ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | বিজয় আনন্দ গজপতি রাজু | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | (পাদটীকা দেখুন), ভারত | ২৮ ডিসেম্বর ১৯০৫|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২ ডিসেম্বর ১৯৬৫ বারানসি, উত্তরপ্রদেশ, ভারত | (বয়স ৫৯)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ডাকনাম | বিজ্জি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২৩) | ২৭ জুন ১৯৩৬ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১৮ আগস্ট ১৯৩৬ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৪-১৯৩৫ | ইউনাইটেড প্রভিন্সেস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ, ১৩ অক্টোবর ২০১৭ |
লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্যার বিজয় আনন্দ গজপতি রাজু ( ; জন্ম: ২৮ ডিসেম্বর, ১৯০৫ - মৃত্যু: ২ ডিসেম্বর, ১৯৬৫) বিখ্যাত ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, ক্রিকেট প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। সর্বসমক্ষে তিনি বিজ্জি কিংবা বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজকুমার নামে পরিচিত ছিলেন।
বিজিয়ানাগ্রামের শাসনকর্তা পশুপতি বিজয় রাম গজপতি রাজুর দ্বিতীয় পুত্রসন্তান ছিলেন বিজ্জি। এ কারণেই তার পদবী মহারাজকুমার হয়েছে।
১৯২২ সালে পিতার দেহাবসানের পর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজা হন। বেনারসে পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য বিজ্জি স্থানান্তরিত হন।
আজমিরের প্রিন্সেস কলেজে (মেয়ো কলেজ) অধ্যয়ন শেষে ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে তিনি হেইলিবারি ও ইম্পেরিয়াল সার্ভিস কলেজে পড়াশোনা করেন। টেনিস ও ক্রিকেটে তার দক্ষতা ছিল। এছাড়াও তিনি দক্ষ শিকারী ছিলেন।
১৯২৬ সালে বিজ্জি ক্রিকেট দল সংগঠিত করে। নিজ প্রাসাদ এলাকায় মাঠের অবকাঠামো নির্মাণে অগ্রসর হন। ভারত ও বাইরে থেকে খেলোয়াড়দের এতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
১৯৩০-৩১ মৌসুমে পূর্ব-নির্ধারিত এমসিসি দলের ভারত সফর রাজনৈতিক কারণে বাতিল করা হলে স্ব-উদ্যোগে ভারত ও সিলন গমন করেন। তিনি দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণের জন্য জ্যাক হবস ও হার্বার্ট সাটক্লিফকে অনুরোধ করেন। এ উল্লেখযোগ্য অর্জনটুকু পাঁচবার হবস অস্বীকার করেন। কয়েকবছর পর বিজ্জি লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইনকে ভারতে নিয়ে আসেন।
উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় মুশতাক আলীকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বেনারসে নিয়ে আসেন।
১৯৩০-৩১ মৌসুমে সফর আয়োজন করে বিজ্জি ভারতীয় ক্রিকেটকে ভিত্তি এনে দেন। পাতিয়ালার মহারাজার পর এ সফরটি দ্বিতীয় ছিল।[১] এ পর্যায়ে পাতিয়ালার সাথে ভারতের বড়লাট লর্ড উইলিংডনের সুসম্পর্ক ছিল না। তবে বিজ্জির সাথে সুন্দর সম্পর্ক বিরাজমান ছিল।
বড়লাটের সম্মানার্থে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা মাঠের নতুন অবকাঠামো হিসেবে একটি প্যাভিলিয়ন নামাঙ্কিত করেন। ১৯৩৪ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তিনি স্বর্ণনির্মিত উইলিংডন ট্রফি দান করার চেষ্টা চালান। তবে পাতিয়ালা তাকে রঞ্জী ট্রফি প্রদানের মাধ্যমে পরাভূত করেন।
