ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | পল উইলিয়াম জার্ভিস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | রেডকার, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড | ২৯ জুন ১৯৬৫|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | বোলার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল |
| |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৫২৭) | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ বনাম নিউজিল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৩ মার্চ ১৯৯৩ বনাম শ্রীলঙ্কা | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ওডিআই অভিষেক (ক্যাপ ৯৭) | ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ ওডিআই | ২৩ মে ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৭ অক্টোবর ২০২০ |
পল উইলিয়াম জার্ভিস (ইংরেজি: Paul Jarvis; জন্ম: ২৯ জুন, ১৯৬৫) ইয়র্কশায়ারের রেডকার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।[১] ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিক থেকে ১৯৯০ সূচনালগ্ন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।[২][৩]
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট, সাসেক্স ও ইয়র্কশায়ার এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটন দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন পল জার্ভিস।
১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডের পক্ষে যুবদের চার টেস্টে অংশ নেন। দ্রুতগতিসম্পন্ন ডানহাতি বোলার এবং নিচেরসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান পল জার্ভিস ১৬ বছর ৭৫ দিন বয়সে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে অভিষেক ঘটান। এ বয়স নিয়ে কাউন্টি দলটির সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।[১] টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে, ইংল্যান্ড দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হননি। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলেন।[৪]
১৯৮১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পল জার্ভিসের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে বেশ প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৮১ সালে ষোলো বছর দুই মাস বয়সে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ইয়র্কশায়ারের পক্ষে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অংশ নেন। তবে, তিনি কখনো তার এ প্রতিশ্রুতিশীলতা পরবর্তীতে আর ধরে রাখতে পারেননি। আঘাতের পাশাপাশি দল নির্বাচকমণ্ডলীর উদাসীনতা এর জন্যে বহুলাংশে দায়ী।
১৯৮২ সালে সানডে লীগ ও ১৯৮৫ সালে চ্যাম্পিয়নশীপে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন। কিশোর অবস্থাতেই ইয়র্কশায়ারের প্রধান অস্ত্র হিসেবে তাকে দেখা হচ্ছিল। দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের তুলনায় ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতা কিছুটা কম হলেও স্বল্প দূরত্ব নিয়ে দ্রুতগতিতে বলে বেশ ভালোমানের পেস আনতে পারতেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে আঘাতের কারণে স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে পারেননি। সম্ভবতঃ তরুণ অবস্থাতে অতিরিক্ত বোলিংয়ের কারণে এটি হয়েছিল। তবে, ১৯৮৬ সালে মিডলসেক্সের বিপক্ষে খেলায় ৯২ রান খরচায় ১১ উইকেট নিয়ে কাউন্টি ক্যাপ লাভ সক্ষম হন। ক্রমাগত আঘাতের সমস্যায় জর্জড়িত থাকায় তাকে অবমুক্তি দেয়া হয়।
পরের বছর ১৯৮৭ সালে ৮১ উইকেট পান। পরবর্তীতে এটিই তার মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট লাভের ঘটনা ছিল। বেনসন এন্ড হেজেস কাপের শিরোপা জয়ী দলের অন্যতম রূপকার ছিলেন। চূড়ান্ত খেলায় নর্দান্টসদের বিপক্ষে ৪/৪৩ নিয়ে দলের জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। ফলশ্রুতিতে, জাতীয় দলে খেলার জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯২ সালে নর্দান্টসদের বিপক্ষে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে ব্যক্তিগত সেরা ৮০ রানের ইনিংস খেলেন।
১৯৯৩ সাল শেষে ইয়র্কশায়ার কর্তৃপক্ষ তাকে অবমুক্তি দেয়। এরপর তিনি সাসেক্সে যোগ দেন। ১৯৯৪ সালে ৫১ উইকেট পান ও দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্টি ক্যাপ লাভ করেন। তবে, পরবর্তী তিন মৌসুমে শারীরিক সক্ষমতার বিষয়ে তিনি মাত্র কয়েকটি খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন। ১৯৯৮ সাল শেষে সাসেক্স ত্যাগ করে সমারসেটে চলে যান। তবে, দলের সদস্যরা তাকে কখনো মেনে নিতে পারেনি। প্রায়শঃই তাকে আঘাতের সম্ভাবনায় থাকাসহ মাঠে তিনি বোঝাস্বরূপ হন। তাসত্ত্বেও, একদিনের ক্রিকেটে ডানহাতি ভঙ্গীমায় বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন।
এরপর, ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সাসেক্সের পক্ষাবলম্বন করেন। সেখানে তিনি তার প্রথম মৌসুমে ৫১ উইকেট লাভ করেন। কাউন্টি দলটির পক্ষে তিনি তার দ্বিতীয় ক্যাপ লাভ করেন। তবে, পুনরায় আঘাতে তার খেলোয়াড়ী জীবনে বিঘ্নের সৃষ্টি করে। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ পর্যন্ত সমারসেটে অবস্থানকালেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। তাসত্ত্বেও, নিজের সেরা দিনগুলোয় একদিনের ক্রিকেটে বেশ ভালো খেলতেন। ১৯৯৯ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৫/৫৫ পান। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটনের সদস্য হন। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি শীতকাল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিবাহিত করেন।
বেশ কয়েকবার শীতকালে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নেন। ২০০০ সালের পর কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নেননি। খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি সংগ্রহে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের অংশীদার তিনি।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে নয়টিমাত্র টেস্ট ও ষোলটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন পল জার্ভিস। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৩ মার্চ, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৮৭ সালের শীতকালে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া গমন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ক্রাইস্টচার্চের ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় পল জার্ভিসের। ধীরগতিসম্পন্ন অনুপযোগী পিচেও ফাস্ট বোলিং করেন। প্রথম দুই খেলায় তিনি ছয় উইকেট পান। চূড়ান্ত টেস্টে তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।
এরপর, ১৯৮৮ সালে নিজ দেশে দূর্দাণ্ড প্রতাপে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন। প্রথম দুই টেস্টে বেশ ভালোমানের বোলিংশৈলী প্রদর্শন করেন। লর্ডসে বল ও ব্যাট হাতে বেশ সফল হন। ৪/১০৭ বোলিং পরিসংখ্যানের পাশাপাশি ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এগুলোই তার খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সাফল্য ছিল। কিন্তু, পিঠের আঘাতের কারণে সিরিজের বাদ-বাকী খেলাগুলোয় অংশ নিতে পারেননি তিনি।
এক বছর খেলার জগৎ থেকে দূরে সড়ে ছিলেন। ১৯৮৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজের মাধ্যমে পুনরায় খেলায় প্রবেশ করেন। এ সময় সবেমাত্র তাকে গ্রাহাম ডিলি’র নতুন বলের কার্যকর জুটি হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। এক বছর পর পুনরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন। স্টিভ ওয়াহকে তিনবার ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে তালুবন্দী করতে না পারার খেসারত হিসেবে অপরাজিত ১৫২ রান তুলেন। এজবাস্টনে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান জিওফ মার্শের উইকেট পান। আবারও তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।
১৯৮৯ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের চূড়ান্ত দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ পর্যায়ে ইংরেজ ফাস্ট বোলিংয়ের দূর্বলতর দিক বৈশ্বিকভাবে দেখা যায়। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে বিদ্রোহী দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের কারণে তাকে তিন বছর টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।[১] এ সফরে অংশগ্রহণের প্রশ্নে পল জার্ভিস মন্তব্য করেন যে, আমার ধারদেনা শোধের উদ্দেশ্যেই এ সফরে অংশগ্রহণ ছিল।[৫] টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তনের ফলে তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
পরবর্তীতে, ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ভারত ও শ্রীলঙ্কা গমনার্থে তাকে ইংল্যান্ড দলে রাখা হয়। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা সফরের জন্যে মনোনীত হন। চমৎকার পেস বোলিং করেন। বোলিং অনুপযোগী পিচে কোনরূপ ভাগ্যের সহায়তা ছাড়াই প্রথম দুই টেস্টে চার উইকেট পেলেও পরাজয়ের মুখোমুখি হয় তার দল। একদিনের সিরিজেও ভালো খেলেন।
পাশাপাশি, বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে ৫/৩৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে তাকে রাখা হয়নি। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা বোলার হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও চূড়ান্ত টেস্টে ফিল ডিফ্রিটাসকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তবে, ডিফ্রিটাস ঐ সফরে কোন উইকেট পাননি। কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। প্রথম ইনিংসে তিনি ৩/৭৬ পান। এরপর আর তাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়নি।
২১৫টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে ২৮.৯৩ গড়ে ৬৫৪টি উইকেট লাভ করেন তিনি। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ৭/৫৫। এছাড়াও, ১৬.৭৮ গড়ে ৩,৩৭৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে নর্দান্টসদের বিপক্ষে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস খেলেন।
ক্রিকেট লেখক কলিন বেটম্যান মন্তব্য করেছিলেন যে, পল জার্ভিস সর্বদাই ভারসাম্য রক্ষা করে পেস বোলিং করতেন। বলকে পিচ্ছিল করে তিনি প্রয়োজনীয় লক্ষ্যে অগ্রসর হতেন।[১]
২০০০ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি নিযুক্তি সহায়তাকল্পে গঠিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ২০০৯ সালে সাফোকের ফ্রামলিংহাম কলেজের ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্ব ছিলেন। ২০১১ সালে ইংল্যান্ড মহিলা দলকে প্রশিক্ষণ দেন। বর্তমানে উইল্টশায়ারে নিজস্ব বুটিক হোটেল ও কফি দোকান পরিচালনা করছেন।