পার্মেনিদিস | |
---|---|
জন্ম | ৫১৫ খ্রিস্টপূর্ব এলেয়া, বৃহত্তর গ্রিস |
মৃত্যু | ৪৬০ খ্রিস্টপূর্ব |
যুগ | সক্রেটিসপূর্ব দর্শন |
অঞ্চল | পাশ্চাত্য দর্শন |
ধারা | এলেয়া'র দর্শনধারা |
প্রধান আগ্রহ | অধিবিদ্যা, তত্ত্ববিদ্যা |
উল্লেখযোগ্য অবদান | "ভাবনা ও বিরাজন এক"[১] সত্য ও বাহ্যরূপের মধ্যে পার্থক্য |
ভাবগুরু | |
এলেয়া'র পার্মেনিদিস (গ্রিক ভাষায়: Παρμενίδης ὁ Ἐλεάτης) প্রাচীন বৃহত্তর গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ ইতালির এলেয়া নগররাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী একজন সক্রেটিসপূর্ব দার্শনিক ও কবি যাকে এলেয়াবাদের (Eleaticism) জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। একটি জটিল অধিবিদ্যক কবিতা রচনা করে তিনি প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সবচেয়ে দুর্বোধ্য দার্শনিকদের একজন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এই কবিতাটি ছাড়া তার আর কোনো লেখা আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি, এবং আসলে এই কবিতারও পুরোটা আমাদের হাতে নেই, কিছু খণ্ডাংশ আছে কেবল।[২] তার দার্শনিক চিন্তাধারাকে দুই শব্দে প্রকাশ করতে হলে বলতে হয় সেটা ছিল এক ধরনের অধিবিদ্যক একত্ববাদ (metaphysical monism) — যা বলে বিশ্বে কেবল একটিই বা এক ধরনেরই জিনিস আছে। তিনি তার আগের দার্শনিকদের আনাড়ি বিশ্বতাত্ত্বিক মডেলগুলোর এত কড়া সমালোচনা করেছিলেন যে তার পরবর্তীকালের সব গ্রিক বিশ্বতাত্ত্বিক মডেলগুলোকে তার যুক্তির বিরুদ্ধে দেয়া জবাব হিসেবে ধরে নেয়া যায়।[৩] তাকে অনেক সময় ক্সেনোফানিসের শিষ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং তিনি নিঃসন্দেহে হেরাক্লেইতোসের পর লেখা শুরু করেছিলেন, কারণ তার চিন্তাধারাকে খুব স্পষ্টভাবেই হেরাক্লেইতোসের চিন্তাধারার প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করা যায়; পার্মেনিদিস যদি একত্ববাদের পুরোধা হয়ে থাকেন তবে হেরাক্লেইতোস ছিলেন বহুত্ববাদের পুরোধা।[৪]
পার্মেনিদিসের জন্মের বছর অনুমান করার একমাত্র উপায় প্লেটোর সংলাপ পার্মেনিদিস পাঠ। এই সংলাপে দেখানো হয় যে, ৬৫ বছর বয়স্ক পার্মেনিদিস তার শিষ্য জিনোকে সাথে নিয়ে পানাথানাইয়া ক্রীড়া-উৎসব দেখতে এথেন্সে এসেছেন এবং আসার পর তাদের সাথে "কম বয়স্ক" সক্রেটিসের দেখা হয়েছে। "কম বয়স্ক" বলতে প্লেটো সম্ভবত ২০ বছর বুঝিয়েছিলেন, এবং ৩৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুর সময় সক্রেটিসের বয়স যেহেতু আনুমানিক ৭০ বছর ছিল সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে, পার্মেনিদিস আনুমানিক ৫১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দর্শনজগতে সক্রিয় ছিলেন।
পার্মেনিদিস যে তার জন্মনগরী এলেয়াতে খুব বিখ্যাত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্লেটোর পরে আকাদেমি-র প্রধান হওয়া স্পেউসিপ্পোস-এর একটি লেখা থেকে। পরবর্তী লেখকদের সূত্রে জানা গেছে স্পেউসিপ্পোস তার On Philosophers বইয়ে লিখেছিলেন যে পার্মেনিদিস এলেয়া শহরের নাগরিকদের জন্য আইন রচনা করেছিলেন, যদিও পার্মেনিদিসের জন্ম হয়েছিল এলেয়া নগরী পত্তনের প্রায় ত্রিশ বছর পর। প্রাচীন ইতিহাসবিদরা সঙ্গত কারণেই পার্মেনিদিসকে তার এক প্রজন্ম আগের দার্শনিক ক্সেনোফানিস ও পিথাগোরাসবাদীদের সাথে যুক্ত করেন; ক্সেনোফানিসের