ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
জন্ম | [১] | ২৬ জুন ১৯৬৮||
জন্ম স্থান | মিলান, ইতালি | ||
উচ্চতা | ১.৮৬ মিটার (৬ ফুট ১ ইঞ্চি) | ||
মাঠে অবস্থান | সেন্টার ব্যাক, লেফট ব্যাক | ||
জার্সি নম্বর | ৩ | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ (গোল) | |
১৯৮৪-২০০৯ | এসি মিলান | ৬৪৭ (২৯) | |
জাতীয় দল | |||
১৯৮৬-১৯৮৮ ১৯৮৮-২০০২ |
ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ ইতালি |
১২৬ (৭) ১২ (৫) | |
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
পাওলো সিজার মালদিনি (জন্ম ২৬ জুন ১৯৬৮) হলেন ইতালির সাবেক ফুটবলার। সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে বিবেচিত [২][৩][৪][৫][৬] মালদিনি তার ২৫ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের পুরো সময়ই কাটিয়েছেন এসি মিলানে। ঐ ২৫ বছরে তিনি এসি মিলানের হয়ে ৭ বার সিরি এ, ১ বার ইতালীয় কাপ, ৫ বার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ৩ বার ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন।
মালদিনি ইতালি জাতীয় দলের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ ও তিনটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ইতালিকে ফাইনালে নিয়ে যেতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তার নেতৃত্বে ইতালি ২০০০ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স-আপ হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে ইতালি ও এসি মিলানের অধিনায়ক থাকার ফলে তার ছদ্মনাম ছিল “এল কাপিতানো” (অধিনায়ক)।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে মাএ ১৬ বছর বয়সে উদিনেসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সিরি এ তে মালদিনির অভিষেক ঘটে। ঐ ম্যাচে তিনি মাঠে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন। ঐ মৌসুমে তিনি সিরি এ তে ঐ একটি ম্যাচই খেলেছিলেন। কিন্তু এর পরের মৌসুম থেকেই তিনি এসি মিলানের প্রথম একাদশের নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে তিনি মিলানের হয়ে প্রথমবারের মতো সিরি এ জিতেন। এর পরের দুই মৌসুমে এসি মিলান টানা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে। ১৯৯১-৯২ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত এসি মিলান টানা তিনবার সিরি এ জিতে। এর মধ্যে ১৯৯১-৯২ মৌসুমে মিলান অপরাজিত থেকে সিরি এ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে সিরি এ জেতার পাশাপাশি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগও জেতে। ঐ সময় মালদিনি, ফ্রাংকো বারেসি, আলেসান্দ্রো কোস্তাকুর্তা ও মাউরো টাসোট্টি সমন্বয়ে গঠিত মিলানের ডিফেন্সকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্স লাইন-আপ বলে মনে করা হয়। পরবর্তীতে ফ্রাংকো বারোসির অবসরের পর তিনি আলেসান্দ্রো নেস্তার সাথেও ডিফেন্সে শক্তিশালী জ়ুটি গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৪ সালে মিলানকে সিরি এ ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে এবং ইতালিকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় মালদিনি ঐ বছর ওয়ার্ল্ড সকার ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম ডিফেন্ডার হিসেবে ঐ পুরস্কারটি জিতেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি মিলানের হয়ে ৫ম বারের মতো সিরি এ জেতেন।
১৯৯৭ সালে ফ্রাংকো বারেসি ফুটবল থেকে অবসর নিলে মালদিনি এসি মিলানের অধিনায়কত্ব পেয়ে যান। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে এসি মিলান তার নেতৃত্বে সিরি এ জেতে।
