পাতিয়ালা রাজ্য | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য | |||||||
১৭৬৩–১৯৪৮ | |||||||
১৯১১ সালের পাঞ্জাবের মানচিত্রে পাতিয়ালা রাজ্য | |||||||
রাজধানী | পাতিয়ালা | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৯৩১ | 1625000 | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৭৬৩ | ||||||
১৯৪৮ | |||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | পাঞ্জাব হরিয়ানা |
পাতিয়ালা রাজ্য ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একটি স্বশাসিত দেশীয় রাজ্য। এবং এটি ছিল ফুলকিয়ান রাজ্য সমূহের একটি, যেটি ভারতের স্বাধীনতা ও বিভাজনের সময় ভারতের ইউনিয়নে যোগদানে সম্মত হয়।
রাজ্যের নামটি তার প্রধান শহর এবং রাজধানী "পাতিয়ালা"র নাম থেকে এসেছে, যা আবার মূল শব্দ পতি এবং আলা থেকে এসেছে। প্রথমটি হচ্ছে উর্দু "ভূমির টুকরো" এবং "আলা" শব্দটি পাতিয়ালা রাজ্য ও শহরের প্রতিষ্ঠাতা আলা সিং এর নাম থেকে এসেছে, যার মানে হচ্ছে "আলা সিং এর দেশ"।[১]
মহারাজার কার্যালয় আলা সিং এর বংশধরদের মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে চালাচ্ছিল যতক্ষণ না রাজবংশের শিখ পূর্বপুরুষ ফুল পাতিয়ালা, জিন্দ এবং নাভা শাসন করতে আসেন।
পাতিয়ালা রাজ্যের ইতিহাস শিখ পাতিয়ালা রাজকীয় বাড়ির পূর্বপুরুষ, মোহন সিং প্রতিবেশী ভুল্লার এবং ঢালিওয়াল কৃষকদের দ্বারা হয়রানি দিয়ে শুরু হয়। তারা মোহনকে সেখানে বসতি স্থাপন করতে দিত না। মোহন গুরু হরগোবিন্দ সাহেবের অনুগামী ছিলেন এবং গুরু মোহনের পক্ষে আবেদন করেন। কিন্তু এতে কোন লাভ হয়নি। এর ফলাফল গড়ায় একটি সশস্ত্র সংগ্রামে। এরপর ভুলার এবং ঢালিওয়াল গুরু দের দ্বারা পরাজিত হয়। এর ফলে মোহন ১৬২৭ সালে মেহরাজ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি পায়।[২]
গুরু হরগোবিন্দ সাহিবের পক্ষে মোহন সিং ১৬৩১ সালে মুঘলদের বিরুদ্ধে মেহরাজে যুদ্ধ করেন। মোহন সিং এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র রূপ চাঁদ পরে ভাট্টির (একটি উপজাতি যারা জয়সলমীরের রাওয়াল জয়সালের বংশধর, কিন্তু ফুলকিয়ানদের শত্রু) বিরুদ্ধে একটি যুদ্ধে নিহত হয়। মোহনের ছোট ছেলে কালা "চৌধ্রীয়াতের" স্থলাভিষিক্ত হন, এবং রূপ চাঁদের ছেলে ফুল ও চন্দনীর অভিভাবক হন।
কালা সিধু মারা গেলে ফুল ১৬৬৩ সালে মেহরাজ থেকে পাঁচ মাইল দূরে (শিখ গুরুর আশীর্বাদের অধীনে) তার নিজের গ্রাম (ফুল নামে) গঠন করেন। নাভা এবং জিন্দ ধার্মিক শিখ ফুলের কাছে তাদের বংশ পরিচয় খুঁজে পান। এটি ছিল পাঞ্জাবে গঠিত প্রথম শিখ রাজ্যগুলোর অন্যতম। আপাতদৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠাতা এক হওয়ার কারণে "ফুলকিয়ান" রাজবংশের আবেদন তৈরী হয়েছিল। তাঁর এক পুত্র ছোটা রাম গুরু গোবিন্দ সিং এর থেকে দীক্ষা ও আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। ১৭১৪ সালে যখন বান্দা বাহাদুর মুঘলদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধে নিয়োজিত ছিলেন তখন তার পুত্র আলা সিং নেতৃত্ব গ্রহণ করেন । আলা সিং এর দূরদর্শী ও সাহসী সেনাপতি গুরবকশ সিং কালেকা, ৩০টি গ্রামের জমিদারি থেকে নিয়ে একটি স্বাধীন প্রিন্সিপালিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার উত্তরসূরিদের অধীনে, এটি প্রসারিত হয়ে একটি বৃহৎ রাজ্যে পরিণত হয়। যা উত্তরে শিবলিক, দক্ষিণে রাজস্থান এবং যমুনা ও সুতলেজ নদীর উজান স্পর্শ করে। একারণে তিনি একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বাবা আলা সিং তার সমসাময়িক অনেকের মতো মারাঠা ও আফগানদের সাথে মোকাবেলা করার প্রচুর দক্ষতা প্রদর্শন করেন। এবং সফলভাবে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রটির কেন্দ্র বার্নালা থেকে গড়ে তুলতে শুরু করেন। তিনি শিখদের কাছে বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠেন, যারা তাকে একজন চাষী থেকে সর্দার করেছিলেন। তিনি শিখদের বিরুদ্ধে আহমেদ শাহ আবদালির পক্ষে যুদ্ধ করেন।