সাথে তার খুব সম্ভবত দেখাও হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে প্রাচীন এলেয়া নগরীর ধ্বংসাবশেষের নিকটে পার্মেনিদিসের খ্রিস্টীয় ১ম শতকের একটি আবক্ষমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল যাতে খোদিত আছে, "পার্মেনিদিস, পিরেস এর পুত্র, ঔলিয়াদিস, প্রাকৃতিক-দর্শন-বিদ"; বুঝাই যাচ্ছে যে এখানে তাকে দেবতা অ্যাপোলো'র ভিষক (গ্রিক ভাষায় ঔলিওস মানে ভিষক) রূপের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রাচীন গ্রিক জীবনীকার দিয়োগেনিস লায়ের্তিওস এর বই থেকে জানা যায় পার্মেনিদিস জীবনে কেবল একটি বইই লিখেছিলেন — হোমারীয় ষড়মাত্রিক ছন্দে লেখা একটি অধিবিদ্যক ও বিশ্বতাত্ত্বিক কাব্যগ্রন্থ। বইটি পরবর্তীতে পেরি ফিসেওস (Περί φύσεως — On Nature) নামে পরিচিত হলেও পার্মেনিদিসের দেয়া নাম সম্ভবত এটা ছিল না। কবিতাটিতে সম্ভবত ৮০০ পঙ্ক্তি ছিল যার মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৬০টি পঙ্ক্তি সংরক্ষিত আছে, যেগুলো ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি টুকরোতে। একেক টুকরোতে সংরক্ষিত পঙ্ক্তির সংখ্যা একেক রকম — একটিতে যেখানে মাত্র একটি শব্দ পাওয়া যায় সেখানে ৮ নং টুকরোটিতে পাওয়া যায় ৬২টি অবিচ্ছিন্ন পঙ্ক্তি। এই পঙ্ক্তিগুলো সংরক্ষিত থাকার একমাত্র কারণ প্লেটো থেকে শুরু করে পরবর্তী অনেক লেখক তাদের লেখায় কবিতাটির বিভিন্ন অংশ সরাসরি উদ্ধৃত করেছেন। যেমন ১ম টুকরোর ৩২টি পঙ্ক্তির মধ্যে ৩০টি-ই পাওয়া গেছে সেক্সতুস এম্পিরিকুসের লেখা থেকে। আলেকজান্দ্রিয়ার নব্য-প্লেটোবাদী দার্শনিক সিমপ্লিকিউসের হাতে সম্ভবত পার্মেনিদিসের বইটির একটি অখণ্ড সংস্করণ ছিল এবং এরিস্টটলের বইয়ের ভাষ্য লিখতে গিয়ে তিনি তা থেকে অনেক কিছু উদ্ধৃত করেছেন। সিমপ্লিকিউসের ভাষ্যের এসব উদ্ধৃতির কারণেই "প্রকৃত বাস্তবতা" সম্পর্কে পার্মেনিদিসের অধিবিদ্যক যুক্তিগুলো আমরা প্রায় পুরোপুরি জানি।[৩] "কিসের অস্তিত্ব আছে" সে সম্পর্কে পার্মেনিদিসের ধারণাগুলো অনেকটা জানলেও কবিতাটির শেষের দিকে তিনি যে বিশ্বতত্ত্ব তুলে ধরেছেন তা তার কবিতার বিদ্যমান অংশ থেকে অতটা বুঝা যায় না; এর জন্য কবিতাটির পাশাপাশি নির্ভর করতে হয় পরবর্তী লেখকদের সাক্ষ্যের উপর।[৫]
পেরি ফিসেওস এর উপক্রমণিকাতে পার্মেনিদিস তার একটি রূপক ভ্রমণের বৃত্তান্ত শোনান। বর্ণনা করেন কীভাবে সূর্যদেবতার কুমারী কন্যারা তার রথকে পথ দেখিয়ে দেবালয়ে নিয়ে যায়। কুমারীরা যে "রাত্রির ঘর" থেকে এসেছে সেদিকেই তাকে নিয়ে যাচ্ছে এবং ঘরটিতে প্রবেশের পথে আছে "দিবা এবং রাত্রির পথে যাওয়ার দরজা।" কুমারীরা দরজাটির পাহারাদার ন্যায়বিচারকে পার্মেনিদিসকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে রাজি করায়। প্রবেশের পর দেবালয়ের দেবী পার্মেনিদিসকে কীভাবে স্বাগত জানায় তা তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবে,
"দেবী আমায় সদয়ভাবে গ্রহণ করেন, এবং তার হাতে নেন
আমার ডান হাত, এবং আমাকে সম্বোধন করে বলেন:
'হে তরুণ, যে এসেছ অমর সারথিদের সাথে
এবং আমাদের দেবালয়ে তোমায় বয়ে আনা ঘোটকীদের সাথে,
স্বাগতম, কারণ সে নিশ্চয়ই কোনো মন্দভাগ্য নয় যে তোমায় এনেছে
এই দিকে (কারণ নিঃসন্দেহে এটা মানুষের পথ থেকে বহুদূরে),
বরং সে হলো সদাচার ও ন্যায়বিচার।'" (টুকরো ১.২২–২৮)[৬]
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |