পারমালয়

পারমালয়ের সরু ফালি

পারমালয় হল একটি নিকেললোহা চৌম্বক মিশ্রধাতু, এতে প্রায় ৮০% নিকেল এবং ২০% লোহা আছে। ১৯১৪ সালে পদার্থবিদ গুস্তাভ এলমেন বেল ল্যাবরেটরিজয়ে এটি আবিষ্কার করেছিলেন।[] এটি অত্যন্ত উচ্চ চৌম্বক প্রবেশ্যতার জন্য উল্লেখযোগ্য। বৈদ্যুতিন এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলিতে চৌম্বক মজ্জার উপাদান হিসাবে, এবং চৌম্বক ক্ষেত্রকে আটকাতে চৌম্বক পর্দা হিসেবে এটিকে প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। বাণিজ্যিক পারমালয় মিশ্রধাতুগুলিতে আপেক্ষিক প্রবেশ্যতার পরিমাণ সাধারণত প্রায় ১০০,০০০ থাকে, তুলনা করলে সাধারণ ইস্পাতে এর পরিমাণ কয়েক হাজার।[]

উচ্চ প্রবেশ্যতা ছাড়াও, এর অন্যান্য চৌম্বক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে আছে কম সহনশীলতা, প্রায় শূন্য চৌম্বক বিরূপন, এবং উল্লেখযোগ্য অ-আইসোট্রপীয় চৌম্বক প্রতিরোধ। শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য কম চৌম্বক বিরূপন গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে পরিবর্তনশীল পীড়নের কারণে চৌম্বক বৈশিষ্ট্যে বিরাট আকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, সেখানে এটি পাতলা পাত হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রয়োগকৃত চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি এবং দিকের উপর নির্ভর করে পারমালয়ের বৈদ্যুতিক রোধাঙ্ক ৫% এর মত পরিবর্তিত হতে পারে। পারমালয়গুলিতে সাধারণত পৃষ্ঠ কেন্দ্রিক ঘনক স্ফটিক কাঠামো থাকে। ৮০% নিকেল ঘনত্ব থাকলে এর জালিকা ধ্রুবক প্রায় ০.৩৫৫ ন্যানোমিটার। পারমালয়ের একটি অসুবিধা হল এটি খুব নমনীয় বা কার্যকর নয়, সুতরাং যে প্রয়োগগুলিতে চৌম্বক পর্দার মতো বিস্তৃত আকারের প্রয়োজন হয়, সেখানে মিউ ধাতুর মতো অন্যান্য উচ্চ প্রবেশ্যতাযুক্ত মিশ্রধাতু ব্যবহার করা হয়। পারমালয়গুলি ট্রান্সফরমার, স্তরায়ণ এবং চৌম্বক রেকর্ডিং হেডে ব্যবহার করা হয়।

বিকাশ

[সম্পাদনা]

২০শ শতকের গোড়ার দিকে টেলিগ্রাফ তারগুলির আবিষ্ট-ক্ষতি পূরণের জন্য প্রাথমিকভাবে পারমালয়ের বিকাশ ঘটানো হয়েছিল।[] ১৮৬০ এর দশকে যখন প্রথম আটলাণ্টিক মহাসাগরের এক দিক থেকে অন্য দিকে ডুবোজাহাজ টেলিগ্রাফ তার স্থাপন করা হয়েছিল, তখন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল যে দীর্ঘ পরিবাহী তারগুলি বিকৃতি ঘটাচ্ছে, যার ফলে সর্বোচ্চ সংকেত গতি প্রতি মিনিটে শুধুমাত্র ১০-১২ শব্দ পাওয়া গিয়েছিল।[] বিকৃতি ছাড়াই তারের মাধ্যমে সংকেত প্রেরণের জন্য সঠিক শর্তগুলি কি হতে পারে তা ১৮৮৫ সালে অলিভার হেভিসাইড প্রথম গাণিতিকভাবে দেখিয়েছিলেন।[] ১৯০২ সালে ডেনমার্কে কার্ল এমিল ক্রারুপ প্রস্তাব করেছিলেন যে তারগুলিতে লোহার তার জড়িয়ে দিলে বিকৃতির ক্ষতি পূরণ করা যেতে পারে। এর ফলে এর আবেশ গুণাঙ্ক বৃদ্ধি পাবে এবং এটিকে ভারবাহী পঙ্‌ক্তি তৈরি করা যাবে, যার ফলে বিকৃতি হ্রাস পাবে। যাইহোক, আটলাণ্টিক মহাসাগরের এদিক থেকে ওদিক দৈর্ঘ্যের তারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মত উচ্চ প্রবেশ্যতা লোহার ছিল না। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে, ১৯১৪ সালে বেল ল্যাবরেটরিজ এর গুস্তাভ এলম্যান পারমালয় আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন পারমালয়ের প্রবেশ্যতা সিলিকন ইস্পাতের চেয়ে বেশি।।[] পরবর্তীতে, ১৯২৩ সালে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে এর প্রবেশ্যতা তাপ চিকিৎসা দ্বারা ব্যাপকভাবে বাড়ানো যেতে পারে।[] টেলিগ্রাফ তারকে পারমালয় ফিতা দিয়ে মুড়ে দিলে তার সংকেতের গতি চারগুণ বাড়ানো যায়।[]

