২৮২ কিলোক্যালরি (১১৮১ কিলোজুল) | |||||||
| |||||||
পাপরিকা বা মিষ্টি লাল মরিচ বা লঙ্কা গুঁড়া হলো ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম প্রজাতির লঙ্কা বা মরিচ গাছের অপেক্ষাকৃত মিষ্টি উপপ্রজাতিগুলির শুকানো লাল লঙ্কা বা মরিচ ফল থেকে প্রস্তুতকৃত মসলা গুঁড়া।[১] ঐতিহ্যগতভাবে এটিকে ক্যাপসিকাম অ্যানুয়াম প্রজাতির লংগাম দলের উদ্ভিদ্গুলি থেকে প্রস্তুত করা হয়। যদিও এই দলে ঝাল মরিচ বিদ্যমান, পাপরিকা প্রস্তুতির সময়ে সাধারণত অপেক্ষাকৃত হালকা ঝাল বা মিষ্টি স্বাদের এবং চিকন ত্বকবিশিষ্ট লঙ্কা বা মরিচ ব্যবহার করা হয়।[২][৩] কোনও কোনও ভাষায় "পাপরিকা" শব্দটি দিয়ে শুধু মিষ্টি লাল লঙ্কা বা মরিচের গুঁড়াই নয়, বরং মরিচের গাছ ও গ্রোসাম দলের মরিচ ফলগুলিকেও (যেমন ঘণ্টা মরিচ) বোঝানো হয়ে থাকে।[৪][৫]:৫, ৭৩
পাপরিকা গুঁড়া বানাতে যে মরিচগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি প্রথম উত্তর আমেরিকা মহাদেশে উৎপত্তি লাভ করে। বিশেষ করে মধ্য মেক্সিকোতে এগুলি বহু শতাব্দী ধরে চাষ হয়ে আসছে। এই মরিচগুলি পরবর্তীতে ১৬শ শতকে স্পেনীয় জাহাজগুলি পুরাতন বিশ্বে আমদানি করে নিয়ে আসে। পাপরিকা বিবিধ রন্ধনশৈলীর বিভিন্ন রান্নার পদে স্বাদবর্ণগন্ধবর্ধক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে পাপরিকা বাণিজ্য আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে বিস্তারলাভ করে।[৫]:৮ উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে এটি বলকান উপদ্বীপ হয়ে মধ্য ইউরোপে পৌঁছায়। মধ্য ইউরোপে উসমানীয়দের শাসনামল থেকেই এটি উপস্থিত ছিল, তবে কেবল ১৯শ শতকের শেষভাগে এসে এটি হাঙ্গেরিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৬] হাঙ্গেরিতে এটির নাম দেওয়া হয় "পাপরিকা"। "পাপরিকা" নামটি তাই হাঙ্গেরীয় ভাষা থেকে এসেছে। হাঙ্গেরিতে তৎকালীণ বুদা (বর্তমান বুদাপেশ্ৎ বা বুদাপেস্ট নগরী) নগরীতে বসবাসরত তুর্কি সম্প্রদায়ের লোকেরা ১৬শ শতকে এই মসলার গুঁড়াটি বানাতো। তখন এটি বেশ ঝাল ছিল। পরে হাঙ্গেরীয় ভাষা থেকে বিশ্বের অন্যান্য বহু ভাষাতে (ইংরেজি, ফরাসি, ইত্যাদি পশ্চিমা ভাষা) মসলা গুঁড়াটি "পাপরিকা" নামেই পরিচিতি লাভ করে। তবে স্পেনীয় ভাষায় ১৬শ শতক থেকে আজ পর্যন্ত এই মসলা গুঁড়াটি পিমেন্তন নামে পরিচিত, এবং পশ্চিম স্পেনের এস্ত্রেমাদুরা অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে এটি খুবই সাধারণ একটি রান্নার উপাদান।[৫]:৫, ৭৩
পাপরিকা মিষ্টি-মৃদু কিংবা ঝাল হতে পারে এবং দেশভেদে এর স্বাদ ভিন্ন হতে পারে। তবে পাপরিকা যে মরিচ গাছগুলি থেকে তৈরি হয়, সেগুলিই সবই মিষ্টি প্রকারের মরিচ ফল উৎপাদন করে থাকে।[৭] মিষ্টি পাপরিকা গুঁড়া প্রধানত ফলত্বক থেকে তৈরি করা হয় এবং অর্ধেকের বেশি বীজ সরিয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত ঝাল পাপরিকা গুঁড়াতে বীজ, কাণ্ড, গর্ভফুল ও বৃত্যাংশ থাকে।[৫]:৫, ৭৩ পাপরিকাতে অবস্থিত ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে এর রঙ লাল, কমলা বা হলুদ হতে পারে।[৮]