পাটনা पटना पाटलीपुत्र (পাটলীপুত্র) | |
---|---|
মহানগর | |
বিহারের মানচিত্রে পাটনার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৩৬′ উত্তর ৮৫°০৬′ পূর্ব / ২৫.৬° উত্তর ৮৫.১° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | বিহার |
অঞ্চল | মগধ |
বিভাগ | পাটনা |
জেলা | পাটনা |
ওয়ার্ড | ৭২টি |
প্রতিষ্ঠাতা | অজাতশত্রু |
সরকার | |
• ধরন | পৌর সংস্থা |
• শাসক | পাটনা পৌরসংস্থা |
• মহানাগরিক | বর্তমানে শূন্য |
• পৌর কমিশনার | জয় সিং |
আয়তন(২০১১) [A ১] | |
• পৌর এলাকা | ১৩৫.৭৯ বর্গকিমি (৫২.৪৩ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ২৩৪.৭০ বর্গকিমি (৯০.৬২ বর্গমাইল) |
• শহর | ৯৯.৪৫ বর্গকিমি (৩৮.৪০ বর্গমাইল) |
উচ্চতা[৪] | ৫৩ মিটার (১৭৪ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১)[৫] | |
• জনঘনত্ব | ১৬,৯২৫/বর্গকিমি (৪৩,৮৪০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ২০,৪৬,৬৫২ (ভারতের মহানগরগুলির মধ্যে স্থান: ১৮শ) |
• মহানগর | ২২,৩১,৫৫৪ [A ১] |
• শহর | ১৬,৮৩,২০০ (ভারতের পৌরশহরগুলির মধ্যে স্থান: ১৯তম) |
বিশেষণ | পাটনাবাসী |
ভাষা | |
• কথ্য | হিন্দি, ইংরেজি, মাগধী[৬] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন কোড | ৮০০ XXX |
টেলিফোন কোড | +৯১-৬১২ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-BR-PA |
যানবাহন নিবন্ধন | BR 01 |
লিঙ্গানুপাত | ৯৮০ ♀ / ১০০০ ♂ [৫] |
সাক্ষরতা | ৮৪.৭১% |
লোকসভা কেন্দ্র | পাটনা সাহেব ও পাটলিপুত্র |
বিধানসভা কেন্দ্র | দিঘা, বাঁকিপুর, কুম্ভরার, পাটনা সাহেব, ফতুহা, দানাপুর, মানের, ফুলওয়ারি |
পরিকল্পনা পর্ষদ | বিহার নগর পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদ |
জলবায়ু | Cwa (Köppen) |
আর্দ্রতা | ১,১০০ মিলিমিটার (৪৩ ইঞ্চি) |
গড় বার্ষিক তাপমাত্রা | ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) |
গড় গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা | ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) |
গড় শীতকালীন তাপমাত্রা | ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৬৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) |
ওয়েবসাইট | patnanagarnigam patna |
পাটনা (/ˈpætnə,
বিশ্বের যে প্রাচীনতম অঞ্চলগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে জনবসতিপূর্ণ, পাটনা তার মধ্যে অন্যতম।[৭] খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ অব্দে মগধের রাজা অজাতশত্রু এই শহর স্থাপন করেন। প্রাচীন পাটনা ‘পাটলীপুত্র’ নামে পরিচিত ছিল। এই শহর ছিল হর্যঙ্ক, নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, গুপ্ত ও পাল রাজবংশের অধীনে মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী এবং শিক্ষা ও শিল্পকলার একটি প্রাচীন কেন্দ্র। মৌর্য শাসনকালে (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ) এই শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০০,০০০।[৮]
আধুনিক পাটনা শহরটি গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত।[৯] সোন, গণ্ডক ও পুনপুন নদীও এই শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। শহরটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (২২ মাইল) এবং প্রস্থে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ কিলোমিটার (৯.৯ থেকে ১১.২ মাইল)। ২০০৯ সালের জুন মাসে বিশ্ব ব্যাংক ব্যবসা শুরু করার উপযুক্ত স্থান হিসেবে পাটনা শহরকে ভারতে দ্বিতীয় স্থান (দিল্লির পরে) প্রদান করে।[১০] ২০১১-১২ সালে বিহারের মাথাপিছু মোট জেলা আভ্যন্তরিণ উৎপাদনে পাটনা প্রথম স্থান অধিকার করে। উক্ত বছরে পাটনার মোট মাথাপিছু জেলা আভ্যন্তরিণ উৎপাদন ছিল ৬৩,০৬৩ টাকা।[১১][১২] গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হিসেব অনুসারে, পাটনা বিশ্বের ২১তম এবং ভারতের ৫ম দ্রুততম বর্ধিষ্ণু শহর (সিটি মেয়রস’ ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা অনুসারে)। ২০০৬-২০১০ সালে পাটনার গড় বার্ষিক বৃদ্ধি ছিল ৩.৭২%।[১৩]
বৌদ্ধ, হিন্দু ও জৈন তীর্থস্থান বৈশালী, রাজগির, নালন্দা, বুদ্ধ গয়া ও পাবাপুরী পাটনা শহরের কাছে অবস্থিত। পাটনা শহরটি শিখদের কাছে একটি পবিত্র শহর। এই শহরেই ১০ম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১৪]
পাটনা শহরের নাম একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। শহরের বর্তমান নাম পাটনা বা পটনার (দেবনাগরী: पटना) ব্যুৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক মত পাওয়া যায়।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ অব্দ থেকে পাটলীপুত্র (অধুনা পাটনা) শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।[২২][২৩] সেই সময় মগধের রাজা অজাতশত্রু বৈশালীর লিচ্ছবিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রাজগৃহের পার্বত্য এলাকা থেকে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক কোনো এলাকায় রাজধানী স্থানান্তরিত করার কথা চিন্তা করেন।[২৪] নতুন রাজধানী স্থাপনের জন্য তিনি গঙ্গাতীরবর্তী পাটলীপুত্রকে নির্বাচিত করেন এবং সেখানেই দুর্গ নির্মাণ করেন। গৌতম বুদ্ধ তার জীবনের শেষ পর্বে পাটলীপুত্রে এসেছিলেন। তিনি এই শহরের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলেছিলেন। সেই সঙ্গে এও বলেছিলেন যে, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড ও কলহবিবাদের ফলে এই শহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।[২৫]
ইন্দো-গ্রিক ইতিহাসকার তথা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় গ্রিক রাজদূত মেগাস্থিনিস পাটলীপুত্র নগরীর যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা এই শহরের প্রাচীনতম বিবরণীগুলির অন্যতম। তিনি লিখেছেন, এই শহরটি গঙ্গা ও ‘আরেননোভোয়াস’ (শোনভদ্রা – হিরণ্যব) নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল এবং এই শহরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ছিল যথাক্রমে ১৪ কিলোমিটার (৯ মাইল) ও ২.৮২ কিলোমিটার (১.৭৫ মাইল)।[২৬][২৭] মেগাস্থিনিস খ্যাতির শীর্ষে থাকা পাটলীপুত্রকে তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নগরী বলে বর্ণনা করেছিলেন।[২৮] মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর শুঙ্গ রাজারা এই শহর অধিকার করেন এবং এখান থেকে প্রায় ১০০ বছর নিজেদের সাম্রাজ্য শাসন করেন। শুঙ্গ সাম্রাজ্যের পর কান্ব এবং পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনকেন্দ্রে পরিণত হয় পাটলীপুত্র।[২৯]
ভারতে বিদ্যার্জনের উদ্দেশ্যে আগত একাধিক চীনা পর্যটক তাদের ভ্রমণ-বিবরণীতে পাটলীপুত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। এই রকম একটি বিখ্যাত বিবরণ রচনা করেছিলেন চীনা বৌদ্ধ পর্যটক ফা হিয়েন। তিনি ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে এসেছিলেন এবং বেশ কয়েক মাস পাটলীপুত্রে অবস্থান করে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি অনুবাদ করেছিলেন।[৩০]
গুপ্ত ও পাল রাজবংশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক রাজবংশ পাটলীপুত্র থেকে রাজ্য শাসন করেছিলেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর পাটলীপুত্রের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ১২শ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজি পাটনা দখল করে বহু প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র ধ্বংস করে দেন। এরপরই পাটলীপুত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মর্যাদা হারায়।[৩১]
১০শ শিখ গুরু গোবিন্দ সিং (২২ ডিসেম্বর, ১৬৬৬ – ৭ অক্টোবর, ১৭০৮) পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল গোবিন্দ রাই। তার পিতা ছিলেন ৯ম শিখ গুরু তেগ বাহাদুর ও মা ছিলেন গুজরি। তার জন্মস্থান পাটনা সাহিব শিখদের পবিত্রতম তীর্থস্থানগুলির অন্যতম।[৩২]
মুঘল শাসনকালে দিল্লি থেকেই শাসনকার্য চালানো হত।[৩৩] মধ্যযুগে পাঠান সম্রাট শের শাহ সুরির রাজত্বকালে পাটনার উন্নতি ঘটে। ১৬শ শতাব্দীর মধ্যভাগে তিনি পাটনার হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তিনি একটি দুর্গ নির্মাণ করেন এবং গঙ্গাতীরে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। পাটনায় শের শাহের দুর্গটি আর নেই। তবে শের শাহ সুরি মসজিদটি আছে। এই মসজিদটি আফগান স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। ১৫৭৪ সালে মুঘল সম্রাট আকবর পাটনায় আসেন বিদ্রোহী আফগান নেতা দাউদ খানকে দমন করতে। আকবরের রাজসভার সভা-ইতিহাসকার তথা "আইন-ই-আকবরি" গ্রন্থের রচয়িতা আবুল ফজল পাটনা শহরটিকে কাগজ, পাথর ও কাচ শিল্পের একটি বর্ধিষ্ণু কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি পাটনায় উৎপন্ন এক বিশেষ ধরনের চালের উচ্চ মানের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই চালটি ইউরোপে পাটনা চাল নামে পরিচিত।[৩৪]
১৬২০ সাল নাগাদ পাটনা ‘বাংলার বৃহত্তম বাণিজ্যশহর’ হিসেবে পরিচিত হয়।[২৪][৩৫] সমগ্র উত্তর ভারতে পাটনার পরিচয় হয় ‘বাংলার বৃহত্তম শহর ও সবচেয়ে বিখ্যাত বাণিজ্যকেন্দ্র।’[৩৬] কলকাতা প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত পাটনা এই মর্যাদা ধরে রেখেছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব তার প্রিয় নাতি মুহাম্মদ আজিমের অনুরোধে এই শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখেন আজিমাবাদ। ১৭০৪ সালে আজিম পাটনায় সুবেদার হিসেবে প্রেরিত হন। পাটনা বা আজিমাবাদে কিছু হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল। ফিলিপ ম্যাসন তার "দ্য ম্যান হু রুলড ইন্ডিয়া" গ্রন্থে এই ধরনের কিছু ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। “আওরঙ্গজেব অ-মুসলমানেদের উপর জিজিয়া কর পুনঃস্থাপিত করেছিলেন। এই কর দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। পাটনায় কুটির প্রধান পিকক এই কর দিতে অস্বীকার করায় তাঁকে বন্দী করা হয় এবং খালি মাথায় ও খালি পায়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য করা হয়। নানা ভাবে অসম্মান করার পর তাঁর থেকে কর আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” যদিও এই সময় নাম ছাড়া পাটনার পরিবর্তন সামান্যই হয়েছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পাটনার কর্তৃত্ব বাংলার নবাবদের হাতে চলে যায়। তারা এই শহরের উপর করভার বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাটনার বাণিজ্যিক গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি। ১৮১১-১২ নাগাদ পাটনার নদী তীরে তেকারি রাজের প্রাসাদ থেকে পাটনা নিয়ন্ত্রিত হত।[৩৭]
১৭শ শতাব্দীতে পাটনা একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়।[৩৫] ১৬২০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় সূতিবস্ত্র ও রেশম বাণিজ্যের জন্য একটি কুঠি স্থাপন করে। অনতিবিলম্বেই পাটনা পটাশিয়াম নাইট্রেট বাণিজ্যের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। ফ্র্যাঙ্কোইস বার্নিয়ার তার ট্রাভেলস ইন দ্য মুঘল এম্পায়ার (১৬৫৬-১৬৬৮) বইতে লিখেছেন, “…পাটনা থেকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম নাইট্রেট আমদানি করা হত। খুব সহজেই তা গঙ্গার নদীপথে বহন করা হত এবং ডাচ ও ইংরেজরা ভারতের বহু বন্দরে এবং ইউরোপে বিশাল পণ্যবাহী জাহাজ প্রেরণ করত।” এই ব্যবসা ফরাসি, ডেনস, ডাচ ও পর্তুগিজদেরও আকৃষ্ট করেছিল। ১৬৩২ সালে পিটার মান্ডি পাটনাকে ‘পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বাজার’ বলে উল্লেখ করেন।[৩৩] ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর এলাহাবাদের চুক্তি অনুসারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে সুবে-বাংলার (মুঘল বাংলা প্রদেশ) রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। ১৭৯৩ সালে কোম্পানি পাটনা দখল করে। এই সময় পাটনায় মুঘল শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং কোম্পানি বাংলা ও বিহারের শাসনভার গ্রহণ করে। যদিও পাটনা একটি বাণিজ্যকেন্দ্র থেকে যায়।
১৯১২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি বিভাজিত হলে পাটনা নবগঠিত বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশের রাজধানী হয়। ১৯৩৫ সালে পৃথক উড়িষ্যা প্রদেশ গঠিত হলে পাটনা বিহার প্রদেশের রাজধানী হয়।[৩৮][৩৯]
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাটনার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৪০][৪১] চম্পারণে নীলচাষীদের বিদ্রোহ এবং ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে পাটনার নেতৃবৃন্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।[৪২][৪৩] পাটনার জাতীয় নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী, ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ, বিহারবিভূতি অনুগ্রহ নারায়ণ সিনহা, বসওন সিং, লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ, ড. সচ্চিদানন্দ সিং,[৪৪] শ্রীকৃষ্ণ সিনহা, শীলভদ্র ইয়াজি ও শার্ঙ্গধর সিনহা প্রমুখ।[৪৫]
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর পাটনা বিহার রাজ্যের রাজধানী থেকে যায়। ২০০০ সালে বিহার দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঝাড়খণ্ড রাজ্য সৃষ্টি হওয়ার পরও পাটনা বিহারের রাজধানীর মর্যাদা ধরে রাখে।[৩৯]
পাটনা পূর্ব ভারতে গঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। পাটনার আয়তন ১৩৬ কিমি২ (৫৩ মা২)। এর মধ্যে পাটনা পৌর-এলাকার আয়তন ৯৯ কিমি২ (৩৮ মা২) এবং শহরতলি অঞ্চলের আয়তন ৩৬ কিমি২ (১৪ মা২)। শহরটি ২৫°৩৬′ উত্তর ৮৫°০৬′ পূর্ব / ২৫.৬° উত্তর ৮৫.১° পূর্ব অক্ষ-দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এই শহরের গড় উচ্চতা ৫৩ মি (১৭৪ ফু)। পাটনা শহরটি নদী-সঙ্গমস্থলে অবস্থিত।[১] গঙ্গার দক্ষিণ তীরে প্রায় ৮ কিলোমিটারের একটি সংকীর্ণ উচ্চভূমিতে এই শহর অবস্থিত। এই অঞ্চলের মাটি খুবই উর্বর। অবশিষ্টাংশ উর্বর সমভূমির অন্তর্গত।
ব্রিটিশ যুগে, পাটনা ছিল বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত। ১৯৭৬ সালে পাটনা জেলা ভেঙে নালন্দা জেলা গঠিত হওয়ার পর[৪৬] পাটনা জেলা থেকে সকল পার্বত্য এলাকা বাদ পড়ে। বর্তমানে এটি পাললিক সমভূমির অন্তর্গত।
পাটনা জেলার ভূখণ্ডটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে কোনো বনাঞ্চল নেই। এই উর্বর সমভূমিতে ধান, আখ ও অন্যান্য খাদ্যশস্য চাষ করা হয়। এখানে প্রচুর আম গাছ, তাল গাছ ও বাঁশ ঝাড় দেখা যায়। নদী থেকে দূরে গ্রামগুলির শুষ্ক জমিতে ঝোপঝাড় দেখা যায়। বেল, শিরীষ, কাঁটাল ইত্যাদি গাছ এখানে প্রচুর চোখে পড়ে।[৪৭] পাটনা শহরের নিকটেই চারটি বড়ো নদী অবস্থিত। এটি পাটনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।[৪৮] পাটনা বিশ্বের দীর্ঘতম নদীতীরবর্তী শহর।[৪৯] গঙ্গার উপর মহাত্মা গান্ধী সেতু নামে যে সেতুটি রয়েছে সেটির দৈর্ঘ্য ৫৫৭৫ মিটার। এটি ভারতের দীর্ঘতম নদী সেতু।[৫০]
পাটনা ভারতের সিসমিক ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। এটি ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় অবস্থিত। তবে সাম্প্রতিক ইতিহাসে পাটনায় খুব একটা ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেনি।[৫১]
পাটনা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
জলবায়ু লেখচিত্র | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
পাটনার জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির (কোপেন-গিগার জলবায়ু শ্রেণীকরণ পদ্ধতি অনুসারে)। এখানে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালের অবস্থান মার্চ মাসের শেষ থেকে জুন মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। জুন মাসের শেষ ভাগ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ভাগ পর্যন্ত বর্ষাকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। শীতকালে তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকে। দিন সাধারণত কুয়াশাচ্ছন্ন বা রৌদ্রোজ্জ্বল হয়।[৫৪] পাটনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। সেই বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৫.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।[৫৫] সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নথিভুক্ত হয় ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি। সেই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)।[৫৬] সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটেছিল ১৯৯৭ সালে। এই বছর বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২০৪.৫ মিমি (৮.০৫ ইঞ্চি)।[৫৫]
নিচে বিস্তারিত আকারে পাটনার মাসিক আবহাওয়া-পরিবর্তনের তালিকা দেওয়া হল:
পাটনা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ২৮.৬ (৮৩.৫) |
৩৩.১ (৯১.৬) |
৩৮.৪ (১০১.১) |
৪২.৫ (১০৮.৫) |
৪৬.৬ (১১৫.৯) |
৪৫.০ (১১৩.০) |
৪৩.১ (১০৯.৬) |
৩৭.৪ (৯৯.৩) |
৩৭.৮ (১০০.০) |
৩৬.২ (৯৭.২) |
৩৩.০ (৯১.৪) |
৩০.৩ (৮৬.৫) |
৪৬.৬ (১১৫.৯) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ২৩.৩ (৭৩.৯) |
২৬.৫ (৭৯.৭) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
৩৭.৭ (৯৯.৯) |
৩৮.৯ (১০২.০) |
৩৬.৭ (৯৮.১) |
৩৩.০ (৯১.৪) |
৩২.৪ (৯০.৩) |
৩২.৩ (৯০.১) |
৩১.৫ (৮৮.৭) |
২৮.৮ (৮৩.৮) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
৩১.৫৩ (৮৮.৭৫) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ৯.২ (৪৮.৬) |
১১.৬ (৫২.৯) |
১৬.৪ (৬১.৫) |
২২.৩ (৭২.১) |
২৫.২ (৭৭.৪) |
২৬.৭ (৮০.১) |
২৬.২ (৭৯.২) |
২৬.১ (৭৯.০) |
২৫.৭ (৭৮.৩) |
২১.৮ (৭১.২) |
১৪.৭ (৫৮.৫) |
৯.৯ (৪৯.৮) |
১৯.৬৫ (৬৭.৩৭) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | ১.১ (৩৪.০) |
৪.৩ (৩৯.৭) |
৭.৮ (৪৬.০) |
১২.২ (৫৪.০) |
১৬.৮ (৬২.২) |
১৯.২ (৬৬.৬) |
২০.১ (৬৮.২) |
২০.০ (৬৮.০) |
১৭.৫ (৬৩.৫) |
১৪.৪ (৫৭.৯) |
৮.১ (৪৬.৬) |
২.৯ (৩৭.২) |
১.১ (৩৪.০) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১৯ (০.৭) |
১১ (০.৪) |
১১ (০.৪) |
৮ (০.৩) |
৩৩ (১.৩) |
১৩৪ (৫.৩) |
৩০৬ (১২.০) |
২৭৪ (১০.৮) |
২২৭ (৮.৯) |
৯৪ (৩.৭) |
৯ (০.৪) |
৪ (০.২) |
১,১৩০ (৪৪.৫) |
উৎস: worldweather.org[৫৭] |
দূষণ পাটনার অন্যতম প্রধান সমস্যা ক্যাগ রিপোর্ট অনুসারে (যেটি ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে বিহার বিধানসভায় পেশ করা হয়), পাটনায় শ্বসনযোগ্য [[সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) (আরএসপিএম)-এর মাত্রা (পিএম-১০) ৩৫৫; যা প্রস্তাবিত সীমা প্রতি ঘন মিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রামের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি।[৫৮] এই বায়ুদূষণের কারণ যানবাহন,[৫৯] শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য[৬০] ও শহরে নির্মাণকার্য।[৬১] ২০১৪ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষা অনুসারে, পাটনা শহর দিল্লির পরই দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক বায়ুদূষণের শিকার। এই সমীক্ষা অনুসারে পাটনার বায়ুমণ্ডলে পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম-২৫) ১৪৭ মাইক্রো-গ্রাম; যা নিরাপদ সীমার (২৫ মাইক্রোগ্রাম) থেকে ছয় গুণ বেশি।[৬২] শহরের তীব্র বায়ুদূষণ শহরবাসীর ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানি, ডিসেন্ট্রি ও ডায়েরিয়া রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।[৬৩][৬৪] প্রতি বছর শীতকালে গভীর কুয়াশার জন্য পাটনায় রেল ও বিমান পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে থাকে।[৬৫]
অর্থনীতির দিক থেকে অনগ্রসর এই শহর। ভারতের অন্যতম শিল্পঅনুন্নত রাজ্যের রাজধানী হিসেবে সেরকম কোনো সুনাম হয়নি। ২০১৭ সালে ভারতীয় বহুজাতিক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টাটা কন্সাল্টেন্সি সার্ভিসেস তাদের ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া বহিঃউৎসকরণের কেন্দ্র এই শহরে স্থাপনা করেছে [৬৬]
পাটনা জংশন শহরের প্রধান স্টেশন। এছাড়া পূর্বে রাজেন্দ্রনগর টার্মিনাল ও পশ্চিমে দানাপুর স্টেশন শহরের অন্যতম রেল যোগাযোগ কেন্দ্র।
... the greatest city in India is that which is called Palimbothra, in the dominions of the Prasians, where the streams of the Erannoboas and the Ganga unite,—the Ganga being the greatest of all rivers, and the Erannoboas being perhaps the third largest of Indian rivers, though greater than the greatest rivers elsewhere; but it is smaller than the Ganga where it falls into it. Megasthenes informs us that this city stretched in the inhabited quarters to an extreme length on each side of eighty stadia, and that its breadth was fifteen stadia, and that a ditch encompassed it all round, which was six hundred feet in breadth and thirty cubits in depth, and that the wall was crowned with 570 towers and had four-and-sixty gates....
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। World Weather। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি