মহারাজ পাণ্ডু | |
---|---|
তথ্য | |
পরিবার | বেদ ব্যাস(পিতা)
অম্বালিকা (মাতা) বিচিত্রবীর্য(স্বীকৃত পিতা) |
দাম্পত্য সঙ্গী | কুন্তী ও মাদ্রী |
সন্তান | যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল এবং সহদেব (স্বীকৃত পুত্র) শাশ্বতী/শঙ্কুবতী/কীর্তিকা(মাদ্রির কন্যা) |
মহাভারতে বর্ণিত হস্তিনাপুরের রাজা। পাণ্ডবদের পিতা। বিচিত্রবীর্যের কনিষ্ঠ সন্তান। অভিশপ্ত জীবনের কারণে স্ত্রী সহবাসের পর দেহ ত্যাগ করেন। পাণ্ডুর দুই স্ত্রী। যথাঃ কুন্তী এবং মাদ্রী। পাণ্ডু একজন বীর হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
শান্তনুর কনিষ্ঠ পুত্র বিচিত্রবীর্যের মৃত্যু হয় নিঃসন্তান অবস্থায়। হস্তিনাপুর রাজহীন দেখে রাজমাতা সত্যবতী তার জ্যেষ্ঠতম পুত্র, ব্যাসদেবকে আহ্বান করেন তার দুটি পুত্রবধূ অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে নিয়োগ প্রথায় দুটি সন্তান উৎপন্ন করতে। ব্যাসদেবের মন্ত্রবলে অম্বালিকার গর্ভসঞ্চার হলে, তিনি একটি পাণ্ডুবর্ণ সন্তানের জন্ম দেন। এই সন্তানের নাম হয় পাণ্ডু। পাণ্ডুর নামের অর্থ ফ্যাকাশে।[১]
তিনি তীরন্দাজি, রাজনীতি, প্রশাসন এবং ধর্ম বিষয়ে ভীষ্মের কাছে শিক্ষা নেন। তিনি ছিলেন একজন দুর্দান্ত তীরন্দাজ এবং মহারথী (যোদ্ধা)।অম্বিকার গর্ভের সন্তান ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হওয়ার ফলে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর পাণ্ডু রাজা হন। তিনি যথেষ্ট প্রজাবৎসল ছিলেন। তার বিবাহ হয় কুন্তীভোজের পালিতা কন্যা, তথা বসুদেবের বোন কুন্তীর সাথে। পরবর্তীকালে মদ্রদেশের রাজকন্যা মাদ্রীর সাথে তার বিবাহ হয়।ভীষ্ম এই বিবাহের প্রস্তাব করেছিলেন।[২]তিনি পরবর্তীকালে সিন্ধু রাজ্য, কাশী, অঙ্গ, ত্রিগর্ভ রাজ্য, কলিঙ্গ, মগধের অঞ্চলগুলি জয় করেছিলেন । এভাবে তিনি সমস্ত রাজাদের উপরে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর সাম্রাজ্যের পরিধি আরও বাড়িয়ে তোলেন।[৩]
বিয়ের পর মৃগয়ার সময়ে তিনি ভুলবশত দুটি মিলনরত হরিণকে বিদ্ধ করেন। সেটি ছিল আসলে ঋষি কিন্দম ও তার স্ত্রী, যারা সন্তান উৎপন্ন করতে মিলিত হয়েছিলেন। কিন্দম অভিশাপ দেন যে পাণ্ডুও স্ত্রীসম্ভোগকালে মৃত্যুবরণ করবেন।[৪]
ঋষি অভিশাপে বিচলিত হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তিনি তাঁর রাজ্য ধৃতরাষ্ট্র এর হাতে দিয়েছিলেন এবং বনে নির্বাসনে যান। সেখানে তিনি স্ত্রীদের সাথে তপস্বীর মত জীবনযাপন করতেন।[৫]
অভিশাপের ফলে পাণ্ডুর সন্তানলাভের পথ বন্ধ হয়ে গেলে কুন্তী দুর্বাসমুনির থেকে প্রাপ্ত বিশেষ দিব্যমন্ত্রর সাহায্যে ধর্ম দেবতাকে আহ্বান করে তার ঔরসে যুধিষ্ঠিরকে জন্ম দেন। এইভাবে কুন্তী বায়ুর মাধ্যমে ভীম, ও ইন্দ্র দেবের মাধ্যমে অর্জুনকে জন্ম দেন। মাদ্রীও একই মন্ত্রের বলে অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে আহবান করে নকুল ও সহদেবকে জন্ম দেন।এরাই পঞ্চপাণ্ডব।কিছু মতানুসারে একবার মাদ্রী লুকিয়ে দেবী সরস্বতীকে আহ্বান করেন।কিন্তু যেহেতু দেবী সরস্বতী একজন নারী তিনি বরদান দেন কোনো পুরুষের সাথে সঙ্গম করলে মাদ্রি গর্ভবতী হবেন এবং সরস্বতীর মতো একটি কন্যার জন্ম দেবেন।যখন পাণ্ডু জোর করে মদ্রীর সাথে সঙ্গম করেন তখন মাদ্রী গর্ভবতী হয়ে পড়েন।এরপর মাদ্রী যখন সহমরণের জন্যে চিতায় উঠেন তার চিতার উপরে একটি কন্যার জন্ম হয়।সরস্বতীর কন্যা হওয়ায় নাম রাখা হয় শাশ্বতী।ইনি কীর্তিকা বা শঙ্কুবতী নামেও পরিচিত।
এরপর একদিন বসন্তকালে মাদ্রীকে দেখে মোহিত হয়ে তিনি অভিশাপের কথা ভুলে যান । মোহের বশে মাদ্রীর সাথে সম্ভোগ করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।নিজেকে স্বামীহন্তা ভেবে নিজের সন্তানদের ভার কুন্তীর হাতে দিয়ে মাদ্রীও তাঁর পতির সাথে সহমরণে যান।[৭]