পিটার সিমোন পালাস | |
---|---|
জন্ম | ২২ সেপ্টেম্বর, ১৭৪১ |
মৃত্যু | ৮ সেপ্টেম্বর ১৮১১ বার্লিন | (বয়স ৬৯)
জাতীয়তা | জার্মান |
মাতৃশিক্ষায়তন | গটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয় লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | পালাসী কুড়া ঈগল |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | প্রাণিবিজ্ঞান উদ্ভিদবিজ্ঞান |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | সিমোন পালাস |
পিটার সিমোন পালাস (২২ সেপ্টেম্বর, ১৭৪১-সেপ্টেম্বর ৮, ১৮১১)[১] একজন জার্মান প্রাণিবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তাঁর প্রধান কর্মস্থল ছিল রাশিয়া।
পালাসের জন্ম ১৭৪১ সালে বার্লিনে। তাঁর পিতা সিমোন পালাস ছিলেন শল্যচিকিৎসার অধ্যাপক। তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর প্রাকৃতিক ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ ছিল। পরবর্তীতে তিনি হালে বিশ্ববিদ্যালয় ও গটিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৭৬০ সালে তিনি লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাত্র উনিশ বছর বয়সে তিনি চিকিৎসাবিদ্যার উপর ডিগ্রি লাভ করেন।
পিটার নেদারল্যান্ডস ও লন্ডনে ঘুরে বেড়ান। এ ভ্রমণের ফলে তিনি চিকিৎসাবিদ্যা ও শল্যবিদ্যা সম্পর্কে নতুন জ্ঞান আহরণ করেন। এরপর তিনি দ্য হেগে স্থায়ী হন। প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসকরণে তাঁর আবিষ্কৃত নতুন পদ্ধতি জর্জ কুভিয়ে কর্তৃক প্রশংসিত হয়। ১৭৬৬ সালে তিনি Miscellanea Zoologica রচনা করেন। গ্রন্থটিতে তিনি অসংখ্য নতুন মেরুদণ্ডী প্রাণী সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। এসব প্রাণীর নমুনা বিভিন্ন ডাচ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ছিল। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল ও ইস্ট ইন্ডিজে তিনি গবেষণা অভিযান চলানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর পিতা বার্লিনে তাঁকে ডেকে পাঠানোয় তাঁর এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
১৭৬৭ সালে রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথরিন পালাসকে সেন্ট পিটার্সবুর্গ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির অধ্যাপক পদে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। ১৭৬৮ থেকে ১৭৭৪ পর্যন্ত তিনি সমগ্র মধ্য রাশিয়া, উরাল পর্বতমালা, পশ্চিম সাইবেরিয়া, আলতাই, পোভোলঝাই ও ট্রান্সবৈকাল অঞ্চল চষে বেড়ান এবং প্রচুর প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত নমুনা জোগাড় করেন। তিনি কাস্পিয়ান সাগর, আমুর নদী ও বৈকাল হ্রদে ব্যাপক অভিযান চালান। এসব অভিযানে তিনি বিচিত্র বিষয়ে সব নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি ভূতত্ত্ব ও খনিজবিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য উদ্ঘাটন করেন; স্থানীয় আদিবাসী ও তাদের ধর্ম, আচারআচরণ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করেন। নতুন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বর্ণনাও তাঁর লেখনীতে স্থান পায়। তাঁর এসব লেখা তিনি সেন্ট পিটার্সবুর্গে পাঠান ও সেগুলো Reise durch verschiedene Provinzen des Russischen Reichs (রাশিয়ান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে অভিযান, তিন খণ্ড, ১৭৭১-১৭৭৬) নামে প্রকাশিত হয়। ১৭৭৬ সালে পালাস রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর বিদেশী সদস্য নির্বাচিত হন।
পালাস অবশেষে সেন্ট পিটার্সবুর্গে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি শিঘ্রীই সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথরিনের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন এবং গ্র্যান্ড ডিউক আলেক্সান্ডার আর কন্সটানটাইনকে প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে পড়ানো শুরু করেন। তৎকালীন প্রথিতযশা প্রকৃতিবিদদের সংগ্রহ করা উদ্ভিদের নমুনা থেকে ১৭৮৪ থেকে ১৮১৫ সালের মধ্যে তিনি রচনা করেন Flora Rossica। Zoographica Rosso-Asiatica (১৮১১-৩১) নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনার কাজে হাত দেন তিনি। ইয়োহান আন্টন গুল্ডেনস্টাটের ককেশাস পর্বতমালায় ভ্রমণকাহিনীগুলো তিনি প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুলোভস্কি অভিযানের পরিকল্পনা করেন, কিন্তু রুশ-তুর্কি যুদ্ধের কারণে ১৭৮৭ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন পরে পালাসের বিশাল সংগ্রহ দুই হাজার রুবলে কিনে নেন। পালাসের দাবি থেকে ৫০০ রুবল বেশিই দেন তিনি। শর্ত থাকে যে মৃত্যু পর্যন্ত এসব নমুনা পালাসের কাছেই থাকবে।
১৭৯৩ থেকে ১৭৯৪ সালের মধ্যে পালাস পু্নরায় দক্ষিণ রাশিয়া অভিযানে যান। এসময় তিনি ক্রিমিয়া ও কৃষ্ণ সাগর চষে বেড়ান। তাঁর সহযোগী ছিলেন তাঁর প্রথম পক্ষের কন্যা, দ্বিতীয়া স্ত্রী (তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী ১৭৮২ সালে মারা যান), একজন চিত্রকর, চাকর-বাকর ও তাঁদের পাহারাদার সেনাবাহিনীর সদস্যগণ। ১৭৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁরা সারাটভ পৌঁছান এবং ভোলগাগ্রাদের ভাটির দিকে যাত্রা শুরু করেন। পুরো বসন্তটা তাঁরা রাশিয়ার পূর্বাঞ্চল ভ্রমণে কাটিয়ে দেন এবং আগস্টের দিকে তাঁরা কাস্পিয়ান সাগরের তীর ও ককেশাস পর্বতমালায় নমুনা খুঁজতে শুরু করেন।