২০০২-০৩ মৌসুমে মিলান উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে। ফাইনালে মিলান জুভেন্টাসকে টাইব্রেকারে হারায়। মালদিনি ছিলেন ফাইনালের ম্যাচ সেরা। এটি ছিল মিলানে মালদিনির খেলোয়াড় হিসেবে চতুর্থ ও অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, ঠিক ৪০ বছর আগে তার বাবা সিজার মালদিনিও মিলানের অধিনায়ক হিসেবে ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন।
পরবর্তী মৌসুমে মিলান সিরি এ জেতে। মালদিনি ঐ মৌসুমে সিরি এ এর সেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার জিতেন। ঐ পুরস্কারটি ২০০০ সাল থেকে চালু হয়েছিল। ২০০৪-০৫ মৌসুমে মিলান উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে লিভারপুলের মুখোমুখি হয়। খেলা শুরু হওয়ার পরপরই ৫১ সেকেন্ডের মাথায় মালদিনি গোল করেন। এটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম গোল। প্রথমার্ধ শেষে এসি মিলান ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল ৩ গোল করে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত মিলান টাইব্রেকারে লিভারপুলের কাছে হেরে যায়। ঐ পরাজয়কে মালদিনি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মূহুর্ত বলে মনে করেন।
২০০৬-০৭ মৌসুমে এসি মিলান আবারও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে। ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়ে মিলান ২০০৪-০৫ মৌসুমের পরাজয়ের বদলা নেয়। এটি ছিল মিলানের হয়ে মালদিনির পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। ঐ মৌসুমে মালদিনি টুর্নামেন্টের সেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কার জেতেন। ঐ পুরস্কারটি ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।
২০০৮-০৯ মৌসুম শেষে মালদিনি ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে নেন। অবসরের পর এসি মিলান ক্লাব কর্তৃপক্ষ তিন নম্বর জার্সিটি তার ছেলে ব্যতীত আর কোনো খেলোয়াড়কে না দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। মালদিনি এসি মিলানের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৯০২ ম্যাচ খেলেছেন। এটিই এসি মিলানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড।
১৯৮৬ সালে মালদিনি ইতালির অনূর্ধ্ব-২১ দলে সুযোগ পান। ঐ সময় ইতালির অনূর্ধ্ব-২১ দলের কোচ ছিলেন তার বাবা সিজার মালদিনি। মালদিনি অনূর্ধ্ব-২১ দলে ২ বছর খেলে ১২ ম্যাচে ৫ গোল করেন।
১৯৮৮ সালের ৩১ মার্চ যুগোস্লাভয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ইতালি জাতীয় দলের হয়ে তার অভিষেক ঘটে।
ঐ বছর অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি ইতালির সবকটি ম্যাচে ছিলেন।
১৯৯০ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপটি ছিল মালদিনির প্রথম বিশ্বকাপ। ঐবার ইতালি সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ট্রাইব্রেকারে হেরে যায়। ডিফেন্সে ভালো পারফরম্যান্সের ফলে মালদিনি টুর্নামেন্টের অল-স্টার টিম এ এ নির্বাচিত হন। ঠিক ২৮ বছর আগে ১৯৬২ বিশ্বকাপে তার বাবাও ঐ একই কৃ্তিত্ব দেখিয়েছিলেন।
১৯৯৩ সালে মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মালদিনি ইতালির জাতীয় দলের হয়ে প্রথমবারের মতো গোল করেন। এটি ছিল তার ৪৪তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে দলের নিয়মিত অধিনায়ক ফ্রাংকো বারেসি ইনজুরিতে পড়ায় বেশ কয়েকটি ম্যাচে ইতালিকে নেতৃত্ব দেন মালদিনি। ঐবার ইতালি রানারআপ হয়। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলার ফলাফল গোলশূন্য থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ইতালি হেরে যায়। পুরো টুর্নামেন্টে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের ফলে মালদিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের অল-স্টার টিম এ নির্বাচিত হন। ঐ বিশ্বকাপের পর ফ্রাংকো বারেসি জাতীয় দল থেকে অবসর নিলে মালদিনি ইতালির অধিনায়কত্ব পেয়ে যান।
১৯৯৬ সালের ইউরোতে ইতালি প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেই। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ইতালি কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ট্রাইবেকার হেরে বিদায় নেয়। ২০০০ সালের ইউরোতে ইতালি ফাইনালে গিয়ে ফ্রান্সের কাছে হেরে যায়।
২০০২ সালের বিশ্বকাপে ইতালি দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়। ঐ বিশ্বকাপের পর ইতালির জাতীয় দল থেকে মালদিনি অবসর নিয়ে নেন। মালদিনি ইতালির জাতীয় দলের হয়ে ১২৬ ম্যাচ থেলেছেন। তিনি তার ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অর্ধেকেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন ইতালির অধিনায়ক হিসেবে। তিনি ইতালিকে রেকর্ড ৭৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ছেন।
ডিফেন্ডার হিসেবে মালদিনি মূলত ট্যাকলিং এর চেয়ে তার পজিশনিং এর জন্য বেশি বিখ্যাত ছিলেন। তার পজিশনিং ভালো হওয়ার ফলে তার খুব একটা ট্যাকল করতে হতো না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিনি প্রতি ২ ম্যাচে গড়ে একটি করে ট্যাকল করতেন।
• সিরি এ তে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড (৬৪৭ ম্যাচ)।
• উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড (১৬৮ ম্যাচ)।
• এসি মিলানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড (৯০২ ম্যাচ)।
• ইতালি জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড (১২৬ ম্যাচ)। ২০০৯ সালে এই রেকর্ডটি ফ্যাবিও ক্যানাভারো ভেঙে দেন।
মালদিনি ১৯৯৪ সালে ভেনেজুয়েলান মডেল আর্দ্রিয়ানা ফসাকে বিয়ে করেন। ক্রিস্টিয়ান (জন্ম ১৪ জুন ১৯৯৬) ও ড্যানিয়েল (১১ অক্টোবর ২০০১) নামে তাদের দুই ছেলে রয়েছে। দুই ছেলেই বর্তমানে এসি মিলানের যুবদলে খেলে।
• সিরি এঃ ১৯৮৭-৮৮, ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৫-৯৬, ১৯৯৮-৯৯, ২০০৩-০৪
• ইতালীয় কাপঃ ২০০২-০৩
• ইতালীয় সুপার কাপঃ ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৩, ১৯৯৪, ২০০৪
• উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগঃ ১৯৮৮-৮৯, ১৯৮৯-৯০, ১৯৯৩-৯৪, ২০০২-০৩, ২০০৬-০৭
• উয়েফা সুপার কাপঃ ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯৪, ২০০৩, ২০০৭
• ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ / ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপঃ ১৯৮৯, ১৯৯০, ২০০৭
• ফিফা বিশ্বকাপ ৩য় স্থানঃ ১৯৯০
• ফিফা বিশ্বকাপ রানার্স-আপঃ ১৯৯৪
• উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ রানার্স-আপঃ ২০০০
• ওয়ার্ল্ড সকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ঃ ১৯৯৪
• উয়েফা বর্ষসেরা ক্লাব ডিফেন্ডারঃ ২০০৭
• সিরি এ বর্ষসেরা ডিফেন্ডারঃ ২০০৪
• ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ অল-স্টার টিমঃ ১৯৯০, ১৯৯৪
• উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ টিম অফ দ্য টুর্নামেন্টঃ ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০০০
• ফিফপ্রো বিশ্ব একাদশঃ ২০০৫
• উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ম্যান অফ দ্য ম্যাচঃ ২০০৩
• ফিফা ১০০
• ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার (দ্বিতীয় স্থান): ১৯৯৫
• ইউরোপীয় বর্ষসেরা ফুটবলার (তৃতীয় স্থান): ১৯৯৪, ২০০৩
• অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপীয় বর্ষসেরা ফুটবলারঃ ১৯৮৯
• অর্ডার অফ মেরিট অফ ইতালীয় রিপাবলিক – অফিসার, চতুর্থ শ্রেণীঃ ২০০০
• অর্ডার অফ মেরিট অফ ইতালীয় রিপাবলিক – নাইট, পঞ্চম শ্রেণীঃ ১৯৯১