পল ভিডাল ডি লা ব্লাস (২২ জানুয়ারি ১৮৪৫ - ৫ এপ্রিল ১৯১৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ফ্রেঞ্চ ভূগোলবিদ। তাকে বিবেচনা করা হয় আধুনিক ফরাসি ভূগোল এবং ফরাসি ‘স্কুল অফ জিওপলিটিক্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তিনি ছিলেন “জেনের দে ভিইয়ের” (genre de vie) ধারণাটির অন্যতম ধারক; যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জীবনধারা প্রতিফলিত হয় ভূমিরূপের উপর অঙ্কিত অর্থনৈতিক, সামাজিক, মতাদর্শগত এবং মানসিক পরিচয়ের দ্বারা।[১]
পল ভিডাল ডি লা ব্লাস এর পিতা ছিলেন একজন অধ্যাপক,পরবর্তীতে তিনি একাডেমিক প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।[২] ভিডাল ডি লা ব্লাস প্যারিস- এর লিসি শার্লমেগন স্কুলে ইনস্টিটিউশন ফাভার্ডে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে তিনি একল নরমাল সুপিরিয়র-এ ভর্তি হন।১৮৬৩ সালে আট বছর বয়সে এখানে ভর্তি হন এবং ১৮৬৬ সালে ইতিহাস ও ভৌগোলিক শিক্ষা নিয়ে 'এগ্রিগেশন' (সার্টিফিকেট) লাভ করেন। পরে তিনি একল ফ্রান্সেস দ'আথেন্স-এ নিযুক্ত হন এবং সেখানে থেকে তিনি ইতালি, প্যালেস্টাইন ও মিশর ভ্রমণের সুযোগ পান। তিনি সুয়েজ খালের উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি তিন বছর ধরে গ্রীক প্রাচীন ইতিহাস অধ্যয়ন করেন।
ফ্রান্সে থেকে ফিরে এসে, ১৮৭০ সালে তিনি লোরা মেরি এলিজাবেথ মন্ডন্টের সঙ্গে বিয়ে করেন। তাঁদের পাঁচ জন সন্তান হয়। তিনি বেশ কিছু শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বিশেষত লিসি দ্য আঞ্জার ও একল প্রেপারেটোরি দ্য ল্যনসিন স্যুপুরিয়র দেস লেট্রেস এ দেস সিয়াঁস-এ শিক্ষকতা করেন। ১৮৭২ সালে সোরবনে তিনি প্রাচীন ইতিহাস বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে এটি হেরোড অ্যাটিকাস: একটি সমালোচনামূলক অধ্যয়ন নামে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ন্যানসি-ইউনিভার্সিটি-এ কাজ শুরু করেন। ১৮৭৭ সালে তিনি আবার একল নরমাল সুপিরিয়র-এ ফিরে আসেন এবং ২১ বছর ধরে এখানে ছাত্রদের ভৌগোলিক বিজ্ঞান পড়ান। পরে তিনি প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়-এ কাজ করেন। তিনি ১৯০৯ সালে ৬৪ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন। ভিডাল ডি লা ব্লাস ফরাসি ভৌগোলিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং মার্সেল ডুবোইস[৩] এবং লুসিয়ান গালোইস-এর সঙ্গে ১৮৯৩ সালে অ্যানাল ডে জিওগ্রাফি (অ্যানালস অব জিওগ্রাফি) পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন । অ্যানাল ডে জিওগ্রাফি একটি প্রভাবশালী একাডেমিক পত্রিকা হয়ে ওঠে, যা মানব ভৌগোলিকতা কেবল মানুষের পরিবেশের সাথে সম্পর্কের অধ্যয়ন হিসেবেই প্রচারিত করেছিল।[৪] ভিডাল ডি লা ব্লাস ছাত্র আলবার্ট ডিমানজিওন মানব ভৌগোলিকতা অধ্যয়নে ঐতিহাসিক প্রভাবের গুরুত্বের প্রতি তাঁর মনোযোগ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফ্রান্সে মানব ভৌগোলিকতা বিষয়ে শীর্ষ একাডেমিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।[৫] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪–১৮) সময়ে ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে একটি ভৌগোলিক কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সেনাবাহিনীর ২য় ব্যুরোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল। এতে ছয়জন ভৌগোলিক বিশেষজ্ঞ, আলবার্ট ডিমানজিওন, লুসিয়ান গালোইস, এম্যানুয়েল দে মার্টোন, এমম্যানুয়েল দে মার্গেরি, লুইস রাভেনো এবং পল ভিডাল ডি লা ব্লাস ও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অঁতোয়ান ভাচের এই কমিশনের কাজে তিনি অবদান রেখেছিলেন।[৬]
পল ভিডাল ডি লা ব্লাস অনেক প্রকাশনা রচনা করেছেন। এর মধ্যে ১৭টি বই, ১০৭টি প্রবন্ধ এবং ২৪০টি প্রতিবেদন ও পর্যালোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২] এর মধ্যে কিছু কিছু ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে প্রভাবশালী কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল একটি প্রাথমিক পাঠ্যবই কলেকশন দ্য কার্ট মুরাল একোম্পানিয়ে দে নোটিস, পাশাপাশি ইতিহাস ও ভৌগোলিকতা: অ্যাটলাস জেনারেল এবং লা ফ্রান্স দ্য ল'এস্ট। তাঁর সবচেয়ে পরিচিত দুটি রচনা হলো ট্যাবলাউ দ্য লা জিওগ্রাফি দ্য লা ফ্রান্স (১৯০৩) এবং প্রিন্সিপলস অব হিউম্যান জিওগ্রাফি (১৯১৮)।