তার অর্থবিত্ত ও যোগাযোগে দক্ষতার কারণে ভারতীয় ক্রিকেটে ব্যাপক প্রভাববিস্তার করতে সমর্থ হন। তবে ক্রিকেট খেলায় ব্যাটহাতে তেমন প্রভাববিস্তার করতে পারেননি। ত্রিশের দশকের শুরুতে বোর্ডকে পঞ্চাশ হাজার রূপীসহ ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ড সফরে ভারত দলের জন্য চল্লিশ হাজার রূপী দিতে চেয়েছিলেন। এ সফরে তিনি উপ-সহঃঅধিনায়কের জন্য মনোনীত হন। তবে স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতি ও দূর্বলমানের খেলা প্রদর্শনের কারণে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন।[২]
অবশেষে ১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে দলের অধিনায়ক হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ দায়িত্ব লাভের জন্য তাকে তদবির ও প্রচারণা চালাতে হয়েছিল।
দূর্ভাগ্যবশতঃ মাঠে তার দূর্বল অধিনায়কত্ব প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়। এমনকি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছিল। লালা অমরনাথ, সি. কে. নায়ড়ু ও বিজয় মার্চেন্টের ন্যায় দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়েরা বিজ্জির খেলার যোগ্যতা ও অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। ফলশ্রুতিতে দলটি দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে; তার সমর্থক ও অধিনায়কের সমালোচক।
লর্ডসে মাইনর কাউন্টিজের বিপক্ষে ভারতের প্রস্তুতিমূলক খেলার মাধ্যমেই এর প্রভাব পড়ে। খেলা চলাকালীন লালা অমরনাথের পিঠের আঘাতের কারণে সুশ্রুষার দরকার পড়ে। বিজ্জি তার প্যাড খুলতে সহায়তা করলেও ব্যাট তুলে দেননি। তার পরিবর্তে কোন ব্যাটসম্যানকে নামানো হয়নি। ফলশ্রুতিতে অমরনাথ বিশ্রামের কোন সুযোগ পাননি। দিনশেষে ব্যাট রাখার পর দৃশ্যত রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বিশ্রাম কক্ষে ফিরে তার সরঞ্জামাদি ব্যাগে রাখেন ও পাঞ্জাবী ভাষায় গালিগালাজ করেন। 'আমি জানি দুর্নীতি কি।'
বিজ্জি সুযোগ পেয়ে দলীয় ব্যবস্থাপক মেজর জ্যাক ব্রিটেন জোন্সের কাছে অভিযোগ করেন। এরফলে প্রথম টেস্ট শুরুর পূর্বেই সফর থেকে দেশের পথে যাত্রা শুরু করেন অমরনাথ।[৩]
এছাড়াও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট চলাকালীন বিজ্জি বিজয় মার্চেন্টকে রান আউট করার জন্য মুশতাক আলীকে সোনার ঘড়ি উপহার দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ভারত খুব সহজেই সিরিজে পরাজিত হয়।
তাস্বত্ত্বেও রাজার জন্মদিনের সম্মাননায় বিজ্জিকে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের তরফে নাইট পদবীতে ভূষিত করা হয়েছিল।[৪][৫] একমাত্র সক্রিয় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ঐ বছরের জুনে অভিষেক ঘটিয়ে এ সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও ঐ বছরেরই আগস্ট মাসে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।[৬]
জুন, ১৯৪৭ সালে বিজ্জি তার নাইটহুড প্রাপ্তির বিষয়ে বড়লাট মাউন্টব্যাটেনকে এক পত্রে ব্যাখ্যা দেন যে, ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের আদর্শ ধরে রাখার জন্য তাকে এ সম্মাননা দেয়া হয়নি।[৭]
প্রথাগতভাবে অপেক্ষমাণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করেই এমসিসি কর্তৃপক্ষ তাকে সদস্যরূপে ঘোষণা করে।
এ সফরেই বিজ্জি ডাকনামে আখ্যায়িত হন তিনি। হোটেল ভিক্টোরিয়ায় রয়্যাল এম্পায়ার সোসাইটি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজনে লর্ড হেইলশাম ও লর্ড চ্যান্সেলর তাকে এ নামে ডাকেন।[৮][৯]
১৯৪৪ সালে বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল ডিগ্রি প্রদান করে।
১৯৫৮ সালে তিনি পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন।
'এ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ক্রিকেট' শিরোনামীয় গ্রন্থে মিহির বসু লিখেছেন যে,[১০] 'ক্রিকেট খেলা আয়োজন করে অষ্টাদশ শতকের স্যার হোরাশিও মান, কিংবা বিংশ শতকের স্যার জুলিয়েন কানের ন্যায় তিনি যথেষ্ট সফলতা লাভ করেছেন। ক্রিকেটে তিনি অন্যতম মর্যাদাবান হতে পারতেন। তবে তিনি নিজেই সেরা ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন।'
ইংল্যান্ড সফর পরবর্তীকালে দূর্বল অধিনায়কত্ব বিশেষ করে অমরনাথের ঘটনায় অভিযোগের মুখোমুখি হন বিজ্জি। জানুয়ারি, ১৯৩৭ সালে বিউমন্ট কমিটি প্রতিবেদন আকারে জানায় যে, তার অধিনায়কত্ব বিপর্যয়মূলক ছিল।
এতে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি মাঠের অবস্থান কিংবা বোলিং পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝতেন না এবং কখনো নিয়মিত ব্যাটিং অর্ডারের ধার ধারতেন না।
দল নির্বাচনের বিষয়ে মন্তব্য করা হয় যে, সেরা খেলোয়াড়দেরকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয় ও দূর্বলমানের খেলোয়াড়দের কাতারে তাদেরকে ফেলা হয়। প্রতিবেদনে অমরনাথের উপর আরোপিত অভিযোগ থেকে মুক্ত রাখা হয়।
বিজ্জি আর কখনো ভারতের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেননি।
এরপর প্রায় দুই দশককাল নির্জন অবস্থায় ছিলেন বিজ্জি। পরবর্তীতে তিনি ক্রিকেট প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে বিসিসিআইয়ের সভাপতিত্ব করেন তিনি।
এরপূর্বে ১৯৫২ সালে বিসিসিআইয়ে সহঃ সভাপতি থাকাবস্থায় লালা অমরনাথকে ভারতের অধিনায়কের দায়িত্বভার প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটের সমৃদ্ধি আনয়ণে অগ্রসর হন। কানপুরে টেস্ট ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তুলেন। তার ঐকান্তিক ইচ্ছার ফসলস্বরূপ ৬১ বছর বয়সে সি. কে. নায়ডু ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে উত্তরপ্রদেশের অধিনায়কত্ব করেন।
দক্ষিণ ভারতে ক্রিকেটের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করেন ও মহীশুর ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
১৯৬০ ও ১৯৬২ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে লোকসভার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন।[১১][১২]
১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে বিজ্জি রেডিও ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৫৯ সালে ভারত দলের ইংল্যান্ড সফরে বিবিসির অতিথি ধারাভাষ্যকার ছিলেন তিনি। সচরাচর তিনি ভাষ্যকর্মে সফল ছিলেন না।
ডিকি রাত্নাগুড়ের তথ্য মোতাবেক জানা যায়,[১৩] যখন বিজ্জি কীভাবে বাঘ শিকারের বিবরণ শেষ করেন, তখন রোহন কানহাই জানতে চাইলেন সত্যিই কি তাই?
কাশিপুরের জমিদারের জ্যেষ্ঠা কন্যার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।[১৪]
২ ডিসেম্বর, ১৯৬৫ তারিখে নিজের ৬০তম জন্মদিনের পূর্বে বেনারসে (বর্তমানে বারানসিতে) তার দেহাবসান ঘটে।