১৯৩১ এর দশকে তারের ক্ষতিপূরণের এই পদ্ধতিটির ব্যবহার কমে গিয়েছিল, তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই পারমালয়ের অনেক অন্যান্য ব্যবহার বৈদ্যুতিন শিল্পে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।

অন্যান্য মিশ্রণ

[সম্পাদনা]

পারমালয়ের অন্যান্য মিশ্রণও পাওয়া যায়, মিশ্রধাতুতে নিকেলের শতাংশ বোঝাতে একটি সংখ্যাসূচক উপসর্গ ব্যবহার করা হয়, উদাহরণ স্বরূপ "৪৫ পারমালয়" এর অর্থ মিশ্রধাতুটিতে ৪৫% নিকেল, এবং ৫৫% লোহা আছে। "মলিবডেনাম পারমালয়" মিশ্রধাতুতে ৮১% নিকেল, ১৭% লোহা এবং ২% মলিবডেনাম আছে। দ্বিতীয়টি ১৯৪০ সালে বেল ল্যাবরেটরিজে আবিষ্কার করা হয়েছিল। সেই সময়ে, যখন দীর্ঘ দূরত্বের তামা টেলিগ্রাফ তারে ব্যবহৃত হত, সঙ্কেত প্রদানের ক্ষেত্রে গতিতে দশগুণ বৃদ্ধি এসেছিল।[] সুপারমালয়, যার মিশ্রণ শতাংশ ৭৯% নিকেল, ১৬% লোহা, এবং ৫% মলিবডেনাম, সেটি উচ্চতর প্রবেশ্যতা এবং কম সহনশীলতার জন্য চিহ্নিত। "নরম" চৌম্বক উপাদান হিসাবে এর উচ্চ কার্যকারিতার জন্যও এটি সুপরিচিত।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]
  1. Elmen, G.W.; H. D. Arnold (জুলাই ১৯২৩)। "Permalloy, A New Magnetic Material of Very High Permeability"Bell System Tech. J.। USA: American Tel. & Tel.। 2 (3): 101–111। ডিওআই:10.1002/j.1538-7305.1923.tb03595.x। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৬, ২০১২ 
  2. Jiles, David (১৯৯৮)। Introduction to Magnetism and Magnetic Materials। CRC Press। পৃষ্ঠা 354। আইএসবিএন 978-0-412-79860-3 
  3. Green, Allen (২০০৪)। "150 Years Of Industry & Enterprise At Enderby's Wharf"History of the Atlantic Cable and Undersea Communications। FTL Design। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-১৪ 
  4. Bragg, L. Electricity (London: G. Bell & Sons, 1943) pp. 212–213.
  5. Elmen, G.W. (জানুয়ারি ১৯৩৬)। "Magnetic Alloys of Iron, Nickel, and Cobalt"Bell System Tech. J.। USA: American Tel. & Tel.। 15 (1): 113–135। ডিওআই:10.1002/j.1538-7305.1936.tb00721.x। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৬, ২০১২ 

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

link not valid any more