পার্বতী তিরুবোত | |
---|---|
জন্ম | পার্বতী তিরুবোত কোট্টুবত[১] ৭ এপ্রিল ১৯৮৮ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | পার্বতী মেনন |
মাতৃশিক্ষায়তন | অল সেইন্টস কলেজ, তিরুবনন্তপুরম |
পেশা | অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ২০০৬-বর্তমান |
পার্বতী তিরুবোত কোট্টুবত (জন্ম ৭ এপ্রিল ১৯৮৮) হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি মূলত মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, পাশাপাশি তাকে তামিল ও কন্নড় চলচ্চিত্রেও অভিনয় করতে দেখা যায়।[২] কেরলের কালিকটের এই অভিনেত্রীর মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ২০০৬ সালে আউট অব সিলেবাস চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি নোটবুক (২০০৬), মিলন (২০০৭), পু (২০০৮), সিটি অব গড (২০১১), মর্যন (২০১৩), ব্যাঙ্গালোর ডেইজ (২০১৪), উত্তম ভিলেন (২০০৫), এন্নু নিন্টে মৈদিন (২০১৫), চার্লি (২০১৫), টেক অফ (২০১৭), কুডে (২০১৮), উয়ারে (২০১৯) ও ভাইরাস (২০১৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। বলিউডে তার অভিষেক ঘটে ২০১৭ সালে কারিব কারিব সিঙ্গল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।[৩]
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্বতী অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি এন্নু নিন্টে মৈডিন ও চার্লি এবং টেক অফ চলচ্চিত্রের জন্য দুটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে কেরল রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। টেক অফ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ৪৮তম ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন। একই কাজের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিশেষ উল্লেখ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি একাধিকবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণও অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে মালয়ালম ভাষার এন্নু নিন্ট মৈডিন চলচ্চিত্রে কাঞ্চলমালা চরিত্রে ও টেক অফ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য দুটি শ্রেষ্ঠ মালয়ালম অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং তামিল ভাষার পু চলচ্চিত্রে মারি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ তামিল অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং মালয়ালম ভাষার ব্যাঙ্গালোর ডেইজ চলচ্চিত্রে আরজে সারা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ মালয়ালম পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার।
পার্বতী ১৯৮৮ সালের ৭ই এপ্রিল কেরল রাজ্যের কালিকটে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পি. বিনোদ কুমার ও মাতা টি. কে. ঊষা কুমারী, দুজনেই আইনজীবী। তার এক ভাই রয়েছে, যার নাম করুণাকরণ।[৪] তার প্রারম্ভিক বিদ্যালয় চলাকালীন তারা সপরিবারে তিরুবনন্তপুরম চলে যান এবং তিনি সেখানে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি পাঙ্গোডের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে তার বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করেন। এই সময়ে তিনি ভারতনাট্যমেরও প্রশিক্ষণ নেন।[৫] তিনি তিরুবনন্তপুরমের অল সেইন্টস কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি তিরুবনন্তপুরম ভিত্তিক সঙ্গীত চ্যানেল কিরণ টিভির একজন সফল টেলিভিশন উপস্থাপক ছিলেন।
পার্বতীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে ২০০৬ সালের মালয়ালম চলচ্চিত্র আউট অব সিলেবাস দিয়ে, এতে একজন কলেজ শিক্ষার্থী চরিত্রে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ছিল রোশন অ্যান্ড্রুজের নোটবুক (২০০৬)। অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী বিষয়বস্তুর উপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পাঁচ হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে তিনটি প্রধান চরিত্রের জন্য তিনি, রোমা আসরানী ও মারিয়া রায় এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন।[৬][৭] পরের বছর তাকে সত্যন অন্তিক্কাডের একাধিক তারকাসমৃদ্ধ হাস্যরসাত্মক নাট্যধর্মী বিনোদযাত্রা (২০০৭) চলচ্চিত্রে দিলীপ, মুকেশ ও মীরা জেসমিনের সাথে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।[৮] প্রধান চরিত্রে তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল কন্নড় ভাষার মিলন, যা মুক্তির পর ব্যবসা সফল হয়। পুনীত রাজকুমারের বিপরীতে তাকে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বাছাই করা হয়, যার নির্মাণ শুরু হয় ২০০৭ সালের এপ্রিলে।[৯] চলচ্চিত্রটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া লাভ করে, কিন্তু এতে এই অভিনেত্রীর চরিত্রটি প্রশংসিত হয়, যেখানে সমালোচকগণ উল্লেখ করেন যে "এই চলচ্চিত্রে জন্য জন্য চমৎকার নির্বাচন" এবং "এই চরিত্রের জন্য তার অঙ্গভঙ্গি সঠিক ছিল।"[১০] চলচ্চিত্রটি ব্যাপক ব্যবসা সফলতা অর্জন করে এবং ব্যাঙ্গালোরের মাল্টিপ্লেক্সে ৫০০ দিন চলে।[১১][১২] তিনি পুনরায় মালয়ালম চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন এবং সিবি মালায়িলের ফ্ল্যাশ (২০০৭) চলচ্চিত্রে মোহনলাল ও ইন্দ্রজিতের সাথে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি মুক্তির পূর্বে তিনি আশা করেছিলেন চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে মালয়ালম চলচ্চিত্রে সফল হবে।[১৩] কিন্তু চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িক দিক থেকে ব্যর্থ হয় এবং সমালোচকদের নিকট থেকেও নেতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে।[১৪]
২০০৮ সালে শশী পরিচালিত পু চলচ্চিত্রে শ্রীকান্তের বিপরীতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে নির্বাচন করা হয়। এতে তিনি মারি নামে এক তামিল গ্রাম্য তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি জানান যে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি আরও ১২টি চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, এবং উল্লেখ করেন শশী তাকে অডিশনের মাধ্যমে নির্বাচন করেছিলেন।[১৫] এই চরিত্রে অভ্যস্ত হতে তার ত্বকের রং গাঢ় করতে হয়েছিল এবং মারির পেশার উপর অধ্যয়ন করতে একটি ফ্যাক্টরিতেও যেতে হয়েছিল। এই অভিনেত্রী পরে প্রকাশ করেন যে এই চরিত্রে থেকে বের হওয়া খুবই কষ্টকর ছিল এবং তিনি এই চরিত্রে নিমগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন।[১৬] মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি ও তার অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। সাইফি-এর এক সমালোচক উল্লেখ করেন, "পার্বতী মারি চরিত্রকে ধারণ করেছেন, এবং তার প্রথম তামিল চলচ্চিত্রেই এই জটিল চরিত্রে তার প্রাণবন্ত অভিনয় আপনার হুঁশ উড়িয়ে দিবে।"[১৭] একইভাবে রেডিফ.কম-এর পর্যালোচক মন্তব্য করেন যে পু "পুরোটাই পার্বতীর চলচ্চিত্র" এবং উল্লেখ করেন "তিনি অসাধারণ"।[১৮] অন্যদিকে, দ্য হিন্দুর মালতি রঙ্গরাজন লিখেন, "পার্বতী তার দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন" এবং "গ্রামীণ তরুণীর পোষাকে ও অঙ্গভঙ্গিতে সন্দেহাতীতভাবে দারুণ কাজ করেছেন, এমনকি তার শারীরিক ভাষাও সঠিক ছিল।"[১৯] পার্বতী এই কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ তামিল অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন, এবং আরও একাধিক পুরস্কার লাভ করেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেত্রী বিভাগে বিজয় পুরস্কার।[২০]