১৭৬৩ সালে বাবা আলা সিং ক্বিলা মুবারক নামে পরিচিত পাতিয়ালা দুর্গের ভিত্তি স্থাপন করেন। এর চারপাশে বর্তমান পাতিয়ালা শহরের বিকাশ ঘটে। ১৭৬১ সালে তৃতীয় পাণিপথের যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হয়। এরপরই পাঞ্জাব জুড়ে আফগানদের বিজয়ের ঘোষণা ছড়িয়ে পরে। এই পর্যায়ে পাতিয়ালার শাসকরা রাজটিকা অর্জন করতে শুরু করেন। আহমেদ শাহ আবদালি আলা সিংকে পশম ও ব্যানার অর্পণ করেন, এবং পাতিয়ালার মহারাজা উপাধি প্রদান করেন। তার মৃত্যুর পর, তার নাতি অমর সিং রাজ ক্ষমতায় আসেন এবং রাজা-ই-রাজান উপাধি লাভ করেন।
মারাঠা ও আফগানদের সাথে চল্লিশ বছর নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর পাতিয়ালা রাজ্যের সীমানার উত্তরে রঞ্জিত সিং এবং পূর্বে ব্রিটিশদের হঠকারিতা প্রত্যক্ষ করে। বেঁচে থাকার সহজাত প্রবণতা থেকে এবং আত্মরক্ষার্থে পাতিয়ালার রাজা রঞ্জিত সিং এর বিরুদ্ধে ১৮০৮ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এইভাবে তিনিও ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সহযোগী হয়ে ওঠেন। পাতিয়ালার পরবর্তী শাসকরা, যেমন- করম সিং, নরিন্দর সিং, মহেন্দ্র সিং, রাজিন্দর সিং, ভূপিন্দর সিং, এবং যাদবীন্দ্র সিং একটি জোট গঠন করেছিল। তারা ব্রিটিশদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল, কিন্তু এ রাজ্যগুলোর অভ্যন্তরীণ সরকার বজায় থাকে।
মহারাজা ভূপিন্দর সিং ১৯০০ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি পাতিয়ালাকে ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট স্থান করে দেন। পোলো খেলায় পাতিয়ালার ছিল বিশ্বের সেরা পোলো ব্যাক। যার নাম ছিল জেনারেল চন্দা সিং। চন্দা পরবর্তীতে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এবং স্পেনের রাজা আলফোনসোর অনুরোধে ইংল্যান্ড ও স্পেনের হয়ে খেলেন। উভয় রাজার জন্যই তিনি মর্যাদাপূর্ণ পোলো কাপ জিতেছিলেন। এছাড়াও মহারাজা কুকুর ভালবাসতেন। তিনি এবং জিন্দের মহারাজা রণবীর সিং বিভিন্ন প্রজাতির কুকুরের প্রতি সমানভাবে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর পুত্র মহারাজা যাদবেন্দ্র সিং প্রথম ভারতীয় যুবরাজ হিসেবে ভারতের নতুন ইউনিয়নে প্রবেশাধিকারের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এইভাবে ভারত বিভাগের পর জাতীয় একীকরণ প্রক্রিয়া এবং ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর জাতীয় একীকরণ প্রক্রিয়া তরান্বিত হয়। তার কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ, তিনি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯৫৬ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের সাথে একত্রীকরণ পর্যন্ত নবপ্রতিষ্ঠিত পাতিয়ালা এবং পূর্ব পাঞ্জাব রাজ্য ইউনিয়নের (পেপসু) রাজপ্রমুখ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। পাতিয়ালার কেন্দ্রস্থল এলাকাকে বলা হয় আদালাত বাজার, যার মানে 'কোর্ট করিডোর'। মহারাজা ভূপিন্দর সিং যুবক বয়সে পৌঁছানোর আগেই এটি একজন তত্ত্বাবধায়ক শাসক দ্বারা প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। রাজমাতা মহিন্দর কৌর ২০১৭ পর্যন্ত পরিবারের প্রবীণতম সদস্য ছিলেন। পরিবারের বর্তমান প্রধান পাঞ্জাবের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং।