পাকিস্তানে হিন্দুধর্ম

পাকিস্তানে হিন্দুধর্ম
বেলুচিস্তান প্রদেশে একটি গুহার ভেতরে হিংলাজ মাতা মন্দির (ননী মন্দির)
মোট জনসংখ্যা
৪৪ লাখ ( ২০১৭ আদমশুমারি )

(পাকিস্তানের জনসংখ্যার ২.১৪%)

আশি লাখ অথবা ৪ শতাংশ (পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের ২০১৮ সালের দাবী)[][][]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
সিন্ধু, পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান
ভাষা
মূলত সিন্ধি ভাষা  • অল্পসংখ্যক মানুষের: গুজরাটি ভাষা, পাঞ্জাবি ভাষা

পাকিস্তানে হিন্দুধর্ম হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।[] পাকিস্তান দেশটির জন্মের সময় দেশটির পূর্বাংশে (পূর্ব পাকিস্তানে) হিন্দুদের সংখ্যা বেশি ছিলো এবং তখন পাকিস্তানকে ভারতের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বলা হতো। ১৯৫১ সালের এক হিসেব বলেছিলো যে পাকিস্তানে তখন অমুসলিম মানুষ ছিলো ১৪.২০ শতাংশ।[] তখন পশ্চিম পাকিস্তানে অমুসলিম ছিলো ৩.৪৪ শতাংশ এবং পূর্ব পাকিস্তানে অমুসলিমদের সংখ্যা ছিলো ২৩.২ শতাংশ।[] ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানে মাত্র ১.৮৫ শতাংশ হিন্দু ছিলো।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

প্রাচীন যুগ

[সম্পাদনা]
পেশোয়ার, খাইবার পাখতুনখোয়া
সিন্ধু সভ্যতার সাইটগুলির সম্প্রসারণ

স্বস্তিকার প্রতীক, যোগাসনে স্থিত যোগীর প্রতিকৃতি (যা "পশুপতির" অনুরূপ) সিন্ধুর মহেন্জো‌দারো থেকে পাওয়া গেছে। যা হিন্দু ধর্মের প্রাচীন অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। সিন্ধু উপত্যকার লোকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও লোককাহিনী হিন্দু ধর্মের একটি প্রধান অঙ্গ, যা দক্ষিণ এশিয়ার এই অংশে বিকশিত হয়েছিল। সিন্ধু রাজ্য এবং এর শাসকরা মহাভারতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিশ্বাস করা হয় যে পাকিস্তানি মহানগর লাহোর লব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং কাসুর মহানগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর যমজ ভাই কুশ। তারা দুজনই শ্রীরামের পুত্র ছিলেন। গান্ধার রাজ্য যা উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত ছিল প্রাচীন কাল থেকেই। গান্ধারের লোকেরাও রামায়ণ এবং মহাভারত গ্রন্থগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে আছে। বেশিরভাগ পাকিস্তানের শহরগুলির নাম (যেমন পেশোয়ার এবং মুলতান) সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে।

স্বাধীনতার সময়

[সম্পাদনা]
করাচির স্বামীনারায়ণ মন্দির

স্বাধীনতার পরে যারা ভারতে পাড়ি জমান তাদের জন্য করাচির স্বামীনারায়ণ মন্দির ছিল প্রস্থান পয়েন্ট।

পাকিস্তান সৃষ্টি 'দ্বিজাতি তত্ত্ব'-এর মাধ্যমে করা হয়েছিল। এই তত্ত্ব অনুসারে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘু ও পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুদেরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ন্যায্য চুক্তি করা উচিত ছিল[][]। তবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন: "আমি একমত নই যে ধর্ম ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় বা আমি একমত নই যে একটি ইসলামী রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের তার বর্ণ, ধর্ম বা বিশ্বাস যাই হোক না কেন তার অধিকার রয়েছে। "[১০]

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৪.৭ মিলিয়ন হিন্দু এবং শিখরা ভারতে চলে যায় এবং ৬.৫ মিলিয়ন মুসলমান পাকিস্তানে পাড়ি জমান। [১৪] এর কারণগুলি হ'ল সাম্প্রদায়িক পরিবেশ, একে অপরের প্রতি গভীর অবিশ্বাস, সহিংস জনতার বর্বরতা এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ। স্বাধীনতার পরে তাত্ক্ষণিকভাবে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে আসা লক্ষ লক্ষ হিন্দু, শিখদের হৃদয়ে ভীতি ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়। যার কারণ ১৯৪৭ সালের রক্তক্ষয়ী সহিংসতায় ১ মিলিয়নেরও বেশি লোক প্রাণ হারানো।

জনসংখ্যা

[সম্পাদনা]

১৯৯৮ সালের সরকারি পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী পাকিস্তানের হিন্দু জনগোষ্ঠীদের প্রদেশ অনুযায়ী শতাংশঃ[১১][১২] সিন্ধু প্রদেশেই পাকিস্তানের হিন্দু জনগণের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে (সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে), এছাড়া পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশেও হিন্দু জনগণের সংখ্যা মোটামুটি ভালোই রয়েছে।

