যাক্টাল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় না[৬১]। ক্ষুদ্র পরিসরের জরিপে মহাগুচ্ছ ও তন্তুগুলো যথেষ্ট অসমন্বিত থাকে যে কারণে মহাবিশ্বের মসৃণভাবে বিন্যস্ত বলে মনে হয়। ১৯৯০ এর লোহিতসরণ জরিপসমূহ সম্পন্ন হবার আগ পর্যন্ত এই বিশাল মাত্রার গঠনসমূহ প্রতীয়মান হয়নি[৫৩]।
বিশাল পরিসরের গঠনের আর একটি সূচক 'লাইম্যান-আলফা বনানী', যা কোয়েজার থেকে আগত আলোর বর্ণালীতে বিদ্যমান বিশোষণ রেখার সমষ্টি। এর মাধ্যমে আন্তঃছায়াপথীয় গ্যাসের (মূলত হাইড্রোজেন) বিশাল পাতলা স্তরের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা নতুন ছায়াপথ গঠনের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হয়।
মহাজাগতিক পরিসরের গঠন বর্ণনায় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ এক্ষেত্রে প্রায়ই দৃশ্যমান ও বাস্তব চিত্রে ভিন্নতা থাকে। মহাকর্ষের প্রভাবে আলোর বক্রতার ফলে কোন বস্তুর চিত্র সঠিক অবস্থান থেকে ভিন্ন কোথাও তৈরি হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা ঘটে যখন পুরোভুমির কোন বস্তু (যেমন কোন ছায়াপথ) নিজের চারপাশের স্থানকালের সংকোচন করে এবং সেখান দিয়ে গমনকারী আলোর প্রতিসরণ ঘটে। সুবিধাজনকভাবে, শক্তিশালী লেন্সিংয়ের ফলে অনেকসময় দুরবর্তী ছায়াপথের আলোর বিবর্ধন ঘটে, ফলে তা শনাক্ত করা সহজ হয়। দুর্বল লেন্সিং সাধারণত বিশাল-পরিসরের গঠনের পর্যবেক্ষণে সামান্য পরিবর্তন আনে, যা বিভিন্ন মহাজাগতিক মডেলের পরীক্ষা করা অর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হতে পারে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
তাছাড়া লোহিতসরণ দিয়ে ছায়পথের দুরত্ব পরিমাপকালে মহাজাগতিক বিশালকায় গঠন ভিন্নভাবে প্রতীয়মান হয়। ছায়াপথগুচ্ছের পেছনের ছায়াপথগুলো তার দিকে আকর্ষণ বোধ করে ও তার দিকে সরে আসে, ফলে ওই ছায়াপথের স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় কম লোহিতসরণ ঘটে। একই কারণে সম্মুখবর্তী ছায়াপথগুলোর তুলনামূলক সামান্য বেশি লোহিতসরণ হয়। ফলে ছায়াপথগুচ্ছের আশপাশের এলাকা ঘন মনে হয়। আবার গুচ্ছের আভ্যন্তরীণ ছায়াপথগুলোর ক্ষেত্রে বিপরীত ঘটনা দেখা যায়। গুচ্ছের কেন্দ্র ঘিরে এদের সামান্য এলোমোলো গতি থাকে, যাকে লোহিতসরণে রূপান্তর করলে ছায়াপথগুচ্ছটি দীর্ঘায়িত মনে হয়। ফলে পৃথিবীর দিকে নির্দেশকারী দীর্ঘ ছায়াপথের শিকলের বিভ্রম দেখা যায়, যাকে "ঈশ্বরের আঙুল" নাম দেয়া হয়েছে।
হাইড্রা-সেন্টরাস মহাগুচ্ছের কেন্দ্রে "মহা আকর্ষক" নামের একটি মহাকর্ষীয় অস্বাভাবিকতা শত শত লক্ষ আলোকবর্ষ এলাকাজুড়ে ছায়াপথের গতিকে প্রভাবিত করে। এ ছায়াপথগুলোর সবগুলোতেই লোহিতসরণ ঘটছে, অর্থাৎ হাবলের সূত্রমতে এরা পৃথিবী থেকে (এবং একে অপরের থেকে) দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এদের লোহিতসরণের পার্থক্য গণনা করে হাজার দশেক ছায়াপথের ভরের সমতুল্য একটি সমাবেশের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
১৯৮৬ সালে আবিষ্কৃত মহা আকর্ষক ১৫ থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে হাইড্রা ও সেন্টরাস নক্ষত্রপুঞ্জের দিকে অবস্থিত। এর আশপাশে পুরনো বড় আকারের ছায়াপথের আধিক্য রয়েছে, এদের অনেকে একে-অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত, নতুবা প্রচুর পরিমাণে বেতার তরঙ্গ বিকিরণ করছে।
১৯৮৭ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর. ব্রেন্ট টুলি দশ কোটি আলোকবর্ষ দীর্থ এবং ১৫ কোটি আলোকবর্ষ প্রশস্ত একটি গঠন চিহ্নিত করেন এবং এর নাম দেন পিসেস-সিটাস মহাগুচ্ছমিশ্রণ। টুলির মতে, এর ভিতরেই আঞ্চলিক মহাগুচ্ছ নিহিত আছে[৬৩][৬৪]।
পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ভর প্রায়ই ১০৫৩ কিলোগ্রাম[৩] বলে উদ্ধৃত হয়। তবে এই ভর গুপ্ত পদার্থ ও কৃষ্ণশক্তি ব্যতিরেকে সাধারণ বস্তুকণা, আন্তঃনক্ষত্র ও আন্তঃছায়াপথ মাধ্যমের সমন্বয়ে গঠিত। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের এই উদ্ধৃত ভর সংকট ঘনত্বের ভিত্তিতে অনুমান করা যায়।
সংকট ঘনত্ব হল মহাবিশ্ব সমতল হবার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির ঘনত্ব[৬৫]। কৃষ্ণশক্তির অনুপস্থিতিতে এটি সেই ঘনত্ব যার জন্য মহাবিশ্বের স্ফীতি সম্প্রসারণ ও সংকোচনের মধ্যে ভারসাম্যে থাকে[৬৬]। ফ্রিদমান সমীকরণ অনুসারে সংকট ঘনত্ব এর মান[৬৭]:
যেখানে G মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এবং H0 হাবল ধ্রুবক। ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থার প্ল্যাংক টেলিস্কোপের উপাত্ত অনুযায়ী H0 এর সাম্প্রতিককালীন মান ৬৭.১৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড-মেগাপারসেক। ফলে সংকট ঘনত্ব পাওয়া যায় ০.৮৫×১০−২৬ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার, যা সাধারণত প্রতি ঘনমিটারে ৫টি হাইড্রোজেন অণু হিসেবে বর্ণিত হয়।
প্রধানত চার ধরনের ভর/শক্তি এই ঘনত্বের অন্তর্ভুক্ত[৬৮]:
(উল্লেখ্য, এখানে নিউট্রিনো পৃথকভাবে দেখানো হয়েছে কেননা তা শনাক্ত করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য সেহেতু সাধারণ পদার্থ হতে যথেষ্ট ভিন্ন।) প্ল্যাংক এর পরিমাপ অনুযায়ী সাধারণ পদার্থের ঘনত্ব সামগ্রিক সংকট ঘনত্বের ৪.৮% বা ৪.০৮×১০−২৮ কিলোগ্রাম/ঘনমিটার। এ ঘনত্বকে ভরে পরিণত করতে হলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আয়তন দিয়ে গুণ করতে হবে। মহাবিশ্ব ১,৩৮০ কোটি বছর ধরে প্রসারিত হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক কো-মুভিং দুরত্ব (ব্যাসার্ধ) ৪৬৬০ কোটি আলোকবর্ষ, সেহেতু আয়তন () হবে ৩.৫৮×১০৮০ ঘনমিটার। অতএব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সাধারণ পদার্থের ভর ১.৪৬×১০৫৩ কিলোগ্রাম। যদি ধরা হয় সাধারণ পদার্থের অণুগুলো সবই হাইড্রোজেন অণু (যা প্রকৃতপক্ষে আমাদের ছায়াপথের প্রায় ৭৪% গঠন করে), তাহলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের মোট অণুর সংখ্যা সহজেই অনুমান করা যায়: মোট সাধারণ পদার্থের ভর ÷ হাইড্রোজেন অণুর ভর, অর্থাৎ প্রায় ১০৮০ টি অণু।
পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত (জানুয়ারি ২০১১ পূর্বক) প্রকাশিত পৃথিবী হতে সর্ব-দূরবর্তী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু হল UDFj-39546284 নামাঙ্কিত একটি সম্ভাব্য ছায়াপথ। ২০০৯ সালে একটি গামা রশ্মি বিস্ফোরণ GRB 090423 এর লোহিত সরণ ৮.২ পরিমাপ করা হয়, অর্থাৎ মহাবিশ্বের মাত্র ৬৩ কোটি বছর বয়সে[৬৯] এই গামা রশ্মির উৎস তারাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল। প্রায় ১,৩০০ কোটি বছর পূর্বে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল[৭০], ফলে ১,৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্বের কথা গণমাধ্যমে বহুলপ্রচারিত হয়[৬৯]। কিন্তু এটি কেবল আলোর অতিক্রান্ত দূরত্ব, হাবলের সূত্র এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের আকার পরিমাপে ব্যবহৃত "সরল দূরত্ব" নয়। ৮.২ লোহিত সরণের জন্য সরল দূরত্ব হবে ৯.২×১০৯ পারসেক[৭১] বা প্রায় ৩,০০০ কোটি আলোকবর্ষ।সর্ব-দূরবর্তী রেকর্ডের অংশীদার আরেকটি বস্তু হচ্ছে Abell 2218 ছায়াপথপুঞ্জের মধ্য দিয়ে এবং এর চেয়েও দূরবর্তী একটি ছায়াপথ। এই ছায়াপথ থেকে আগত আলোর অতিক্রান্ত দূরত্বও পৃথিবী হতে প্রায় ১,৩০০ কোটি আলোকবর্ষ। হাবল টেলিস্কোপ হতে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে এর লোহিত সরণ ৬.৬ থেকে ৭.১, এবং কেক টেলিস্কোপ অনুসারে প্রায় ৭[৭২]। অর্থাৎ এই ছায়াপথের যে আলো বর্তমানে পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যায়, তা বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৭৫ কোটি বছর পরে[৭৩] উৎপন্ন হয়েছে।
মহাবিশ্বে আমাদের পর্যবেক্ষণক্ষমতা কিছু মহাজাগতিক দিগন্ত দ্বারা সীমিত, যা বিভিন্ন ভৌত সীমাবদ্ধতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এর মধ্যে তুলনামূলক সুপরিচিত হচ্ছে কণিকাদিগন্ত যা নির্ধারণ করে দেয় মহাবিশ্বের বয়স সসীম হওয়ার কারণে ঠিক সর্বোচ্চ কতটুকু দূরত্ব পর্যন্ত দেখা সম্ভব। আরও একটি সুপরিচিত দিগন্ত হচ্ছে মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ হিসেবে বিদ্যমান আলোকদিগন্ত। তাছাড়া স্থানের স্ফীতির কারণে পর্যবেক্ষণক্ষমতার বর্ধনের সাথে, এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ও নিউট্রিনো পটভূমি বিকিরণের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দিগন্ত রয়েছে।