প্রদেশ হিন্দু জনগণের শতাংশ (প্রদেশ বা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার মধ্যে) সর্বমোট হিন্দু জনগণের শতাংশ
সিন্ধু প্রদেশ ৭.৫০% ৯৩.৩৩%
বেলুচিস্তান প্রদেশ ০.৫৯% ১.৬%
পাঞ্জাব প্রদেশ ০.১৬% ৪.৭৬%
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ ০.০৩% ০.২১%
আধা স্বায়ত্তশাসিত উপজাতীয় অঞ্চল ০.০৬% ০.০৮%
ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল ০.০০২% ০.০০৮%

২০১০ সালে বলা হচ্ছিলো যে পাকিস্তান রাষ্ট্রটিতে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম হিন্দু জনসংখ্যা রয়েছে, ধারণা করা হয় পাকিস্তানের হিন্দু জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ সাড়ে পঞ্চাশ লাখ হবে এবং পাকিস্তানকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে, তখন হিন্দুরা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশে রূপান্তরিত হবে।[১৩][১৪] পাকিস্তান হিন্দু পরিষদ সরকারী দাবী প্রত্যাখ্যান করে বলে যে ২০১০ সালেই পাকিস্তানে ৮০ লাখ হিন্দু ছিলো যেটি পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪ শতাংশের কাছাকাছি। পাকিস্তান রাষ্ট্রটির স্বাধীনতার পরে ১৯৫৬ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় হিন্দুদেরকে সংখ্যালঘু মানুষদের কাতারে ফেলে দেওয়া হয় এবং মুসলিম বাদে পাকিস্তান ভূখণ্ডে বাসকারী অন্যান্য ধর্মের মানুষদেরকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রটির জন্মের যুক্তি দেখানো হয় মুসলমানদের রাষ্ট্র হিসেবে।[][] আরেকটি যুক্তি ছিলো যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের সাথে সাথেই ভারতের অধিকাংশ মুসলিম পাকিস্তানে চলে এসেছিলো এবং নবগঠিত পাকিস্তান ভূখণ্ডের অধিকাংশ অমুসলিম (হিন্দু, শিখ) বিভাজিত ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলো।[১৫]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. [১]
  2. "Hindus of Pakistan reject CAA, do not want Indian Prime Minister Modi's offer of citizenship"Gulf News। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. "India's citizenship law divisive: Pakistani Hindus"Anadolu Agency। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  4. "Population Distribution by Religion, 1998 Census"Pakistan Bureau of Statistics। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  5. Rawat, Mukesh (১২ ডিসেম্বর ২০১৯)। "No, Pakistan's non-Muslim population didn't decline"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। 
  6. "Population by religion"। ২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "Hindu Population (PK) – Pakistan Hindu Council" (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-১৮ 
  8. Zamindar, Vazira Fazila-Yacoobali (২০১০)। The Long Partition and the Making of Modern South Asia: Refugees, Boundaries, Histories। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 9780231138475The logic of the hostage theory tied the treatment of Muslim minorities in India to the treatment meted out to Hindus in Pakistan. 
  9. Dhulipala, Venkat (২০১৫)। Creating a New Medina: State Power, Islam, and the Quest for Pakistan in Late Colonial North India। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 19। আইএসবিএন 9781316258385Within the subcontinent, ML propaganda claimed that besides liberating the 'majority provinces' Muslims it would guarantee protection for Muslims who would be left behind in Hindu India. In this regard, it repeatedly stressed the hostage population theory that held that 'hostage' Hindu and Sikh minorities inside Pakistan would guarantee Hindu India's good behaviour towards its own Muslim minority. 
  10. Qasmi, Ali Usman (২০১৫)। The Ahmadis and the Politics of Religious Exclusion in Pakistan। Anthem Press। পৃষ্ঠা 149। আইএসবিএন 9781783084258Nazim-ud-Din favored an Islamic state not just out of political expediency but also because of his deep religious belief in its efficacy and practicality...Nazim-ud-Din commented:'I do not agree that religion is a private affair of the individual nor do I agree that in an Islamic state every citizen has identical rights, no matter what his caste, creed or faith be'. 
  11. https://www.scribd.com/document/400843609/Pakisatn-Bearu-of-Statistics-Population-by-Religion-pdf
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  13. "10 Countries With the Largest Hindu Populations, 2010 and 2050"Pew Research Center। ২ এপ্রিল ২০১৫। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ 
  14. "Projected Population Change in Countries With Largest Hindu Populations in 2010"Pew Research Center। ২ এপ্রিল ২০১৫। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ 
  15. Hasan, Arif; Raza, Mansoor (২০০৯)। Migration and Small Towns in Pakistan। IIED। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 9781843697343When the British Indian Empire was partitioned in 1847, 4.7 million Sikhs and Hindus left what is today Pakistan for India, and 6.5 million Muslims left India and moved to Pakistan. 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]